top of page

গল্প - পরিচয়

  • শোভন কাপুরিয়া
  • Dec 2, 2018
  • 13 min read

Updated: Feb 20, 2021

পর্ব ১


২ বছর প্রেম করার পরে প্রথমবার সহেলীর বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ এল ওর বাবা মায়ের সাথে দেখা করার জন্য। সহেলীর সাথে আমার অফিসে কাজের সূত্রে আলাপ, তারপরে ধীরে ধীরে ভালোলাগা ভালোবাসা। সত্যি বলতে আমি একটু ইমোশনাল ফিল করছি বটে, বাবা-মা কেউ নেই তাই হয়তো নতুন পরিবার হতে যাচ্ছে বলে খুশীও একটু বেশী মনে। ভাবনাতে ছেদ পড়ল ক্যাব ড্রাইভারের কথায় 'ট্রীপ শেষ করছি স্যার!' দেখলাম Ola তে যে ড্রপ লোকেশন দিয়েছিলাম সেটা এসে গেছে।


দরজায় বেল দিয়ে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলোনা, দরজা খুলে দাঁড়িয়েছে সহেলী, হালকা শিফন শাড়ীতে দিব্যি লাগছে তার সাথে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। খোলা চুল আর চোখে কাজল যেন আমার মনটাকে মাদকতায় ভরিয়ে তুলল। চটকা ভাঙল সহেলীরই কথায় "কিরে বিবেক, হাঁ করে দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরে আসবি!" আমি একটু লজ্জা পেয়েই ঢুকলাম ঘরে। ঘরের ভিতরের দিক থেকে একজন বয়স ৬২র লোক বেরিয়ে এলেন "আরে সহেলী, জামাই তো বেশ হ্যান্ডসাম" বলে হা হা করে হেসে উঠলেন। আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রণাম করব না হ্যান্ডশেক করব বুঝতে না পেরে থতমত খেয়ে গেলাম, তিনি আমায় সহজ করে বললেন "তোমার ব্যাপারে সহেলী আমাদের সব বলেছে। তোমার বাবা-মা নেই এটা ভেবোনা। " এবার একজন ভদ্রমহিলা লুচি, আলুর দম, মিষ্টি সহকারে একটা বড় ট্রে নিয়ে ঢুকলেন। সহেলী তার দিকে তাকিয়ে বলল "মা , ওর খাওয়া হলে কিন্তু ওকে নিয়ে আমার ঘর দেখাতে নিয়ে যাব।"


খেতে খেতে আরো কিছু কথা হলো ওর বাবা মায়ের সাথে। ওরা দুজনেই খুব ভালো, আমার ভাগ্য লক্ষ্মী মনে হল আমার ওপর প্রসন্ন। সোমেশবাবু বললেন "ওর দাদা বৌদি আজ একটু বেরিয়েছে তাই দেখা করাতে পারলাম না, কিন্তু পরেরবার অবশ্যই।" আমি হেসে মাথা নাড়ালাম। সহেলী অপেক্ষা করছিল আমার খাওয়া শেষ হওয়ার, হাতমুখ ধুয়ে আমরা ওর দোতলার ঘরের দিকে যেতে লাগলাম। ওপরের তলায় দুটো লিভিং রুম আছে, প্রথম ঘরটা বন্ধ। সহেলী ঘরটা দেখিয়ে বলল "এটা দাদাদের ঘর! আর সামনের টা আমার।" আমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম "তোদের তো বেশ ভরা পরিবার, আমার তো...." সহেলী এবার আমায় থামিয়ে বলল "আমার বাবা-মা তোর ও বাবা-মা। নিজেকে একা ভাববিনা একদম।" ঘরটা বেশ গোছানো, সহেলীর গায়ের গন্ধ লেগে রয়েছে ঘরের সব জায়গাতে। হঠাৎ টেবিলটার ওপরে রাখা একটা ছবির দিকে নজর গেল, একটা ফ্যামিলি ফোটো। আমি এগিয়ে গিয়ে ছবিটা তুললাম হাতে, সহেলী বলল "আগের বছর আমরা পুরী গেছিলাম...." আমি ওকে থামিয়ে একজনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম "এটা কে?" সহেলী হেসে বলল "এটাই তো বৌদি, জিনিয়া নাম ওর" আমি একটু অবাক হয়ে বললাম "জিনিয়া?" সহেলী জানাল তখনো দাদার বিয়ে হয়নি ওর সাথে। আমি একটু চিন্তা করতে লাগলাম, সহেলী ধাক্কা দিল "কি হলো?" আমি কিছু বললাম না, কিছু একটা সন্দেহ ঘুরছে মনে।


