গল্প - জাদু-দণ্ড
- পার্থ সেন
- Apr 6, 2022
- 11 min read
দরজাটা বন্ধ থাকলে ঘরটা একদম অন্ধকার হয়ে যায়। পাশে খাটে শুয়ে দু’বছরের অরিন্দম একমনে খেলনা গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। নানা ভিন্ন শব্দে’র ক্যাকোফোনি শুনতে শুনতে চোখ লেগে গেছিল সুপ্রীতা’র। তবে ওর ঘুম পাতলা, হাল্কা একটা আওয়াজে তন্দ্রাটা কেটে, বোধহয় রান্নাঘরের কাছ থেকে। চার্লি’র বয়স হয়েছে, দুপুরের দিকে এই সময়ে ও ঘুমিয়ে পড়ে। সুপ্রীতা উঠতে গিয়েই নজরে এলো, দরজার পাল্লাটা খোলা। কি করে হল? সে নিজে দরজা’র পাল্লা একটা অন্যটার ওপর চাপিয়েছিল। তাহলে? তীর্থস্যার বলেছিলেন ভয় পেলে মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায়! কিন্তু ভয় তো সে পায়নি? তাহলে আবার সে উপদ্রব শুরু হল। সহসা ঘুরে তাকাল অরিন্দম’র দিকে। একমনে সে সেই জাদুদন্ডটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। সমস্ত শক্তি, সাহসকে এককরে সুপ্রীতা দরজা খোলে।
ঘরের বাইরের প্যাসেজটায় অনেক আলো। পা টিপে সন্তর্পণে সে এগোয়। বুকটা ধড়াস করে ওঠে এবারে? যা ভেবেছিল তাই? বাথরুমের দরজা খোলা আর হাল্কা সরু হয়ে একটা জলের ধারা মাটিটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে আর একবার সজোরে ধাক্কা লাগে বুকের ভেতরে! ভেজা মাটির ওপর স্পষ্ট পায়ের দাগ! তাহলে? কেউ কি ঢুকেছে ফ্ল্যাটে? তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে পা চালিয়ে ঢোকে রান্নাঘরে। আর এবারে চোখের ওপর থেকে কে যেন পলকে সব দৃষ্টি ছিনিয়ে নেয়! কয়েক সেকেন্ড বাদে মানসিক আর শারীরিক নিয়ন্ত্রণ ফিরলে বুঝতে পারে দুটো জিনিস হয়ে গেছে। এক, অজান্তে কেউ রান্নার চুল্লি জ্বালিয়ে দিয়েছে, আর দুই বারো বছরের চার্লি রান্নার ঘরের মেঝেতে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। তবে শোওয়া’র ধরণ জানান দিচ্ছে সে সংজ্ঞাহীন। কোনমতে রান্না’র চুল্লি নিভিয়ে চার্লির মাথাটা সে দুহাতে তুলে নেয়, কেমন এলিয়ে পড়েছে সারা দেহ! ভেতরটা খালি হয়ে যায় সুপ্রীতা’র, শুধুকি সংজ্ঞা নাকি সে প্রাণও হারিয়েছে? এবারে ভেতরের ঘর থেকে একটা গানের আওয়াজ ভেসে আসে, “ইন্সি উইন্সি স্পাইডার”! কোথা থেকে আসছে আওয়াজ? দরজা বন্ধ থাকলে এখান অবধি তো আওয়াজ আসে না! সে নিজে অরিন্দম’র ঘরের দরজা বন্ধ করে এসেছে তাহলে আবার দরজা খুলল কে? ভয়, শঙ্কা একলহমায় সুপ্রীতা’র পুরো আত্মবিশ্বাসটাকে যেন সহসা ব্লটিং কাগজে শুষে ফেলল। চার্লিকে ফেলে সে দৌড়ল ঘরের দিকে।
সর্বশক্তিকে এককরে দরজায় প্রচন্ড ধাক্কা মারতেই অরিন্দম’র ঘরের দরজাটা খুলে গেল। বড্ড অন্ধকার! কোনমতে ডানদিকে হাত দিয়ে সুইচবোর্ড খুঁজে আলো জ্বালায় সে! অরিন্দম’র দিকে নজর যায়, সহসা দরজা খোলার বিকট আওয়াজে সেও একটু অস্থির হয়ে উঠে বসেছে। তবে কেমন কিছু নয়, শক্ত হাতে জাদুদন্ড ধরা! অরিন্দমকে খাট থেকে তুলে নিয়ে দুহাতে নিজের সঙ্গে আবব্ধ করে সে। আর ঠিক এই সময়ে হঠাৎ করে আলোটা নিভে যায়! ঘন অন্ধকার গ্রাস করে ফেলে দুচোখকে, তবু পেছনে ঘোরে সে! আর একটা ধাক্কা লাগে যেন একটা মানুষের সঙ্গে। সুপ্রীতা টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়, তবে ছাড়েনি অরিন্দমকে।
[ক]
সাড়ে ন’টার একটু আগে ঝুপ করে সারা পাড়াটা অন্ধকার হয়ে গেল। বাইরের ঘরটায় বসে তীর্থবাবু এই সময়ে পড়াশোনা করেন। লোডশেডিং হয়ে গেলে আর পড়াশোনা হয়না। আসলে জোরালো আলোটা চলে গেলে বইয়ের পাতার অক্ষরগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। বই বন্ধ করে অন্য ঘরে আসবেন ভাবছেন, ঠিক এই সময়ে ঘরের দরজায় আওয়াজ। হাতঘড়িটায় আঙ্গুলের স্পর্শে দেখলেন সময় দেখাচ্ছে ন’টা একুশ। এই সময়ে, আবার কে? গলা চড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে? কাকে চাই?”
