- প্রান্তিক গুহ রায়
তিনটি কবিতা
১
বাতাসিয়া লুপ
তোমরা বলেছিলে যাবে একদিন পাহাড়িয়া পথে
মেঘ ছুঁয়ে দেবে হাত বাড়ালে জানালা থেকেই ...
একটা সকাল থামিয়ে দেবে ...দুপুরটা ইউক্যালিপটাস
সন্ধ্যার দিকে কিছু পথ হাঁটা...মেঘে ঢাকা বাতাসিয়া লুপ
তারপর তোমাদের ক্লান্ত শরীর ...খেলনার রেলপথে আঁকাবাঁকা ,
এইসব বলেছিলে মনে হয় কয়েক শতাব্দী আগে ...
মেলাতে আর পারিনা কিছুই ...
এখনো তো কোলাহল ছেড়ে রাতের ট্রেন
পাহাড়ের কাছে পৌঁছে দেয় সওয়ারি ...
আমি মুখগুলো দেখি ,ট্রেনের জানালায়
তোমাদের আর খুঁজে পাই না কোনও খানে
শহরতলীর অর্ধেকরাত ট্রেনে ঘরে ফিরি আমি
সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করি .."পাহাড়ে গিয়েছিলেন?
ঘুমে আপনার ও কি ডালপালা মেলে থাকে তরাই ?"
তোমাদের শৈলবাসর ছুঁয়ে থাকি অবচেতনে ...
বরফ পড়ে খুব ..অন্তিম স্টেশনের নাম ঘুম"
বরফে ঢেকে থাকে কয়েক শতাব্দী আগেকার "বাতাসিয়া লুপ"
তোমরা বলেছিলে যাবে একদিন পাহাড়িয়া পথে
মেঘ ছুঁয়ে দেবে হাত বাড়ালে জানালা থেকেই ...
২
অসংজ্ঞাত
শূন্য কে শূন্য দিয়ে ভাগ দিলে যা কিছু অবশেষ
তা খানিকটা চালচুলোহীন ,লাট খাওয়া ঘুড়ির মত
আলো আঁধারের মধ্যবর্তী বসতির নাম 'অসংজ্ঞাত'
এই মহা-শূন্যতা ,আবছায়া পেয়েছি অঙ্ক স্যারের কাছে
যারা প্রথম সারির তাঁরা নিয়ে গেছে উত্তর মিলে যাওয়া সিঁড়িভাঙ্গা
আমি শেষ বেঞ্চ
তাঁর অসংজ্ঞাতেই এখনো বুঁদ হয়ে থাকি ...
মহাশূন্যে তারাদের ভাত বেড়ে দিয়ে আসি
নীলাভ জ্যোৎস্নায় খুঁজি যা কিছু অসংজ্ঞাত
না পাওয়া যা কিছু ,শূন্য থেকে আরো গহীন শূন্য
সযত্নে সংগ্রহ করে রাখি ...
তোমাদের সমুদ্রজল ছুঁয়ে যাওয়া নীল রঙ দিন
ভাগ দিয়ে দেখি জমানো শূন্যগুলো নিয়ে...
ভাগফলে উঠে আসে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর শ্বাস
এই সবই দারুণ বিস্ময় ... না পাওয়া না ছোঁয়া যাবতীয়
অসংজ্ঞাত
৩
পালক ছড়িয়ে বসো
আপাতত তুমিও শান্ত ,পৌঁছে গেছো ঈপ্সিত গিরিশৃঙ্গে
আর কোন পর্বতারোহণ নেই আজ কাল পরশু
এবার এই নিশ্চিন্ত উপত্যকায় স্থির হয়ে যাও ...
না হয় কিছুদিন থিতু হও ,পালক ছড়িয়ে বসো
হিমাঙ্কের নীচে আছে লীনতাপ ,দেখো ছুঁয়ে, অচিন উষ্ণতা
এভাবে আর কত দিন তুমি একটা শৈলশিখর থেকে আরেকটা
তাণ্ডব নৃত্য করবে ? এবার খানিকটা সমাধিস্থ হও
একটা গণ্ডি কেটে নিস্তব্ধতায় বসে থাকো কিছুদিন
আঁকো কিছু দেবদারু , পাইন, রডোডেনড্রন এই খানে বসে
কুয়াশায় ঢাকা যে পথে, রঙ তুলি তোমার দিশেহারা ,পথভোলা
আমি সেই পথে আজকাল সন্ধ্যার দিকে মনে মনে
কত দূর হেঁটে আসি