বিশ্বযুদ্ধ ও বিশ্বসাহিত্য
- সূর্য সেনগুপ্ত
- Jul 29, 2019
- 13 min read
World War I broke out largely because of an arms race and World War II because of the lack of an arms race. Herman Kahn[1]
এক ।। সারাজেভো
১৯১৪ সালের ২৮শে জুন বসনিয়া’র সারাজেভো শহরে অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ ও তাঁর পত্নী সোফি, হোহেনবার্গের ডাচেসকে ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’[2] গুপ্ত সমিতির উদ্যোগে হত্যা করেছিল কয়েকজন সার্বিয়ান ও বসনিয়ার উগ্রপন্থী। এই দুজনের মৃত্যুর পরিনতি যুদ্ধের রূপ নিয়ে ক্রমশ সারা ইয়োরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পড়েই অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান সাম্রাজ্য নানা দাবী নিয়ে কিংডম অফ সার্বিয়ার ওপর এক চরমপত্র জারি করে। সার্ব-রা সেটাকে প্রত্যখ্যান করে। অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান সাম্রাজ্য হত্যাকাণ্ডের ঠিক এক মাস পরে, ১৯১৪ সালের ২৮শে জুলাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
দাবানলের মত যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে যায় ইয়োরোপের দেশে দেশে। সার্বিয়ার সমর্থনে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাস যুদ্ধে যোগ দিলেন। রাণী ভিক্টোরিয়ার নাতি জার্মান/প্রাশিয়ান কাইজার দ্বিতীয় উইলহেলম সরাসরি ফ্রান্স আক্রমন করলেন। তার আগে তিনি নিরপেক্ষ বেলজিয়াম ও লাক্সেমবার্গ অধিকার করলেন। এর ফলে গ্রেট ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। টার্কি’র ওটোমান সাম্রাজ্য জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিল। এক বছর পর, এই পক্ষে ১৯১৫ সালে বুলগেরিয়াও যোগ দিল। তৈরী হল সেন্ট্রাল শক্তি বা অ্যাক্সিস শক্তি। অন্যদিক, যার নাম অ্যালাইড শক্তি সেখানে সামিল হল গ্রেট ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, সার্বিয়া, মন্টেনেগ্রো, বেলজিয়াম, জাপান, ইতালি, পর্তুগাল, আমেরিকা ও গ্রীস।
উপরোক্ত এক রাজপুত্র ও তাঁর পত্নী, এই দুটি প্রাণের বিনিময়ে ২৮শে জুলাই ১৯১৪ থেকে ১১ই নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত যে বিধ্বংশী যুদ্ধ পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই যুদ্ধ নব্বই লক্ষ যোদ্ধার ও সত্তর লক্ষ সাধারণ মানুষের জীবন নিয়েছিল। এই হল অতি সংক্ষেপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস। তখন এর নাম ছিল ‘গ্রেট ওয়ার’, কারণ তখনও মানুষের ধারণা ছিলনা যে এই যুদ্ধের থেকেও বৃহৎ একটা যুদ্ধ আসছে আর মাত্র একুশ বছর পর।
দুই ।। একটি রেলের কামরা ও একজন করপোরাল
১৯১৮ সালের ১১তম মাসের ১১তম দিবসে বেলা ১১টার সময় (ফ্রেঞ্চ টাইম) ফ্রান্স ও জার্মানির সীমান্তে কম্পেইনের (Compiègne) নির্জন ট্রেন লাইনে, একটি রেলের কামরায় (railway carriage No. 2419 D) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যে সন্ধি প্রস্তাব সাক্ষরিত হয়েছিল, সেই সন্ধির চুক্তি আর শর্তাবলীর ভেতরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ লুকিয়ে ছিল। তারপর একুশ বছর ব্যাপী সময় ধরে সেই বীজ বপন করে, তাতে জল সিঞ্চন করে পুনরায় আর একটি মহাযুদ্ধের মহীরুহ বানিয়ে তোলা হয়েছিল। সেই যজ্ঞের যিনি হোতা ছিলেন তাঁর নাম অ্যাডলফ হিটলার।
