বিষ
- ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়
- Sep 9, 2021
- 2 min read
মধুবালা হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে বিয়ে করে বসলো এক ভিন্ রাজ্যের ছেলেকে। বিয়ের প্রাথমিক উন্মাদনা কাটার পর যখন তার মনে হল, এভাবে ঘরে বসে শুধু রান্নাবাটি না খেলে কিছু উপার্জন করে বরের পাশে সে অনায়াসেই দাঁড়াতে পারে তখন সে প্রথম ধাক্কাটা খেল। বর বলল, আমি যা রোজগার করি চলে যাবে। তুমি বাড়ি থেকে বেরোবে না। মধুবালা সংসারে মন দিল। কোলে এলো এক ফুটফুটে রাজকন্যা।
মেয়ে খানিকটা বড় হওয়ার পর মাথায় আবার "পোকা" নড়ে মধুবালার। বলে, আমি যদি কাজ করি, কী সমস্যা?
যাই হোক, সেবারের মতো একটি রান্নার কাজের জন্য অনুমতি মিলল।
চলছিল মোটামুটি। যদিও মধুবালার বরের প্রত্যেক দিন চেষ্টায় থাকতো কী করে মধুবালার কাজটা বন্ধ করা যায়। দেশ থেকে পুরো পরিবারকে ডেকে নিয়ে এল। তাছাড়াও যখন তখন ফোন কেড়ে নেওয়া, কাজে না যেতে দেওয়া এ সব চলতেই থাকলো।
এমন সময় এল করোনা... লকডাউনের ঝড়।
মধুবালার বরের কাজ গেল। ঘরে আট জনের মুখে ভাত তুলতে হবে...
“যাও, রোজগার করে আনো..” বলা হল মধুবালাকে।
কিন্তু লকডাউনে কে কাজ দেবে?
কিছু এনজিও দাদাদিদির ভরসায় সে যাত্রা উৎরোনো গেল।
মধুবালা ততদিনে বুঝে গেছে, কাজ তাকে করতেই হবে।
এমন সময় আবার দুর্যোগ। মধুবালার বর বিয়ে করে নিয়ে এল আরেক মহিলাকে। অপমানিত মধুবালা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বিষ খেল।
বিষে মরেনি সে যাত্রা মধুবালা। অনেকদিন যমে মানুষে টানাটানির পর যে ঘরে ফিরল সে ঘর আর তার নেই।
মেয়েকে নিয়ে মধুবালা ফিরে গেল বাবা মায়ের সংসারে। কিন্তু বাবা মায়ের নিজেদেরই চলে না, বাড়লোদুটো পেট। কাজ চাই যে করেই হোক।
আমার সঙ্গে মধুবালার সেই শেষ দেখা। বলল, আধপেটা খেয়ে চলছে। বাবার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।মায়েরও রান্না বাড়ির কাজ গেছে লকডাউনে। মেয়েটা ক্লাস ফাইভে উঠবে। কী করবো, মাথার ঠিক নেই। হাজার দুয়েক টাকা ধার দেবে?
দিলাম।
পরদিন থেকে মধুবালার আর কোথাও কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।
কী যে হলো ?
অনেক ভেবেও কুল পাইনি।
দুদিন আগে এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে শুনলাম, এ অঞ্চলে লকডাউনে কাজ হারানো বাড়ির অনেক মেয়েরা অবৈধ ম্যাসাজ পার্লারে কাজ নিচ্ছে। বিউটি পার্লারের চাকরি বলে মেয়েদের বাধ্য করা হচ্ছে। পুলিশ রেইডে ধরাও পড়েছে অনেকে।
ভিতরটা ধক্ করে উঠলো।
না না। এমন ভাবতে চাইনা।
শেষ দিনের অভুক্ত শুকনো মুখটা বারবার মনে পড়ছে,
"এবার কিছু একটা করতেই হবে নইলে না খেয়ে থাকতে হবে"...
সেই "কিছু একটা" কী মধুবালা?
একবার তো মরতে বিষ খেয়েছিলে? আবার কী বিষ খেলে বাঁচার জন্য?
Comments