অণুগল্প - দুঃস্বপ্ন
- মৌমিতা পাল
- Jul 20, 2020
- 2 min read
Updated: Dec 16, 2020
চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। আস্তে আস্তে গিলে খাচ্ছে এই ভাইরাস। কোন ওষুধ নেই।কোন সমাধান নেই। চারদিকে ভয়ের আবহাওয়া।মানুষের কাছে মহা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে আজকে এই ভাইরাস।
টিভি চ্যানেলে খবরের কাগজে সর্বত্র এই এক আলোচনা। গগনবাবু সকালে উঠেই খবর শুনতে বসে যান। আজকেও টিভির দিকেই তাকিয়েছিলেন। এই সময় কানে এলো --
বুঝলে বৌদি আজ আমাদের পাশের পাড়ায় করোনা ঢুকে পড়লো।
ওমা তাই নাকি!কি ভয়ংকর অবস্থা! কি হবে এবার! আমাদের পাড়াতে এবার এসে পড়বে নাকি!
তা আসতেই পারে। এই রোগ তো ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে। খুব সাবধান থাকো বৌদি। বাড়ি থেকে একদম বেরিওনা। দাদাকেও বের হতে বারণ করো।
আর তোমার দাদার কথা বোলোনা সবিতা। সারাদিন শুধু খবর চালিয়ে বসে আছে। আর চিন্তা করে অস্থির হচ্ছে।
হ্যাঁ দাদা তো একটু বেশি চিন্তা করে।
চিন্তা মানে অতিরিক্ত। কোথায় আমাদের সাহস দেবে তা না নিজেই ভয়ে মরছে। আমি আর কি করবো বলো। মেয়েও সমানে ফোন করে বাড়িতে থাকতে বলছে। সাবধান থাকতে বলছে। তবে অত ভয় পেলেই বা কি করে চলবে ।
সেটা ঠিকই বলেছো বৌদি বেশী ভয় পেলে আবার মুশকিল।
বাড়ির গিন্নির আর পাশের বাড়ির সবিতার সব কথা কান করে শুনছিলেন গগনবাবু। পাশের পাড়ায় করোনা এসেছে শুনেই তার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে। কি করবে ভেবে চিন্তে শেষ হয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাড়িতে শুধু দুজন বয়স্ক মানুষ। মেয়ে অনেক দূরে।
রাতে খেতে বসে এই কথাই বললেন স্ত্রীকে। স্ত্রী অনেক বোঝালেন।
আরে আমরা তো একদম বাড়ি থেকে বের হচ্ছিনা। কেউ আসছেনা আমাদের বাড়ি। কাজের মেয়ে বন্ধ।দুধওয়ালাকে বারণ করেছো। কাগজ নিচ্ছোনা। এরপরও অত ভয় করলে চলে! সাবধান থাকতে হবে।তবে অত ভয় পেলে চলবেনা।
রাতে শুয়েও চিন্তা মাথা থেকে গেলনা গগনবাবুর। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলেন।
আপনার করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।
কি বলছেন ডাক্তার বাবু। আপনি ঠিক করে দেখেছেন?
রিপোর্ট তাই বলছে।
কি হবে এবার! ভয়ে গগনবাবুর গলা শুকিয়ে কাঠ। গলা থেকে স্বর বেরোচ্ছেনা।
কি আর হবে। হাসপাতালে যান।চোদ্দো দিন থাকুন। আপনার স্ত্রীকেও যেতে হবে।
হাসপাতালে! ওরেবাবা! আমি যাবোনা। ওখানে ভয়ংকর অব্যবস্থা।
তা বললে চলবে কেন! আপনার পাড়ার লোক পুলিশে খবর দিয়ে দিয়েছে শুনলাম। আপনার জ্বর সর্দি কাশি শুনেই পুলিশ এলো বলে।
না ডাক্তারবাবু আমাকে আপনি বাঁচান দয়া করে। আমি হাসপাতালে যাবোনা। চিৎকার করে আবার কেঁদে উঠলেন গগনবাবু।
এই শুনছো! কি সব বিড়বিড় করছো! ওরকম করছো কেন! এত ঘেমে গেছ কেন! শুনছো!
স্ত্রীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে ফ্যলফ্যল করে চেয়ে রইলেন গগনবাবু।
আমি কোথায়! আমার করোনা হয়নি!
কি সব বলছো! মাথাটা একেবারেই গেছে দেখছি। শুধু ভয় আর ভয়। ঐনিয়ে স্বপ্ন দেখছিলে বুঝি!
স্বপ্ন নয় গিন্নি দুঃস্বপ্ন। ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন।

লেখক পরিচিতি - গৃহবধূ হয়ে সংসার সামলানো মাঝেই জীবনের আনন্দের জন্য ভালো ভালো বই পড়তে খুব ভালবাসেন মৌমিতা।এটাই প্রধান শখ বা নেশা।মনের ইচ্ছা মতো লেখালেখি করেন।জীবনকে সহজ সরল ভাবে দেখতে ভালবাসেন।বিশ্বাস করেন জীবনকে সুন্দর ভাবে যাপন করাটাও একটা শিল্প।কারন সবকিছু শেষে জীবন কথা বলে।যাপনের মাঝেই জীবন বেঁচে থাকে।
Commentaires