top of page

গল্প - আগুন খাগির অশথ-তলা

  • চন্দন চ্যাটার্জি
  • Apr 2, 2022
  • 13 min read



ক’দিন অফিসের কাজে দিল্লি গিয়েছিলাম। কাল রাতে ফিরেছি। আজ রবিবার, ছুটি তাই সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ কিঙ্করের বাড়িতে গিয়ে দেখি, কিঙ্কর নিচে বসার ঘরেতে একটা সোফার ওপর বসে আজকের খবরের কাগজের মধ্যে ডুবে আছে। আমি কোন কথা না বলে পাশে বসলাম। কাগজের ওপর থেকে মুখ না তুলে ও বলল “ বস, দিল্লি থেকে কবে আসলি”

আমি বললাম, “ কাল, কি করে বুঝলি যে আমি এসেছি”

“রবিবার সকালে তুই ছাড়া কে আসবে ?, তাছাড়া সদ্য সদ্য একটা কেস সমাধান করেছি এখন কিছুদিন নিশ্চিন্ত”।

“ কেস ? ”

“ ইয়েস স্যার, কাগজে বেরিয়েছে, পড়ে দেখ। বিস্তারিত আমি পরে বলব। তুই গল্প লিখিস তো এটা তোর কাজে দেবে। “ এই বলে খবরের কাগজটা আমাকে দিল।



কিঙ্কর আমার বাল্য বন্ধু। হাওড়ার মন্দিরতলা এলাকায় আমাদের বাড়ি। দুজনেই হাওড়া জেলা স্কুলের ছাত্র, তারপর শিবপুর দীনবন্ধু কলেজ। আমার অবশ্য কমার্স ছিল, কিঙ্করের সায়েন্স। বিএসসি পাস করে স্বাধীন ভাবে কাজ করার জন্য ও প্রাইভেট ইনভেসটিগেটর হিসাবে কাজ করে। বেশ সাফল্যের সাথে কাজ করছে। আমি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে আভ্যন্তরীণ হিসাব পরীক্ষকের চাকুরী করি। গল্প লেখাটা আমার অভ্যাস। আমার লেখা গল্প স্থানীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। অবসর সময়ে কিঙ্করের সাথে থাকি, কারণ ওর কাজ থেকে আমি গল্প লেখার উপাদান পাই। এই কেসটায় আমি থাকতে পারিনি। তাই ও যা বলেছে সেটাই আমি পাঠকের কাছে উপস্থাপন করছি।



বীরভূম জেলার একটি জায়গা আছে নলহাটি। এখানে দেবী সতীর শ্বাসনালী পড়েছিল, তাই এটা সতী পীঠ। রামপুরহাট থেকে ট্রেনে করে যাওয়া যায়। রামপুরহাট স্টেশন থেকে প্রথমেই পরে সাদিনপুর,তারপর নলহাটি, তারপর ছাতরা ,তারপর মুরারাই স্টেশন। এই মুরারাই স্টেশন থেকে যদি পূর্বদিকে যাওয়া যায়, তাহলে পরপর জায়গাগুলো হবে কাশিমনগর , মিত্রপুর, ওমরপুর হয়ে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে পৌঁছানো যায়। মুরারাই বীরভূম জেলায় পড়ে কিন্তু রঘুনাথগঞ্জ মুর্শিদাবাদ জেলায় পরে।

এই মিত্রপুরের কাছে একটা ছোট খাল আছে, সেইটা দিয়ে দুই রাজ্যের সীমানা নির্ধারিত হয়। মুরারাই থেকে রঘুনাথগঞ্জ প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা। বর্তমানে পাকা রাস্তা হয়েছে, কিছু ট্রেকার ও ছোট বাস চলছে বটে কিন্তু আমি যখনকার কথা বলছি তখন কাঁচা গ্রাম্য রাস্তা ছিল এবং রাস্তাটায় বন জঞ্জালে ভর্তি ,সন্ধ্যের পর চোর ডাকাতের উপদ্রব থাকত। তখন সাইকেল ও রিক্সা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। তবে ১১ নম্বর যানের উপর ভরসা লোকের সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তার মানে পায়ে হেঁটে।



এই কাসিমনগর থেকে মিত্রপুরের মাঝখানে এক বিশাল মাঠ আছে । তার এদিকে-ওদিকে কিছু দেখা যায় না। বর্ষাকালে জল জমলে যেন মনে হয় সমুদ্র। এই মাঠের মাঝখানে এক বিশাল অশ্বত্থ গাছ আছে যার নিচে এক মহাশ্মশান আছে। শোনা যায় এক তান্ত্রিক নাকি এই শ্মশানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তাই এটা মহাশ্মশান। একাত্তরের মন্বন্তরের সময় চারিদিকে অনাহারে, রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে। তখন এমন একদিনও যায়নি যে এখানে মরা পোড়েনি। কোনদিন তো দুটো, তিনটে মরা পুড়েছে। তখন থেকেই বোধহয় এর নাম হয়েছে আগুন খাগির অশথ-তলা।



