top of page

অণুগল্প - চতুর্বিধ

  • অপরাজিতা
  • Jul 22, 2019
  • 2 min read


হেলমেট


পেট্রোল পাম্পের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে হেলমেট পড়া ছোট্ট ছেলেটাকে দেখছিল বউটা। আলুথালু বেশবাস, ফাঁকা চাউনি আর রুক্ষ জটা দেখে পাগলি মনে হয়। ছেলেটা তার মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে বাবার বাইকে পেট্রোল ভরা দেখছিল। হঠাৎ পাগলি এক ছুটে রাস্তা পেরিয়ে ছেলের সামনে হাজির। হেলমেটটা দেখিয়ে প্রশ্ন করে – “এত ছোট হেলমেট কোথায় পাওয়া যায়? দাম কত?” ছেলেটার মা উত্তর দিতেই সঠিক মূল্যের এক মুঠো নোট বের করে পাগলি, “আমার ছেলের জন্য একটা কিনে আনবে? তাহলে আর পাশের চলন্ত ট্রাক ওর মাথাটা থেঁতলে দিতে পারবে না......”






অভিমানী ঠিকানা


প্রত্যেক সপ্তাহে নিয়ম করে দিদিমাকে চিঠি লিখতাম। কখনো হলুদ পোস্টকার্ড, কখনো বা নীল ইনল্যান্ড। তারপরে এল এই টেলিফোন। মাসে একবার ট্রাঙ্ক কল বুক করে কয়েক মিনিটের কথা। চিঠি কমে গেল। ফোন তুললেই দিদিমার গলায় একরাশ অভিমান – “তুই তো আর এই বুড়ির খোঁজও নিস না”।

আজ দিদিমা নেই, অভিমান ও নেই, নেই খোঁজ নেওয়ার উৎসাহ। অলস এক দুপুরে হঠাৎ মনে হল, পুরোনোকে ফিরিয়ে আনা এখন তো “ফ্যাশন” – তাই চিঠি লিখে কিছু প্রিয়জনকে চমকে দিই। সুদৃশ্য নোটপ্যাড আর পেন নিয়ে বসে উপলব্ধি করলাম – আমার কাছে কারুর বাড়ির ঠিকানা নেই!






পদ্মপাতায় জল


আমার ল্যাব্রাডর ছেলেটা বড় হয়ে গেল। এখন রাস্তায় ঘুরতে বেরোলে নেড়ি গুলো পিছনে লেগে থাকে। বৃষ্টির জন্য ওকে কয়েকদিন বাইরে নিয়ে যাইনি। তা সেই অদর্শন সহ্য না করতে পেরেই বোধহয় এক নিঃস্তব্ধ দুপুরে বিরহিণী নেড়ি সিঁড়ি ভেঙে আমাদের ফ্ল্যাটের দরজায় এসে উপস্থিত। ওর করুন ঘেউ ঘেউ শুনে দিবানিদ্রা ছেড়ে দৌড়ে গেলাম। আমার ছেলেটা নিঃস্পৃহ হয়ে শুয়ে আছে। security door র ওপারে নেড়ির মায়াবী চোখদুটো ছলছল করছে। আমি একটু বিরক্ত হয়ে ভারী কাঠের দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।

সেদিন গভীর রাতে জল খেতে উঠে মেয়ের ঘরে আলো দেখে ঢুকে পড়লাম। মেয়ে দুচোখে জল টলটলে করছে – কমপিউটার স্ক্রিনে এন-আর-আই পাত্র জানিয়েছে যে সাধারণ ঘরের কালো মেয়েকে তার মায়ের পছন্দ নয়।






শেষের সেদিন


ছোটবেলায় মায়ের কাছে এক বিখ্যাত বৈদ্যের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার গল্প শুনেছিলাম। তিনি কন্যাপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন বিয়ের আসরে আসা বরকে ফিরিয়ে দিতে। কারন শীতের কনকনে সন্ধ্যেবেলায় বরের কপালের চন্দন শুকোয় নি – একেবারে ভিজে জবজবে। সেই রাত্রেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সেই তরুন। বহু বছর বাদে গল্পটা আবার মনে পড়ে গেল। মায়ের কপালে এঁকে দেওয়া চন্দনটা কিছুতেই শুকোচ্ছে না।







Commentaires


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page