top of page

ভ্রমণ মূলক - রাণীর প্রহরী

  • নন্দিতা পাল
  • May 13, 2021
  • 3 min read



বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন, নিজেকে চিমটি কাটলাম। হ্যাঁ, ঠিকই দেখছি। আকাশটা ছিল একটু মুখ ভারী। তবে কদিন লন্ডনে থেকে বুঝে গিয়েছি, হাওয়া আর হঠাৎ বৃষ্টি এখানের বড্ড স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রায় চল্লিশ একর জমির ওপর এই বিশাল রাজবাড়ী। বাড়িটি মুলত রাজবাড়ী বলে বানানো হয়নি, এটা ছিল বাকিং হামের ডিউকের। পরে ব্রিটিশ রাজ পরিবার এখানে থাকতে আরম্ভ করেন, এবং বহু সংস্কার হয়েছে বাড়িটার। আঠারো বছরে রানী হলেন ভিক্টোরিয়া, বাকিং হামে থাকতে শুরু করলেন। প্রাসাদে ৭৭৫ টা মতো ঘর, সাঁতারের জায়গা, হেলিপ্যাড, বিশাল বাগান আর এখানের প্রসিদ্ধ বল রুম যেটা অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জড়িত। বছরের এই গরমের সময়টা রানী এলিজাবেথ ও পরিবার প্রাসাদে থাকেন, শীতের সময় থাকেন উইন্ডসর প্রাসাদে। রানী এখানে আছেন বলে এই প্রহরী পরিবর্তনের অনুষ্ঠান। প্রতিদিন বাইরের লোক দেখতে পায় না, তবে নিশ্চয়ই আমাদের একটু ভাগ্য আছে যে আজ দেখতে পাব এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি। এই বাকিংহাম থেকেই রানী ভিক্টোরিয়া এবং রাজারা সুদুর ভারতে কত দিন রাজত্ব করেছেন, কত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই প্রাসাদ। মনে হল ভেতরে গেলে নিশ্চয়ই দেখতে পাবো আমাদের দেশের ও অনেক স্মৃতি। ব্যলকনিটার দিকে চেয়ে রইলাম, কদিন আগে হ্যারি আর কেট সদ্য বিবাহিত ঐ ব্যলকনিতে পুরো রাজ পরিবারের সাথে দাঁড়িয়ে যেন। তবে রানী ডায়নার হাসি মুখ খানা বারবার মনে পড়ছিল।


সম্বিৎ পেলাম মেয়ের ডাকে। প্রাসাদের বাইরে রানী ভিক্টোরিয়ার বিশাল স্টাচু। রানী ছিলেন সত্যি আর ন্যায়ের প্রতীক। স্টাচুর ওপরে সোনালী রঙে ঝকঝক করছে জয়ের প্রতীক সেই পরী। রানীর নাতি জর্জ ফাইভ রানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে এটা বানিয়েছিলেন। এই জর্জ ফাইভের সময় কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরী হয়। ততক্ষণে টুরিস্ট বেশ হয়ে গিয়েছে। গাইড এসে একটু তাড়া দিলো, রানীর প্রহরীদের দায়িত্বে


র হাত বদল শুরু হয়ে যাবে। এই মিনিট পয়তাল্লিশের অনুষ্ঠানটি দেখবার জন্য হুড়োহুড়ি একটু শুরু হল। তবে যাই হোক, আমরা তোরণের কাছাকাছি ভালো জায়গা পেয়ে গেলাম।


সেই সুবিদিত ইতিহাস জড়ানো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। প্রহরীদের পরনে লাল কালো রাজকীয় পোশাক, সাথে কালো ফারের টুপি পরা। শোনা যায়, ফ্রেঞ্চ দের থেকে এসেছিল এই ফারের টুপি পরার চল, এই টুপি অনুষ্ঠানের সময় পড়া হয় আর পড়লে একটু লম্বা ও দেখায়, আর ভারিক্কি অবশ্যই। সব প্রহরীরা লাল আর কালো পোশাকে, দাদু বলেছিল ঐ সময়ে লাল রঙ সবচেয়ে সস্তা ছিল আর লাল কালোর মাঝে শত্রুপক্ষ বুঝতে অসুবিধে হত যে কতজন প্রহরী আছে। ঘোড়ায় চড়ে যারা এলো সাদা কালো পোশাকে। যারা পায়ে হেঁটে এলো প্রহরীরা তাদের হাত বদল দেখাটা একটা উৎসব। প্রহরীদের পোশাকে বিভিন্ন ব্যাচ আছে, যা দেখে বোঝা যায় তার কোন রেজিমেন্ট বা কোন ধরনের দায়িত্বে কে আছে। তবে আমরা সাধারণ চোখে যা দেখলাম বিভিন্ন রকমের ব্যাজ পরে আছে প্রহরীরা। প্রাসাদ আর তোরণের মাঝে বিশাল যে জায়গাটা সেখানে পুরোন ও নতুন প্রহরী রা মার্চ করে আসতে লাগল গানের তালে তালে। প্রহরীদের অনেকের হাতে পাহারার অস্ত্র, দুজনের হাতে রানীর পতাকা। কিছু প্রহরী ব্যন্ড ও বাজনা বাজাচ্ছে তালে তালে। বাজনা গুলো কিছু পুরনো আর কিছু এখনকার ভাল গানের ও শুনেছি। তিন জন দলনেতা ও ৩৬ জন মতো প্রহরী পাহারায় থাকেন এক সাথে এই প্রাসাদে। আকাশটা ও ততক্ষণে হাসছে, আর ঐ প্রাসাদের সামনে ব্যন্ডের সাথে প্রহরীদের দারুন অনুষ্ঠান জমে উঠেছে। নতুন প্রহরীরা ধীরে মার্চ করে সামনে এল। দুই দলনেতা


এগিয়ে গিয়ে কথা বললেন, তারপর এগিয়ে প্রাসাদের মুল দরজার চাবি একসাথে ছুঁলেন। এর অর্থ প্রাসাদকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বে তারা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। এরপর পুরনো নতুন দুই দল এগিয়ে অস্ত্র শস্ত্র একে অপরকে দিলেন। নতুন রা দায়িত্ব বুঝে নিয়ে যার যার জায়গা মতো চলে গেল। পুরনো প্রহরীরা প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে রানী ভিক্টোরিয়ার স্ট্যাচুর চারপাশে একবার ঘুরে চলে গেলো।


হাঁ করে দেখলাম রানীর প্রহরীদের এই কর্মকাণ্ড। সত্যি ই দেখবার মত এই নিষ্ঠা সহ রাজকীয় চালে দায়িত্বের হাতবদল যা কিনা চলছে পাঁচশো বছরের ও বেশি দিন ধরে একই ভাবে। এই লকডাউনে মনে পড়ে সেই দিনের অপূর্ব সেই দৃশ্য। শুনেছি রানী উইন্ডসর প্রাসাদে আছেন লক ডাউনে। প্রহরীদের হাত বদল অনুষ্ঠান ব্যাপারটা বন্ধ আছে বেশ কিছুদিন। ভেবেছি, শীতে যাব একবার বাকিং হামে। তখন রাজবাড়ীর ভেতরে কিছুটা দেখতে দেয়। হয়ত প্রাসাদের ভেতরে কিছুটা দেখা যাবে, যেখানে আমাদের দেশের ইতিহাসের একটুকরো লেগে আছে আলমারির মাথায় বা দেওয়ালে কান পাতলে পুরনো কিছু কথা শোনা যাবে।









Comentarios


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page