এই শ্মশানে ছোট একটা মন্দির আছে , তাতে একটা মা কালীর মূর্তি আছে। বোধকরি তান্ত্রিক যখন ছিলেন তিনি প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন । কিন্তু বর্তমানে তিনি আর নেই, তাই মূর্তি ভেঙে গেছে অনেক জায়গায় এবং তাতে আর পুজো হয় না। এই মন্দিরের পাশে একটা ঘরও আছে । বোধ হয় শ্মশান যাত্রীদের বসার জন্য করা হয়েছিল। এখন চতুর্দিকে আগাছা ও জঞ্জালে ভর্তি এবং এখানে মরা পোড়াতেও খুব কম লোকই আসে। জায়গাটা শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। অশ্বত্থ গাছটা এতবড় যে এক বিশাল জায়গা জুড়ে তার ছায়া বিস্তৃত উপরের ডাল থেকে অনেক জুড়ি নেমেছে এবং গাছে নানা পাখির বাসা সবসময় কিচমিচ করে। কাঠঠোকরা গাছের অনেক জায়গায় গর্ত করেছে, তার মধ্যে দু'একটা সাপ থাকলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই।




সম্প্রতি এখানে এক সাধুর আবির্ভাব হয়েছে। মাথায় জটা,পরনে গেরুয়া, পোশাক, পায়ে খড়ম, গলায় ও হাতে রুদ্রাক্ষের মালা। মাকালীর মূর্তি যে ঘরে ছিল সেটা পরিষ্কার করে তিনি রোজ মায়ের পুজো করেন। তাকে প্রায় সময়ই ধ্যানস্থ দেখতে পাওয়া যায়। পাশের ঘরে তিনি রাত্রি বাস করেন।



গ্রামের লোকদের সাধুসন্তদের ওপর একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকে, কারণ বেশির ভাগ মানুষ মনে করে সাধু-সন্তরা তাদের দিব্য দৃষ্টি দিয়ে বর্তমান, ভূত ও ভবিষ্যৎ দেখতে পান। আসলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতকে দেখার এক বিরাট প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে, কারণ অতীতে সে দেখে এসেছে, বর্তমান সে দেখছে ভবিষ্যতে তার কি হবে সেটা সে দেখতে পাচ্ছে না। তাই ভবিষ্যতকে জানতে, বুঝতে ও আরও সুন্দর করতে অনেকেই অনেক কিছু করে থাকেন। অতএব এই সাধু বাবাজীর কাছে ক্রমে ক্রমে লোক আসতে লাগলো। সাধু বাবা অনেকেই অনেক কথা বলেন সেগুলো কিছু সত্যি হয়, কিছু হয় না।

যেমন গ্রামের প্রধান মশাই একবার এসেছিলেন তার ছেলেটা যেন মাধ্যমিক পাস করে। সাধু বাবাজির আশীর্বাদে ছেলে ভালোভাবে পাস করেছিল। অবশ্য সে বছর পাসের হার অনেক বেশি ছিল অন্য বছরের তুলনায়। সেটা যাই হোক, পাস তো করেছে। কাজেই প্রধান মশাই বাবার আশ্রমটি লোক লাগিয়ে পরিষ্কার করিয়ে দেন। ভাঙ্গা অংশ মেরামত করিয়ে দেন, জানলা কপাটগুলো ঠিক করিয়ে দেন।

এইভাবে দেখতে দেখতে শুধু এই গ্রামে নয়, আশে পাশের গ্রামেও খবরটা রটে গেল, যে আগুন খাগির অশথ-তলায় এক সাধু বাবাজি এসেছেন। দূর দূরান্ত থেকে মাঝে মধ্যে ভক্তরা আসত।



এদিকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদা তিন জেলায় চুরি ও রাহাজানি অনেক বেড়ে গেছে। তিন জেলার পুলিশ-কর্তাদের নাওয়া খাওয়া ছুটে গেছে। এই তো সেদিন দক্ষিণবঙ্গ থেকে গাড়ি করে কিছু ভক্ত আসছিল তারাপীঠে পুজো দেওয়ার জন্য। তাদের কে বা কারা লুট করে নিয়ে যায়। ভাড়শালা মোড়ের কাছে পুলিশ দেখে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সাত সকাল বেলায় এত নির্জন জায়গায় গাড়ি এলো কি করে। সেইটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ দেখল গাড়িতে যারা আছে সবাই অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে। পরে ওদের থেকে জানা যায় দুইজন সাধুর সঙ্গে তাদের রাস্তায় দেখা হয়। তারাপীঠের রাস্তা জিজ্ঞেস করায়, একজন সাধু বলল আপনারা ভুল পথে চলে এসেছেন এটা তারাপীঠ থেকে অনেকদূর। আমাদের সঙ্গে নিয়ে চলুন আমরা গ্রামের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাব, সেটা আপনাদের তাড়াতাড়ি পোঁছে দেবে। এই বলে হাইরোড ছাড়িয়ে তাদের গ্রামের ভেতরে ঢোকাল। খানিক পরে সেই সাধুরা সব যাত্রীদের মায়ের প্রসাদ খেতে দিল, তারপর আর কিছু মনে নেই। কাজেই পুলিশ অফিসার বুঝতে পারল প্রসাদের মধ্যে যদি ঘুমের ওষুধ থাকলে এই কাজটা করা অনায়াসেই সম্ভব।



আর একটা ঘটনা ঘটে, কিছুদিন আগে আলিপুরদুয়ার থেকে কয়েকজন লোক মুর্শিদাবাদ ঘুরতে এসেছিল। ট্রাভেল গাইডের নাম করে তাদেরকে হাজারদুয়ারির একটা অন্ধকার জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছুরি বন্ধুক দেখিয়ে লুট করে। তারপর তারা বহরমপুর থানায় এফ-আই-আর দায়ের করেছিল। কিন্তু চোরকে ধরা যায় নি।



মালদাতেও একটা ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা শোনা গিয়েছিল। একটা প্রাইভেট ব্যাংক শনিবারে লুট হয়। একাউন্ট খোলার নাম করে এসে চার-পাঁচ জন মিলে ব্যাংক লুট করে। সেদিন নাকি ব্যাঙ্কের সি সি টি ভি বন্ধ ছিল। তাই চোরেদের চেহারা দেখা যায় নি। এছাড়া ছোটখাটো চুরি ডাকাতির কথা থানাতে প্রায়ই আসতে থাকে। তবে পুলিশ এটা বুঝতে পেরেছে কোন একটা দল ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন বেশে চুরি করে। কিন্তু কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তা এখনো ধরতে পারেনি । কারণ প্রতি জায়গাতেই তিন-চার জনের বেশি লোক থাকে না এবং সব সময় তারা ছদ্মবেশে থাকে।



কিঙ্কর এসেছে তার দিদির বাড়ি, বহরমপুরে। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ জেলার বড় শহর। উদ্দেশ্য একটাই, ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ ঘুরে দেখবে। একদিন সে ভাগনার সঙ্গে হাজারদুয়ারি দেখতে গিয়েছিল। সেখানে তারা অনেক জিনিস দেখে ছিল, সিরাজের তলোয়ার, যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পোশাক। বিভিন্ন রকমের যুদ্ধের অস্ত্র। অন্যান্য সৈনিকদের বিভিন্ন রকমের যুদ্ধের পোশাক ইত্যাদি। তার ভাগনা বলেছিল এত বড় তলোয়ার চাগতেই দু হাত লাগবে তো তারা সেটাকে এক হাতে চাগিয়ে লড়াই করত কি করে। আর একটা জিনিস আছে সেটা হল এক বিশেষ রকমের আয়না। তাতে নিজের মুখ দেখা যাবে না, গলা থেকে নিচের অংশটা দেখা যাবে, এমন কি অন্য কোন লোকের মুখ দেখা যাবে কিন্তু নিজেই নিজের মুখ দেখতে পাবে না। আয়নাটার সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও কিঙ্কর এর কৌশলটা বুঝতে পারে নি।



হাজারদুয়ারির বাইরে বের হতেই তার এক কলেজের সহপাঠী সঙ্গে দেখা হল পুলিশের পোশাকে। নাম সোমেশ্বর রায়, মুর্শিদাবাদের ডি এস পি। তারা দুজনেই বি এস সি পড়েছে হাওড়ার শিবপুর দীনবন্ধু কলেজ থেকে। তারপর ও ড ব্লিউ বি সি এস দিয়ে পুলিশের চাকরি পায় আর কিঙ্কর-স্বাধীনভাবে রোজগারের জন্য প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন- এর কাজ শুরু করে। কাজ মোটামুটি ভালই করে। নিজের চাহিদা কম তাই চলে যায়। কিংকরকে দেখে সোমেশ্বর বেশ খুশী হলো।

সোমেশ্বর বলে, “ এখানে কি করে”

“বহরমপুরে দিদির বাড়িতে বেড়াতে এসেছি এই ভাগনাকে সঙ্গে করে হাজারদুয়ারি দেখাতে এনেছি। তোর ব্যাপার কি ? তদন্ত ?”