বেশ কয়েক সেকেন্ড বাদে উত্তর পেলেন, “স্যার, আমি রাঘব!”
রাঘব’কে তীর্থবাবু চেনেন। রাঘবের বছর পঁয়ত্রিশের আশেপাশে, ইনসিওরেন্স কোম্পানীতে চাকরী করে, অবশ্য তীর্থবাবু’র কাছে ইনসিওরেন্স বিক্রী করতে আসতেন না! রাঘবের স্ত্রী সুপ্রীতা হল তীর্থবাবু’র ছাত্রী। একদিন হঠাৎ করেই রাস্তায় দেখা হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী কাছেই গড়িয়া’র একটি বাড়ীতে থাকে। তো সেই সূত্রেই রাঘবের সঙ্গে তীর্থবাবুর পরিচয় হয়, তারপর আস্তে আস্তে বাড়ীতে আসা শুরু হয়। তীর্থবাবু ছিলেন কলকাতা’র একটি কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক। এখন অবসর নিয়েছেন। আর একটা জিনিস না বললে তীর্থবাবু’র সঙ্গে রাঘবের ঘনিষ্টতা’র কারণ বলা হয়না। তীর্থবাবু একটু আধটু হাত দেখতে জানতেন, মানে এখনো পরিচিত মহলে দেখেন। কোন রকম ব্যবসার জন্য নয়, ভালো লাগে বলে। আর রাঘবের হলো গিয়ে একেবারে অন্ধবিশ্বাস। তারপর, যেমন হয় আর কি! তা বছরখানেক আগে পর্যন্ত খুব যাতায়াত ছিল, এখন একটু কমে গেছে।
তীর্থবাবু দরজা খুললেন, “রাঘব কেমন আছো? এতো রাতে? সব ঠিক ঠাক তো?”
অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তরে রাঘব স্বল্প হাসে, “স্যার একটা ব্যাপারে একটু পরামর্শের দরকার ছিল, তাই চলে এলাম! আসলে সারা দিন যা যায় একদম সময় পাইনা!”
“ভালো করেছ! এসো, ভেতরে এসো”
তীর্থবাবু এবং তাঁর স্ত্রী রাঘবকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। রাত হয়ে গেলেও অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা হল,
“রাঘব তোমার ছেলে কেমন আছে?”
“ভালো আছে! আসলে রোজই ভাবি আপনার বাড়ি আসব, কিন্তু একাজ সেকাজে আশা হয়না”
বেশ মিনিট দশেক কথার পর তীর্থবাবু একটা কথা বুঝতে পারলেন রাঘব কিন্তু কোন কারণে বেশ ডিস্টার্বড! মানে কেমন যেন একটা চিন্তিত, অমনোযোগী ভাব, তারপর চেহারাটাও কেমন অবিন্যস্ত! মুখে খোঁচা দাড়ি, জামাকাপড় কেমন যেন এলোমেলো। সাইত্রিশ-আটত্রিশ বছর ধরে ছাত্র পড়িয়েছেন তিনি। তাই রাঘবের মনের অস্থিরতা বুঝতে তেমন অসুবিধা হয়নি তাঁর। তাই স্ত্রী অন্য ঘরে চলে গেলে আর সময় নষ্ট করেননি, “তোমাকে দেখে আমার ভালো লাগছে না! সব ঠিক আছে তো?”
রাঘব যেন সেই প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষা করছিল, “স্যার আমাদের খুব সমস্যা চলছে! খুব বিপদ! জানিনা, কিকরে সমাধান হবে!”
