অনুবাদ কবিতা - এমিলি ডিকিনসনের কবিতা
- শুভাশিস ভট্টাচার্য
- Apr 14, 2022
- 2 min read
আমেরিকান কবি এমিলি ডিকিনসনের জন্ম ১৮৩০ সালে। তিনি জীবনের সারমর্মের সন্ধানে, শব্দের বাহুল্য বর্জিত এক নিজস্ব কবিতা শৈলী তৈরি করেছিলেন, যাতে তিনি ক্রিয়াপদ এবং অব্যয় অবহেলায় বাদ দিয়ে, ভাঙা ছন্দ, ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে এক নূতন প্রকাশ-রীতির প্রচলন করেন, যা উনিশ শতকের সমসাময়িকদের তুলনায় একেবারে আলাদা এবং বৈপ্লবিক ছিল।
তাঁর প্রায় আঠারো-শত কবিতার মধ্যে কেবল দশটি কবিতা তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল বলে জানা যায়। বাকি কবিতাগুলি তাঁর মৃত্যুর পর বোন লাভিনিয়ার সহায়তায় প্রকাশিত হয়। তিনি তাঁর কবিতায় যেরকম ছন্দের ব্যবহার করেছিলেন তা সেই সময় স্বীকৃত না হলেও, আধুনিক কবিরা ব্যবহার করেছেন।
এমিলি ডিকিনসন জীবনের অন্তর্দর্শনের রহস্যময়তার কবি। তাঁর কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে মানুষের অন্তর্জগতের দ্বন্দ্ব, ভালবাসা, ধর্ম এবং অমরত্ব সম্পর্কে সংশয়। তাঁর কবিতায় প্রায়শই মৃত্যু এসেছে প্রেমিকের রূপে। প্রেমের স্নিগ্ধতার সাথে মিশে গেছে আবেগের তীব্রতা। সে প্রেম জাগতিক না আধ্যাত্মিক তা বিচারের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দেয়াই সমুচিত।
১
জীবন সুরা (২১৪)
পৃথিবীর সমস্ত শুঁড়িখানা ঘুরেও -
পাবেনা খুঁজে এমন শরাব কোথাও !
মুক্তা-খচিত সুরা-পাত্রে - করেছি পান -
এই সুরা - যা কখনো হয়নি নির্মাণ -
মত্ত হয়েছি আমি - হাওয়ায় হাওয়ায়-
নষ্ট হয়ে যাই- শিশিরের নেশায় -
অন্তহীন চৈতালি দিনের আহ্বানে-
আকাশের তরল নীল শুঁড়িখানায়-
যখন মধুকুঞ্জের মায়খানায় হয় বিরতি -
মাতাল মৌমাছিকে ফিরিয়ে দেয় সাকি -
আর পানপাত্র নামিয়ে রাখে প্রমত্ত প্রজাপতি
তখন আমি মাতাল হব- আরও- আরও বেশী
যতক্ষণ না ঋষিরা উঁকি মারে জানালায়
আর কুর্নিশ করে ফেরেশতারা টুপি দুলিয়ে
সবাই ছোট্ট এই মাতালটাকে দেখতে চায়
যে আছে দাঁড়িয়ে- সূর্যের গায়ে হেলান দিয়ে–
২
যখন আমি মারা গেলাম ( ৫৯১)
যখন আমি মারা গেলাম-
শুনলাম মাছির ভনভন, আশেপাশে -
নেমে এলো স্তব্ধতা - ঘরের ভিতর - - থমকে গেল সময়-
যেমন স্তব্ধ হয় পৃথিবী ঝড়ের আভাষে।
অশ্রুপাত শেষ হলে– শুকনো হল সব চোখ-
ভারী ও স্থির হল নিশ্বাস - আমার ঘরে--
কত আয়োজন - শেষের যাত্রা হবে শুরু -
যখন রাজা এসে বসবে আমার শিয়রে
বিলিয়ে দিলাম যা কিছু অর্জন জীবনের--
যা কিছু আমার সবই দিয়ে দেওয়া যায়--
যা কিছু অর্পণীয় -- আর তারপরেই--
মৃত্যু এলো বুঝি মাছির ডানায়—
তার নীল– অনিশ্চিত- হোঁচটে ভনভন
আলো আর আমার মাঝখানে—তার আসা যাওয়া-
ক্রমশ, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল ছায়া, যখন
হারিয়ে গেল - আমার সমস্ত ‘দেখতে পাওয়া’।
৩
অমরত্বের রথ (৪৭৯)
মৃত্যুর জন্য দাঁড়াতে পারি নি তাই--
মৃত্যু এসে দাঁড়াল আমার পাশে--
থেমে গেল তাঁর রথ। শুধুমাত্র আমরা--
এবং অমরত্ব আমাদের আকাশে।
ধীরে ধীরে চলল আমাদের রথ--
কোনও তাড়া নেই বুঝি তাঁর আজ --
তাঁর সৌজন্যে-- আমিও ভুলেছি
আমার সমস্ত কাজ এবং অবকাশ ।
পেরিয়ে এলাম খেলায় মত্ত শিশুদের--
ছুটির ঘণ্টা বুঝি পড়েছে সেখানে।
পেরিয়ে এলাম ক্ষেত সোনালী ধানের--
পেরিয়ে এলাম অস্তগামী সূর্য --দিনান্তের -
অথবা বুঝি - সেই পেরিয়ে গেল আমাদের--
ক্রমশ হিমের পরশ লাগে শরীরে—শীতল--
আমার যৎসামান্য পোশাক-- জীর্ণ--
অন্তর্বাস ছিঁড়ে ছুঁয়ে যায় অনন্ত অতল--
পথের শেষে এলাম বুঝি শুরুর শুরুতে
মাটির কাছাকাছি-- আকাশের কোলে
আগুনের স্পর্শ নিয়ে-- হাওয়ায় হাওয়ায়
চিতা ভস্মে ভেসে গেলাম বহমান জলে--
তারপর-- কেটে গেছে হাজার বছর--
তবু যেন মনে হয়-- এ সবই সদ্য ঘটে যাওয়া
বুঝি এতদিনে আমি বুঝতে পারলাম
ঘোড়ার কেশরে ছিল অনন্তের হাওয়া--
Comments