top of page

অনুবাদ গদ্য - লা ইওরোনা

  • কৌশিক দাশ
  • Jul 10, 2020
  • 3 min read

Updated: Feb 19, 2021


লা ইওরোনা-৫


আমাদের দেশে কত ভূতের গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর ভূতের ভয় অল্প বিস্তর সবারই আছে, যদিও ভূতের গল্প পড়তে সব বাঙালিই ভালবাসে। ছোটবেলা থেকে কত রকম ভূতের গল্প আমরা শুনেছি। সেরকমই লাতিন আমেরিকার ভূতের গল্পও সারা পৃথিবীতে খুব জনপ্রিয়। কিন্তু স্প্যানিশ ভাষায় লেখা বলে সেগুলি বাঙালি পাঠকদের খুব একটা পড়ার সুযোগ হয় না। আজ একটা নতুন ভূতের গল্প বলবো যে রাত্রিবেলা কাঁদতে কাঁদতে ঘুরে বেড়ায়- ‘লা ইওরোনা’। স্প্যানিশ ভাষায় ‘La llorona’(লা ইওরোনা) শব্দের অর্থ হল the weeping lady বা ক্রন্দনরতা মহিলা। এটি লাতিন আমেরিকান একটি বিখ্যাত ভৌতিক লেজেন্ড।


লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশেই (যেমন মেক্সিকো, চিলি, আর্জেন্টিনা, ইকুয়াদোর, পেরু, কলোম্বিয়া, কোস্তারিকা, এল সালভাদোর, উরুগুয়ে, হন্ডুরাস, ভেনেযুয়েলা ইত্যাদি) এবং স্পেনেও এই গল্পটি শোনা যায়। শত শত বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই গল্পটি শুনে আসছে, কিন্তু আজও এই গল্পের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমে নি। একটি ভৌতিক লেজেন্ড নিয়ে এত সংখ্যক প্রচলিত গল্পের নজির পৃথিবীতে বিরল। এই ইওরোনাকে নিয়ে এক একটি দেশে এক এক রকম গল্প প্রচলিত।

এবার ইকুয়াদোরের গল্পেটি শোনা যাক।


শোনা যায় এক মহিলাকে তার স্বামী পরিত্যাগ করে চলে যায়, এর ফলে সেই মহিলা খুব সমস্যার সম্মুখীন হয়। একটি ছোট বাচ্চা, হাতে কোনও টাকা পয়সা নেই। এই অবস্থায় তার মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কারণ সে তার স্বামীকে অন্ধের মত বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু সে তার সাথে প্রতারণা করে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এর ফলে সে খুব অপমানিত বোধ করে। সে এতটাই আঘাত পায় যে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর সে এক ছুটে নদীর পাড়ে চলে যায় এবং তার সন্তানকে ডুবিয়ে মেরে ফেলে। পরে যখন সে আবার কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, সে সেই নদীর পাড়ে ছুটে যায় তার সন্তানের খোঁজ করতে। বেশ কিছুদিন খোঁজাখুঁজির পর সে তার সন্তানের মৃতদেহ খুঁজে পায়, কিন্তু তার হাতের একটা আঙুল কম ছিল।


এই বীভৎস দৃশ্য দেখে সে কান্নায় ভেঙে পড়ল এবং অবশেষে সেও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু এই মৃত্যুতেই সব কিছু শেষ হল না। জীবিত অবস্থায় তার এই অপরাধমূলক কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ সে একটি বেদনা-ক্লিষ্ট আত্মা হিসেবে আবার ফিরে আসে। সে রাত্রিবেলা ঘুরে বেড়ায়, করুণ ভাবে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় এদিক ওদিক তার ছেলেকে খুঁজতে থাকে। শোনা যায় রাত্রিবেলা অন্যমনস্ক কোনও লোককে একা পেলেই সে তাকে আক্রমণ করে এবং তার হাতের কড়ে আঙুলটি কেটে নিয়ে তার ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়।


প্রচলিত গল্প থেকে জানা যায় এখানকার লোকেরা বিশ্বাস করে যে সমস্ত বাড়িতে সন্তানসম্ভবা মহিলা আছে, ঠিক প্রসবকালে ওই বিলাপকারী আত্মা- ‘লা ইওরোনা’ সেই বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। নদীর জলে ডুবে মৃত সন্তানের কষ্ট ভোলার জন্য সেই আত্মা যেকোনভাবে সেই বাড়ী থেকে নবজাতককে চুরি করার চেষ্টা করে।


সেই কারণে ইকুয়াদোরে একটি বহুল প্রচলিত রীতি আছে যে বাড়িতে সন্তান সম্ভবা মহিলা আছেন, সেই বাড়ীর চারিদিক মিষ্টি দিয়ে ভরে রাখা হয়, যাতে প্রচুর মিষ্টি খেয়ে সে ক্লান্ত বা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বাচ্চার কাছে পৌঁছনোর আগেই সে সেই বাড়ী ছেড়ে চলে যায়।





লেখক পরিচিতি - একটি ইন্টারন্যাশানাল স্কুলে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত কৌশিক স্বামীজি আর নেতাজি – এই দুজন মানুষকে সামনে রেখে চলেন। নিজের সাথে রোজ বন্ধুত্ব করেন, নিজেকে বোঝার চেষ্টা করেন। সততা এবং আত্মসমালোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করেন নিজেকে প্রতি মুহূর্তে উন্নত করার। রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সিটিউট অফ কালচার, গোলপার্কের প্রাক্তন ছাত্র কৌশিকের একটি প্রবল ভালোবাসার জায়গা বিভিন্ন বিদেশী ভাষা। আর এই ভাষার মাধ্যমেই এক একটি দেশের সংস্কৃতি, সভ্যতার অন্দর মহলে ঢুকে গেছেন নিজের অজান্তেই। একটি দেশের সংস্কৃতির একটি বড় অঙ্গ সেই দেশের প্রচলিত গল্প। আর স্প্যানিশ মানেই তো রত্ন ভাণ্ডার… স্পেন, আরজেন্তিনা, মেক্সিকো, চিলি, হন্ডুরাস, পেরু, গুয়াতেমালা… আরও কত দেশ। এসব দেশের দু একটি প্রচলিত গল্পগুলি মূলত স্প্যানিশ ভাষায় রচিত। এই সব গল্প বাঙালি পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছে নিয়েই অনুবাদের চেষ্টা। পাশাপাশি কৌশিকের স্বরচিত কবিতা এবং গল্পও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়।



Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page