অণুগল্প - স্রোতস্বিনী
- ব্রততী চক্রবর্তী
- Jul 19, 2020
- 2 min read
Updated: Dec 16, 2020
"Make me thy lyre tonight" --ওয়াইন বটলের পাশে হলদে চিরকুটটা দেখে চোখ ভিজে এলো আর্যর। পাগলী মেয়ে একটা! নিশ্চয়ই এসব কলকাতা থেকেই নিয়ে এসেছে তরু। মনে করে সব আনা চাই। নীল রঙা সুগন্ধি মোমের আলোয় পুরো ঘরটা মায়ায় ছায়ায় মিলে মিশে অদ্ভুত এক আলো আঁধারির সৃষ্টি করেছে। বাথরুম থেকে তরুর গুন গুন সুর ভেসে আসছে মাঝে মাঝে।
বাইরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় আর্য। সমুদ্রের কিনার বরাবর একটা লম্বা রেখা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। উথাল ঢেউ আর সমুদ্রগন্ধি বালিয়াড়ির মাঝ বরাবর লক্ষ্মণরেখা টেনে দিয়েছে কেউ অনির্দিষ্ট কালের জন্য। আজ দুপুরে এখানে পৌঁছে থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি আর নোনা হাওয়া। তরুর সঙ্গে সম্পর্কের দু'বছরে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছে আর্য। সংসার অফিস সব ফেলে তরুও বেরিয়ে পড়ে আর্যর টানে। বৃষ্টি না থাকলে এসময় হোটেলে ঢুকে পড়ে না ওরা। বসে থাকে ঝাউ জঙ্গলের পাশে। কোনোদিন হাঁটতে থাকে বীচে।
--- ঢেউ দেখছিস ?
তরু কখন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। আর্যর গালে আলতো করে গাল ঘষলো তরু...
--- আজ কি এখানেই বসবি ?
--- একদম নয়। ভিজলেই ঠাণ্ডা লাগাবি। ভেতরে চল।
--- ইশ কতো যেন তুই দেখতে যাবি আমি বাড়ি ঢুকে গেলে!
--- বার বার এগুলো না মনে করালেই নয়?
ঘরে এসে ওয়াইন গ্লাসে চুমুক দিয়ে তরুকে দেখছিলো আর্য। সাদা স্বচ্ছ রাতপোশাকে, বরফচুড়োয় চাঁদের আলোর মতো মোহময়ী তরু। তরুকে ছুঁতে গেলে যেন পার করে যেতে হবে আগুনের নদী। সোফায় আধশোয়া তরুর দিকে এগিয়ে যায় আর্য। তরুর শরীর আজ মায়াপ্রিজম। তরুর কোমর জড়িয়ে একটু একটু করে সরতে থাকে আর্যর হাত। আর্যর অ্যাডামস্ অ্যাপেলের ওপরে তরুর জিভ দাঁত খেলা করে বেড়াচ্ছে ধীরলয়ে। ক্রমশ শক্ত হয়ে আর্যর গলায় বসে যাচ্ছে তরুর নখ , তীক্ষ্ণ হচ্ছে জিভ। আর্য ধাক্কামেরে সরিয়ে দিতে চাইছে তরুকে,পারছে না। আর্যর গলায় দাঁত বসিয়ে দিচ্ছে তরু। ধারালো নখের দশটা আঙ্গুলে আর্যর কণ্ঠনালী চিড়ে দিতে দিতে চাপা হিসহিসে কণ্ঠস্বরে গর্জে ওঠে তরু " কাপুরুষ! কাপুরুষ কোথাকার!"
আর্য ককিয়ে উঠে... অস্ফুট স্বরে বলে "তুই তো নদী তরু ...তুই তো স্রোতস্বিনী , সব নদী কি একই খাতে বয়?"
--- আর্যবাবু ...
---আর্যবাবু উঠুন। গুড মর্নিং। আজ কেমন আছেন?
অ্যাসাইলামের খুপরি ঘরটায় একটুকরো সকালের রোদ এসে পড়েছে এখন । মর্নিং শিফ্ট নার্স মেডিসিন,ইঞ্জেকশন সব নিয়ে দাঁড়িয়ে সঙ্গে নতুন ডাক্তার। আর্য ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।
---তরু কি কাল আবার এসেছিলো আর্যবাবু ?
একই রকম ভাবে তাকিয়ে থাকে আর্য। ডাক্তার পেশেন্টের কেস ফাইলের পাতা উল্টোলে প্রথমেই পাঁচবছর আগের পেপার কাটিং টা সামনে আসে .."হোটেলে গলার নলীকেটে নৃশংস হত্যা কলকাতার গৃহবধূর"।

লেখক পরিচিতি - লেখিকা ব্রততী পেশায় শিক্ষিকা। লেখালিখিটা নেশা। বিশ্বাস করেন, মানুষই পারে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সেই বিশ্বাস থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষের পাশে থাকবার চেষ্টা করেন। অ্যাসিড অ্যাটাক সার্ভাইভারদের সঙ্গেও দীর্ঘদিন কাজ ধরে কাজ করে চলেছেন।
Comments