যুদ্ধ বিরতির সর্তের দুটি নমুনা দিই। যাতে জার্মানি আবার কোন মতেই যুদ্ধ শুরু করতে না পারে তার জন্য তাকে বলা হয়েছিল, প্রথমতঃ সে ২,৫০০টি ভারি কামান, ২৫,০০০টি মেশিন গান, ১,৭০০ যুদ্ধের উড়োজাহাজ এবং যে কটা সাবমেরিন আছে এই সব মিত্র-পক্ষকে সমর্পন করবে। এছাড়া যত যুদ্ধ-জাহাজ আছে তার অধিকাংশই সমর্পন করবে আর বাকি যগুলি থাকবে, সেগুলি থেকে কামান ইত্যাদি খুলে নিতে হবে। দ্বিতীয়তঃ জার্মানিকে এই যুদ্ধের দায় স্বীকার করতে হবে এবং যত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের পরিমান ধার্য হয়েছিল £২২ বিলিয়ন ($৩৫ বিলিয়ন)। প্রায় ১০০ বছর ধরে ঋণ শোধ করতে করতে জার্মানির ক্লান্ত অর্থভাণ্ডার অবশেষে ২০১০ সালে এই দায় থেকে মুক্ত হয়েছিল শেষ কিস্তির £৫৯ মিলিয়ন প্রদান করে।
হিটলার ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক সাহসী সৈনিক। তিনি করপোরাল পদে উন্নীত হন। ১৯১৮ সালের অক্টোবরে বেলজিয়ামের Ypres অঞ্চলে যখন যুদ্ধ চলছে, তখন শর্ষের গ্যাস আক্রমনে হিটলার প্রায় অন্ধ হয়ে যান। নভেম্বরে যখন যুদ্ধবিরতি ও সন্ধিচুক্তি সাক্ষরিত হল তখন তিনি হাসপাতালে শুয়ে আছেন। তাঁর কাছে এই সব (উপরোক্ত) সর্ত সম্বলিত চুক্তিগুলি জার্মানির পক্ষে অত্যন্ত অপমানজনক বলে মনে হয়েছিল। তাঁর এই বিক্ষোভ সাত বছর পর প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী, Mein Kampf –এ প্রকট হয়েছিল।
Mein Kampf (My Struggle, আমার সংগ্রাম) হল হিটলারের আত্মজীবনীমূলক এক বিশ্লেষণীকারী পুস্তক। দু-খণ্ডে বিভক্ত পুস্তকটির প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে এবং দ্বিতীয় খণ্ডটি হয় ১৯২৬ সালে। প্রথমে হিটলার বইটির নাম দেন Viereinhalb Jahre (des Kampfes) gegen Lüge, Dummheit und Feigheit অথবা Four and a Half Years (of Struggle) Against Lies, Stupidity and Cowardice. – অর্থাৎ “সাড়ে চার বছর ব্যাপী মিথ্যাচার, বোকামি ও ভীরুতার বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম”। হিটলারের প্রকাশক মাক্স আম্যানের অনুরোধে বইয়ের নামটিকে ছোট করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক নামটার মধ্য থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের সময়কালীন জার্মান শাসক ও যুদ্ধ যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র বিক্ষোভ পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল। হিটলার বইটাতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় অপদার্থতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। মেইন ক্যাম্পফ-এর প্রথম খণ্ডের সপ্তম পরিচ্ছেদের একটা অংশ উদ্ধৃত করি। এখানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদে জার্মান প্রতিরক্ষা কত দুর্বল – সে কথা হিটলার বলেছেন, “... ১৯১৫ সালে আমাদের দেশে শত্রুপক্ষের প্রচার শুরু হল। ১৯১৬ সাল থেকে সেই প্রচার গভীর ও প্রসারিত হল এবং ১৯১৮’র গোড়ায় সেটি বন্যার মত ফুলে ফেঁপে উঠল। আমাদের সেনানী ক্রমশঃ সেই ভাবেই ভাবতে শুরু করল, যে ভাবে শত্রু চাইছিল আমরা ভাবি।” তার একটু পরেই হিটলার লিখেছেন, “(আমাদের সেনানীর)এই ব্যর্থতা কি বোকামি না অপরাধ?”
