top of page

স্মরণে - সুবর্ণলতাদের ঘরদুয়ার আর উত্তমকুমার

  • ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়
  • Jun 23, 2021
  • 7 min read



সপ্তপদীর ষাট বছর হল। কেমন ছিল সে সময়? বাঙালি নারী পুরুষের হৃদয় কতটা কেড়ে রেখেছিলেন সেই আশ্চর্য জুটি? সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটি দেশ, সদ্য দেশ ভাগের বীভৎস স্মৃতি বুকে করে নিয়ে চলা একটা জাতি তখন ভীষণ এক লড়াইয়ের মুখে। রোমান্স কোথায় সেখানে? সারাদিন কাজের পর পিঠ নুইয়ে পড়া মানুষগুলো আশ্রয় নেবে কোথায়? জীবনের সবটুকু রূপকথা বিদায় নিলে মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের কী তফাৎ?


ঠিক এমন একটা যুগের প্রয়োজনেই যেন উত্তমকুমার এলেন। বাঙালি পেল কিছু একটা আঁকড়ে ধরার খড়কুটো। আর তার সঙ্গে কপালের ঘাম মুছিয়ে দেওয়া এক আশ্চর্য দেবী মূর্তি। যে দূরদ্বীপবাসিনীর মতো হাত ধরে স্বপ্নের দেশে পৌঁছে দেয়। কিন্তু উত্তমকুমার দূরদ্বীপবাসী নন। তিনি কাছের, একেবারে পাশে। তাঁর লড়াইটাও বাকিদের মতো। শুধু শেষে তিনি সকলের হয়ে লড়াইটা জিতে যান আর সেই দূরদ্বীপবাসিনীর প্রেম লাভ করেন।


বাঙালির সব হতাশা, বেকারত্ব, অপমান, অহংকার, প্রতিবাদ, আত্মমর্যাদা নিয়ে পর্দা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সোজা শিরদাঁড়ার মানুষটা। বাঙালির সব অপ্রাপ্তির যেন একমাত্র ভরসাস্থল। সকলের হয়ে তিনি বলছেন, সকলের হয়ে তিনি পারছেন, সকলের হয়ে প্রতিবাদ করছেন। সবার ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে থাকা অবদমিত যৌনতা আর মৌনতাকে মুক্তি দিলেন মানুষটা। খুব কাছের মানুষ। তিনিই তো নায়ক, মহানায়ক।


মহানায়ক তখন মেয়েদের মনে কেমন হিল্লোল তুলেছিল? মেয়েদের তো হাজার বাধা নিষেধ। ঘোমটা তুলে চোখ মেলে স্পষ্ট করে চেয়ে দেখতে পারতেন কি প্রিয় নায়ককে? বিশেষ করে যারা গৃহবধূ, সংসারের জোয়ালে বাঁধা পড়েছেন ভালো করে জীবন বুঝে ওঠার আগেই।


ঠিক সেই সুবর্ণলতা। একখানা মনের মতো মানুষ তো দূর, একখানা মনের মতো বারান্দাও মেলে না যাঁদের সারাজীবনে। এক একটা জীবন, শুধু পরের ঘরের জন্য নিবেদিত। সেখানেই তাঁদের সার্থকতা। বাল্যে পিতা, যৌবনে স্বামী আর বার্ধক্যে পুত্রের অধীন। মনুর অনুশাসনের জাঁতাকলে কেটে গেল কত কত জীবন, যাঁদের কোনোদিনই মোহনায় পৌঁছনো হল না।

তাঁদেরও তো জীবনে বসন্ত ছিল। ঠাকুরঘরের ধাতুর কৃষ্ণের জায়গায় কখন যে জীবন্ত পুরুষোত্তমের সঙ্গে দেখা হয়ে যেত! আবার সেই একই গল্প। আজীবনের না পাওয়া, অধরা রূপকথার খোঁজ, অব্যক্ত অনাবিষ্কৃত যৌনতা। উত্তমকুমার তাঁদের অন্দরমহলে ঢুকে পড়লেন তাঁর সমস্ত আবেদন, হাসি, পুরুষকার ও সৌজন্যবোধ নিয়ে, যার খুব একটা পরিচয় পেতেন না মেয়েরা সমাজ সংসারে।


কী করতেন তখনকার সুবর্ণলতারা? সমাজ সংসার বাঁচিয়ে মন বেঁধে রাখতেন ? অবচেতনে গুমরে ওঠা আবেগকে কেমন করে সামাল দিতেন?


