রম্যরচনা - বিভ্রাট ফেবুতে
- মানসী গাঙ্গুলি
- Jun 23, 2020
- 3 min read
Updated: Dec 16, 2020
অনেকদিন থেকে রুমির ইচ্ছে ফেসবুকে সবাই যা ছবি দেয় সেসব দেখার কিন্তু ওর তো ফেবুতে অ্যাকাউন্ট নেই,কি করে দেখে! তাই যখন ওর ভাইবউ মিনু ওর কাছে বেড়াতে যায় তখন মিনুই ওকে সব দেখায়। রুমি যদিও মিনুর থেকে ১০ বছরের বড়, তাও ওরা খুব বন্ধু।
আসলে রুমি খুব ব্যাকডেটেড,ভাল করে মোবাইল ফোনটাও ব্যবহার করতে শিখল না এখনও পর্যন্ত। মিনু ওকে সব শেখায়। একটা গোপন কথা বলি। আসলে রুমির আগে বিশেষ আগ্রহ ছিল না এসব শেখার,কেবল ফোন ধরা ছাড়া,আর অনেকদিন পর মোবাইল থেকে ফোন করা শিখেছে মিনুর বকুনি খেয়ে খেয়ে। কিন্তু এখন আগ্রহটা অন্যকারণে,ছেলে বিয়ের পর মুম্বাই চলে গেছে বউ নিয়ে চাকরী সূত্রে। চেনা পরিচিত অনেকের কাছেই শোনে বউ নাকি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে ছবি দেয়,তাই একটু গোয়েন্দাগিরির জন্যই ফেবুতে অ্যাকাউন্ট করার ইচ্ছে। আসলে বউকে ওর একদম পছন্দ নয়, যদিও মেনে নিয়েছে। আর সত্যি করে পছন্দ হয়ই বা কি করে,একমাত্র ছেলে ওর রাজপুত্তুরের মত দেখতে,৬ফুট লম্বা,টকটকে গায়ের রঙ, তেমনি চোখ নাক। রুমি নিজেও সুন্দর,যদিও বর্তমানে কোনো এক সমস্যায় ওর মাথার চুল একদম উঠে গেছে। তা যা বলছিলাম, ছেলের বউটি ছেলের পাশে একেবারে বেমানান,মোটা, বেঁটে,কালো যদিও চোখ নাক খুব খারাপ নয়।তার ওপর বউয়ের চ্যাটাংচ্যাটাং কথাও আছে আর শাশুড়ির দুর্বল জায়গা,চুল কমে যাওয়া নিয়ে আড়ালে হাসে,রুমি বেশ বুঝতে পারে।ছেলের মুখ চেয়ে রুমি হজম করে সব,ছেলে ভালবেসে বিয়ে করেছে,ওরা খুশি থাক কিন্তু একে তো মন থেকে পছন্দ হয়নি তার ওপর এমন স্বভাব বউয়ের তাই মনে মনে রুমি বউকে একদমই পছন্দ করতে পারে না। আর সেই কারণেই বউয়ের ওপর গোয়েন্দাগিরি করার ইচ্ছেয় মরিয়া হয়ে এখন মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করছে। একটু একটু কনফিডেন্স হচ্ছে আজকাল। মিনুই ওকে সাহস যোগায় সমানে। ওকে হোয়াটস-অ্যাপ করা শিখিয়েছে। তারপর ডিলিট করা শেখায়,না হলে মেমোরি ফুল হয়ে যাবে বলেছে। রুমি পারছে করতে যদিও এসব শেখাতে মিনুকে অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। একই জিনিস কতবার যে শিখিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মিনুর বর মানে রুমির ভাই এসব দেখে খেপে যায়,বলে"তোর দ্বারা হবে না ছেড়ে দে"। ছোট থেকেই দিদির পিছনে লাগা অভ্যাস ভাইয়ের। দিদিও খানিক চোটপাট করে ভাইকে।
যাই হোক রুমি এখন অনেক কিছুই শিখে গেছে। মিনু ভাবে এবার ওর ননদ পারবে ফেসবুক করতে। তাই ভাবে বাড়ীতে সরস্বতীপূজায় যখন রুমি ও তার হাসব্যান্ড আসবে ওদের বাড়ী মানে রুমির বাপের বাড়ী, সেদিন অনেকটা সময় পাওয়া যাবে সারাদিনে, তো রুমির ফেবুতে অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে।সেইমতই হল,রুমি খুব এক্সাইটেড এবার তবে সব দেখতে পাবে। রুমির ভাল ছবি না থাকায়,অল্প বয়সের একটা ছবি ওর প্রোফাইল পিকচার করে দেয়। চেনা পরিচিতদের ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় আর বারবার বলে দেয় ছবি দেখা ছাড়া কিছু না করতে। রুমি ছবি দেখে, কমেন্ট ও দেয়। ছেলে দেখে বলে,"মা বেশ শিখে গেছো দেখছি"। আর পায় কে? রুমির কনফিডেন্স বেড়ে গেছে। এবার Add friend দেখে দেখে সব অ্যাড করে ফেলছে,যাদের চেনে না তাদেরও,ভাবছে ওকেই তারা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। কিছু কিছু ছেলে মজা পাচ্ছে,অল্প বয়সের ছবি দেখে বেশ রসিয়ে রসিয়ে কমেন্ট দিয়েছে। রুমির বয়স ৬০এর ওপর,এসব ওর খুব খারাপ লাগছে। এবার মিনুকে সব বলে। মিনু বলে "করেছ কি,বারে বারে বারণ করলাম এখুনি নিজে নিজে কিছু করতে যেও না,তাও। না: তোমায় নিয়ে আর পারা যায় না"। আরেকটা কাণ্ড করেছে রুমি,ছেলের শ্বশুরবাড়ির তরফের দূর সম্পর্কের বউয়ের কোনো বড় দাদাকে ওইরকম অ্যাড করে বসে আছে। সেও চিনতে না পেরে অদ্ভুত কমেন্ট করে বসেছে। পড়বি তো পড় বউয়ের চোখে,ওর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে। সে তো হেসেই খুন। সে তার বরকে দেখায়, মনে মনে শাশুড়ির কীর্তিতে খুব মজা পায়,আর বউকে নিয়েই শাশুড়ির যত ঝামেলা আর ওর কাছেই ছোট হতে হল। ছেলে রেগে-মেগে মায়ের অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে দিয়েছে। রুমির ফেবু করার সাধ আর পূর্ণ হল না। হল না আর গোয়েন্দাগিরি করা।

লেখক পরিচিতি - লেখিকা মানসী গাঙ্গুলী একজন গৃহবধূ, যদিও খাতায় কলমে ল'ইয়ার। চিরকাল সাহিত্য প্রেমী,লেখালেখির শুরু খুব ছোট বয়সে ক্লাস থ্রি থেকে। প্রথমে স্কুল কলেজ ম্যাগাজিনে সে লেখা ছিল সীমাবদ্ধ, অবশ্য প্রতিযোগিতায় গল্প লিখেও পুরষ্কার পেয়েছিলেন সেসময়। মাঝে কিছুদিন সাহিত্যচর্চা থেকে বিরত থাকার পর আবার সাহিত্যচর্চা শুরু হয় বিগত পাঁচবছর আগে। বর্তমানে বেশ কিছু পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প এবং কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ওনার লেখা দুটি ছোটগল্পের সংকলন 'রূপকথা নয়' ও 'রংরুট' প্রকাশের আলো দেখেছে।
Comments