যুদ্ধে জার্মানির লজ্জাকর পরাজয় ও আত্মসমর্পণ হিটলারের পক্ষে অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়েছিল। যুদ্ধের পর সুস্থ হয়ে তিনি বেলজিয়াম থেকে বার্লিনে এলে জার্মান সরকার তাঁকে সৈন্যদের শিক্ষাদানের জন্য এবং গুপ্ত তথ্য সরবরহকারী হিসেবে নিযুক্ত করল। তার পাশে পাশে হিটলার রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন। তিনি মেইন ক্যাম্পফে লিখেছেন, “মিউনিক মুক্ত হবার কয়েক দিন পরে, আমাকে বলা হল দ্বিতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যে আজ্ঞাভঙ্গের ঘটনা ঘটেছিল তার বিচার কমিশনে গিয়ে রিপোর্ট করতে। সেটাই ছিল আমার প্রথম, নিখাদ রাজনৈতিক কর্ম।
১৯২১ সালে হিটলার নাৎসি পার্টির অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন। তার আগে আন্টন ড্রেক্সলার ১৯২০ সালে পার্টির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাৎসি অপভ্রংশের পুরোটা হল = Nationalsozialistische Deutsche Arbeiterpartei – সংক্ষেপে NSDAP। ইংরাজিতে এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল Nazi Party যার উচ্চারণ হল না ৎ সি। নাৎসি পার্টির রাজনৈতিক দর্শন আমাদের আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়, তথাপি এই দর্শন দ্বারা তড়িত হয়ে পার্টির মতবাদ ও লক্ষ সরাসরি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকে ডেকে এনেছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ অবধি এই যুদ্ধে ৭ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ প্রান হারিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল ৬০ লক্ষ অসহায় ইহুদি সাধারণ মানুষ।
নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসে ১৯৩৩ সালে। ছয় বছর ধরে তারা একদিকে ওয়েরম্যাখট (Wehrmacht),অর্থাৎ সেনাবাহিনীকে তৈরী করলেন বহিরাক্রমনের জন্য। অন্যদিকে তৈরী হল শুটজস্টাফেল (Schutzstaffel) বা এস. এস. অর্থাৎ সরাসরি হিটলারের অধীনে অর্ধ-সেনাবাহিনী এবং গেস্টাপো (গেস্টাপো), অর্থাৎ গুপ্ত পুলিশ – যারা দেশের মধ্যে ইহুদি, সাধারণ খটে খাওয়া মানুষ, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ভাবে সচেতন মানুষদের মধ্যে ভীতি ও সন্ত্রাস[3] সৃষ্টি করল। তাদের নীতি – বৃহত্তর জার্মানি (greater Germany) গঠন, ইয়োরোপ থেকে ইহুদি বিনাশ (ষাট লক্ষ ইহুদি নিহত হয়েছিলেন কারণ তারা ছিলেন ইহুদি)
অতঃপর ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমন করল। দুই দিন পর অর্থাৎ ১৯৩৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ছয় বছর যুদ্ধ চলবার পর ১৯৪৫ সালের ২৯শে এপ্রিল ইয়োরোপীয় অঞ্চলে যুদ্ধ শেষ হল। জার্মানি প্রথমবারের মত এবারেও নিসর্তে আত্মসমর্পন করল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ তখনও থামেনি।
তিন ।। উইনস্টন
১৮৯৫ সালে জনৈক একবিংশতি বৎসর বয়স্ক যুবক গ্রেট ব্রিটেনের রাজকীয় সৈন্যবাহিনীতে (4th Queen's Own Hussars[4]) দ্বিতীয় লিউটেন্যান্টের পদে নিযুক্ত হয়ে দেখলেন যে তাঁর বাৎসরিক বেতন হল পউন্ড-স্টারলিং ৩০০। যুবক হিসাব করে দেখলেন যে তিনি যেমন ভাবে জীবনযাপন করতে চান, তার জন্য তার অতিরিক্ত বাৎসরিক পউন্ড-স্টারলিং ৫০০ লাগবে। যুবকের প্রভাবশালী মাতা ‘ডেইলি গ্রাফিক’ পত্রিকার সাথে ব্যবস্থা করে যুবকের জন্য একটি যুদ্ধকালীন সংবাদদাতার (War Correspondent) কর্ম যোগার করে ফেললেন। যুবক তার রেজিমেন্টের কর্নেল সাহেবের অনুমতি নিয়ে চলে গেলেন কিউবা, যেখানে স্থানীয় বিদ্রোহীরা স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন।
বাৎসরিক ৫০০ পোউন্ড স্টারলিং যোগার তো হল। কিন্তু সে আর কতদিন। কিউবার যুদ্ধ শেষ হতে যুবক চলে গেলেন ভারতবর্ষে। সেখানেই তার রেজিমেন্ট তখন অবস্থান করছে। যুদ্ধ চলছে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মালাকাঁদ অঞ্চলে (বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত)। সেই যুদ্ধের প্রতিবেদন তিনি পাঠাতেন ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদ পত্রে এবং সমস্ত রিপোর্টগুলি একত্র করে ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত হল তার যুদ্ধকালীন সাংবাদিকতা সম্বলিত প্রথম পুস্তক – The Story of the Malakand Field Force।