বিকেল ৫ টা নাগাদ সহেলীদের বাড়ী থেকে বেরিয়ে রাকা কে ফোন করলাম "ফ্রি আছিস?" ও ফ্রি আছে জানতেই ওকে বলল‍াম "আমাদের ইয়ারবুক আছে না তোর কাছে! ওটা নিয়ে সোজা আমার বাড়িতে ‍আয়। "



পর্ব ২


'এত জরুরি তলব কেন?' বাড়িতে ঢুকতেই রাকার প্রশ্ন শুনে কোনো জবাব দিলাম না। রতনদাকে দুটো কফি দিয়ে যেতে বললাম। বলে রাখি আমার ছোটোবেলা থেকেই রতনদাকে আমি দেখছি আর মা-বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে সে আমার সবদিকের খেয়াল রাখে। মাঝে মাঝে বলে 'বিয়ে করে নাও, নতুন বউকে সব শিকিয়ে দিয়ে আমার ছুটি।' শ্যামবাজারের এই বাড়ী সত্যিই ফাকা লাগে। যাই হোক, রাকা দেখলাম ইয়ারবুকটা হাতে নিয়ে এসেছে। ডাইনিং এই বসে আমি ইয়ারবুকটা উল্টেপালটে দেখতে থাকলাম। রাকা এবার একটু বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞাসা করল 'কি ব্যাপার বলত? কাজ বাজ ছেড়ে এসছি কিন্তু।' আমার চোখ একটা পাতায় আটকে গেল , সেদিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম 'এ কে চিনতে পারছিস!'


রাকা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল 'হ্যাঁ , প্রমিতা তো। না চেনার কি আছে! ' আমি এবার চোখটা একটু বড় করে ওকে বললাম 'আজ আমি সহেলীর বাড়িতে গেছিলাম, ওখানে ওর বৌদি জিনিয়া র ছবি দেখলাম। একদম হুবহু দেখতে।' রাকা রেগে গিয়ে বলল 'তো? তুই এইটা বলার জন্য আমাকে দৌড় করালি!... শোন! এই কয়েক বছর তুই প্রমিতাকে কিছু কম খুঁজিস নি! নাও গ্রো আপ! একজন ওরকম দেখতে হতেই পারে...' একটু থেমে ও আবার বলল 'আমি জানি তোর প্রমিতার সাথে কি প্রবলেম ছিল। কিন্তু যে আর নেই এই দুনিয়াতে তার সাথে কোন হিসেব তুই মেটাতে যাচ্ছিস?' আমিও গলাটা তুলেই বললাম 'তুই কি করে সিওর হলি যে প্রমিতা মারা গেছে?' রাকা বলল 'কাম ওন, ওর ঝলসে যাওয়া মৃতদেহ পাওয়া গেছিল। তুইও জানিস , তাই এই অবসেশন বন্ধ কর আর সহেলীকে ভালোভাবে বিয়েটা কর।' রতনদা এইসময় কফি নিয়ে ঢুকল, রাকা কিন্তু কিছু না খেয়েই চলে গেল।