দেখা হয়ে গেল কয়েকজন সুবর্ণলতার সঙ্গে। সকলের নাম আলাদা করে আর উল্লেখ করলাম না। সবাই সুবর্ণলতা। অশীতিপর বৃদ্ধা এখন তাঁরা। পোড় খেতে খেতে মুখের প্রত্যেকটি শিরা উপশিরায় অভিজ্ঞতার ছাপ। উত্তমকুমারের নাম শুনে ঐ ভাঙাচোরা মুখেই আলো জ্বলে ওঠে এখনো। কী আশ্চর্য জাদু জানতেন ঐ মানুষটা। এখনো সুবর্ণলতাদের চোখে চিকচিকে হাসি খেলে যায় তাঁর নাম উচ্চারণ করে। লহমায় যেন পিছিয়ে যান যৌবনের দিনগুলোতে। না ছিল ঘরে ঘরে টিভি, না কথায় কথায় সিনেমা যাওয়ার চল বা ইচ্ছে মতো বিনোদন। তারমধ্যেই কাজের ফাঁকফোকরে আলো এসে পড়েছে কপালে কতবার। অগুনতি অপ্রাপ্তি ভুলে ঐ হাসিকে বুকে আগলে রান্নাঘর আর আঁতুড় ঘর করেছেন দিনের পর দিন।


সপ্তপদীর ষাট বছর হল শুনে ছিয়াত্তরের সুবর্ণলতার মুখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। মুখের অজস্র ভাঙা নদীপথের মধ্যে দিয়ে যেন ছলকে পড়তে চায় কত স্মৃতি। চোখের দৃষ্টি ততক্ষণে কোথায় চলে গেছে, কত দূরে, সিনেমার মতোই পরতে পরতে খুলে যাচ্ছে এক একটা দৃশ্য ...ফেড আউট... ফেড ইন হতে হতে পৌঁছে গেছে একষট্টি সালে।


"আমার মেজো ছেলের তখন দেড় বছর বয়স। সবাই মিলে ঠিক করা হল সিনেমা দেখতে যাব। কিন্তু কিছুতেই আর বলে উঠতে পারছিলাম না শাশুড়ি মা কে। আর স্বামীদের তো কোন কথা বলাও যা দেয়ালকে বলাও তা। নিজেরা সব ফুর্তি করে বেড়াবে আর আমরা কোথাও যেতে চাইলেই বলবে সংসার ফেলে তোমরা দলবেঁধে সিনেমা দেখতে যাবে? ছেলে মেয়েদের কে দেখবে? তারপর আর কোন কথা চলে না।

ননদ আসাতে একটা সুযোগ হয়ে গেল। শাশুড়ি মা আর না করতে পারলেন না নিজের মেয়েকে। ছেলেমেয়েদের ওঁর কাছে রেখে আমরা গেলাম সপ্তপদী দেখতে। শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই আমার প্রথম সিনেমা দেখা।"


একটু থামেন। তোলপাড় করে যেন আরো কত কি খুঁজে নেন অতীত উল্টেপাল্টে। চোখের ঘোর তখনও কাটেনি। কে বলবে একটু আগেই হাঁটুর ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে বলছিলেন, "আর কেন ঠাকুর? অনেক তো হলো। এবার তুলে নাও"

