কবিতা - সোশ্যাল মিডিয়া
- সুমন্ত চক্রবর্তী
- Jan 10, 2019
- 2 min read
‘সোশ্যাল’ নাকি ‘অ্যান্টি’ -‘সোশ্যাল’ - বিশাল তাহার ছায়া,
‘মাধ্যমে’ যার বিশ্বে এখন উথাল পাথাল হাওয়া।
‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার’ ছাড়ি কোথা পালাবে নশ্বর -
লহমায় ঘিরিবে তোমায় - সেই কি আজ তোমার ঈশ্বর ?
এ জগত মায়া প্রপঞ্চ ভেবে তুমি নিয়ত করেছো সন্ধি -
মুঠোতেই ঘিরে আছো তারে নাকি তুমি তারি মুঠো বন্দী ?
অজানা সূত্রে বাঁধা পড়িয়াছ - অমোঘ তাহার টান;
গুলিয়ে দিচ্ছে সময় কিম্বা নিজ পরিচিত স্থান।
তোমাকে হাজির করিছে নিয়ত বিশ্বের দরবারে -
ভেবেছো গিয়েছো নিজ ইচ্ছায় নিজেরই দরকারে।
প্রতি মুহূর্তে নিজেরই কাছে নিজেই দিতেছো ফাঁকি -
ভাবছো আমি তো এমনই, ‘আমি এভাবেই ভাল থাকি’।
পুরনো কিম্বা নতুন বন্ধু – বেড়ে চলা তার ভিড়,
দুনিয়ার যতো অনিয়ম দেখে তুমি ভেবে অস্থির।
অথবা তোমার মন কাড়া ছবি - প্রাণে সুর তোলা গান;
সৃষ্টি জগতে সফলতা পাওয়া যতো কিছু মহীয়ান।
নিমেষে তোমার হাতের মুঠোয় সব কিছু চলে আসা –
কিছু থেকে আর বঞ্চিত নও, সঞ্চিত ভালোবাসা –
হতাশা, দুঃখ, রাগ-অনুরাগ সব কিছু আজ তার ;
পেয়ে গ্যাছে তার নতুন ঠিকানা অনুভূতি জানাবার।
অনায়াসে আজ হাতে চলে আসে ‘সব পেয়েছির দেশ’ -
নিন্দুকেরা যা বলে বলুক এই ‘ভাল আছি বেশ’।
এই মাধ্যমে আছে বহু লাভ গুরুতর কোন বার্তা,
নিমেষ ফেলিলে বিশ্ব নিখিলে ‘ভাইরাল’ হল সুরটা।
পাশাপাশি আছে সকলের কাছে কভু যা ভাবোনি তাও -
জেনে বা না জেনে কিভাবে জড়ালে নিজের বিপদটাও।
অন্তরজালে সদা ছিপ ফেলে নানা অশুভের ভিড়,
তার পাতা ফাঁদে জীবন অবাধে হতে পারে অস্থির।
ভালো ও মন্দ সব কিছুকেই একসাথে কাছে পাওয়া,
নড়বড়ে করে মানসিক স্থিতি ‘পরিবর্তনশীল হাওয়া’।
এই মনে করো কারোর টেবিলে খাদ্যের সমাহার –
শুধু চোখে দেখে না চেখেই তোমার লাগিল চমৎকার।
তারপরেতেই জানলে ‘নায়িকা’ কোন কোন খাওয়া খান না -
পরেরই ছবিটি প্রকাশিছে কোনো অনাথ শিশুর কান্না ;
কিম্বা কারোর বাড়িতে আগুনে সবকিছু তার ছারখার -
অন্য ভুবনে গ্রীষ্ম দহনে শুখা মাটি ও অন্ন হাহাকার।
এইভাবেতেই ভাবের নাচনে আবেগের বিভ্রান্তি,
সুখে বা অসুখে চোখের পলকে উপহার দেবে ক্লান্তি।
এভাবেই মোহ ঘিরে ফেলে ক্রমে দেহ মন সব কিছু
‘আসল’ জগত হয়ে যায় মিছে - কল্পনা পিছু পিছু।
চাহিদা মাত্র সব কিছু পেয়ে মনের ঘরেতে ফাঁকা -
দুনিয়া ছড়ানো ‘নেটওয়ার্ক’ তবু ‘কেন লাগে এতো একা’।
কেন মনে হয় ‘এটা নয় শুধু’ আরো ‘যেন কিছু চাই’ –
এভাবে কেন যে ভুলতে বসেছি চাহিদার ঠিকানাই।
মানুষ আজকে গৌণ কিন্তু প্রধান হয়েছে টাকা -
ভুলতে বসেছি সাধনার গুণ, আরাধনা করে থাকা।
ভুলতে বসেছি ছোট খাটো সুখ - প্রিয়জন মুখ সঙ্গ ;
পরিজন আজ ‘প্রয়োজন’ ছাড়া চুড়ান্ত রসভঙ্গ।
পাশের মানুষ আজ ক্রমশ অচেনা নিজের ভুবনে বন্দি,
এইভাবে ক্রমে নিজেরাই হই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী।
নজর নাগালে ছায়া ছুটে চলে নিমেষে হারায় স্বাদ -
মন ছুটে চলে নতুন নেশাতে তবু ঘিরে থাকে অবসাদ।
যুগের হুজুগে এই মাধ্যম এড়িয়ে চলাও দায়-
মানুষ ক্রমশ সুতোর পুতুল - ‘আজ বড় নিরূপায়’ ।

Comments