“তোমাদের বিপদ? কি হয়েছে তোমাদের?”
“আমাদের খুশীই যে আমাদের বিপদ, কি করে বলি অন্য কাউকে? আর কেউ বিশ্বাসও করবে না!”
“কি হয়েছে রাঘব? তুমি খুলে বলোতো আমায়!”
বেশ বার তিনেক নানান ভাবে আশ্বস্ত করার পর পরবর্তী মিনিট পনের’র রাঘবের সাথে কথা বলে তীর্থবাবু ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। গত অক্টোবরের ১৪ তারিখ ওদের ছেলে এবং সুপ্রীতা দুজনেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছেলের জ্বর এবং সুপ্রীতা’র বারে বারে বমি এবং নানান শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। হাসপাতালে দিতে হয়। একটু ঠিক হয় কিন্ত এর দুদিন বাদে আবার সেই রকম সমস্যা আবার ফিরে আসে। ডাক্তার যদিও ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দেননি তবে রাঘবের চিন্তা বাড়তে থাকে। পাঁচদিনের মাথায় ছেলেসমেত হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার দিনে সুপ্রীতা’র তেড়ে জ্বর আসে। প্রায় একশো চার, মানে একেবারে যায় যায় অবস্থা। যাহোক সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে সুপ্রীতা এবং ছেলে বাড়ি আসে। কিন্তু সুপ্রীতা’র শরীর ক্রমেই ভেঙ্গে পড়তে থাকে। ছোটোখাটো শরীর খারাপ লেগেই থাকে। শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দেয়, রক্তচাপ কমে যায়। এবারে যেটা বিশেষভাবে উল্লেখ্য সেটা হলো সুপ্রীতাকে সাহায্য এবং বাচ্ছাকে দেখাশোনা করার জন্য তারা এক মহিলাকে নিয়োগ করেছিল। তিনিও দিন পনের বাদে কাজ ছেড়ে দেন এবং কাজ ছেড়ে দেবার কারণ হিসাবে বলেন তিনি নাকি ওদের বাড়ীতে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন হতেই পারে সেই মহিলা’র হয়তো কোন সমস্যা ছিল আর সেজন্য তিনি কাজ ছেড়ে দেন! কিন্তু নতুন যিনি এলেন, তিনিও এগারো দিনের মাথায় কাজ ছেড়ে দেন এবং তিনিই প্রথম ব্যাপারটা রাঘব আর সুপ্রীতা’র মাথায় ঢুকিয়ে দেন।
গড়িয়া’র ‘চিল্কা’ ফ্ল্যাটের সেই তিনতলার ঘরে ‘ভৌতিক কিছু আছে’! মাঝে মাঝে নাকি বন্ধ করে রাখা দরজা খুলে যায়, মাঝে মাঝে নাকি বাথরুমের জল নিজে থেকে চালু হয়ে যায়, এমনকি রান্নার চুল্লিও নাকি নিজে নিজেই আগুন জ্বালিয়ে ফেলে। আর তারপর থেকেই ভয় দানা বাঁধতে শুরু করে। ঠিক পাঁচদিন আগে আর এক মোক্ষম ঘটনা ঘটে। অফিস থেকে ফিরে রাঘব দেখে সেই ভয়াবহ দৃশ্য! সুপ্রীতা খাটে অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে, আর পিঠের কাছে একটা ক্ষত! সেই ক্ষত থেকে স্বল্প রক্ত বেরোচ্ছে! আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, দুই বছরের সেই ছেলে মায়ের পাশে শুয়ে একমনে খেলছে, তার যেন কোন হেলদোল নেই! আর তার ঠোঁট দুখানি লাল রক্তে রঞ্জিত আর মুখের হাসিটা কেমন কঠিন, নৃশংস! স্বামী-স্ত্রী’র মনে আর কোন সন্দেহ থাকেনা যে, তাঁদের সন্তান নিশ্চয়ই অভিশপ্ত! তাহলে এই ভৌতিক লক্ষণযুক্ত সন্তানের হাত থেকে বাঁচা কি সম্ভব? সুপ্রীতা’র বাবা-মা দুজনেই গত হয়েছেন, আপন বলতে তেমন কেউ নেই। রাঘবের মা আছেন, তবে তিনি অনেকটাই বয়স্ক! তিনি কতটা পরামর্শ দিতে পারবেন সেটা জানা নেই। তাই শেষ আশা ‘তীর্থস্যার’।
ঘড়িতে প্রায় দশটা, ইতিমধ্যে অবশ্য আলো জ্বলে উঠেছে। রাঘবের কেমন একটা বিধ্বস্ত অবস্থা। সামনে রাখা চায়ের কাপ আর একটা প্লেটে রাখা মিষ্টিগুলো যেভাবে দেওয়া হয়েছিল সেভাবেই পড়ে আছে। সত্যি! এ আবার কেমন রহস্য? তীর্থবাবু প্রথম কথা বললেন,
“দেখো রাঘব তুমি যেটা বলছ, সেটা বাস্তবে সম্ভব নয়। মানুষের ওপর আত্মা ‘ভর’ করা, তারপর ‘ঝাড়াঝুড়ি’ করে সেই ভূত তাড়ানো সেসব আজও থেকে চারশো – পাঁচশো বছর আগে হতো! এখন আর হয়না। আর সেসবের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখ্যাও নেই! তাই আমার মনে হয় তোমাদের বুঝতে কোন ভুল হচ্ছে। কোন কারণে একবার ভয় পেয়েছ তারপর থেকে কিছু ঘটলেই সেটাকে তোমরা বাচ্ছা’র সাথে কানেক্ট করিয়ে ফেলছ!”
