top of page

অণুগল্প - ডেস্টিনেশন ওয়েডিং

  • মানসী গাঙ্গুলি
  • Jul 18, 2020
  • 2 min read

Updated: Dec 16, 2020



আজকাল ছেলেমেয়েদের যে কি হুজুগ হয়েছে জানি না বাবা। বিয়ে করবি ভাল কথা,কর,বাড়িঘর রয়েছে,একটা বাড়ি ভাড়া নে,শহরে তো কত বাড়ি রয়েছে উৎসবে ভাড়া দেবার জন্য। এখন তো আর বাড়ির ছাদে ম্যারাফ বেঁধে কাজকর্ম করে না কেউ,তাতে বাড়িঘর নোংরা হয় আর খরচ যা হয় তাতে ভাড়াবাড়িই ভাল। তাই বলে মুলুক ছেড়ে দূরে গিয়ে বিয়ে! কি না ডেস্টিনেশন ওয়েডিং! এই নিয়ে নুপুরের সঙ্গে ওর মা মণির মনোমালিন্যই হয়ে গেল। মণির কত সাধ সাতদিন ধরে বাড়িতে আত্মীয়কুটুমের আনাগোনা হবে,বাড়িতে নহবত বসবে,কেবল বিয়ের সন্ধ্যেটা 'মাঙ্গলিতা'য় অনুষ্ঠান হবে। মেয়ের কথা শুনে ওর মুখ ভার হয়ে যায়। নুপুরের বাবা বিমলবাবু মণিকে বোঝান, "যার বিয়ে তার ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দেওয়াই আমাদের উচিত, তাই নয় কি?" মণির বক্তব্য,"বিয়েটা ও করবে,না ওর মা-বাবা দেবে? কোনটা ঠিক? নিজের পছন্দে বিয়ে করছে মেনে নিয়েছি,ছেলে ভাল,ঘর ভাল,তাই। তাই বলে সবই ওর মতে হবে? আমাদের শখ-আহ্লাদ,ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই "? বিমলবাবু বলেন,"মণি যুগ পাল্টেছে,ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা আরও কত কি করে বেড়াচ্ছে,ও তো কেবল নিজের পছন্দের ডেস্টিনেশনে বিয়েটা করতে চাইছে,তা করুক না। আমাদের মেনে নেওয়াটাই ভাল নয় কি? বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ে তো চলেই যাবে আমাদের ছেড়ে,শুধু শুধু এসব ঝামেলা করলে মেয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে আমাদের "। "আর আমরা যে এত জায়গায় নিমন্ত্রণ খেয়ে আসি,তাদের বলব না? অত লোক নিয়ে তো আর গোয়ায় ছুটতে পারব না "? "তুমি চিন্তা কোরো না,ওদেরকে ওদের মত চলতে দাও। বিয়ে হয়ে গেলে ফিরে এসে আমাদের পরিচিত সকলকে একদিন লজ ভাড়া করে নিমন্ত্রণ করে খাইয়ে দেব,সেদিনও মেয়েকে আরেকবার কনে সাজানো হবে নাহয়। কি খুশি তো? দু'জনের মতই থাকল তাহলে।" "অগত্যা"।


তোড়জোড় চলল। গোয়ায় এক ফাইভস্টার হোটেলে নুপুরের ডেস্টিনেশন ওয়েডিং। সেখানকার সানসেট বারে বিয়ের আগেরদিন ককটেল পার্টি। সানসেট দেখতে দেখতে উষ্ণ পানীয়তে চুমুক দেবেন পানরত অতিথিরা। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দু'শজনের ব্যবস্থা। কলকাতা থেকে আত্মীয়দের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। অবশ্য নুপুর জোর করে বাবাকে পাঁচলাখ টাকা দিয়েছে। সে নিজেও চাকরি করে,আর তার আবদারেই বাবার এতগুলো টাকা খরচ হচ্ছে তাই। এছাড়া নিজের গয়নাও অনেক গড়িয়ে নিয়েছে সে নিজের পয়সায়। ভালোয় ভালোয় তিনদিন ধরে চলল মেহেন্দি,সঙ্গীত,বিয়ের অনুষ্ঠান। নাচ-গান,খাওয়া-দাওয়া, হাসি-মশকরায় বিয়ে মিটল। পরদিন ফেরা। ঘুম থেকে উঠে ফেরার জন্য হুড়োহুড়ি করে প্রস্তুতি শুরু করতেই জানা গেল, অতিমারি করোনাকে রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। সমস্ত যানবাহন,এয়ারপোর্ট সব বন্ধ। অতগুলো মানুষকে নিয়ে অকূলপাথারে বিমলবাবু। এ যেন হরিষে বিষাদ।



লেখক পরিচিতি - লেখিকা মানসী গাঙ্গুলী একজন গৃহবধূ, যদিও খাতায় কলমে ল'ইয়ার। চিরকাল সাহিত্য প্রেমী,লেখালেখির শুরু খুব ছোট বয়সে ক্লাস থ্রি থেকে। প্রথমে স্কুল কলেজ ম্যাগাজিনে সে লেখা ছিল সীমাবদ্ধ, অবশ্য প্রতিযোগিতায় গল্প লিখেও পুরষ্কার পেয়েছিলেন সেসময়। মাঝে কিছুদিন সাহিত্যচর্চা থেকে বিরত থাকার পর আবার সাহিত্যচর্চা শুরু হয় বিগত পাঁচবছর আগে। বর্তমানে বেশ কিছু পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প এবং কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ওনার লেখা দুটি ছোটগল্পের সংকলন 'রূপকথা নয়' ও 'রংরুট' প্রকাশের আলো দেখেছে।



Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page