"সে এক দিন ছিলো, বুঝলে? বাড়ি থেকে কোথাও বেরোবার হুকুম নেই। একা তো নয়ই। দল বেঁধে মেয়েরা মিলে বেরোতাম। তাও অনেক কেঁদেকেটে, সাত জন্মের কাজ সেরে রেখে। সঙ্গে থাকতো বুড়ো চাকর আর ঝি। রাতের বেলা কোথাও যেতে হলে চাকর আগে আগে যেত লন্ঠন হাতে আর একটু দূরে হলে গাড়ির ব্যবস্থা হত। সিনেমা হল বাড়ি থেকে দূরে ছিল। তাই যেদিন গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছিল। ঘোড়ার গাড়ি। চার আনা ভাড়া দিয়ে। গ্যাসের আলোয় ভরা রাতে ফিরতে ফিরতে কারো মুখে কোন কথা ছিল না।"


আরেক সুবর্ণলতার কথায়, "আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আসতো মৃদুল ঠাকুরপো। ও বাংলা সিনেমায় ছোট ছোট রোল করত। তা একদিন হইহই করে এসে বলল, দারুণ একটা বই এসেছে জেঠিমা। উত্তমকুমার আর সুচিত্রা সেন। বৌদিদের একবার গিয়ে দেখে আসতে বল। আমার শাশুড়ি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। বউদের সাতে পাঁচে থাকতেন না। বললেন, "তা যাক না ওরা। তুই নিয়ে যাস। আমি ছেলেদের বলে রাখবখন।"


আমরা তো প্রহর গুনছি কখন সন্ধ্যে হয় আর কখন ঠাকুরপো এসে হাঁক পাড়েন। সাততাড়াতাড়ি সব কাজ সেরে রাখলাম। বিকেল বিকেল একেবারে তৈরি হয়ে বসে আছি। ওমা ঠাকুরপোর কোন পাত্তা নেই। সন্ধ্যার পর তিনজন মিলে গয়না খুলছি, ঠাকুরপো এসে বলে কিনা হঠাৎ কাজ পড়ে গিয়েছিল, তাই আসতে পারিনি। আমাদের তো খুব মন খারাপ। কোন কথা বললাম না। শাশুড়ি মা বুঝতে পেরে আমার স্বামীকে বললেন, "আহা বউগুলো সারাদিন আশা করে বসে ছিল। যা একদিন তুই ওদের দেখিয়ে নিয়ে আয় ওই কি একটা বই এসেছে শুনলাম।"

আমরা ওঁকে ধরলাম, "আপনিও চলুন মা।"

ছেলে মেয়ে খাবার-দাবার নিয়ে যাওয়া তো হলো, কিন্তু কী লজ্জা কী লজ্জা! শাশুড়ির পাশে বসে সারাক্ষণ ভাবছি কতক্ষণে এখান থেকে বেরোবো। ওমা তাকিয়ে দেখি উনি ঘুমোচ্ছেন। বাকি সিনেমাটা মনের আনন্দে দেখলাম।

আমি বাড়ি ফিরে জিজ্ঞেস করলাম, "মা আপনি ঘুমোলেন? দেখলেন না?" উনি বললেন, "ও বাবা অত দুঃখ আমার ভালো লাগেনা"।


বাগবাজারের সুবর্ণলতার বাড়িতেই ঢুকে পড়েছিল সিনেমার হাওয়া।

"আমার ভাসুরপো সিনেমা পাগল ছিল। উল্টোরথ পত্রিকা কিনে কিনে আনত। আমার বড় জা ছেলের এইসব অনাসৃষ্টি সহ্য করতে পারত না। কিন্তু আমার তো তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। ওই বই বাড়িতে আসা মাত্র উসখুস শুরু হয়ে যেত আমার। লুকিয়ে পড়তে গিয়ে কতবার যে বরের হাতে ধরা পড়েছি। উত্তম কুমারের ছবির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে কি রেগেই না যেতেন উনি। উনি কেবলই মনে করতেন উত্তমকুমারের জন্যই নাকি আমার ওঁকে পছন্দ হয়নি। কিছুতেই বলে বোঝানো যেত না। উল্টোরথ না পড়ার জন্য কতবার যে উনি আমার মাথার দিব্যি গালিয়েছেন তার ঠিক নেই।

ননদ কে নিয়ে বরকে লুকিয়ে দুপুরের শোতে দেখতে গেলাম সপ্তপদী। বই দেখে তো মুখ দিয়ে কথা সরছে না কারো। কী যে পাগল পাগল লাগছিল কি বলবো। এমন করে কি সত্যি সত্যি কেউ অপেক্ষা করতে পারে কারও জন্য? বাস্তবে এসব হয় নাকি?

