top of page

অণুগল্প - ভালোবাসা কারে  কয়

  • অপরাজিতা
  • Jul 17, 2020
  • 2 min read

Updated: Feb 19, 2021



দিনটা 14th ফেব্রুয়ারী- ভালোবাসার ছড়াছড়ি চতুর্দিকে। সরকারি হাসপাতাল এর gynae ওয়ার্ডে গিজগিজ করছে দর্শনার্থীদের ভিড়। অসময়ে ওয়ার্ড রাউন্ড শেষ করছিলো শুচি। হাল্কা শীতের আমেজ বাতাসে। এমন মায়াময় গোধূলিতে বাবুঘাটের কোলাহল টানছিলো শুচিকে। বিহান বলেছে অপেক্ষা করবে। রিপোর্ট দেখার জন্য বিনোদিনীর বেডের দিকে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় শুচি। Cervical ক্যান্সারের অন্তিম পর্যায়ের রুগীটির অবস্থা বড়োই সঙ্গিন। রক্তের দাগে ভরা বিছানার চাদর, পড়ে থাকা আধখাওয়া ভাত, মাছির ভনভনানি - সব মিলিয়ে এক উৎকট গন্ধ বেডের চারপাশে। কেতাদুরস্ত R.M.O. যাকে বলেন "smell of death". সেইখানে অসহায় শীর্ণকায় বিনোদিনীকে পরম যত্নে বসিয়ে মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছে তার স্বামী যতীন। চানাচুর বিক্রি করে দিন চালায় সে। টাকা জোগাড়ের জন্য গত সপ্তাহে গ্রামে গিয়েছিলো। ফিরে এসেই অনুপস্থিতির সবটুকু যত্ন যেন আজ ই করবে সে। স্বামী স্ত্রীর এই নীরব ভালোবাসার সুরটা কাটতে ইচ্ছে করছিলো না শুচির। কিন্তু আজ যে তাড়া আছে তার। তাই খাটের পাশে রাখা রিপোর্টগুলোতে দ্রুত চোখ বুলোতে থাকে সে। ক্ষীণ স্বরে বিনোদিনী অভিযোগ করে - "দিদি, ওনাকে একটু মানা কর আর খরচ করতে। গ্রামে গিয়ে জমি বেচে এসেছেন উনি। এই সপ্তাহে আমার নাকি আরো রক্ত লাগবে?" বলতে বলতে বিষম খায় সে। যতীন সযত্নে স্টিলের গ্লাসে জল খায়িয়ে দেয়। তারপরে সস্নেহে চিরুনি বোলাতে থাকে বিনোদিনীর অপুষ্ট বাদামি পাতলা চুলে। পড়ন্ত বিকেলের একচিলতে রোদ্দুর এসে পড়ে ওদের শুকনো মুখে। গলার কাছে জমা হওয়া পিণ্ডটা গিলে ফেলে কিছু গতানুগতিক নির্দেশ দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে শুচি। সারা সন্ধে ওদের কথা ভাবে শুচি। বিহান একটু বিরক্ত হয়। এতো রোমান্টিক সন্ধ্যায় তার প্রিয়া আনমনা। উপহার পছন্দ হলো না কি?


======================


পঁচিশ বছর পরে আজ আবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বাইরে ঝিরি-ঝিরি বরফ পড়েই চলেছে। ধবধবে সাদা বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাইরের ধূসর প্রকৃতিকে দেখে শুচি। Bedside টেবিলে রাখা এক গুচ্ছ লাল গোলাপ ও কার্ড। কাঁপা হাতে জল খেতে গিয়ে জামা ভিজিয়ে ফেলে সে । বরফে প্রতিফলিত হয়ে এক চিলতে রোদ্দুর এসে পড়ে ওর বিছানায়। একটু পরেই chemo চালু করতে আসবে নার্স। পঁচিশ বছরের ঝাপসা স্মৃতির উপর থেকে পর্দা সরে যায় - ভেসে ওঠে বিনোদিনী আর যতীনের মুখ। চোখদুটো জ্বালা করে চিকচিক করে ওঠে শুচির- বাঁ হাতের অনামিকায় চকচকে solitaire টা চেপে ধরে নিজেকেই প্রশ্ন করে - ভালোবাসা কারে কয়?






লেখক পরিচিতি - লেখিকা অপরাজিতা নীড়বাসনার শুরু থেকেই সাথে আছেন এই পত্রিকার সাথে। পশ্চিমবঙ্গে বড় হলেও কুড়ি বছরের বেশী সময় কেটেছে প্রবাসে। বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়েও সাহিত্যের প্রতি ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। তাই শরদিন্দুর শহরে নোঙর গেঁথে সক্রিয়ভাবে বাংলা চর্চা ও বাংলা ভাষার প্রসারের নানা প্রয়াসে অংশ নেন তিনি। লেখা ছাড়াও নাটক ও আবৃত্তি এঁর অনেক শখের মধ্যে অন্যতম।

Comentarios


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page