top of page

গল্প - 'পিওন’ থেকে ‘চ্যাম্পিয়ন'

  • সুমন্ত চক্রবর্তী
  • Dec 24, 2019
  • 2 min read

এক তফসিলি আমলার আত্মহত্যার কথাটা বেশ ফলাও করেই বেরিয়েছিলো সংবাদ মাধ্যমে। এইসব ক্ষেত্রে যা হয়, মানসিক চাপ, দুর্নীতি, মনের অসুখ ইত্যাদি সব রকমের সম্ভাব্য তত্ত্বই উঠে এসেছিলো। দু একদিন চর্চার পর জনমানস থেকে আস্তে আস্তে মুছেও গিয়েছিলো নিয়মমাফিক। এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে কোনো এক বন্ধুর মারফত কারণ সম্পর্কে যেটা শুনেছিলাম সেটা বেশ চিত্তাকর্ষক। এই ভদ্রলোক তাঁর স্বভাব ও কিছু ব্যবহারিক আচরণের জন্য বড় থেকে ছোটো বিভিন্ন মহলে উপহসিত হতেন এবং ‘কোটা’য় সুযোগ পাওয়ার খোঁটা আড়ালে আবডালে ভালোরকম ফিসফাস হোতো এটাও তাঁর অজানা ছিলো না। তিনি আগেও যেখানে কাজ করেছেন সেখানেও কম বেশী এ নিয়ে কথা হোতো। তাই ব্যাপারটা গা সওয়া ছিলো তাঁর। কিন্তু মনের গভীরে তিল তিল করে আত্মবিশ্বাসের ভিতটা নড়বড়ে হচ্ছিলো মনে হয়। তাঁর আর একটি পরিচিত দুর্বলতা ছিলো ইংরেজি ভীতি। মিটিং-টিটিং এ অন্যান্যদের মধ্যে তিনি এ বিষয়ে ত্রস্ত হয়ে থাকতেন-অনেক সময় অকারণেই। অফিসের চিঠি পত্র লেখালেখির ক্ষেত্রেও তিনি মোটে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। কিছু লিখতে হলেই আগের কিছু এরকম চিঠি আছে কিনা তার খোঁজ করে সহকারীদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন। তারপর সামান্য অদল বদল ও কপি পেস্ট করে কাজ সমাধা করে নিশ্চিন্ত হতেন। কিন্তু পরক্ষণেই পরের চিঠি এসে পড়ত ও তিনি আবার তটস্থ হয়ে পড়তেন।


এরকমই চলছিলো। হঠাৎ তিনি হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো সাহিত্যে ‘ডক্টরেট’ করা একটি ছেলের সন্ধান পেলেন যে অফিসে কিছুদিন আগে ‘পিওনে’র কাজে যোগ দিয়েছিল। অনন্যোপায় হয়েই তার বহু কাঠ খড় পুড়িয়ে এই ‘সামান্য’ অথচ ‘স্থায়ী’ পদে যোগ দান। বয়স পেরিয়ে যেতে যেতে কোথাও কিছু সুরাহা না হওয়ায় মরীয়া হয়ে পরিবারের একান্ত প্রয়োজনে তার এই চাকরীতে যোগ দান। এমন কি ‘ডোম’ হিসেবে অন্য একটি পদের জন্যও সে আবেদন করেছিলো। নিজের ও সমাজ সংসারের উপর আস্থা তলানিতে ঠেকতে ঠেকতে তার এই খড়কুটো আঁকড়ে ধরা। তাও পাড়ার রাজনৈতিক মহলে হাজার ধরা-করা করেই।


দুই ভিন্ন কারণের মনমরা লোক বিধির কারণে একে অপরকে খুঁজে পাওয়া- এক জায়গায় কাজের সূত্রে। গোপনে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও আমলা ভদ্রলোক এই ছেলেটির শিক্ষাগত যোগ্যতার সন্ধান পেয়ে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাজিয়ে দেখে একেবারে নিজের কক্ষে ‘আপন’ করে নিলেন। ‘পিওন’ থেকে প্রায় ‘চ্যাম্পিয়নে’র ভূমিকা ও কিছু আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করে দিলেন যদিও তকমাটা সেই একই থেকে গেলো। আস্তে আস্তে নির্ভরশীলতা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গেলো যে ছেলেটির চিঠির ড্রাফটিং-এ তিনি অন্ধভাবে ভরসা করা শুরু করলেন – প্রায় না পড়েই সই করে দিয়েছেন অনেকবার। বিষয়টি শুধু বলে দিতেন আর বাকি লেখালেখির দায়িত্বে সেই ‘পিওন’ বন্ধু। ঠিক এই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিলেন আরও কিছু অফিসের লোক। যারা এই আমলা ভদ্রলোকটিকে দু চোখে দেখতে পারতেন না ও বিপদে ফেলার চেষ্টা করতেন। যে রাজনৈতিক দাদাদের ধরে এই পিয়নের পদে ছেলেটি যোগ দিয়েছিলো ও কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ ছিলো তাঁদের দু এক জনের সাথে শলা পরামর্শ করে একটি নিখুঁত ছক তাঁরা সাজিয়ে ফেললেন এই ছেলেটিকে ঘুঁটি করেই। প্রচণ্ড মানসিক চাপ দিয়ে ছেলেটিকে বাধ্য করা হলো আমলা ভদ্রলোকটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে। এমন একটি চিঠি উপরমহলে পাঠানোর জন্য তাকে দিয়ে রচনা করানো হোলো যার ফল হলো মারাত্মক। এটিতেও আমলা ভদ্রলোকটি চোখ বুজেই সই করেছিলেন এবং নানাবিধ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। অসম্মানের বোঝা বহন করতে অবশ্য তিনি ‘মুক্তির’ পথ খুঁজেছিলেন যা ‘খবর’ হয়েছিলো।


যেটা খবরে আসে নি সেটি দ্বিতীয় ‘আত্মহত্যা’র কথা। হ্যাঁ, সেই পিওন ছেলেটিও একইভাবে অব্যাহতি নিয়েছিলো ‘চ্যাম্পিয়ন’এর ভূমিকা থেকে।






Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page