আমার ননদ বলল, ও নাকি সুচিত্রা সেনকে দেখেইনি। ঘোর কাটতে বেশিক্ষণ লাগলো না।

বাড়ি এসে দেখি অপেক্ষা করেই আছে বটে। একেবারে হৈ হৈ কাণ্ড। বাস্তবে যে সত্যিই এসব কিছু হয় না সেদিন ভালোমতো প্রমাণই দিয়েছিলেন আমার স্বামী।



সুচিত্রা সেনকে সহ্য করতে পারতেন না রায়বাড়ির সুবর্ণ। "আমার বাপের বাড়িতে সিনেমা দেখার চল ছিল না। বাবা স্কুল ছাড়া কোথাও বেরোতে দেননি। উত্তম-সুচিত্রার প্রথম সিনেমা দেখেছিলাম সাগরিকা। সবে তখন বিয়ে হয়েছে আমার। দেখে তো হিংসেয় জ্বলে পুড়ে গেলাম। আমার কর্তাটি এক্কেবারে ছিল সিনেমার পোকা। বাংলা হিন্দি সব সিনেমা দেখতেন আর সুচিত্রা সেন বলতে অজ্ঞান ছিলেন।এইজন্যই আমার আরো রাগ হতো। আমি কোনদিন সিনেমা দেখিনি বলে খুব খেপাতেন আমাকে। একবার সপ্তপদীর টিকিট নিয়ে এসেছেন আর আমি যেই শুনলাম সুচিত্রা সেন আছে, ভাবলাম, যাব না। তারপর মনে হলো, আমি না গেলেও উনি তো যাবেনই। একা একা হলে বসে হাঁ করে দেখবেন। মাঝখান থেকে আমারই বরং উত্তমকুমারকে দেখা হবে না"। বলতে বলতে সে দিনের দুষ্টু হাসিটা আবারও খেলে গেল সুবর্ণর চোখে।


আহিরীটোলার সুবর্ণলতার বিয়ে হয়েছিল ধানবাদে। আজও নিজের দুর্দশার কথা স্মরণ করে বিরাশি বছরের ভুরু কুঁচকে যায়। অশীতিপর হাতে চোখ থেকে চুল সরিয়ে সেই পুরনো ঝাঁঝেই বলে ওঠেন, কী পাল্লায় না পড়েছিলাম। রাতদিন শ্বশুর মশাই গলা ফাটিয়ে যাত্রার মহড়া দিচ্ছেন সারা পাড়ার লোক জুটিয়ে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পিলে চমকে যাবার জোগাড়। বিয়ের আগে কত সিনেমা থিয়েটার দেখেছি। ওই বাড়িতে গিয়ে সব সখ-আহ্লাদ ঘুচে গেল। কী বন্দি জীবন ছিল বাবা। বিনোদন বলতে চিকের আড়ালে বসে শ্বশুরের যাত্রা দেখা।

এরা একবার যখন শুনলেন আমি বাপের বাড়ি গিয়ে সপ্তপদী দেখে এসেছি তার ওপর আবার উত্তম কুমারের বই তখন বেজায় বিরক্ত হলেন। আবার হাসাহাসিও করলেন। আমার শ্বশুর প্রায়ই বলতেন, উত্তম সেদিনের ছোকরা। ওকে দেখার জন্য লোকে পাগল হয়ে গেল। কিছুই জানেনা অভিনয়। যত্তসব । মেয়ে গুলো সব নষ্ট হয়ে গেল।