তার কলম চলতে লাগল একটার পর একটা যুদ্ধের খবর লিখে। ভারতের পর সুদান – মাহডিস্ট (১৮৮১) ও ওমডারমানের যুদ্ধ (১৮৯৮)। এই দুই যুদ্ধের বৃতান্তসহ পুস্তক লিখলেন ‘দ্য রিভার ওয়ার’ (১৮৯৯)। ১৮৯৯ সালেই যুবক সৈন্যদলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা – যেখনে দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধ চলছে। ‘দ্য মর্নিং পোস্ট’ তাঁকে প্রতি মাসে পউন্ড-স্টারলিং ২৫০ মাইনে ও রাহা খরচ দিয়ে যুদ্ধকালীন সংবাদদাতার পদে নিযুক্ত করল। দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধের ডিসপ্যাচ একত্র করে যুবক দুটি পুস্তক লিখে ফেললেন – ‘ London to Ladysmith via Pretoria’ এবং ‘Ian Hamilton’s March’। দুটিই প্রকাশিত হল ১৯০০ সালে।
যুদ্ধক্ষেত্রের বিবরণী রচনার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা স্থাপিত হল। এই লেখক তখন ২৬ বৎসর বয়স্ক এক যুবক।
ঠিক চল্লিশ বছর পরে, এই যুবক তখন আর যুবক নন, ওয়ার করেসপন্ডেন্টও নন, তিনি তখন ৬৬ বছরের এক রাষ্ট্র-নায়ক, তাঁর জীবনের বৃহত্তম যুদ্ধ নিয়ে লিখবেন ঠিক করলেন। বোঝাই যাচ্ছে যে আমরা Sir Winston Leonard Spencer-Churchill-এর কথা বলছি। এখানে একটা সর্বজনকৃত ভুলের সংশোধন হয়ে যাওয়া দরকার। তাঁর পদবি ছিল “স্পেন্সার-চার্চিল”, শুধু চার্চিল নয়। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। স্পেন্সার-চার্চিল তখন গ্রেট ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। এই যুদ্ধেরও তিনি বিবরণী লিখতে চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “I will leave judgments on this matter to history – but I will be one of the historians.” যুদ্ধ বিবরণী লেখা তাঁর কলমের ডগায় নেশার মত লেগে ছিল। তিনি তাঁর রচনাকে ইতিহাসের দরবারে পেশ করতে রাজি ছিলেন, কিন্তু সর্ত ছিল তিনি সেই দরবারের অন্যতম ঐতিহাসিক থাকবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হলে সার উইনস্টন লিওনার্ড স্পেন্সার-চার্চিল “সেকন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার” নামে ছয় খণ্ডে সম্পূর্ণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস লিখলেন। নীচে এক একটি খণ্ডের নাম ও তাদের প্রকাশকাল দেওয়া গেল –
1 The Gathering Storm (1948)
2 Their Finest Hour (1949)
3 The Grand Alliance (1950)
4 The Hinge of Fate (1950)
5 Closing the Ring (1951)
6 Triumphs and Tragedy (1953)
বিশ্বের সাহিত্য ও মননশীল জগতকে চমকে দিয়ে সুইডিশ অ্যাকাডেমি ১৯৫৩ সালেই স্পেন্সার-চার্চিলকে সাহিত্য নোবেল পুরস্কার দিলেন। সাইটেশনে তাঁরা লিখলেন, “For his mastery of historical and biographical description as well as for brilliant oratory in defending exalted human values”। স্পেন্সার-চার্চিলের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামক পুস্তকে কোথাও কোন কল্পনা ছিল না। এই ছয় ছয়টি পুস্তকের যখন পেপারব্যাক সংস্করণ একত্রে প্রকাশিত হল, তখন প্রকাশকের সাইটেশন বলেছিল, “From Britain's darkest and finest hour to the great alliance and ultimate victory, the Second World War remains the most pivotal event of the twentieth century. Winston Churchill was not only the war's greatest leader, he was the free world's singularly eloquent voice of defiance in the face of Nazi tyranny, and it's that voice that animates this six-volume history।”
চার ।। আর্নস্ট ও জন
স্পেন্সার-চার্চিল প্রনীত সুদানের দুটি যুদ্ধের বিবরণ সম্বলিত পুস্তক ‘দ্য রিভার ওয়ার’ যে বছরে প্রকাশিত হল, অর্থাৎ ১৮৯৯ সাল, সেই বছরেই আমেরিকার ইলিনয় রাজ্যের শিকাগো শহরের উপকন্ঠে ওক পার্কে আর্নস্ট হেমিংওয়ের জন্ম হয়। স্পেন্সার-চার্চিল নোবেল পুরস্কার পাবার ঠিক এক বছর পরে, অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে হেমিংওয়ে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। অদ্ভূত কাকতালীয় ঘটনা।
