top of page

অপদেবতা

  • শোভন কাপুরিয়া
  • Jul 10, 2019
  • 3 min read

মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে উঠলাম, মুখের মধ্যে যেন অনেকটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মুখের ভেতরে স্বাদটা পেতেই গা গুলিয়ে উঠলো, থু করে ফেলতে গেলাম মুখের ভেতরের রক্তটা।

**********

এখন সাল ২৩৪৫, মানুষ মঙ্গল ছাড়িয়ে টাইটানেও পাড়ি দিয়েছে অনেক বছর আগেই। শনিগ্রহের এই উপগ্রহে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কলোনাইজ করতে শুরু করেছে তাও আজ থেকে ৫০ বছর আগেই। উপগ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কলোনি তৈরি করা হয়েছে, পৃথিবী থেকে মানুষ আস্তে আস্তে মাইগ্রেট করে মার্স আর টাইটানে পাড়ি দিয়েছে। আমাদের ভারতবর্ষের ইসরো-ও এই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিল ৩০ বছর আগে থেকে। আমি, সমর্থ সেন ইসরোর একজন মহাকাশচারী বিজ্ঞানী। আমার পরিবার টাইটানে মাইগ্রেট করে গেছে, যদিও আমায় কাজের খাতিরে মাঝে মাঝেই পৃথিবী আর টাইটানের মাঝে যাতায়াত করতে হয়, যে ক্যাপসুলের মাধ্যমে এই যাতায়াত করতে হয় তার নাম "ট্রান্সপোর্টার", এই ক্যাপসুলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ-ও যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু কিছু মাস আগের একটা ঘটনা সবকিছু পাল্টে দিলো। একটা ট্রান্সপোর্টার ক্যাপসুল টাইটান থেকে পৃথিবীর দিকে আসার পথে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খায় এবং অনেক লোক মারা যায়। ট্রান্সমিশন একটা এসেছিলো ইসরোর কাছে, যেখানে একটা চিৎকার শোনা গেছিলো "ওহ মাই গড!" এই রহস্যের কোনো ব্যাখ্যা না পাওয়ায় ৫ জনের একটা টিম পাঠানো হয় সেই কোঅর্ডিনেটসে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিলো, আর এই টিমের সদস্য হিসেবেই তদন্ত করতে আমি এসেছিলাম। কিন্তু কি যে হয়েছিল আর আমার বাকি সদস্যরা যে কোথায় তা মনে করতে কষ্ট হচ্ছিলো।

***********

শরীরটাকে অনেক কষ্টে তুললাম, প্রথমেই চলে গেলাম ইলেক্ট্রনিক প্যানেল চেম্বারে। স্পেসশিপে প্রত্যেক মুহূর্তের ঘটা ঘটনার অটোমেটিক লগ থাকে এই প্যানেলের একটা স্ক্রিনে। সেখানে গিয়ে চালানোর চেষ্টা করলাম প্যানেলটা। লগের প্রথম পেজ হঠাৎ খুলে গেলো স্ক্রিনে, মনে পড়লো যে দিনটাতে এসেছিলাম আমরা তদন্তে, সেই তারিখটাই ফুটে উঠেছে।

১৯.৬.২৩৪৫ - একটা অদ্ভুত আকৃতির গ্রহের কাছাকাছিই ট্রান্সপোর্টারটার ধ্বংসাবশেষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই গ্রহের অস্তিত্ব আগে ছিলো না।

২৫.৬.২৩৪৫ - আজ স্পেসশিপ নিয়ে গ্রহটির ওপরে ল্যান্ড করলাম। গ্রহটি লাল আর গ্রহটির গায়ে অদ্ভুত কাঁটা কাঁটা রয়েছে।

১.৭.২৩৪৫ - গত ৬-৭ দিনে স্টাডি করে যে জিনিসটা আমরা বুঝেছি, গ্রহটির ভূগর্ভের ভেতর থেকে যেন একটা শব্দ হচ্ছে। শব্দটা প্রত্যেক ৩ মিনিটের ব্যবধানে হচ্ছে। কিন্তু আজ প্রথম বার ভূমিকম্প অনুভব করলাম এই গ্রহে। সেই সময় শব্দটার মাত্রা বেড়ে গিয়েছিলো।

৩.৭.২৩৪৫ - গ্রহটায় পা রাখতেই বুঝলাম যে এর ভূমি ঠিক মাটি দিয়ে তৈরি না, স্পঞ্জের মত মনে হলো যেন। মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক্স যন্ত্র ব্যবহার করে আমরা এই ভূগর্ভের মধ্যে গিয়ে এটাকে স্টাডি করবো আরো। আমাদের সন্দেহ ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে যে গ্রহটি একটি জীবন্ত গ্রহ বা Living Planet.

এরপরে আর কিছু লেখা নেই। কিন্তু কিভাবে এই অবস্থা হলো আমার? আমার টিমের বাকি সদস্যরা কোথায়? আমি আর ভাবতে পারছিনা। তখন-ই হঠাৎ লক্ষ্য করলাম শিপটা যেন উল্টে যাচ্ছে আর তার সঙ্গে একটা কান ফাটানো দানবীয় গর্জন আমার কানে ভেসে এলো। ওটা কিসের গর্জন! আমি কোথায়? পরিষ্কার হচ্ছে না। বীভৎস এক ভূমিকম্পে যেন আমার শিপটা পড়ে যেতে লাগলো কোনো এক অতল অন্ধকারে। কিন্তু লিভিং প্ল্যানেট বলে তো কিছু হয়না! তাহলে এই জিনিসটা কি? কোনো প্রাণী! আবার সেই দানবীয় গর্জন, আমার গায়ের রক্ত জল হয়ে গেলো..এই মহাশূন্যে আমি সম্পূর্ণ একা। স্পেসশিপ টাকে ঝেড়ে ফেলে মহাজাগতিক কোনো অলৌকিক দানব জেগে উঠেছে, আমার স্পেসশিপটা নীচে পড়ে যেতে লাগলো। সেই সময় দেখলাম সেই দানব এখন সম্পূর্ণ জীবিত আর তাঁর শুঁড় গুলো মহাশূন্যে এদিক ওদিক চাবুকের মতো উড়ছে। আমি শুনেছি এর ব্যাপারে, গল্প কথা ভাবতাম এই প্রাণীকে। ক্থুলু(Cthulhu), সমগ্র ইউনিভার্সের গ্রেট ওল্ড ওয়ান...অসম্ভব শক্তিশালী এক অপদেবতা। অন্য কোনো সময় মাত্রা থেকে আমাদের ইউনিভার্সে এসে পড়েছে সে! কিন্তু এ যে আমার বিশ্বাসের অতীত! ভয়ে আমার সমগ্র শরীর অবশ হয়ে উঠলো , ঠিক তখনই একটা শুঁড় এসে আমার শরীরটাকে পাকিয়ে ধরলো আর আমায় সেই শিপ থেকে বের করে নিলো। আমায় টেনে নিতে লাগলো নিজের দিকে... তাঁর দুটি রক্ত চক্ষু আরো বড় হতে লাগলো..আরো বড়।

Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page