সেই থেকে আমার বাপের বাড়ি যাওয়াই বন্ধ হল।


এক বকুল তার মা সুবর্ণ কে কোনদিন ক্ষমা করতে না পারার অপরাধবোধে ভোগেন এখনো ।

সপ্তপদী'র কথা বলতে বলতে বকুল ফিরে যান সেই স্মৃতিতে।

"মা যাচ্ছিল সিনেমা দেখতে। আমাদের বাড়ি থেকে মেয়েরা দলবেঁধে সিনেমা দেখতে যেত। ঘোড়ার গাড়ি ডাকা হতো। ছোটদের সঙ্গে নেওয়ার নিয়ম ছিল না। ঠাকুরদার হুকুম।

আমরা তখন দশ কি এগারো বছর বয়স। খুব জেদ ধরেছিলাম মায়ের সঙ্গে যাবো। কিন্তু আমার মায়ের কোনো উপায় ছিল না। আমি ছুটে গাড়িতে উঠতে গিয়েছিলাম। গাড়ি তখন চলতে শুরু করেছে। মা আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় আর গাড়িটা চলে যায়।

আমার এই ধারণাই রয়ে গেল, মা ইচ্ছে করে ঠেলে দিয়েছিল আমায়।

এর পর কতদিন যে মায়ের সঙ্গে কথা বলিনি। মায়েরও সেই শেষ সিনেমা দেখা। আর যায়নি কখনো হলে। এমনকি টিভিতে সিনেমা দেখালেও এটা-ওটা কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকতো মা"।


"আমাদের শ্রীরামপুরের বাড়িতে বাবার ছিল কড়া শাসন। বাবাকে লুকিয়ে আমরা তিন বোন মিলে সিনেমা দেখতে যেতাম। তিনতলা থেকে চটি ফেলত দিদি। আমরা নিচে সিঁড়ির তলায় লুকিয়ে থাকতাম। বৈঠকখানার ঘরে থাকতেন বাবা। কোনরকমে দৌড় দিতাম। মা বেচারি ছিল খুব ভালো মানুষ। অমন ভালো মানুষের ওপর অমন বাঘের মত বাবাকে সামলাবার দায়িত্ব দিয়ে যেতাম। আমরা যতক্ষণ না ফিরতাম মা দুর্গা নাম জপ করতো।

এই রকম চলতে চলতে আমার ষোল বছর বয়সে বিয়ে হলো। বিয়ের সাত দিন আগে সপ্তপদী বইটা এল কাছেই একটা হলে। আমাদের তিনজনের একসঙ্গে দেখা সেই শেষ সিনেমা।

সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরে এসে তিনজন খুব কাঁদলাম। ওরা কেন কাঁদছিল জানিনা। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি যেন ওই ছবিটা ছেড়ে বের হতে পারছিলাম না। এত ভালো কি সত্যি কেউ বাসতে পারে? আমি কাল যার ঘরে যাব সে কি কোনদিন পারবে এত ভালোবাসতে?

আয়নার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হেসে ফেললাম, ওরে তুই কি সুচিত্রা সেন ভাবছিস নাকি নিজেকে? চেহারাটা একবার দেখ"।

বলতে বলতে আঙুলে শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে পানের পিক মুছতে মুছতে ফিক করে হেসে ফেলেন পঁচাত্তরের সুবর্ণলতা।


" ফুলশয্যার রাতে উনি আমাকে বললেন, কবে থেকে চলছে এসব?

আমি ভয়ে মরি। কি আবার চলছে রে বাবা!

উনি বললেন, আমি দেখেছি তোমাদের সিনেমা হলে। আমার তো তখন ধরণী দ্বিধা হও অবস্থা।

উনি আমার ভয় ভাঙিয়ে দিয়ে বললেন, এবার থেকে আমার সঙ্গেই যেও। তুমি তোমার উত্তমকুমারকে দেখবে আর আমি সুচিত্রা সেনকে। কেমন?

আমি বললাম, ধ্যাত্।"

সুবর্ণ এখনো রাঙ্গা। বললেন, কী যে সব পুরনো কথা জিজ্ঞেস করো। ধ্যাৎ .....


Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page