আজ থেকে ৭ বছর আগে একটা গাড়ির Accident হয়ে প্রমিতা মারা যায়, পাওয়া যায় ওর ঝলসে যাওয়া দেহ। সঙ্গে রাজের বডিও পাওয়া যায়, রাজ ওর কলেজের প্রেমিক ছিল। সেই বছরেই আমরা পাস আউট হয়ে বেরোই, কিন্তু কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেটা আমি কোনোদিন জানতে পারিনি। পুলিশও কোনোদিন কিছু বলেনি। সত্যিই কি দুটো মানুষের এত চেহারার মিল হতে পারে? প্রমিতা কি সত্যি মারা গেছিল নাকি আমি জিনিয়াকে নিছক সন্দেহ করছি? আমি কি নিজের প্রতিশোধ চরিতার্থ করার জন্য পাগলের মত একটা চেহারার মিল বানানোর চেষ্টা করছি? কিন্তু সহেলীকে আমি হারাতে চাইনা। তাই ঠিক করলাম আমি আর এই নিয়ে ভাববোন‍া, সহেলীকে বিয়ে করে সুখী হতে চাই আমি।



পর্ব ৩


কয়েকদিন পরের ঘটনা, রাত তখন প্রায় ৩টে বাজে। ফোনটা বেজে উঠল অমিত রায়ের, এমনিতে রাতে ভুলভাল ফোন আসে বলে তিনি ইগনোর করেন। ফোন তিনি ধরলেন না। শান্তির ঘুম ঘুমোতে যাবেন, আবার ফোনটা বেজে উঠল। বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলেন। ওপারে একজনের ভয়ার্ত গলা শুনতে পেলেন তিনি, লোকটা বলল "স্যার, ল্যাবে কেউ ঢুকেছিল স্যার। ভাঙ্গচুর করেছে খুব" অমিত রাগে আর ভয়ে একসাথে বলে উঠল "তুমি কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলে?" লোকটা বলল "আমার মাথায় কেউ পেছন থেকে মেরেছিল স্যার আর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আপনি জলদি আসুন স্যার, পুলিশকে খবর দিয়েছি।"


অমিতের কথাবার্তা শুনে জিনিয়া উঠে বসেছে, অমিত তাকে সব খুলে বল‍াতে তার মুখ শুকনো হয়ে গেল। সে বলল "তোমার সাথে আমিও যাব!" অমিত বলল "না! বাবাকে সাথে নিয়ে যাই। কে জানে ওই শিশিটার কি হল কে!" জিনিয়া কিছু জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও জিজ্ঞাসা করলনা। সহেলী-বাবা-মা দাদার চিৎকারে বেরিয়ে এসেছে, অমিত তাদের সবাইকে ঘটনাটা বলে সোমেশ বাবু কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ল্যাবে পৌছতেই তারা দেখতে পেল সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী, গাড়ি থেকে নেমে অমিত আর সোমেশ ওদের দিকে এগিয়ে গেল। একজন লম্বা চওড়া অফিসার দাড়িয়ে আছে, অমিত এগিয়ে যেতে তিনি হাত এগিয়ে দিলেন '‍আমি ইন্সপেক্টর অর্জুন সেন, আপনি অমিত রায় তো! চলুন ভেতরে!' সময় নষ্ট না করে ওরা তিনজন ল্যাবে ঢুকলেন।


