top of page

অণুগল্প - মঙ্গলবাতি

  • কস্তুরী চ্যাটার্জী
  • Dec 17, 2020
  • 2 min read


পরিস্থিতি স্বাভাবিক - এ কথাটা মনেপ্রানে বিশ্বাস করতে চাইলেও ভাঁড়ার ঘরটা অন্য কথা বলে যে! ওবাড়ির দাদাবাবুর আফিস থেকে নাকি মাইনে কমিয়েছে, তাইতো বৌদি সকাল হতেই মোবাইল ফোন ছেড়ে রান্নাঘরে। তৃষা দিদিমণি এই কমাস বাড়িতে থেকেই ছাত্রছাত্রীদের দেখভাল করেছেন আর এখন নিজের সন্তানের নিরাপত্তার খাতিরে ভাতে-ভাত ফোঁটাচ্ছেন নিজ হাতেই। জামাইদাদাও ঢেঁকুড় তুলে বলছেন তোমার হাতের স্বাদে খাওয়াটা বেড়ে যাচ্ছে যে!


অতঃপর দুবাড়িতেই জবার ছুটি!! মাসের সবজি বাজার, রুনুর দুধের খরচ, টুটুলের স্কুলের বায়না এসবই মিটতো জবার বেতনের টাকায়...


দেশ শাসন থেকে ওবাড়ির ছোট ছেলের বকাটে হয়ে যাওয়ার তথ্যসমৃদ্ধ দু-তিন ঘণ্টা আড্ডা বসতো মোড়ের চায়ের দোকানগুলোতে। ক্লান্তি মেটাতে চায়ে চুমুক দিলেও মাটির ভাঁড়ের সুবাস নেওয়ার মতো উৎফুল্লতা কই! খরচ বাঁচাতে দোকানিদেরও পছন্দের তালিকায় মাটির ভাঁড়ের পরিবর্তে সস্তার প্লাস্টিক। সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্য অজয়ের তৈরী মঙ্গলঘট, বিশ্বকর্মা পুজো হয়ে গেলেও অবিক্রিত পড়ে থাকল। মা দুর্গার কৃপায় কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও তা গেল ধারের টাকা শুধতে। হারিয়ে যাওয়া স্বচ্ছলতা ফেরাতে লক্ষ্মীপূজো কালীপূজো হোক আর ছট পুজো বা জগদ্ধাত্রী, দু-বেলা ভাতের জোগাড় হলেও সাধ পূরণ হয় না যে!!


নিজ লয়ে জীবন ফেরাতে দুর্গাপুজোর আলোর রোশনাই বা বড়দিনের সাজে মহানগরী সুসজ্জিতা। দূর্গাপুজোয় ক্যাপ-বন্দুক নতুন জামা, নিজেদের জন্মদিনে কেকের বায়না না করলেও টুটুল রুনু বায়না ধরেছে যিশুর জন্মদিনে কেক কাটবে...


অজয় আমতা আমতা করে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছেলেমেয়েকে বোঝাতে যাবে এমন সময়, জবা সে দায়িত্ব নিল নিজ কাঁধে।


প্রথমেই প্রশ্ন, আচ্ছা বলতো যীশুখ্রীষ্ট কে?


কালের নিয়মে যীশু হন আর ভগবান গোপাল বা গনেশ, সকলেরই তো প্রতিবছর জন্মদিন আসবেই যেমনটা তোমাদের আসে। এবছর তো রুনু, তোমার আর দাদার জন্মদিনে পরমান্ন দিয়ে মঙ্গল কামনা হলেও খাবারের পাতে আর পাঁচটা দিনের মতোই আলু সেদ্ধ ভাত ছিল। সেদিনের মতোই জন্মাষ্টমীতে গোপালের বা গণেশ পূজোয় গনু দাদার জন্মদিনও পালন হল নিতান্ত সাধারণ ভাবেই। এবার যদি যিশুর জন্মদিন কেকের আড়ম্বরতায় ভরিয়ে তোলো উনিও অপ্রস্তুত হবেন যে! এনারা সবাই ভক্তের ভগবান। তাইতো এবছর কেক নয়, ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বেলে একমনে সকলের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করবো আর জন্মদিনের কেক খাওয়ার অপেক্ষায় থাকবো নতুন সূর্যের... অনাহার হতাশার ধিকধিক করে জ্বলতে থাকা বুকের আগুন নিভিয়ে যে দিনটা হবে সত্যিই বড়দিন!!




ree

Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page