top of page

অণুগল্প - দায়িত্ব

  • মৌমিতা পাল
  • Dec 17, 2020
  • 2 min read


রিনি তাড়াতাড়ি খেতে এসো।


আমি আসবোনা ।আমি এখন খাবোনা।


ওরকম করেনা সোনা । সবসময় বায়না করতে নেই।


আমি এখন খাবোনা।আমার ভালো লাগছেনা।


দিন দিন অদ্ভুত রকমের জেদি হয়ে উঠছে রিনি। রিমার খুব বিরক্ত লাগে।খুব চিন্তাও হয় আজকাল।কোন কথা ঠিকমতো শুনতে চায়না।


আসলে মেয়েকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেনা রিমা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অফিস।মেয়ের বাবাও সেই রকম ব্যস্ত। বাবা মা দুজনকেই ঠিকমতো না পেয়ে মেয়েটা বড্ড জেদি হয়ে গেছে। কাজের মেয়ে মিনতি সেই সব সামলাতো এতদিন।


হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে গেল।করোনা অতিমারী এসে সব বদলে দিল।লকডাউন হয়ে গেল। অফিস বন্ধ কিছুদিন।তারপর ওয়ার্ক ফ্রম হোম। এদিকে মিনতিকেও আসতে বারণ করতে হয়েছে।ফ্ল্যাট বাড়িতে কোন কাজের মেয়ের ঢোকা বারণ। সবকিছু নিয়ে রিমা হিমশিম খাচ্ছে।


অবশ্য কিছু যে ভালো হয়নি তা নয়।রিমা রাহুল দুজনেই এখন বাড়িতে। আর এই সময় মেয়ের জেদের ব্যাপারটা রিমার বারবার চোখে পড়ছে।এই নিয়ে কাল রাতে দীর্ঘক্ষন আলোচনা হয়েছে রাহুলের সাথে।সব শুনে রাহুলও চিন্তিত।এতদিন সে নাকি কাজের চাপে এসব ভাবেনি। অবশ্য রিমাও তো তাই।কথা বলার সময় পেতনা। তাদের দাম্পত্য জীবনও খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। অতিমারী এসে লকডাউন হয়ে সেগুলো সব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।


বাবাই আমাকে কোলে নিচ্ছো কেন?


হি হি হি


তুমি খুব মজা করতে পারোতো !


কি বললে! তুমি আজ আমাকে খাইয়ে দেবে!তুমি খাওয়াতে পারো!


মাম্মা , দেখো বাবাই কি বলছে! আমাকে নাকি খাইয়ে দেবে! পারে নাকি তাই!


মেয়ের আর বাবার খুনসুটি আর তারপর মেয়ের হাসিমুখে বাইরে আসা দেখে আজ মনটা খুব খুশি হয়ে গেল রিমার।সত্যি এসব কবে থেকে যেন বন্ধ হয়ে গেছিল।হাসিখুশি ছেলে রাহুল কাজের চাপে হঠাৎ করেই খুব গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল।আজ আবার সেই পুরনো দিনের মতো লাগছে তাকে।


রাহুল তখন মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। কি সুন্দর করে খাইয়ে দিচ্ছে! ভাত মাখছে কি সুন্দর! একথা বলতেই রাহুল হেসে ফেললো।


তোমাকেও খাইয়ে দেবো নাকি! রাহুল এর কথা শুনে রিমার মুখেও তখন হাসি ।


মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রিমা বসে আছে পাশে।


কি এত ভাবছো বসে চুপচাপ!


আজ রিনি কি সুন্দর খেয়ে নিল।কি হাসিখুশি ছিল আজ।অন্য দিন কত বায়না করে।


আসলে আমাদের ঠিকমতো কাছে পায়না তো ! এবার থেকে মেয়েকে সময় দিতে হবে বুঝলে রিমা।


যাক অতিমারী অনেক খারাপ হয়েও কিছু ভালোও করেছে তাহলে।তুমি বুঝতে পারলে অন্তত।আমিও অবশ্য তাই।


হ্যাঁ রিমা।আমাদের নতুন করে বোধোদয় হলো।এই লকডাউন এই অতিমারী আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়ে গেল।আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে দিল। আবার আমরা নতুন করে বাঁচতে শিখলাম।যান্ত্রিকতার হাত থেকে আমরা মুক্ত হয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করতে শিখলাম।অনেক খারাপ এর মধ্যে এটাই আমাদের প্রাপ্তি।





Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page