বেশ কষ্ট করেই রাঘব কথা বলল, “কিন্ত স্যার, আগে এইসব হতো না! আমি নিজে দেখেছি বাথরুমের নল থেকে জল পড়ছে! কি করে সম্ভব?”
“দেখো, মানুষ ভয় পেলে তখন অনেক কিছু ভুলেও যায়! হয়তো সুপ্রীতা জল খুলেছে তারপর ভুলে গেছে! ঠিক আছে আমি কাল সকালে তোমার বাড়ী যাবো! দেখি গিয়ে!"
[খ]
তীর্থবাবু গোয়েন্দা নন, তবে একটি দুই বছরের বাচ্ছাকে ‘ভূত’ সন্দেহ করাতে তাঁর ঘোর আপত্তি। সারা জীবনের প্রচুর পড়াশোনা, দেশী-বিদেশী সাহিত্য গুলে খেয়েছেন। এইরকম জিনিস সিনেমাতে দেখেছেন, গল্পের বইতে পড়েছেন, কিন্তু তা’বলে আজকের দিনে এই জিনিসের অস্ত্বিত্ব বিশ্বাস করতে পারেননি। পরদিন সকালে গড়িয়াতে ছাত্রীর বাড়িতে যখন পৌঁছলেন ঘড়ির কাঁটা তখন দশ’টা পেরোয়নি। রাঘবকে দেখে তাঁর যতটা বিধ্বস্ত লেগেছিল তার চেয়ে দশগুণ বেশী বিপর্যস্ত লাগল সুপ্রীতাকে দেখে। হাসিখুশী, মিষ্টি স্বভাবের সুপ্রীতার জীবনের সব রঙ কেমন চলে গেছে। কেমন একটা প্রাণহীন শরীর, চোখে, মুখে উজ্জ্বলতা নেই, যেন বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গেছে! নিজে ডাক্তার নাহলেও এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি সুপ্রীতাকে হয় কোন কঠিন অসুখে ধরেছে অথবা অচিরেই ধরবে।
তীর্থবাবু বিচক্ষণ মানুষ, ঠাণ্ডা মাথা, চারদিক ভালো করে দেখলেন। ছোট দু-কামরার ছিমছাম ফ্ল্যাট, এখানে তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে রয়েছে, আর পাড়াটাও বেশ নিরাপদ মনে হল। সুতরাং বাইরে থেকে এসে কেউ উপদ্রব করবে বা তাদের ভয় দেখাবে তার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। আর দেখাবেই বা কেন? বাড়ী ভাড়া হলে না’হয় ভাড়াটে’কে ভয় দেখিয়ে বাড়ীছাড়া করা আগে একটা রীতি ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা নেই। তাদের নিজেদের কেনা ফ্ল্যাট! বাথরুমের জলের লাইন নিরীক্ষণ করলেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। রান্নার চুল্লিরও কোন সমস্যা চোখে পড়ল না। একটা জিনিস নিশ্চয়ই নজরে পড়ল যেটা অবশ্য সুপ্রীতাও বলল, ওদের একটি বারো বছরের ল্যাব্রাডর কুকুর আছে, নাম ‘চার্লি’। সাধারণত এইটা দেখা যায় বাচ্ছা’রা কুকুরদের সঙ্গে খুব মিশে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রম। এখানে ‘চার্লি’ নাকি বাচ্ছার ঘরে ঢোকেই না! বাচ্ছাটিকে দেখলেই সে কেমন যেন কুঁকড়ে যায়! আগে নাকি এমন ছিল না! সব কিছুরই শুরু সেই অক্টোবরে শরীর খারাপের পর থেকে।