“তদন্ত নয়, মহা-তদন্ত। একটা চোরের দল খুব সম্ভবত চার-পাঁচজন হবে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ মালদা জেলাতে একেবারে লুট করছে। বিভিন্ন কায়দায়, বিভিন্ন বেশে তাদের ধরার কোন সূত্র পাচ্ছি না”।

“আমি চেষ্টা করতে পারি,পারিশ্রমিক লাগবে কিন্তু”।

“ হ্যাঁ নিশ্চয়ই সরকারের তরফ থেকে যা দেবে তা তো আছেই, এই তিন জেলার পুলিশকর্তারও মিলে তোকে উপহার দেবে সে তাও নেহাত কম নয়”।

”ঠিক আছে তবে কোন একটা জায়গায় বসে আমাকে একটু ডিটেইলস বল তার পর দেখছি।“। তারা বহরমপুরের একটা হোটেলে বসে পুরো বিষয়টি আলোচনা করল।



সব শুনে কিঙ্কর বলল, “তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে চোর বুদ্ধিমান ও ছদ্মবেশ নিতে বেশ পটু। এদের ধরতে হলে এদের মত মানসিকতায় হাঁটতে হবে। আজ থেকে তুই আমাকে জানিস না এবং আমি ও তোকে জানি না। ঠিক আছে”।

সোমেশ্বর একটু চুপ থেকে তারপর হেসে বলল ঠিক আছে”।



রঘুনাথগঞ্জ বাজারের সামনে রাস্তার ওপর একটা বড় সোনা রূপোর দোকান হয়েছে। এছাড়াও এখানে দামী দামী পাথর সব শো-কেসে সাজানো আছে থরে থরে, চারিদিকে লাইট লাগানো আছে ঝলমল করছে সুন্দর দোকান। দোকানের উপর একটা সাইনবোর্ড আছে তাতে লেখা আছে এখানে পুরাতন গয়নার কেনাবেচা ও বদল করা হয়। এই দোকানের প্রচার সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনপত্র কয়েকদিন থেকে স্থানীয় কাগজে দেখা যাচ্ছে এবং ছোট ছোট প্রচারপত্র বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের অনেক জায়গায় ছেয়ে গেছে। দোকানের সামনে একজন দাড়িওয়ালা বয়স্ক ভদ্রলোক বসেন বোধকরি তিনি মালিক হবেন। তার পাশেই কর্মচারী কারিগররা সবাই বসে নিজেদের কাজ করছে। দোকানের সামনে খানিকটা জায়গা ফাঁকা সেখানে ক্রেতাদের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে।



একদিন তিনজন কিন্নরী দোকানে এসে হাজির। তাদের কাছে কিছু পুরাতন গয়না আছে সেগুলো বিক্রি করে তারা নতুন ডিজাইনের গয়না কিনতে চায়। বয়স্ক ভদ্রলোক এদের ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন, পুরাতন গয়নাগুলো হাতে নিয়ে দেখলেন। তারপর সেগুলো একটা পাথরে ঘষে দেখে একজন কর্মচারীকে ডেকে বললেন এই সোনার গয়না ওজন করে দেখো। কর্মচারী সেগুলো হাতে নিয়ে ভদ্রলোককে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন , তৎক্ষণাৎ তিনি থামিয়ে দিয়ে বললেন, “এগুলোও সব সোনার গয়না আমি দেখে নিয়েছি। তুমি শুধু ওজন করে বল কত গ্রাম হয়েছে”।

“ঠিক আছে” বলে সে চলে গেল।

একটু পরে সে এসে বলল পনেরো গ্রাম হয়েছে অর্থাৎ প্রায় দেড় ভরি পুরাতন গয়না। ভদ্রলোক হিসাব-নিকাশ করে বললেন, “আপনাদের গয়নার দাম হয়েছে সাতচল্লিশ হাজার টাকা। এখন বলুন নগদ নেবেন না অন্য নতুন ডিজাইনের গয়না নেবেন”।

তাদের একজন বলল, “ঠিক আছে নগদ টাকাই দেন”

অন্যজন বলল,”না নতুন ডিজাইনের গয়না দেখান”।

ভদ্রলোক, “ঠিক আছে” বলে ভেতরে চলে গেল। খানিক পরে তিনি ভেতর থেকে কিছু নতুন ডিজাইনের গয়না আনলেন। বর্তমানে নাকি এইগুলো কলকাতায় খুব বেশি চলে। দু একটা বাংলা সিরিয়ালের নাম করলেন যেখানে নাকি এইরকম ডিজাইনের গয়না বেশি ব্যবহার হয়েছে। প্রতিটা গয়না এক একটা বাদামী রঙের বাক্সে ভরা। এটা ওটা দেখে তারা একটা হার পছন্দ করলো তার দাম ৫০০০০ টাকা। ভদ্রলোক বললেন আপনাদের ডিসকাউন্ট দিয়ে ৪৮৫০০ করিয়ে দিচ্ছি। একজন কিন্নরী বলল তাহলে আমাদের পুরাতন গয়না দিয়ে আর কত টাকা দিতে হবে।