বিশ্বের তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের সাথে হেমিংওয়ে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তিনি যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন তখন তিনি ১৯ বৎসর বয়স্ক এক যুবক। কানসাস সিটিতে আমেরিকান রেড-ক্রস প্রথম মহাযুদ্ধের জন্য কর্মী চাইছিলেন। হেমিংওয়ে সেখানে নাম লিখিয়ে ইতলিতে অ্যাম্বুলেন্স চালকের চাকরি পেলেন। হেমিংওয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে প্যারিস হয়ে ইতালির যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে উপনীত হন। এইখানে তাঁর আর এক শিকাগোবাসী জন ডস পাসোস (John Dos Passos) এর সাথে দেখা হয়। আর্নস্ট এবং জন এক দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের বন্ধনে সারা জীবন বাঁধা ছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জন ছিলেন American Volunteer Motor Ambulance Corpsএর সদস্য। তিনি প্রথমে প্যারিসে ছিলেন তারপর তিনি ইতালী যান ও সেখানেই আর্নেস্টের তাঁর আলাপ হয়। এই দুই বন্ধুর ইতালীর রণক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুটি জগতজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন উপন্যাস লিখেছিলেন।
জন ডস পাসোস রচিত Three Soldiers ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সাড়া জাগায় সমালোচক ও পাঠক মহলে। জন আমেরিকার গদ্য সাহিত্যে এক গুরুত্বপূর্ণ লেখক হয়ে উঠেছিলেন[5]। তৎকালীন প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক এইচ এল মেনকেন The Smart Set পত্রিকাতে লেখেন, “Until Three Soldiers is forgotten and fancy achieves its inevitable victory over fact, no war story can be written in the United States without challenging comparison with it—and no story that is less meticulously true will stand up to it. At one blast it disposed of oceans of romance and blather. It changed the whole tone of American opinion about the war; it even changed the recollections of actual veterans of the war. They saw, no doubt, substantially what Dos Passos saw, but it took his bold realism to disentangle their recollections from the prevailing buncombe and sentimentality”। এটা প্রশংসনীয় যে এই উপন্যাস পাঠ করে আমেরিকার সাধারন পাঠককুল যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের দীর্ঘকালীন বাতিকগ্রস্ত মতামত পাল্টে ফেলেছিলেন। জন যা দেখেছিলেন এবং যা বুঝেছিলেন – তা কল্পনা এবং বাস্তবের সঠিক মিশ্রনে এই উপন্যাসটিতে বিধৃত করেছিলেন। আজও থ্রি সোলজারস আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুদ্ধকালীন উপন্যাস হিসাবে পরিগণিত হয়।
জনের বন্ধু আর্নস্টের ইতালীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার ফসল বিশ্বখ্যাত উপন্যাস “A Farewell to Arms” – হে যুদ্ধ বিদায়, আট বছর পর প্রকাশিত হল ১৯২৯ সালে। উপন্যাসের নামটি হেমিংওয়ে নিয়েছিলেন ষোড়ষ দশকের ইংরাজ কবি জর্জ পীলি’র (George Peele)একটি কবিতা থেকে। নায়কের নাম ছিল ফ্রেডারিক হেনরি (Frederic Henry)। নামটির উৎস হলেন সপ্তদশ শতাব্দীর এক ওলন্দাজ, অরেঞ্জ রাজবংশীয় নোবেলম্যান (Frederik Hendrik)। উপন্যাসে লেখকই শ্রীযুক্ত ফ্রেডারিক হেনরি, প্রথম পুরুষে ঘটনাবলী বিবৃত হচ্ছে। হেনরি ছিলেন ইতালিয় বাহিনীতে একজন প্যারামেডিক। তাঁর আলাপ হয় একজন ইংরাজ নার্স ক্যাথরিন বার্কলে (Catherine Barkley)র সঙ্গে। প্রথম মহাযুদ্ধের পশ্চাতপটে এই দু’জনের প্রেম ছিল উপন্যাসের মূল ঘটনা। পুস্তকটি প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে হেমিংওয়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান ঔপন্যাসিক হিসেবে স্বীকৃত হলেন। এটাই ছিল তাঁর প্রথম বেস্ট-সেলার।
উপন্যাসটি পাঁচটি পর্বে বিভক্ত। আমি উপন্যাসের একদম শেষাংশটি বলি আপনাদেরঃ
In the final book, Frederic and Catherine live a quiet life in the mountains until she goes into labor. After a long and painful birth, their son is stillborn. Catherine begins to hemorrhage and soon dies, leaving Frederic to return to their hotel in the rain.
