অণুগল্প - পুতুল
- পল্লবী পাল
- Jul 16, 2020
- 2 min read
Updated: Feb 19, 2021
১
বৃষ্টি আর তিতাসের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল ছোটমামার বিদেশ থেকে আনা একটা ছোট্ট পুতুল নিয়ে। ছোটমামা অতো কিছু না ভেবেই বৃষ্টির জন্য একটা চোখ পিটপিট করা পুতুল আর তিতাসের জন্য টেডিবিয়ার এনেছিলেন। দুই বোনেরই যে পুতুলটাই পছন্দ হবে সেটা তো বুঝতে পারেননি। তিতাস বৃষ্টির থেকে চার বছরের ছোট, স্বভাবে একটু ছটপটে, আর যাকে বলে হাতে পায়ে লক্ষী। কোনো একটা খেলনা বলো, রং পেন্সিল বলো, কী ছবির বই, কিচ্ছু আস্ত রাখে না। বছর আষ্টেকের বৃষ্টি আবার স্বভাবে ঠিক উল্টো, খুব ধীর, স্থির, শান্তশিষ্ট আর গুছানো; সব খেলনা বইপত্র যত্নে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে। বৃষ্টি যতবারই তিতাসকে ওর খেলনা দিয়েছে, ততবারই তিতাস সেটাকে কানা, খোঁড়া বা নেড়ুমুন্ডি করে দিয়েছে, নাহলে স্কেচ পেন বা রং পেন্সিল দিয়ে তার ভোল পাল্টে দিয়েছে। এবারে তাই তিতাস বৃষ্টির পুতুলটা পুতুলে একদম হাত দিবি না, আক্কুটে মেয়ে একটা। যেটায় হাত দিস সেটাই নষ্ট করে ফেলিস। ছুঁবিনা একদম বলে দিলাম।" বৃষ্টির কথায় সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল তিতাস। দোতলার ঠাকুরঘরের সিঁড়ির ওপর একলা বসে মাথা নিচু করে অনেক্ষন কেঁদেছিল। ভারী অভিমান হয়েছিল ওর, তারপর থেকে বৃষ্টির কোনো জিনিসে হাত দিত না তিতাস।
২
রান্নাঘর থেকে ব্যস্ত হয়ে মা ডাক দিচ্ছে-" তিতাস ! মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে রে, কাঁদছে খুব, যা গিয়ে দেখ না একবার। " তিতাস হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে ঘরে আসে। চোখ বন্ধ করে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে চোদ্দদিনের এত্তোটুকু প্রাণ। গায়ের চাপাটা খুলে গেছে, বোধহয় শীত করছে। তিতাস বিছানায় বসে নরম কম্বলটা আবার চাপা দিয়ে দেয়, তাতেও চিৎকার থামেনা। তিতাস খুব সাবধানে ওকে তুলে কোলে শুইয়ে দেয়, গুনগুনিয়ে আস্তে আস্তে হাতের আশ্বাস দিতে থাকে। কিছুক্ষন পর শিশুটিও কান্না থামিয়ে দেয়। একটু নড়াচড়া করে একটা সুবিধামতো ভঙ্গিতে কোলের গরমে আরামে আবার চোখ বুজে ফেলে। তিতাস একটু নিশ্চিন্ত হয়ে মাথা তোলে। হঠাৎ নজর পড়ে ওদের পুরোনো কাঁচের শোকেসের দিকে। ছোটমামার বিদেশ থেকে এনে দেয়া পুতুলটা সযত্নে সাজিয়ে রাখা, এখনো নতুনের মতো আছে। দু চোখ ছল্ছলিয়ে ওঠে তিতাসের। গলা বুজে যায়, গাল বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা। তিতাসের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে সদ্য মাহারা একটা ছোট্ট জ্যান্ত পুতুল।

লেখক পরিচিতি - লেখিকা পল্লবীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা হাওড়ার আন্দুলের শহরতলিতে। শিক্ষাগত দিক দিয়ে MBA, পদার্থবিদ্যায় স্নাতক, তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিতে HR ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে পারসোনালিটি ডেভেলপমেন্ট ও সফটস্কিল ট্রেনার হিসাবের কর্মরতা পল্লবী। সাহিত্যচর্চার সঙ্গে বহুদিন যুক্ত থাকলেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা, ওয়েব ম্যাগাজিন, নিউজ পোর্টাল, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন সাহিত্য গ্রূপে এবং নিজস্ব ব্লগে সক্রিয়ভাবে লেখা শুরু করেন পল্লবী।
Comentários