ভদ্রলোক বললেন এক হাজার ৫০০ টাকা দিলেই হবে।



একটা বাদামী রঙের বাক্সে এই হারটাকে ভালোভাবে রেখে আবার একটা অন্য কাগজ দিয়ে ভাল করে মুড়ে দিলেন। বাক্সটা দেখে একজন কিন্নরী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “বাবু এই বাক্সটা দেখতে খুব সুন্দর এটার জন্য কি আলাদা দাম ধরলেন”।

ভদ্রলোক বললেন,”না না এটা গিফটপ্যাক আসলে একটু ডিজাইন দেওয়া বাক্স আমরা ব্যবহার করি যাতে কাস্টমার খুশি হয় এবং আবার আসে”।

কিন্নরীরা ১৫০০ টাকা দিয়ে গয়না নিয়ে হাসি মুখে চলে গেল। ভদ্রলোক বাকি জিনিসগুলো ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটা ফোন করলেন মুর্শিদাবাদের ডিএসপি সোমেশ্বরকে, “হ্যালো আমি কিংকর বলছি খুব সম্ভবত আমার প্রাথমিক কাজ কমপ্লিট। কন্ট্রোল-রুম থেকে ১৬ নম্বর মাইক্রোফোনের সঙ্গে কানেকশন কর” কন্ট্রোল-রুমের অফিসার ১৬ নম্বর স্পিকারের সঙ্গে কানেকশন করতে একটা পুরুষের আওয়াজ ভেসে আসলো। একজন বলছে দেখিলি আমার মেক আপ করার ক্ষমতা দোকানদার কিছুই বুঝতে পারলো না। আমরা ছেলে না মেয়ে না অন্য কেউ তা ধরতে পারল না। অন্য একজন বলল সোনার দোকানদার অথচ গিল্টি করা গয়না বুঝতে পারল না। আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে। ঠিক আছে আজ রাত্রিতে গুরুজীর কাছে জিনিসটা জমা করে দেবো। এখন যে যার বাড়ি চল, রাত্রির নটার সময় এখানে আসবি তারপর আশ্রমে যাব। এরপর মোটর সাইকেলের আওয়াজ শোনা গেল।

এইসব কথা জানিয়ে সোমেশ্বর কিংকরকে ফোন করল। কিংকর বলল “কাছাকাছি আশ্রম কোথায় আছে “



সোমেশ্বর বলল মুর্শিদাবাদ আশ্রমের কোন অভাব নেই। সমস্যা হল এরা কোন আশ্রমের কথা বলছে তা কি করে বুঝব? কিঙ্কর বলল তাহলে এখন আমাদের মাইক্রোফোনের উপর ভরসা রাখতে হবে। তোর অফিসারকে বল সব সময় কথা শুনতে আর আমিও একটু পরে তোর অফিসে আসছি। কন্ট্রোল রুমের অফিসার প্রথমে হেডফোনে কথা শুনছিল পরে কিংকর আসতেই সেটা লাউড স্পিকারে কানেক্ট করল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ একটু শোনা গেল, কেউ বলছে আজ আমার বাড়িতে একটু কাজ আছে যেতে পারব না তুই মিত্রপুরে আমার বাড়ির কাছে চলে আয়। আমার কাছ থেকে জিনিসটা নিয়ে এখান থেকে সোজা তোরা মাঠ দিয়ে চলে যাবি গুরুজির আশ্রমে। এই কথাটা শুনে কিঙ্কর একটু নড়ে চড়ে বসল তার মানে গুরুজীর আশ্রম আছে মিত্রপুরের খুব কাছেই।

“মিত্রপুর জায়গাটা কোথায়” প্রশ্ন করল কিঙ্কর।

এক অফিসার বলল,” জায়গাটা বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম। এখানে মাঠের মাঝখানে আগুন খাগির আশুথ তলা বলে একটা শ্মশান আছে। সম্প্রতি এক সাধু বাবা এসেছেন, তিনি নাকি এলাকায় বেশ প্রসিদ্ধিলাভ করেছেন এবং যাকে যা বলছেন অনেকাংশেই তা ফলপ্রসূ হয়েছে“।

কিঙ্কর বলল ঠিক আছে তাহলে গুরুজীর দর্শনে আমরাও যেতে পারি সোমেশ্বরকে বলল তুই এক কাজ কর বীরভূমের এসপি এর সঙ্গে যোগা যোগ কর তারা যেন তৈরি থাকে তাড়াতাড়ি অ্যাকশান নিতে পারে। এজন্য আমাদের আরও একটা নাটক করতে হবে।