পাঁচ ।। এরিখ
আমার মতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে যত কিতাব লেখা হয়েছে তার মধ্যে সেই কাহিনীটা শ্রেষ্ঠ, যেখানে অষ্টাদশ বর্ষীয় পল বাউমার(Paul Bäumer) তার স্কুলের শিক্ষকের কথায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেই জার্মান সৈন্যদলে যোগ দিল। ওর ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরা, যেমন লীয়ার, মুলার, ক্রপ ইত্যাদিরাও এক সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে গিয়ে যোগ দিল।
এইটুকু পাঠ করে কি পুস্তকটির নামটি বোঝা গেল? যাঁরা বইটা পড়েছেন তাঁরা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। যাঁর পড়েন নি তাঁদের জন্য পুস্তকটির নামের একটা টুকরো ওপরে দেওয়া আছে। ইয়েস, আপনি ঠিক ধরেছেন। পুস্তকটির ইংরাজি নাম হল, All Quiet in the Western Front.।
এই ইংরাজি নামটি নিয়ে বেশ কিছু মতানৈক্য হয়েছে। পুস্তকটির জার্মান নাম ছিল - Im Westen nichts Neues যার শব্দানুগ ইংরাজি অনুবাদ হওয়া উচিত ছিল In the West Nothing New.। কিন্তু ইংরাজ অনুবাদক Arthur Wesley Wheen ঐ জার্মান কথাগুলির এক মুক্ত অনুবাদ করে All Quiet on the Western Front.নামটা যখন দিলেন, তখন এটা লেখক ও প্রকাশক দ্বারা গৃহীত হল। তার অনেক বছর পরে, ১৯৯৩ সালে, ব্রায়ান মার্ডক তাঁর অনুবাদের নাম দিলেন There was Nothing New to Report on the Western Front. মার্ডক পুস্তকের মলাটে এক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, Although it does not match the German exactly, Wheen's title has justly become part of the English language and is retained here with gratitude.
Joseph Heller রচিত আর এক বিখ্যাত যুদ্ধ-বিষয়ক পুস্তকের নাম Catch-22 (নীচে আমরা এই পুস্তকটিকে নিয়েও স্বল্প আলোচনা করব) যেমন ইংরাজি ভাষার অঙ্গ হয়ে উঠেছিল[6], তেমনি All Quiet on the Western Front কথাটাও অভিধানে প্রবেশ করেছে।[7]
পুস্তকটির রচয়িতা এরিখ মারিয়া রেমার্ক (Erich Maria Remarque) জার্মানীর ওসনাব্রুক শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন হেমিংওয়ের জন্মের ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে। তাঁর নায়ক পল বাউমারের মত তিনিও ছিলেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, এরিখও তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮ বছর বয়েসে যুদ্ধে যোগদান করেন ও ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে প্রেরিত হন। সেই বছরের জুলাই মাসে এরিখ বাম পায়ে, ডান হাতে ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পান এবং হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়ে বাকি যুদ্ধটা তাঁকে হাসপাতালে শুয়ে থাকতে হয়। পর নিজের ভয়ানক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি Im Westen nichts Neues পুস্তকটি লেখেন।
পুস্তকের শুরুতেই এরিখ লিখেছেন, “এই পুস্তকটি কোন অভিযোগ জানানোর জন্য বা কোন স্বীকারোক্তি দেবার জন্য লেখা হয় নি এবং নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে এটা মৃত্যু নিয়ে এটা কোন অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী নয় কারণ, যারা মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে মৃত্যু কোন অ্যাডভেঞ্চার নয়। আমি সাধারণ ভাবে সেই প্রজন্মের মানুষদের কথা বলতে বসেছি, যারা হয়তো একটা শেলের হাত থেকে বেঁচে গেছে, কিন্তু যুদ্ধ তাদের ঠিক ধ্বংস করেছে। এই বইটির ফোকাস বীরত্বব্যঞ্জক সাহসিকতার ওপরে নয়, বরঞ্চ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যরা কি অবস্থার মধ্যে দিন কাটায় তার ওপরে। যুদ্ধের একঘেয়েমি, যেখানে অনবরত কামান গর্জন ও বোমাবর্ষনের ভীতি, খাদ্যের অভাব, এই প্রচন্ড বিরূপ পরিস্থিতিতে কি করে বেঁচে থাকা যায় সেই কৌশল্টুকু না জানা – এই সব কিছুর মাঝে সৈন্যরা জীবন ও মৃত্যুর অনিশ্চয়তার মাঝে কি করে বেঁচে আছেন তারই বিবরণ বহন করছে এই পুস্তকটি।”
