top of page

একটি আষাঢ়ে গল্প

  • মমতা দাস (ভট্টাচার্য)
  • Mar 13, 2019
  • 3 min read

সকাল থেকেই মেঘে অন্ধকার , দিন/রাত বোঝা যায় না। আকাশ কেঁদেই চলেছে। আজ নয় দুদিন ধরে চলেছে এই কান্না, কে জানে কি তার কারণ ! বর্ষা কাল নয় , হবে নিম্নচাপ বা কোনো কিছু ! জুকেরবার্গের ফেস বুকের বন্ধু (নাকি শত্রু?) ,গুগল কে সার্চ করেও কিছুই বোঝা গেল না। মনটা খিচড়ে গেল। রাগ ধরল গুগল-এর উপরে , সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে এত লাফাস কেন বাপু ? বলতেও তো পারলে না ! হত আমাদের জুকেরবার্গের সার্চ ইঞ্জিন , দেখতে তবে । কেন যে করেনা ! ভাবা শেষ না হতেই বেল বাজলো । কে এলরে বাবা ? বাড়িতে কেউ নেই , সব বিয়ে বাড়ি গেছে দুদিন আগে , ভাবলাম বেশ জম্পেশ মেজাজে থাকব, না এই হতভাগা বৃষ্টি , বাজারহাট বন্ধ , শুধু খিচুড়ি-ডিমভাজা , কাঁহাতক ভালো লাগে ?.....ধুর !........ গেট খুললাম এক বয়স্ক সাহেব দাঁড়িয়ে । বুড়ো-ই বলা যায় , সাহেবদের তো বয়স বোঝা যায় না ! .......'Yes ?'....... 'No , I mean yes......may I have a seat ?'...... কণ্ঠে রীতিমত কাকুতি, আরে তাইত ,বুড়ো মানুষটাকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে .....তাড়াতাড়ি রাস্তা ছেড়ে ভিতরে ডাকি তাকে। অবাক হয়ে দেখলাম ছাতা নেই তবু ভেজেনি বুড়ো, নাকি ছাতা নীচে রেখে এলো ? অবশ্য এই বৃষ্টিতে ,চোরের বাবাও বাড়ি থেকে বেরোবে না। (মাথায় এলো না যে বুড়ো কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়েছে )! বসতে বলে, একটু কফি করতে গেলাম , এখন তো সাহেব মানেই আমেরিকান , আর আমেরিকানরা তো কফি ছাড়া কিছুই বোঝে না , অতএব .... কফি ,সঙ্গে বিসকুট নিয়ে গুছিয়ে বসা গেল , গুছিয়ে বসে গল্প শুরু ,বুড়ো দেখলাম জমাটি আড্ডাবাজ। আমাদের সোসাইটি-র কোন বাড়িতে এসেছিল , তারা বাড়ি নেই ,বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমার এখানে। আমার ফ্ল্যাট একতলায় হওয়ায় এমন উপদ্রব প্রায়-ই হয় । আজ অবশ্য....বৃষ্টির দিনে খালি বাড়িতে একটা কথা বলার সঙ্গী , মহা বাঞ্ছিত প্রাণী । বুড়ো কি যেন নাম বলল , মনে নেই এখন। কথা হচ্ছিল ফেস বুক, গুগল নিয়ে। কোনটা ভালো ,এইসব। হঠাৎ বলে জুকেরবার্গ কে চেনে ,মানে তার বাবা আর কি ? ভারতে কি নাকি কাজে এসেছে। বলে গেল অনেক কথা ,...... মার্ক জুকেরবার্গ -এর জন্ম নিউ ইয়র্ক -এ,১৯৮৪ সালের ১৪ মে। খুব দুষ্টু ছিল ,লেখাপড়া করত না খুব একটা ,সারাদিন ইলেকট্রিক তার-ফার ,কম্পুটার এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি আর কি সব অঙ্কের হিসাব করত। সবাই বলত খুব বুদ্ধি, একটা কিছু হবে বড় হলে , তার বিশ্বাস ছিলনা। পড়ায় খারাপ ছিল না কিন্তু ! আমি মনে মনে ভাবলাম , এইসব পড়ার কি-ই বা দাম ! প্রতিভাধরদের এসব লাগে না। সে বলছিল, আমি গদ গদ হয়ে শুনছিলাম। আমি ফেস বুকের অন্ধ ভক্ত। বলল ছেলে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছে। আমি জিজ্ঞেস করি,তবে ? বুড়ো হাসে। এখন ক্যালিফোর্নিয়া-র প্যালো আল্টো তে থাকে। আমি বিগলিত , কারণ আমার বিদেশ বাসের সময় আমি প্যালো আল্টো-র পাশের শহর মাউন্টেন ভিউ তে থাকতাম। মনে হলো যেন আমার প্রতিবেশীর গল্প শুনছি। বলল ২০০৪ এর ফেব্রুয়ারীতে ফেসবুক চালু করে। আরো বলল, ....'ছেলের স্বপ্ন' পৃথিবীর সব মানুষের হাতে কম্পুটার তুলে দেওয়া '......সেটা যে কি ভাবে সম্ভব এই ভেবে মাথা চুলকচ্ছি , উঠে দাঁড়িয়ে বলে , ......'Ok , now I will go ,rain's totally stopped.Thanks for everything'.......করমর্দন করে বিদায় নিলো। দরজা বন্ধকরেই দেখি একটা কার্ড পড়ে আছে। হাতে নিয়ে ছুটলাম , গেটের দিকে , না কেউ কোত্থাও নেই , কি রে বাবা ! আমার ঘর থেকে গেট একেবারে সোজা রাস্তা ,লম্বা । যত জোরেই হাঁটো মিনিট ৭ লাগবে ,আমি তো সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে এসেছি ,সিকিউরিটি বলল, সে কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে দেখেনি। গত দু ঘণ্টা বৃষ্টির জন্য সে ঘরের বাইরেও বেরয় নি । তাহলে ? ফিরে এলাম ,মনটা খুশি , সুন্দর সময় কেটেছে আজ । বৃষ্টিও আর নেই । গুন গুন করতে করতে ভাতে আলু,ডিম সিদ্ধ দিলাম , আজ ভাতেভাত , একটা পরিবর্তন । ভাত বসিয়ে বসলাম সোফায় , মনটা খচ খচ করে উঠলো, লোকটা কি সত্যি জুকেরবার্গ-এর বাবা ? যখন বলছিল তখন মুগ্ধ হয়ে শুনেছি , এখন খটকা লাগছে , কোনটাই তো নতুন কথা নয় । ভিজিটিং কার্ড টা দেখি ,চমকে উঠি ......Mr. ৪২০, কি একটা ঠিকানা লেখা , কিচ্ছু বুঝলাম না। দেখেছ ?.......ছুটলাম পড়ার টেবিল-এ , ল্যাপটপ অন করে google সার্চ ,এই তো বুড়ো যা বলেছে সব লেখা আছে, একটাও নতুন খবর নয় । Google কম যায় না, সব খবর দিয়ে দিল । কিন্তু লোকটা কে তাহলে ? আমেরিকান ভুত নাকি ? ভুত না চালবাজ , নাকি দুটোই ??????


Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page