তখন রাত্রি সাড়ে আটটা হবে। দুটো ছেলে মোটরসাইকেল চেপে রঘুনাথগঞ্জ মিলিত হল। তারপর তারা ওই গ্রাম্য কাঁচা রাস্তা ধরে মুরারাই এর দিকে যেতে লাগল। মিনিট কুড়ি যাবার পর একটা অন্ধকার জায়গায় তারা দাঁড়ালো। মিনিট পাঁচেক দাঁড়াবার পর উল্টো দিক থেকে আরেক জন মোটরসাইকেলে করে এসে তাদের সামনে দাঁড়াল, তার হাতে একটা প্যাকেট। সেইটা তাদের হাতে দিয়ে বলল তোরা যা কালকে আমি মুরারাই স্টেশনে আসব। সেখানে গুরুজি কি আদেশ করেন সেটা জানাবি। এই কথা বলে উল্টো দিক থেকে আসা ছেলেটা চলে গেল। এই দুটো ছেলে মোটরসাইকেল স্টার্ট করতেই যে আলোটা জ্বেলে উঠল তাতে দেখতে পেল একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে খানিকটা দুরে। তার সামনে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ছেলে দুটো তার কাছে যেতেই ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করল ,“আচ্ছা বাবা এখানে এক মহান সাধু আছেন , তার ওষুধে নানান রোগ সেরে যায় শুনিছি। তার আশ্রম কোন দিকে”।

তারা দুজনে কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বললো, “এত রাত্তিরে আপনারা কোথা থেকে আসছেন”

ভদ্রলোক বলল, “নদীয়া থেকে, রাস্তাটা ঠিক জানা ছিল না তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে, আমার ছেলের ভীষণ অসুখ তাই এসেছি যদি বাবা দয়া করেন”।

একজন ছেলে বলল,”আপনারা কতজন আছেন”

ভদ্রলোক, “আমি, আমার স্ত্রী, ও পুত্র যার ভীষণ অসুখ”

“ঠিক আছে, আপনারা আমাদের পিছু পিছু আসুন” এই বলে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এগিয়ে চলল। কালো গাড়িটা এই মোটর সাইকেলের পিছনে পিছনে চলতে লাগলো। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তারা এক জায়গায় এসে দাঁড়ালো বলল, “আর তো গাড়ি যাবে না এবার আপনাদের হেঁটে যেতে হবে’। আকাশে দশমীর চাঁদে আলো ধরিত্রীতে পড়েছে, চারিদিকে ফাঁকা-মাঠ, শুনশান রাস্তা, শুধু একটানা ঝিঝির ডাক শোনা যাচ্ছে। রাস্তাটা খুবই সরু তাই সবাইকে এক লাইন ধরে যেতে হচ্ছে। লাইনের প্রথমে দুটো ছেলে মোবাইলের টর্চ লাইট জ্বালিয়ে চলতে লাগল আর তার পিছনে এরা চলতে লাগল।



ছেলে দুটি যদি পিছন ফিরে ভালো ভাবে দেখতো তা হলে বয়স্ক ভদ্রলোকের কিন্তু একটু মুশকিল হত, কারণ তাদের পিছনে তিনজন নয়, আট থেকে দশ জন চলেছে এবং সকলের কাছেই অস্ত্র আছে। মিনিট দশেক মাঠের মাঝখান দিয়ে যাবার পর একটা গাছের নিচে এসে তারা বলল আপনারা এখানে দাঁড়ান আমরা গুরুজীকে খবর দিচ্ছি। এই বলে তারা ভেতরে চলে গেল। এখন বাজে রাত্রি নটা, সাধারণত মাঠের মাঝখানে এত রাত্রে কেউ আসবে না। কাজেই আশ্রম ফাঁকা। চাঁদের আলো আশুথ গাছের ফাঁক দিয়ে জায়গায় জায়গায় পড়েছে। তাতে যতটা সম্ভব বোঝা যাচ্ছে, একটা ঘর আছে গুরুজির থাকার জন্য। পাশে একটা বসার ঘর আছে যেখানে যাত্রীদের এলে বসে। খুব সম্ভবত বসার ঘরটি নতুন করা হয়েছে। এদিকে ভদ্রলোকবেশী সোমেশ্বর অন্যসব লোকদের পুরো আশ্রম ঘিরে নিতে বলেছে কিন্তু কোন শব্দ করবে না, আমার অর্ডার পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