ইংরাজিতে একটা কথা আছে - He knows what’s he talking about – এরিখের স্বীকারোক্তিটি শুনলে সেই কথাটাই মনে পড়ে। বইটির পাতায় পাতায়, চরিত্রে চরিত্রে সততা এবং যুক্তিগ্রাহ্য বাস্তবতা যে চরম পরাকাষ্টা তা সরাসরি পাঠকদের অনুভূতির অন্দরমহলে অনায়াসে পৌঁছে যায়। সেই কারনেই সারা বিশ্বে অল কোয়াএট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের এত জনপ্রিয়তা। প্রথম মহাযুদ্ধের বন্দুকের আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে যাবার ৯ বছর পর, ১৯২৭ সালে অল কোয়াএট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের লেখা শেষ। হয়। এরিখ সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশক পাননি। অতঃপর প্রকাশক পেয়ে ১৯২৯ সালে অল কোয়াএট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট ছাপা হল।
********
যুদ্ধকালীন ঘটনাবলীর ইতিহাসের পটভূমিতে এরিখের দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল “থ্রী কমরেডস”। এটি আমার প্রিয়তম এরিখ মারিয়া রেমার্ক উপন্যাস। মানবিকতা, মানুষে মানুষে সম্পর্ক আর রাজনৈতিক পাশবিকতার ছবি পাশাপাশি এঁকেছিলেন লেখক। কিন্তু তিনি ততদিনে জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষে জার্মানির আকাশে নাৎসি নামক কাল মেঘ ছেয়ে এসেছিল, তারা তঁকে চিহ্নিত করেছিল নাৎসি বিরোধী বলে। পলাতক এরিখ “থ্রী কমরেডস” লেখেন সুইজারল্যান্ডে বসে।
“থ্রী কমরেডস”এর ঘটনাবলী শুরু হচ্ছে ১৯২০ সালে, যার মাত্র দু-বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে আর পটভূমি হল এক নামহীন শহর (ধরে নিতে হবে বার্লিনে), যেখানে ক্রমশ নাৎসিদের প্রভাব ছেয়ে আসছে। সে শহরে তিনবন্ধু, যারা একটা মোটর গ্যারেজ চালায়, তাদের নিয়ে কাহিনী। “থ্রী কমরেডস” কিন্তু যুদ্ধের কাহিনী নয়। অপিচ, এরিখ এই বইটাতে চোয়াল শক্ত করে পাঠকদের হাত ধরে নিয়ে যান মানবিকতার ওপর নেমে আসা এক সর্বনাশের সীমান্তে, যে সর্বনাশের নাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৬ সালে পুস্তকটির ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় – যার মাত্র তিন বছর পর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
কাহিনীর প্রধান চরিত্র হল Robert Lohkamp। লেখক এর বকলমে ‘আমি’ বলে লিখছেন। যে মাত্র কিছুদিন আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জার্মান-ফেঞ্চ সীমান্তের ট্রেঞ্চ থেকে উঠে এসেছে। যুদ্ধের ট্রেঞ্চের ভীতিজনক অভিজ্ঞতা তার পেছন ছাড়ছে না। যার ফলে রবার্ট জীবনকে এক আশাভঙ্গের দৃষ্টিকোন থেকে দেখছে, তার দুই বন্ধু Otto Köster এবং Gottfried Lenzও ক্রমশ রবার্টের ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আবার একটা যুদ্ধ ও নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে উঠতে থাকে।
বইটির প্রথম জার্মান সংস্করন প্রকাশিত হয় জার্মানির বাইরে, আমস্টার্ডামে, ১৯৩৮ সালে এবং ফাইনালি যুদ্ধের পরে ১৯৫১ সালে Drei Kameraden অর্থাৎ থ্রী কমরেডস জার্মান ভাষায় জার্মানিতে প্রকাশিত পারে।
********
যুদ্ধের বৈচিত্র্যকে, অমানুষিকতাকে, ধ্বংশাত্মক রূপকে তাঁর সাহিত্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে তাঁর তৃতীয় উল্লেখযোগ পুস্তক হল, “আ টাইম টু লাভ অ্যান্ড আ টাইম টু ডাই” (জার্মান ভাষায় Zeit zu leben und Zeit zu sterben)।
বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সাহিত্যসৃষ্টি যা ছিল মহান সাহিত্য সৃষ্টি তা থেমে থাকেনি যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৪৫ সালে শেষ হয়ে যায়। কটি পুস্তকের নাম বলি যা সারা বিশ্বের সাহিত্য মহলে সারা জাগিয়েছিলঃ
