গদ্য কবিতা - পিছুটান
- রাণা চ্যাটার্জী
- Jun 4, 2021
- 2 min read
কোন এক ছুটির পড়ন্ত বিকেলে,চুন সুরকি ছাদে
ছোটদের প্রিয় শুকতারা আঁকড়ে উদাস হওয়া
"দাদু মনির আসরের "পাতায় ছড়া পড়ে ঠিকানায়
কাঁপা হাতে চিঠি লিখে ফেলেছিল ছেলেটি..
বিজয়ার চিঠি তো আগেও বহুবার লিখেছে, বাক্সবন্দী গোছা গোছা দিদুনের পোস্টকার্ডে ঠিকানা লিখে দিয়ে আসত মামার বাড়ি গেলেই ,
তবুও আজ কিনা কোনো অপরিচিত মেঘ বালিকাকে প্রথম আস্ত এক খান চিঠি ডাকবাক্সে।
বই পড়া,চিঠির লেখায় দিদুনের অদম্য আকর্ষণ,
প্রিয় নাতি প্রতুলকেও অদ্ভুত নেশায় পাইয়েছিল।
'এমন আপন করে ঠিক যেন পাশে বসে কেউ কথা বলছে '-এমন সুন্দর চিঠি উপহার,সামান্য একটা ছড়া প্রকাশে যে আসবে,গঙ্গা পাড়ে বনেদি শহর মুর্শিদাবাদের লালবাগে, দু দিকে বিনুনি ঝোলানো ক্লাস সিক্সের মেয়ে,মিঠি ভাবতেই পারেনি।
স্কুল যাবার পথে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথম পোস্ট কার্ড কেনা ,
বাদামি সুঘ্রাণে,বালিশ চেপে,' কি দিয়ে শুরু করি চিন্তায় ' পড়তে বসেও মন চঞ্চলতায়, যা হোক অবিন্যস্ত শব্দ আঁচড়ে ভাসিয়েছিল পত্র, বন্ধুকে।
" কৈ রে খেলতে যাবি না বিল্টু ", বন্ধুদের হাঁক ডাক, না তোরা আজ যা কাজ আছে বলে নিচের লেটার বাক্সে এসে পড়ে থাকা মেঘবালিকার প্রাপ্তি চিঠি,
ছাদের ঝামা ইঁটের পাঁচিলে পা ঝুলিয়ে বসে, কতবার যে পড়ে ফেলেছে সদ্য গোঁফের রেখা
গজানো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রলয়।
এবার আর বাড়ির ঠিকানা দেওয়া ঠিক নয়,
দাদার চোখে পড়লে নির্ঘাত পাঁচকান '-মনবার্তায়
স্কুলের বন্ধু কে রাজি করিয়ে তাদের বইয়ের দোকানের ঠিকানা ব্যবহারের সম্মতি সহজে আদায় করে নেয় ক্লাসে বরাবর প্রথম হওয়া সে।
এরপর পড়ার চাপ ,কালের স্রোতে ভেসে চলা,
উচ্চশিক্ষার গণ্ডি টপকে,ধূসর স্মৃতি তাজা করে বার পাঁচেক পত্র আদান-প্রদান হলেও থমকায় শহর ছেড়ে হোস্টেল যাওয়া,ব্যস্ত ঘেরাটোপে..
ছুটিতে বাড়ি ফিরলে একবার দোকানে যাবেই,
এ যেন এক অদৃশ্য পিছুটান , এক অদ্ভুত মাদকতা।
মাস্টার ডিগ্রি সম্পূর্ণ করে বাড়িতে বেকারত্বের জ্বালায় ছটফট করা প্রলয়,পাড়ি দিয়েছিল আর এক গঙ্গা পাড়ের ঐতিহাসিক শহর বেনারসে।
বিকালে সময় সুযোগে দশাশ্বমেধ ঘাটে মন কেমন সন্ধ্যা আরতির মাঝে ,কিছু এক অভিকর্ষজ টান।
এত গুলো বছর পর কথা প্রসঙ্গে বাবা,' তোর কিছু একটা কার্ড এসেছে লালবাগ ঠিকানার শুনেই আতঁকে ওঠা ছেলেটি আশ্বস্ত হয় দুদিন পর এসে পৌঁছানো নিউ ইয়ার কার্ড ,সঙ্গে এত্ত বড় চিঠি..
বাপরে কত বড়ো হয়ে গেছে ,উচ্চ মাধ্যমিকে সেরা
নম্বর পেয়ে কিনা এখন কলকাতায় হাজরা ল 'এ ।
অদ্ভুত নিয়ম কেউ কাউকে দেখা চলবে না,
প্রলয়ের ফতোয়া, ছবি আঁকে কল্পনা বিলাসী মন।
আবার সাবলীল আদান প্রদান শেষে দিল্লিতে সেটল হওয়া প্রলয় আর সুপ্রিম কোর্ট ভিজিটে আসা মিঠির সাক্ষাত সুযোগ ধাক্কা দেয় প্রলয়কে..
এ তো নয় তার কল্পনার তন্বী,সুন্দরী,ফুটফুটে কন্যা,কল্পনা-বাস্তবের অমিল তছনছ করে এক লহমায়।
আজ তারা চুপ, মিঠি বুঝে ওঠে না পুরুষ কি চায়,
অতীতের পিছুটান তোলপাড় করে পিছু ধায়... অস্ফুট হৃদয় কেবল থাকবে বন্ধুত্বের প্রত্যাশায়!
コメント