top of page

সম্পাদকের কলমে

  • পার্থ সেন
  • Aug 14, 2019
  • 3 min read

প্রিয় আমাদের নীড়বাসনার সমস্ত বন্ধুরা,


আপনাদের সকলকে জানাই স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা। আশাকরি আপনারা সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের শুভেচ্ছা, শুভকামনা, ভালোবাসাকে পাথেয় করে সেই ২০১৬ সালের এপ্রিলে আমাদের যে পথচলা শুরু হয়েছিল, আজ তার আমরা চতুর্থ বর্ষে এসে পড়েছি। এবারে সেই চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যা, প্রথম থেকে শুরু করে ‘একাদশ’ সংখ্যা। আমাদের সমস্ত লেখক, লেখিকা, পাঠক, পাঠিকা, সহযোগী, চিত্রাঙ্কনকারী, রিভিউয়ার এবং শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আর আমাদের সমস্ত পাঠক বন্ধুদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। আপনাদের জন্যই প্রতি সংখ্যায় আমাদের পাঠক সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের সংখ্যায় আপনাদের অনেক মূল্যবান মতামত পেয়েছি, যথাযথ ভাবে চেষ্টা করলাম সেগুলোকে নিয়ে সামনে এগোতে। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, আমাদের সঙ্গে থাকুন আর আপনাদের সাহিত্যচেতনা আমাদের সাথে ভাগ করে আমাদের আরো সমৃদ্ধ করে তুলুন। আপনারা সঙ্গে থাকলে আরো অনেকটা পথ এগোতে পারব এই আশাই রাখি।



আমাদের এবারের বিষয় ‘সাহিত্যে হাস্যরস’। এটাকে বেছে নেবার পেছনে একটা কারণ ছিল। আসলে মানুষের আচার আচরণে অসংগতি বা অশালীনতা বা অশোভনতা নানা কারণে প্রকাশ পায়। নানা বিচিত্র অসংগতির প্রতিক্রিয়া আমাদের মনে নানান ইমোশন বা আবেগ সৃষ্টি করে, যেমন বিরক্তি, ক্রোধ ইত্যাদি। আর এই সমস্ত আবেগগুলি নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা বা মননভঙ্গীর ওপর। সমস্ত আবেগের মধ্যে কৌতুকের অনুভূতি হল আমাদের বিশেষভাবে প্রীতিকর। আর তাই স্বভাবতই কৌতুকবোধকে সাহিত্যের উপজীব্য বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আর এই কৌতুক কে আশ্রয় করে যে সাহিত্যরসের উদ্ভব হয় তারই নাম ‘হাস্যরস’। আর বাংলা সাহিত্যে নির্মল ‘হাস্যরস’ সৃষ্টিকারী লেখা বা লেখক কিছু কম নয়। তাই অন্যবারের মতো এবারেও আপনাদের জন্য নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এবারের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম ‘সাহিত্যে হাস্যরস’ – ‘হাস্যরস-সাহিত্যের’ উদ্দেশ্যে এক শ্রদ্ধার্ঘ।


অবশ্যই হাস্যরস সৃষ্টির প্রকৃতিভেদে হাসির রচনার রূপভেদ হয়। পরিহাস, কৌতুক, ব্যঙ্গ, রঙ্গ, রগড়, তামাশা, মজা – এই গুলো কিন্তু কোনটাই একে অন্যের প্রতিশব্দ নয়। আসলে এগুলো হাস্যরসের বিচিত্রতা। আর এই সব কিছু নিয়ে তো গোটা সাহিত্য। তবে ‘হাস্যরস’ সাহিত্যের কিন্তু একটা বিপদ আছে, যদি কোন কারণে তা যথার্থ সাহিত্যের পর্যায়ে উন্নীত না হয় তাহলে অনিবার্যভাবে তা কদর্য রুচিবিকৃতি বা ভাঁড়ামির স্তরে নেমে যায়।


ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় চৈতন্যদেবের সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যে নানা ভাবে হাসির রোল উঠেছে। ঈশ্বর গুপ্তের লেখায় আছে ‘এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গভরা’। সুতরাং আজকের মতো সে যুগেও বাঙালী জাতি যে ‘অরসিক’ ছিল না, সেটা বোঝাই যায়। অতঃপর মাইকেল মধুসূদন, দীনবন্ধু বা বঙ্কিমচন্দ্রের হাত ধরে ইংরাজি সাহিত্যের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যের হাস্যরসে এক নতুন স্বাদ-গন্ধ যুক্ত হয়। বঙ্কিম তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’তে হাস্যরসের প্রয়োগ করেছেন। অবশ্য সেখানে হাসাবার যে চেষ্টা তিনি করেছিলেন তা হয়তো খুব উচ্চাঙ্গের নয়, কিন্তু ‘লোকরহস্য’ বা ‘কমলাকান্ত’এর হাস্যরস কিন্তু আজকের দিনেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। মাইকেলের বা দীনবন্ধুর নাটকে যে হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছিল আজও তা মানুষকে হাসায়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসে এক অভাবনীয় পরিবর্তন আসতে দেখা যায়। হাসিতে হাসিতে যে কত সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকতে পারে, হাসি কান্না পরস্পরের কত কাছে আসতে পারে তার পূর্ণ পরিচয় পেতে থাকেন পাঠকেরা। আর সেই ধারা অবশ্যই আসে কবিগুরুর হাত ধরে।