পুস্তকের নাম- টিন ড্রাম – লেখক গুন্টার গ্রাস। এতি তাঁর Danziger Trilogie বা ড্যানজিগ ট্রিলজির প্রথম উপন্যাস। এটি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হবার পর একে একে Palme d'Or পেল কান উৎসবে এবং পরের বছর পেল Academy Award for Best Foreign Language Film, পরে, অনেক পরে তিনি নোবেল পুরষ্কার পান। নোবেল কমিটি বলেন, "whose frolicsome black fables portray the forgotten face of history" নোবেল কমিটি আরও বলেন - Günter Grass was born in 1927 in Danzig-Langfuhr of Polish-German parents. After military service and captivity by American forces 1944-46, he worked as a farm labourer and miner and studied art in Düsseldorf and Berlin. 1956-59 he made his living as a sculptor, graphic artist and writer in Paris, and subsequently Berlin. In 1955 Grass became a member of the socially critical Gruppe 47 (later described with great warmth in The Meeting at Telgte), his first poetry was published in 1956 and his first play produced in 1957. His major international breakthrough came in 1959 with his allegorical and wide-ranging picaresque novel The Tin Drum (filmed by Schlöndorff), a satirical panorama of German reality during the first half of this century, which, with Cat and Mouse and Dog Years, was to form what is called the Danzig Trilogy (Danzig হোল তাঁর জন্মের শহর)।
একটা কথা বলি – গ্রাস কলকাতায় বাস করেছেন বেশ কিছুদিন এবং সেই সময় তাঁর এক বাঙালি চেলার সঙ্গে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার এক প্রান্তের বাড়িতে তাঁর সাথে দেখা করবার সৌভাগ্য হয় আমার।
পুস্তকের নাম- ক্যাচ ২২ (Catch-22 ) লেখক – জোসেফ হেলার (Joseph Heller) – এতই জনপ্রিয় হয়েছিল এই পুস্তক, যে ক্যাচ ২২ কথাটা একটি ইংরাজি ফ্রেজ হিসাবে ইংরাজি ভাষায় প্রবেশ করেছে এবং আজো যথা স্থানে বিউরাজ করছে।
ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করা ইংরাজ কবি, ঔপন্যাসিক রুডিয়ার্ড কিপলিং এর লেখা কবিতা –
“Gentlemen-rankers out on a spree,
Damned from here to Eternity,
God ha' mercy on such as we,
Baa! Yah! Bah!”
এটির দ্বিতীয় পঙক্তি থেকে নেওয়া “ফ্রম হিয়ার টু ইটারনিটি” নামে একটি বিখ্যাত উপন্যাস লেখেন জেমস জোন্স। ১৯৪১ সালের হাওয়াই-এর পটভুমিকায় লেখা এই উপন্যাসটি শুরু হয় হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত মার্কিন ইনফ্যান্ট্রির সৈন্যদের জীবনের ওঠা পড়া নিয়ে। তারপর সব বদলে গেল যখন ৭ই ডিসেম্বরের সকালে জাপানী বিমানবাহিনী পার্ল হারবারকে বোমা ফেলে ধ্বংস করে দিল।
আরো দুটি পুস্তকের নাম করে শেষ করি - Thomas Keneally’র লেখা Schindler's List এবং Louis de Bernières লেখা Corelli's Mandolin ।
[1] Herman Kahn (১৯২২-১৯৮৩) was a founder of the Hudson Institute and one of the preeminent futurists of the latter part of the twentieth century. He originally came to prominence as a military strategist and systems theorist while employed at the RAND Corporation.
[2] সার্বিয়ার সৈন্যবাহিনীর এক গুপ্ত সমিতি। অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান সাম্রাজ্যের হাত থেকে সার্বিয়া-বসনিয়ার স্বধীনতার জন্য ১৯১১ সালে গঠিত হয়েছিল।
[3] আইনস্টাইন ১৯৩৩ সালে শিক্ষাদানের জন্য আমেরিকাতে যান এবং সেখানেই থেকে যেতে বাধ্য হন।
[4] ১৬৮৫ সালে স্থাপিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত একটি ঘোড়সওয়ার বাহিনী যেটি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সহ নশত বৎসর ধরে নানা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে চলেছে।
[5] তাঁর বিখ্যাততম উপন্যাস “U.S.A. Trilogy” বিংশ শতাব্দীতে ইংরাজি ভাষায় রচিত ১০০টি শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যে ২৩তম স্থানে অবস্থান করছে।
[6] ইংরাজি অভিধান বলছে ক্যাচ-২২ মানে - A frustrating situation in which one is trapped by contradictory regulations or conditions or any illogical or paradoxical problem or situation; dilemma.
[7] ইংরাজি অভিধান বলছে The phrase “all quiet on the Western Front" has become a colloquial expression meaning stagnation, or lack of visible change, in any context”.

Comments