সবশেষে গেলেন তাকে দেখতে যাকে নিয়ে যত অশান্তি! স্বীকার করতে দোষ নেই এক মুহূর্তের জন্য তীর্থবাবু একটু ভয় পেয়েছিলেন। পাঁচদিন আগে যে বাচ্ছা’র ঠোঁট রক্তে রঞ্জিত ছিল, ‘সেকি তাহলে নরখাদক?’ মনে চিন্তাটা কাল রাত থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল, তবু এগোলেন তার ঘরের দিকে। না বললেও এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি, বিশেষকরে পাঁচদিন আগের সেই ঘটনার পর থেকে দু-বছেরের বাচ্ছাটিকে তার বাবা-মা কিন্তু ভয় পেতে শুরু করেছেন। আর তার পর থেকেই বাবা-মা আর তার সঙ্গে একঘরে থাকেন না।
যে কোন নবজাতককে প্রথম দেখতে গেলে সঙ্গে কিছু নিয়ে যাওয়া এ তাঁর অনেক পুরোনো স্বভাব। এই ছেলেটি হয়তো ‘নবজাতক’ নয় কিন্তু তীর্থবাবু আগে তাকে দেখেননি। বাড়ির পাশেই একটা গিফট শপ আছে, সেখান থেকে এবারে কিনেছিলেন ‘জাদুদন্ড’। একটা সুন্দর ধাতব দন্ড, মাথাটা একটু বড়, একটু নড়ে উঠলেই তা থেকে সুন্দর গান বেজে ওঠে। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা কাঠের খাট, পাশে একটি ছোট চেয়ার, টেবিল। এদিকে ওদিকে চরম অনাদরে রাখা কয়েকটা খেলনাও চোখে পড়ল। বাচ্ছাটির হাতে জিনিসটি দিলেন। তারপর তাতে একটা ছোট টোকা দিতেই সুরেলা শব্দ বেজে উঠল। কিন্তু প্রথমবার বাচ্ছাটিকে দেখতে তীর্থবাবু কিন্তু আগের সব অভিযোগ ভুলে গেলেন। ধবধবে ফর্সা, বেশ মোটাসোটা বাচ্ছা, একমাথা ঘন কালো চুল, সেই সুরেলা জাদুদন্ডটিকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই ছেলেকে ‘অশুভ’ আখ্যা দেওয়া হয় কি করে? তীর্থবাবু জিজ্ঞাসা করলেন,
“কি নাম তোমার?”
‘অরিন্দম’।
“বাহ! সুন্দর নাম! তোমার নামের নামে যান?”
সে মাথা নেড়ে ‘না’ বলল।
“অরি মানে শত্রুকে দমন করেন যিনি”
প্রসঙ্গত আরো বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট জানা গেল। যেমন এর নাকি কান্নার তেমন ধাত নেই, এইযে গত পাঁচদিন যাবত সে আলাদা একটি ঘরে রয়েছে, মা-বাবাকে সবসময়ে দেখতে পারছে না, তাতেও তার তেমন বিরোধ নেই। খাবারে তেমন বাদবিচার নেই। যা দেওয়া হয় তাই খায়, না দিলে একটু আধুটু চেঁচামেচি করে, তবে তেমন কিছু বাড়াবাড়ি নয়। বেশ আধ ঘন্টা-পয়তাল্লিশ মিনিট পর সুপ্রীতা’র মনের কথাটা জানতে পারলেন তীর্থবাবু।
“স্যার আমরা ভাবছি ওকে যদি কোন অনাথআশ্রমে দিয়ে আসি”
“এ আবার কি কথা?”
“স্যার, আমরা আর পারছি না! সবসময়ে একটা ভয়, এইভাবে থাকলে তো এমনিতেই কিছু একটা হয়ে যাবে”
“যে সমস্যা’র জন্য ওকে অনাথআশ্রমে দিতে চাইছ, সেই সমস্যাতো অনাথআশ্রমে দেওয়ার পরও হতে পারে! তখন তো বাড়ীতে পুলিশ আসবে!”
“তাহলে স্যার রাতের অন্ধকারে…”
কথা শেষ হতে দেননি তীর্থবাবু, “ছিঃ, ওসব ভুলেও ভেবো না! এটা একটা প্রবলেম, সেটাকে অ্যাড্রেস করো, এটাকে সরাতে আর একটা প্রবলেম ডেকে এনোনা! দেখো ‘অরিন্দম’ একটা দুই বছরের নিষ্পাপ শিশু! তার সম্পর্কে এইরকম কথা বলছ তুমি মা হয়ে? এটা কি করছ?"
