top of page

গল্প - লাল ওড়না

  • অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
  • Dec 29, 2020
  • 2 min read




" আপ 31834 কৃষ্ণনগর লোকাল,বেরিয়ে যাবার পরে, তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে থ্রু ট্রেন যাবে, যাত্রীগনকে অনুরোধ করা হচ্ছে লাইন থেকে নিরাপদ দুরত্বে সরে দাঁড়ান"


নৈহাটি স্টেশনের মাইক থেকে ভেসে আসা বিরক্তিকর একঘেয়ে গলাটা, আবঝা,

শুনতে পেল বিপ্লব।।


রাত দশটা, মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়েই আছে আজকের ট্রেনটা ।। রাত এগারোটা বাইশে, রাইট টাইম কৃষ্ণনগরে।।

মনে হচ্ছে লাইন ক্লিয়ার পেলে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে সময়মতো।।


বিপ্লব এমনিতে ডাকাবুকো টাইপের, শীতেররাতে এই ডিউটি গুলো মোটেই সুখকর নয়।। কিন্তু কুড়ি বছর ধোরে বিভিন্ন লাইনে ই.ম.উ চালানোর পরও, খুব একটা খারাপ লাগেনা আজও।।


প্রথম প্রথম খুব আকর্ষণ ছিলো রাতের দিকের ট্রেন চালানোর।। কতো আষাঢ়ে কানাঘুষো শুনেছে।। রাতের দিকে নাকি, অনেক লাইনের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।। তবে আজ বিশবছরে অন্তত পঞ্চাশ ষাটটা রানওভারের অভিজ্ঞতা হবার পর।।।থাক।।।।।।।।


বিপ্লবদের চাকরির এই দিকটা খুব বেশি আলোচনা করেনা কেউ, কারন মানবিক ভাবে কেউই চায় না মানুষ বা কোনো প্রাণীরই জীবনটা চলে যাক।। যেমন গত পরশুদিন একটা চোট ছাগলের বাচ্চাকে অনেক দূর থেকে স্পট করার সুবাদে, বাঁচাতে পেরেছে সে ।।


এই নতুন ট্রেনগুলোর সুবিধা হলো যে, দুকিলোমিটারের ভিতরে ঘণ্টায় পঁচাত্তর কিলোমিটার স্পীড নেওয়া যায়।।


ছোট্ট একটা লুপ বদলিয়ে অল্প টানলেই হালিশহর।। একমনে লেফটহ্যান্ড ড্রাইভ ট্রেনটার স্পীডএর সুইচটা চেপে ধোরে ছিলো বিপ্লব,

এখান থেকে লাইনটা সামান্য বাঁক নিয়ে বেশ কিছুটা এগোলেই স্টেশন।।।।।।।


কিন্তু।।।।।।।।।।।।


হাল্কা কুয়াশাতে প্রথমে ঠাউর করতে না পরলেও, আন্দাজ 600 মিটার দূরে, লাল রঙের অবজেক্টটা কি কোনো মহিলা, না কি??


"মেন এট ওয়ার্ক"এর লাল শালু?


অভ্যাসবসত বা- পরিবর্তক্রিয়ার দ্বারা চালিত হয়ে ট্রেনের হর্ন ও ফাইভ পয়েন্ট এয়ারব্রেকের, প্রথম পয়েন্টটা চালিয়ে দিয়েছে বিপ্লব।।



400 মিটার দূরে বস্তুটা।।।।

না না কোনো ভুল নয়।। লালজামা পরা এক মহিলা।।। মুখটাও লাল কাপড়ে বাঁধা হয়তো ওড়নাও হতে পারে।।।

স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে তার মৃত্যুর অপেক্ষাতে।।।


মাথাটা গুলিয়ে উঠলো বিপ্লবের।।

রূল বুকের এক থেকে একশো পাতা আর মানবিক বিপ্লব, সেকেন্ডএর, ভগ্নাংশের কম সময়।। একটা প্রাণ না অনেক গুলো প্রাণ।। আর হাতে সময় নেই।। যা করতে হবে, করতে হবে,খুব তাড়াতাড়ি।।।।


350মিটার।।। এমার্জেন্সি ব্রেকটা লাগাবে?


না লাগবে না?


300 মিটার।।। ব্রেকটা লাগলেও যে বাঁচানো যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।।অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে বড়োসড়।।


এক ট্রেন মানুষ না লালজামা পরা মহিলা?


200 মিটার।।100মিটার।।50মিটার।।।।।।।।।। চোখ টা বন্ধ কোরে নিল বিপ্লব।।


চোখটা খুলতেই দূরে দেখতে পেল স্টেশনের আলো।। "ওয়াক ই টক ই" তে স্টেশন মাস্টার আর ট্রেন ইনচার্জ বা গার্ডসাহেব তিওয়ারিবাবুকে সুইসাইডএর খবর টা দিল বিপ্লব।। আর পরবর্তী স্টেশনে, স্টেশন মাস্টারের কাছে বিস্তারিতো ভাবে, নথিভুক্ত করলো আর একটা প্রাণ।।


তার পর জল অনেক দূর গড়িয়ে, বদলি নিয়ে রামপুরহাট মালদা লাইনে ট্রেন চালিয়ে, প্রায় তিন বছর পর, ফেরে তার আগের রুটে।।


ঠিক আজকের মতোই শীতের রাত ছিলো সেদিন ।। নৈহাটি স্টেশন এর আবঝা কথা গুলো।। বুহু পিছনে পড়া ঘটনা গুলো মনে করায়।।আবার।।


সকলের ডিউটি চার্টটা দেখে একবার মনে হয়েছিল,ছুটি নিয়ে নেবে।। কিন্তু এই ভাবে পালাতে বিপ্লব কোনদিন পারেনি তাই আজও সে আপ 31834 নিয়ে কৃষ্ণনগরের পথে।।


ছোট্ট একটা লুপ বদলিয়ে অল্প টানলেই হালিশহর।।।।ঠিক সেইদিনের মতো।।


হতবাক হয়ে সে উপলব্ধি করলো এই ঠান্ডাতেও ওর মাথাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম।।


আন্দাজ 600 মিটার দূরে লাল রঙের কাপড়।। সেই মহিলাটি না কি??

না না না।। ভুল।।


"মেন এট ওয়ার্ক"এর লাল শালু।। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল বিপ্লব তার পরে শুনতে পেল একটা কথা।।


সেদিন চেষ্টা করলে কি সত্যিই আমায় বাঁচানো যেত না?


বিদ্যুত গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে বিপ্লবের সারা শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠলো।।


ড্রাইভারদের বিশ্রাম নেবার সিটে,জানলা দিয়ে অন্ধকারের দিকে- তাকিয়ে,বসে আছে লাল জামা পরা আর মুখে ওড়না বাঁধা মেয়েটি।।।




Bình luận


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page