top of page

মুক্তগদ্য - আমিষ , নিরামিষ প্রসঙ্গে

  • চন্দন নন্দী
  • Jun 19, 2021
  • 3 min read

Updated: Jul 30, 2021



আমার জীবনে ইস্কনের একটা বিশাল প্রভাব রয়েছে। আমার ঠাকুমা ছিলেন শিবের ভক্ত। অল্প বয়েসে বিধবা হয়েছিলেন তাই নিরামিষাশী ছিলেন , মাছ মাংসের গন্ধ পর্যন্ত্য সহ্য করতে পারতেন না। ঠাকুরদা হরষিত নন্দী কতটা ঈশ্বর বিশ্বাস করতেন কিংবা তার পিতা অর্থাৎ আমার প্রপিতামহ মধুসূদন নন্দী কিংবা তারও পিতা উদয় নারায়ন নন্দী এর ঈশ্বরে কতটা বিশ্বাস করতেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা আমার নেই , কিংবা কোনোকালেই ছিলোনা।


হিন্দুধর্মের একটা বড়ো মজা হলো, হিন্দু হবার জন্য কোনো ধর্মাচরণ বাধ্যতামূলক নয়। অন্তত আমি যখন বড়ো হয়ে উঠছি সেই সময় সেরকম তা অন্তত ছিল না। আর পাঁচটা বাঙালি সন্তানের মতো ঈশ্বরে বিশ্বাস পরীক্ষার সময় কিংবা ফলপ্রকাশের আগে পর্যন্ত সীমিত ছিল।ঠাকুমা নিরামিষাশী ছিলেন , এরকমটা দেখে এসেছি , কেন নিরামিষাশী ছিলেন সেরকম তা জানবার প্রয়োজন অনুভব করিনি।


পুনেতে এসে একটি বেসরকারি কোম্পানি তে ম্যানেজার পদে বহাল হই , কিন্তু একবছর পরে চাকরি যায় যায় অবস্থা। মনের অবস্থা খুব খারাপ , হয়তো আর চাকরি জোগাড় করতে পারবো না , কিংবা কলকাতায় ফিরে যেতে হবে, মনে এরকম নানারকম সংশয়ে দিনযাপন করছি। সেই দিনগুলোর কথা এমন পড়লে আজও আশ্চর্য লাগে। এক মাইলের মধ্যে ইস্কন এর মন্দির , কোনোদিন সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কাজ কম্মো বিশেষ নেই , হয়তো ছাটাই হয়ে যেতে পারি এরকম একটা অবস্থায় ইস্কনে গিয়ে হাজির হলাম। বাইরে খোলা প্রাঙ্গন , ভেতরে মন্দির। বিনাপয়সায় দুপুরে খাবার এর বেশ বন্দোবস্ত। এখানে এরা একে বলে প্রসাদম। তা বেশ , দুপুরে পেট পুড়ে মন ভোরে খেলাম , আমি , আমার বৌ আর আমার মেয়ে মাম্মা। প্রসাদ এর অপূর্ব স্বাদ , খেয়ে মুগ্ধ হলাম। এব্যাপারে অবশ্য আমার একটা জিজ্ঞাস্য আছে। আমি আগেও অনেক ভোগের খিচুড়ি খেয়েছি , প্রায় কিছুই দেওয়া হয় না এতে , অন্তত মসলার বিশেষ বালাই নেই , প্রায় হেলছেদ্দা করে বানানো , গরীবগুর্বোদের জন্য আরকি। কিন্তু আমি সচরাচর এরকম সুযোগ নষ্ট করিনা , শাল পাতায় পরিবেশন করা সেই ভোগের খিচুড়ি খেতে আমার দারুন লাগে। ঈশ্বরের নাম করে রান্না করা বলেই হয়তো , হয়তো এর সাথে কিছুটা শ্রদ্ধা আর ভক্তি মিশে আছে তাই এতো সুস্বাদু খেতে , এর একটা কারণ এও হতে পারে।