“স্যার এমনও তো হতে পারে হয়তো ও মেন্টালি অনেকটা অ্যাডভান্সড! মানে ওর মানসিক বয়স হয়তো অনেক বেশী!”
“খুব বেশী ইংরাজি সিনেমা দেখছ? ওসব সিনেমাতে হয়, বাস্তবে হয়না! তার ধরে নিলাম বাচ্ছার মেন্টাল এজ বেশী, তাহলে তো ওর তোমাকে কোন ‘ক্ষতি করা’ বা ‘ভয় দেখানো’ উচিত নয়। বরঞ্চ ‘মা’ হিসেবে তোমার অনেক যত্ন নেওয়া উচিত! তাই না?”
বেশ কয়েক সেকেন্ড বাদে সুপ্রীতা বলল, “স্যার, তাহলে একটা অনুরোধ রাখবেন!”
“বলো”
“ওর হাতটা একটু দেখবেন! অথবা জন্মতারিখ, লগ্ন দিয়ে কিছু জানা যাবে?
“এতো বাচ্ছা’র হাতের রেখা ফোটেনা, আর কুষ্ঠি বিচার করতে বলছ? এতো একটা শিশু!”
“কিন্তু স্যার, আমরা যে কি করি এখন?”
“একবার তোমার হাতটা একবার দেখি”
যদিও নিজে জ্যোতিষে খুব বিশ্বাস করেন না, তবু তীর্থবাবু’র ‘হাত-দেখা’ শেখার ‘গুরু’ রণেন-দা বলতেন, কয়েকটা পদ্ধতিতে নাকি জানা যায় যদি সহসা কোন বিপদের শঙ্কা অথবা সম্ভাবনা থেকে থাকে! সেরকম কিছু পেলে না হয়, ওঁর পরিচিত কিছু জ্যোতিষী আছেন, তাঁদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। খুব সময় দিয়ে, ইন্টারনেট ঘেঁটে বেশ অনেকক্ষণ ধরে সুপ্রীতা’র দুহাত পরীক্ষা করলেন। ফোনে দু-তিন জনের সঙ্গে কথাও বললেন। রাঘবের অফিসের সময় হয়ে গেছিল তাই তার হাত দেখার সময় পাননি। কিন্তু ওদের জন্মতারিখ জানতেন, সেসব নিয়ে অনেক হিসাব কষলেন। প্রায় দু-ঘন্টা ধরে এটা সেটা করে শেষপর্যন্ত যেটা বোঝা গেল,
“দেখো সুপ্রীতা, তোমার সন্তানস্থান তো খুব ভালো! বাচ্ছা’র দিক থেকে তোমার ক্ষতি হবার তো কোন সম্ভাবনা তো নেই! আর একটা কথা, বাচ্ছা’র সঙ্গে আলাদা থেকো না। ওকে নিজের কাছেই রেখো। আর রাঘব ফিরলে আমাকে একটা ফোন করতে বলো! তোমার দু-একটা মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে!”
তীর্থস্যারের পরামর্শমতো সুপ্রীতা এক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। পিঠের ক্ষতটা তিনি দেখেছেন, ‘কি করে হল’ বা অন্য কোন প্রশ্ন ডাক্তারবাবু করেননি। তীর্থবাবু আগেভাগে সবকিছু বলে রেখেছিলেন। শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয়েছে কিছু পরীক্ষা করার জন্য। রাঘব সঙ্গে আসতে পারেনি, অফিসের কোন কাজে আটকে পড়ায়। তীর্থবাবু সঙ্গে এসেছিলেন। তবে একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো, সুপ্রীতা যখন ডাক্তারের কাছে যায় সঙ্গে বাচ্ছাটিও গেছিল। এবং ডাক্তার যখন সুপ্রীতাকে পরীক্ষা করছিলেন ‘অরিন্দম’ তীর্থবাবুর কাছেই ছিল, আর তাকে সামলাতে তীর্থবাবুর কোন সমস্যা হয়নি! বরং কোন কোন সময়ে তিনি বেশ বুঝতে পারছিলেন দুই বছরের বয়সের তুলনায় ‘অরিন্দমের’ ম্যাচিওরিটি কিন্তু অনেকটাই বেশী। হয়তো মুখে কথা তেমন ফোটেনি কিন্তু হাবেভাবে তো বোঝা যায়!