ছেলে দুটো দরজায় টোকা দিল ভেতর থেকে আওয়াজ আসল ,” কে “

এরা বলল, ,”অপারেশন দুই এবং তিন “

তারপর দরজা খুলল, এরা ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর ভদ্রলোকবেশী সোমেশ্বর, স্ত্রী-বেশী কিঙ্কর এবং আর একজন অফিসার একদম দরজার কাছে গিয়ে ভেতরের দৃশ্যটা দেখার চেষ্টা করল। ভেতরে অল্প আলো, তাহলেও বোঝা যাচ্ছে এই দুইজন ছেলে ছাড়াও ভেতরে আরো দুইজন ছেলে আছে এবং গুরুজি আছে অর্থাৎ মোট পাঁচ জন। এই ছেলে দুটো খুব উৎসাহের সঙ্গে নিজেদের কাজের বিশদ বিবরণ দিল। তারপর বাক্সটা গুরুজির হাতে দিল। বাক্সটা নিয়ে গুরুজি প্রথমে একটু অবাক হল, তারপর খুলে হারটাকে ভালো করে দেখে বাক্স সমেত হারটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলল, “হতভাগা কি নিয়ে এসেছি এটা ইমিটেশনের গয়না। তোরা যে গিল্টি গয়না নিয়ে গিয়ে ছিলি তা দোকানদার বুঝতে পেরেছে। তার বদলে ইমিটেশনের গয়না তোদের দিয়েছে”।

ছেলে দুটো একটু আশ্চর্য হয়ে বলল, “শালা কিছুই বুঝতে পারিনি লোকটা ঘাঘু মাল বলতে হবে। ঠিক আছে, কুছ পরোয়া নেই আমরা একজন যাত্রীকে নিয়ে এসেছি মাল দার পার্টি। ছেলের অসুখ, আপনি একটু দেখে নিন, তারপর আমরা ওকে দেখে নেব”।

গুরুজি বললেন , “ কোথায়”

ছেলেটা,” ওই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে”।

গুরুজি , “দেখেছি আমাকে তোরা মারবি। এত রাত্রে কোন যাত্রী কেন আনলি”।

সঙ্গে সঙ্গে সোমেশ্বর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন বললেন ,”এরা আমাদের কি আনবে, আসলে আপনার দর্শন পাবার জন্য অনেকদিন থেকেই আপনাকে খুঁজছি। বেশী চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। হাত উপরে তুলুন, আপনার আশ্রমটি পুলিশ চার দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে”।

গুরুজি, “বাবা আমার কি অপরাধ”।

সোমেশ্বর, “আপনার অপরাধ অভিযোগ সব থানায় জমা আছে, আপাতত কোনো কথা না বলে আমাদের সঙ্গে চলুন”।

গুরুজি আস্তে আস্তে পা দিয়ে কেরোসিনের বাতিটা মাটিতে ফেলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তার কাচ ভেঙ্গে গেল এবং আলো নিভে গেল। এরপর সেই অন্ধকারে সামনের দিক থেকে একটা গুলি এসে পুলিশ অফিসারকে ঘায়েল করেছে। কাল বিলম্ব না করে সোমেশ্বর বাঁশি বাজাতে শুরু করে দিয়েছে এবং গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের চার দিক থেকে গুলি শুরু হয়েছে। জানালা দিয়ে পুলিশ অফিসাররা এবং ভিতর থেকে গুরুজি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গুলি বৃষ্টি সমাপ্ত হল এবং একটা আর্তনাদ শোনা গেল। অন্যান্য অফিসার টর্চ লাইট জ্বালাতে দেখা গেল গুরুজি সহ তিন জন নিহত, আর দু জন আহত। কিঙ্কর এদের মোবাইল সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নিল এবং জিজ্ঞাসা করলো যে অপারেশান ডিপার্টমেন্টের তিন নম্বর লোকের নাম কি।

ওদের একজন একটি চালাকি করে বলল,”কে তৃতীয় জন, আমরা কোন তৃতীয় জনকে চিনি না, আর অপারেশান ডিপার্টমেন্ট মানে”।

কিংকর বলল, ”তোরা তিন জন সকাল বেলায় রঘুনাথগঞ্জের একটা দোকান থেকে যে গয়না কিনতে এসে ছিলি কিন্নরী সেজে সেখানে আমি ছিলাম। আর যে বাক্সটায় গয়না দিয়েছিলাম তাতে মাইক্রোফোন লাগানো ছিল, আর কিছু বলার আছে”।

একজন মাথা নিচু করে বলল রসিউদ্দিন শেখ, মিরপুরের শেখপাড়ায় বাড়ি।

সোমেশ্বর বীরভূমের ডিএসপি কে সঙ্গে সঙ্গে খবর করে দিল এবং তাকে গ্রেফতার করে বহরমপুরে আনতে বলল। সোমেশ্বর পুরো আশ্রম সিল করে দিল এবং চারজন স্বতন্ত্র পুলিশকে বসিয়ে রাখল সকাল পর্যন্ত, বডি গুলো পোস্টমর্টেমে পাঠাতে বলল।