কিছুদিনের মধ্যে রোজ যাতায়াত শুরু হলো। আলাপ হলো মন্দিরের স্বামীজীদের সাথে। এর মধ্যে একজন হলেন অক্ষয় কোকিল প্রভুজি , ইনি গৃহী , নিয়মিত বক্তৃতা দিয়ে থাকেন , ১৭ বছর ধরে গীতা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। পেশায় DRDO এর সাইন্টিস্ট। কিছুদিনের মধ্যে আলাপ ব্যক্তিগত হয়ে উঠলো , আমার মনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন। ক্রমশ ভক্ত হয়ে উঠলাম।


এই পর্যন্ত সব ঠিক এ চলছিল , বাধ সাধলো আমার খাদ্যাভ্যাস। বাঙালিরা সাধারণত আমিষ হয়। সে চিংড়ি বলুন কিংবা ইলিশ , ঘটি বলুন বা বাঙাল , নিরামিষাশী বাঙ্গলী পাওয়া দুর্লভ। কিন্তু কোনো কারণ বসত, ইস্কন এর প্রতিষ্ঠাতা অভয় চরণ দে , আমিষ খাবার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই ইস্কনে দীক্ষা নিতে গেলে নিরামিষাশী হয় আবশ্যিক।


এর মধ্যে আবার একটা ঘটনায় মনে আমিষের প্রতি বিদ্বেষ জন্মালো। বিশেষ কিছু নয় , এক বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে বললুম , যে কচি পাঠার মাংস খাওয়া। ঘটনাক্রমে মাংসের দোকানে মাংস শেষ আর আমার সামনে দিয়েই একটি কচি ছোট্ট পাঠা নিয়ে গিয়ে তাকে কাটা হলো। শুনতে পেলাম আর্ত চিৎকার। গ্লানিতে ভূতে শুরু করলাম। প্রায় একই সময়ে একটা লিংক এ দেখলাম কিভাবে মুরগি , শুয়োর ইত্যাদি জন্তু জানোয়ার দেড় অপরিমিত অত্যাচার করা হয়। তাই কিছুদিনের জন্য নিরামিষাশী হলুম।


ঘটনাচক্রে অভয় চরণ দে , যিনি ইস্কন এর প্রতিষ্ঠাতা তিনিও একই যুক্তি দেন। শুরু হোলো পড়াশোনা। হিন্দু ধর্মের নানান শাখা প্রশাখা তে এবং নরেন্দ্রনাথ দত্ত , রামকৃষ্ণের বাণী শুনে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলাম। ঠাকুরের কিন্তু এই ব্যাপারে নির্দেশ স্পষ্ট। ঈশ্বরকে খোঁজা আসল কাজ , পথ আর মত ভিন্ন হতে পারে কিন্তু স্টেশন সেই একজায়গাতেই পৌঁছয়। কেউ বাসে যাচ্ছে , কেউ ট্রেনে , কেউবা প্লেনে। ঠাকুর তাই নির্দিষ্ট করে বলেছেন " যার পেটে যা সয় ". নরেন্দ্রনাথ দত্ত , মুরগি এমনকি গোমাংস ভক্ষণ করেছিলেন। তা শুনে ঠাকুর বলেছিলেন " ও ঐসব খেলেও কিছু হবেনা , তুই সারাজীবন নিরামিষ খেয়েও তা করতে পারবিনা ".



সব পথ এসে , মিলে গেলো শেষে।


তোমারি দুখানি চরণে , চরণে। ....


সুনীলময় দা , আমার একজন দাদা স্থানীয় ব্যক্তি , এপ্রসঙ্গে বলেন , নিজের উপর কিছু জোর করে চাপিয়ে দেবার মানে হয় না , যখন তুমি সেই স্তরে পৌঁছবে , তখন তুমি এমনিতেই নিরামিষাশী হবে। এর জন্য আত্মগ্লানিতে ভোগার প্রয়োজন বোধ করি না।


সময়োপযোগী পরামর্শ , সন্দেহ নেই , এমন একজন মানুষকে , যে নিরামিষ , আমিষ প্রসঙ্গে সংশয়ের দোলায় আত্মগ্লানিতে ভুগছে।

Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page