মাঝে আর একদিন তীর্থস্যার এক ভেটানারী ডাক্তারকে নিয়ে এসেছিলেন সুপ্রীতা’র বাড়ি। ডাক্তার এসে ‘চার্লি’কেও পরীক্ষা করে গেছেন। তীর্থবাবু’র পরামর্শ মতো ‘অরিন্দম’ আবার মা-বাবা’র ঘরে ফিরে এসেছে। ‘অমূলক উপদ্রব’ মানে নিজেই জল চালু হয়ে যাওয়া বা গ্যাস ওভেন জ্বলে ওঠার মতো তেমন কিছু হয়নি। তীর্থস্যারের আসার পর থেকে আর কিছু না হোক একটা জিনিস হয়েছে সুপ্রীতা কিন্তু অনেক হারানো সাহস ফিরে পেয়েছে। গত মঙ্গলবার ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময় স্যার বলছিলেন, “মরার কথা ভেবোনা সুপ্রীতা! বাচ্ছাকে ছেড়ে দেওয়ার কথাও নয়। অশুভ, অলক্ষণ, ভূত এসব মানুষের মনের ভুল। তোমাদের দুজনকেই বাঁচতে হবে! আমি আছি তোমাদের সঙ্গে”। স্ত্রী’র হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে দেখে রাঘবও অনেকটা নিশ্চিত, খানিকটা ‘ব্যাক টু নরম্যালে’র মতো। তীর্থস্যার প্রায়ই ফোন করেন, খবর নেন, সময়ে উপদেশ দেন।
******
একটানা বিপ বিপ করে একটা শব্দ আসছে সমানে। বেশ তিন-চারটে মাথা সামনে নড়াচড়া করছে। কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে। আস্তে আস্তে ঠাহর হ’ল ব্যাপারটা। সুপ্রীতা জ্ঞান ফিরে পেলো, সামনে ঝুঁকে থাকা মুখটা চিনতে পারল সে। ‘তীর্থস্যার’!
“সুপ্রীতা তুমি একদম বিপদমুক্ত! আর কোন চিন্তা নেই”
কোনমতে ক’টা কথা বলতে পারল সে। “রাঘব, অরিন্দম আর চার্লি! ওরা কোথায়?”
তীর্থস্যার গলা শুনতে পেল, “চার্লিকে হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে দু-চার দিনে ঠিক হয়ে যাবে! অরিন্দম ঠিক আছে”
“রাঘব?”
“তোমাকে সব বলব, তুমি এখন রেস্ট করো”
“কি হয়েছে স্যার! রাঘবের কি হয়েছে?”
তীর্থস্যার কথাটা এড়াতে চাইলেন আর তাতে সুপ্রীতা সংজ্ঞাটা পুরোপুরি ফিরে পেল। “কি হয়েছে রাঘবের?”
পাশ থেকে একজন বেশ মোটা চেহারা’র লোক দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি বললেন, “আপনাকে সবকিছুই বলা হবে! তবে আপনি মন শক্ত করুন”
“সব কিছুই বলা হবে মানে?”
“গত পাঁচ মাস ধরে যে আপনি ভয় পাচ্ছিলেন এবং আপনার ছেলেকে নিয়ে আপনি যা কিছু খারাপ ভাবছিলেন তার মূল কারণ হলেন আপনার স্বামী! তিনি আপনাকে ভয় দেখিয়ে আপনাকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন! যাতে আপনি আপনার বাবা’র কাছ থেকে যা সম্পত্তি পেয়েছিলেন সব কিছুকে যাতে গ্রাস করা যায়। কারণ নানান ভাবে আপনাকে ভয় দেখাতেন। কখন বাথরুমের জল চালিয়ে, কখনো রান্নার গ্যাস জ্বালিয়ে। এবং আজও উনি অফিসে জাবার নাম করে বাড়ী থেকে বেরিয়েছিলেন তবে যাননি। অন্য চাবি দিয়ে দরজা খুলে আপনাদের কুকুরকে প্রথম সংজ্ঞাহীন করেন তারপর আপনাকে আক্রমন করেন। কিন্তু ধস্তাধস্তিতে নিজেই মাথায় চোট পান! এবং পরে…”
“মারা গেছে?”