একটা ছোট উদাহরণ, ভোজনপ্রিয় বাঙালীকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন

“এমন পাঁঠার মাংস নাহি খায় যারা/ ম’রে যেন ছাগীগর্ভে জন্ম লয় তারা।

অনুমতি কর ছাগ উদরেতে গিয়া/ অন্তে যেন প্রাণ যায় তব নাম নিয়া”


এবারে কবিগুরু তাঁর ‘খাপছাড়া’ পদ্যে লিখলেন আর সেটাই ছিল বিবর্তনের রূপ,

“বাংলা দেশের মানুষ হয়ে/ ছুটিতে চাও চিতোরে

কাঁচড়াপাড়ার জলহাওয়া লাগল এতোই তিতো রে?

মরিস ভয়ে ঘরে প্রিয়ার/ পালাস ভয়ে ম্যালেরিয়ার

হায় রে ভীরু, রাজপুতানার ভূত পেয়েছে কি তোরে?

লড়াই ভালোবাসিস – সে তো আছেই ঘরের ভিতরে”


রবীন্দ্রসাহিত্যের সেই উজ্জ্বল আলোক রাঙিয়ে দিয়ে গেল গোটা বাংলা সাহিত্যকে। সেখান থেকেই শুরু, এরপর ত্রৈলোক্যনাথ, সুকুমার, পরশুরাম, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শিবরাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, আশাপূর্ণা, লীলা মজুমদার, শীর্ষেন্দু, সুনীল, সঞ্জীব, আরো অনেকে সেই হাস্যরসের ধারাকে শ্রেষ্ঠ শিখরে নিয়ে গেলেন। আর সেই সঙ্গে নারায়ণ দেবনাথ নিয়ে এলেন কালজয়ী কিছু কার্টুন চরিত্র যা আজ যে কোন বয়সের মানুষকে হাসায়।


যেটা বলার যে, খুঁজলে এমন কোন সাহিত্যিক বোধহয় পাওয়া যাবে না যেখানে সাহিত্যিক তাঁর রচনায় হাস্যরস প্রয়োগ করেননি। যেমন সত্যজিৎ তাঁর কালজয়ী থ্রিলার কাহিনীতেও একের পর এক অসাধারণ হাস্যরস সৃষ্টি করে গেছেন। আবার শরদিন্দু ব্যোমকেশের দমবন্ধ করা কাহিনীর রহস্যমঞ্চেও বারে বারে হাস্যরসে ভিজিয়ে দিয়েছেন পাঠকের মন। তাই নীড়বাসনার সকল পাঠক পাঠিকাদের সঙ্গে সাহিত্যের এই অনন্য ধারাকে আর একবার স্মরণ করতে চাই।


নীড়বাসনার পাঠকদের জন্য আগে আমরা আগে অনেকগুলি প্রয়াস করেছিলাম আর তা থেকে শুরু হয়েছিল বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ। যেমন “এ-মন-জানলা”, “অনুস্বর্গ”, “জোড়-কবিতা”, “অণু-যাপন”, “শিরোনাম”। থিম ভিত্তিক লেখা ছাড়াও এবারের সংখ্যায় বিশেষ আকর্ষণ দেশ বিদেশের সাহিত্য নিয়ে 'এ-মন জানলা' এবং অনুবাদ কবিতা, অণু গল্প আর অণু কবিতা নিয়ে 'অনুস্বর্গ'। এছাড়া অন্য গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ তো থাকছেই যেমন থাকে।


আর একটা কথা না বললেই নয়। প্রবল বর্ষণে এবারে সারা ভারত ক্লান্ত, জর্জরিত। এই সম্পাদনার কাজ যখন চলছে, তখন কেরালা এবং মহারাষ্ট্রের নানান এলাকা বন্যা কবলিত। সহানুভূতি জানানোর ভাষা আমাদের নেই, তবে এই আশা করব বিপদ শীঘ্র কেটে যাক আর সাধ্যমত উপায়ে তাঁদের জন্য ত্রাণকাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন হোক। আর এও আশা করব, আপনারা সবাই, আপনাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, শুভানুধ্যায়ীরা সবাই ভালো আছেন, নিরাপদে আছেন এবং রোগমুক্ত আছেন।


আশা করি আমাদের এবারের সংখ্যা আপনাদের ভাল লাগবে। আপনারা আপনাদের সাহিত্য ভাবনা আমাদের সাথে ভাগ করে, আমাদের সমৃদ্ধ করে তুলবেন।


সামনের উৎসবের দিনগুলো আপনাদের আপনাদের খুব ভাল কাটুক। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সাহিত্যে থাকুন আর আমাদের সঙ্গে থাকুন।







Comentários


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page