পরদিন সকাল দশটা নাগাদ সোমেশ্বরের অফিসে সবাই হাজির অবশ্যই কিঙ্কররে নির্দেশ। সে কিন্তু একটু আগেই পৌঁছে গিয়ে, এই তিন ছেলের সঙ্গে অনেক কথা বলেছিল।

তারপর তিন জেলার ডিএসপি অফিসের সামনে তার বক্তব্য শুরু করলো

আসলে গুরুজি ছিলেন একজন দাগি আসামি খুব সম্ভবত কলকাতার। এখানে একটা আশ্রম তৈরি করে অল্প বয়স্ক ছেলেদের টোপ দিয়েচুরি করাত। কিন্তু চুরি করার জন্য দরকার ছিল ইনফর্মেশন এবং অপারেশন। এর পাঁচ জনের দল ছিল। যে দুজন মারা গেছেন ইনফর্মেশন সংগ্রহ করত। আর এই তিনজন ছেলে অপারেশন করত। অবশ্য মালদায় যে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে তার সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। সেটা অন্য দলের কাজ, এদের কথায় তাই বুঝলাম। তবে তারাপীঠে যে সাধু সেজে যাত্রীদের লুট করা হয়েছে সেটা এদের কাজ। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলায় নানা ছোটো বড় কাজ এরা করেছে। প্রতি অপারেশনের পিছনে এদের ২০% কমিশন ছিল। চুরি করা সম্পত্তি আশ্রমের কোন গোপন জায়গায় আছে খুব সম্ভবত মাটির নিচে রাখা আছে, এটা আপনাদের খুঁজে বার করার দায়িত্ব।



এর মধ্যে সোমেশ্বর বলল, “ তুই বলেছিস গুরুজি কলকাতা লোক। তার আসল পরিচয় যদি জানতে পারা যেত তাহলে ভালো হতো“।

কিঙ্কর ,” ঠিক আছে আমাকে গুরুজীর কিছু ফটো আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দে আমি লালবাজারে যোগাযোগ করব যদি জানাতে পারি তো তোকে জানাব”।

সোমেশ্বর,” তুই যে সোনার দোকানের দাড়িওয়ালা সেজে বসে ছিলি সেটা জানি, কিন্তু তুই কি করে বুঝলি এই কিন্নরীরা চোর।“।

কিঙ্কর, “ প্রথমত এরা নিজেদের শারীরিক গঠন কিছুটা আনতে পারলেও পুরোটা পারে নি, গলার আওয়াজ ঠিক হয় নি, এবং বোধহয় একই সাইজের লেবু পায়নি। দ্বিতীয়তঃ কিন্নরীরা তালি মারে প্রায় সবসময়। এরা পুরো ঘটনায় দু বার তালি মেরেছে। সেটা মনের স্বাভাবিক আনন্দের প্রকাশ। তখনই আমার সন্দেহ হয়, তাই গোপনে মাইক্রোফোন লাগানো ষোল নম্বর বাক্সটা এদের দি আর এতেই কাজ হয়। এই বিজ্ঞাপনের প্রচার পত্র যে বিলি হয়েছে এবং স্থানীয় খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তা গুরুজীর ইনফর্মেশন ডিপার্টমেন্ট নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন। তাই একটা প্ল্যান করে অপারেশন ডিপার্টমেন্টকে পাঠিয়েছে”।

বীরভূমের এস পি বলল গুরুজি যে ভাবে অপারেশন করত তাতে ওনার সৃজনশীল বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।

কিঙ্কর বলল ক্রিয়েটিভ তো হতেই হবে স্যার আসলে চুরি করাটাও একটা আর্ট, 'যদি না পড়ে ধরা'।

উপস্থিত সকলে হেসে উঠলো।




এর দু দিন পর কিঙ্কর বাড়ি ফিরে আসে। তারপর লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে বেশ কয়েক মাস আগে ক্যানিং এর জেল থেকে এক ব্যাংক ডাকাত পালিয়ে যায়। কিন্তু সে ব্যক্তি ধরা পরে নি। বিবরণ দেখে এবং হাতের ছাপ পরীক্ষা করে পুলিশ কর্তারা নিশ্চিত গুরুজিই সেই ব্যক্তি। এই খবরটা আজকের কাগজে বিস্তারিত ভাবে ছাপা হয়েছে। কিঙ্কর সেটাই পড়ছিল।

চুরি করা জিনিস একটা টিনের বাক্সের মধ্যে ছিল যেটা গুরুজির খাটের নীচে মাটির মধ্যে পোতা ছিল, সোমেশ্বর তা জানিয়ে কিঙ্করকে ফোন করে ছিল।






Comentarios


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page