ভদ্রলোক মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ জানালেন।
এবারে তীর্থবাবুর গলা শোনা গেল, “সুপ্রীতা আমার শুরু থেকেই সন্দেহ হয়েছিল। তোমার ইনজুরিটা পরীক্ষা করানোর সময় ডাক্তার বললেন এটা শার্প অবজেক্ট দিয়ে করা। তোমার বাচ্ছার এখনো শক্ত দাঁত ওঠেনি, তাহলে দাঁত ফুটিয়ে ‘ড্রাকুলা’র মতো রক্তচোষা’র বস্তাপচা কাহিনী প্রথমদিনেই আমার অবাস্তব লেগেছিল। তারপর তোমার রক্তের স্যাম্পেল বলছে তোমাকে দিনের পর দিন নানান রকমের খারাপ ড্রাগস দিয়েছে, যাতে তোমার শরীরে নানান সমস্যা তৈরি হয়। শরীর খারাপ হয়ে কিছু হয়ে গেলে আর কোন সমস্যা নেই, আর বাচ্ছাকে এমনিতেই তোমরা ‘অশুভ’ আখ্যা দিয়ে রেখেছ! তারপর ভেট ডাক্তার বললেন কুকুরকে এমন ওষুধ দিয়েছে যাতে বাচ্ছার কাছে গেলেই সে ওষুধের রিয়্যাকশন শুরু হয়ে যায়! আর তুমি ভেবেছ তোমার ছেলে অশুভ! তোমার ছেলের কোন সমস্যা নেই! ও সম্পূর্ণভাবে সুস্থ, মানসিক এবং শারীরিক ভাবে”
বেশ মিনিট খানেক সুপ্রীতা কথা বলতে পারেনি। চোখের কোণা চিকচিক করে উঠেছিল, তারপর কোনমতে সামলিয়ে সে বলল,
“স্যার! রাঘব মারা গেল কি করে?”
“মাথায় পেছনে হাতুড়ী জাতীয় কিছু দিয়ে মেরেছিলে তুমি?”
“আমি? আমি তো পড়ে গেছিলাম! তারপর তো আর কিছু মনে নেই!”
“তাহলে খাটে ধাক্কা লেগে…”
“কিন্তু আমাদের খাট তো ধাক্কা লাগার মতো নয়”
“কিন্তু সেটাই তো শুনলাম মাথায় চোট পেয়ে মারা গেছে! কিন্তু তোমার চিন্তার দরকার নেই! একজন অপরাধী, খুনীর হাত থেকে বাঁচবার জন্য আত্মরক্ষার স্বার্থে যদি তোমাকে একটা হাতুড়ী’র বাড়ি মারতে হয় সেটা কোন অপরাধ নয়! আমাদের দেশের আইন অন্তত সেই রকমই বলে! এবারে তুমি রেস্ট করো, আমরা বাইরে আছি”
ঘরের সবাই বাইরে বেরিয়ে গেলেন। কাছেই একজন নার্স এবারে অরিন্দমকে নিয়ে এলেন মায়ের কাছে। সপ্রতিভ, সেই চনমনে বাচ্ছটির হাতে ধরা সেই জাদুদন্ড! সে মাঝে মাঝেই সেটাকে ঝাঁকাচ্ছে, আর ভেসে আসছে “ইন্সি উইন্সি স্পাইডার ওয়েন্ট আপ দ্য ওয়াটার স্পাউট”! সুপ্রীতা সস্নেহে ছেলেকে ডেকে নিল কাছে। পাশে শোয়ালো সে, আর তখন দেখতে পেল।
সারা শরীরে দুহাজার ওয়াটের ঝটকা লাগল! অরিন্দমের হাতে ধরা জাদুদন্ডের মাথায় ছোপ ছোপ লাল দাগ! এই দাগ তার চেনা! সে জানে কখন এই জিনিসের দাগ শরীরে লাগে! তাহলে কি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে রাঘবের মাথায় সে জাদুদন্ডের বাড়ি মেরেছিল? কিন্ত জাদুদন্ডতো ছিল অরিন্দমের খাটে! তাহলে সেটাকে সে নিল কখন? তাহলে রাঘব কি সেটা দিয়ে ওকে আক্রমণের চেষ্টা করছিল? চিন্তা গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে!
সহসা মনে পড়ল অরিন্দমকে খাট থেকে তুলে নিয়ে নিজের সঙ্গে আবব্ধ করার সময় জাদুদন্ডতো অরিন্দমের হাতের মুঠোয় ধরা ছিল! তাহলে সেটাকে নিয়ে রাঘবকে আক্রমণ করল কে? সুপ্রীতা’র সারা শরীর ঝনঝন করে ওঠে!
এবারে ছেলের দিকে তাকাল সুপ্রীতা। দু-বছরের অরিন্দম একপলকে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। কিছু কি বলতে চায় সে? তীর্থস্যারের কথাটা মনে পড়ে যায় – ‘শত্রুকে দমন করে যে’ সেই তো অরিন্দম! তাহলে?
Comments