অর্জুন বললেন "লোকে পয়সার জন্য চুরি করে, কিন্তু ল্যাবে ভাঙ্গচুর করে চুরি করার কি মানে ঠিক বুঝছিনা। আপনার এখানে এমন কী ছিল?" অমিত জবাব না দিয়ে চিৎকার করে উঠল "ও মাই গড! সলিউশনটা চুরি হয়ে গেছে বাবা! হুমকি সত্যি হলো!" অর্জুন এবার গলা ঝাঁঝিয়ে বললেন "আপনারা কেউ খুলে বলবেন কি?" সোমেশ বাবু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন, অমিত মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল "এই সলিউশানটা আমরা বানিয়েছিলাম জিকা ভাইরাস অ্যাটাকের অ্যান্টিডোট হিসেবে সরকারের নির্দেশে। যদি কোনোদিন আউটব্রেক হয় সেটাকে জলদি আটকানোর জন্য এটা আমরা বানিয়েছিলাম। কিন্তু...." অর্জুন বললেন "কিন্তু কি?" অমিত একবার মুখের ওপর দিয়ে হাত চালিয়ে বলতে থাকল "কিন্তু অ্যান্টিডোটটা নিজেই এত শক্তিশালী, যদি এটা এমন কোনো শরীরে ঢোকে যেখানে জিকা ভাইরাস নেই তাহলে সেই শরীরে জিকা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ানক কিছু জন্ম নিতে পারে আর তা হতে পারে কনটেজিয়াস।" অর্জুন সেন কি একটা ভাবতে ভাবতে বলল "এটা চুরি করে লাভ?" অমিত কিছু জবাব দিলেন না। অর্জুন আবার জিজ্ঞাসা করল "কাউকে সন্দেহ হয়?" অমিত এবার বলল "সন্দেহ না। আমি জানি এটা কে করেছে, মি: ব্রাউন।" অর্জুন জানতে চাইল "বিদেশী নাকি?" অমিত বলল "বাঙালি। এটা ওর ছদ্মনাম। কোনোদিন সামনে দেখিনি, শুধু ফোন আর মেলেই কথা বলত।"


অর্জুন বুঝতে পারল ব্রাউনকে না খুজে পেলে ওর পরিকল্পনা বোঝা যাবেনা , হতে পারে পুরো শহর একটা বড় বিপদের দিকে এগিয়ে চলেছে। অর্জুন ঝটপট একটা টিম বানানোর নির্দেশ দিল ব্রাউনকে খোজার জন্য।




পর্ব ৪


কাফে কফি ডে তে বসে আছি আমি আর সহেলী, কাল রাতের সমগ্র ঘটনা আমাকে সে বলেছে। কফিতে ধোয়া উঠে কখন ঠান্ডা হয়ে গেছে, আমি বললাম "দাদা কি ঠিক আছে? আমি এ মূহুর্তে বিয়ে নিয়ে কথা এগোনোর কোনো কারণ দেখছিনা"। সহেলী তাতে মত দিল, বলল "দাদার সলিউশন টা না পাওয়া গেলে বিপদ, দাদা যা বলল আমায়!" আমি কোনো কথা না বলে ভাবতে লাগলাম, আমি প্রমিতাকে নিয়ে ভাবছিলাম আর এদিকে কি হয়ে গেল। আমি মাথা নীচু করেই বসেছিলাম, হঠাৎ সহেলী যেন একটু চমকে উঠল "বৌদি না!" মাথাটা উঠিয়ে দেখতে গেলাম, সহেলী ইশারাতে পেছনে দেখতে বলল। দেখি জিনিয়া একটা লোকের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। সহেলী ওদিকে তাকিয়েই নিজের মনে যেন বলতে থাকল "দাদা যখন জিজ্ঞাসা করল কোথাও বেরোনোর আছে কিনা, তখন না বলল আর এদিকে..." আমি ওদের দেখতে দেখতে বললাম "লোকটা কে? চিনিস?" সহেলী জানাল সে লোকটাকে একবার দেখেছে দাদার অফিসে, ল্যাবরেটরিতেই কাজ করে নাকি। সে আরও বলতে থাকল যে লোকটার নাম সমীর বসু। আমার মাথায় কিন্তু প্রমিতা আর জিনিয়ার যোগসূত্রের সন্দেহ দানা বাধতে শুরু করল, কারণ একসময়ে অনেক রিলেশানে থাকা প্রমিতার স্বভাব ছিল, জিনিয়ার-ও কি তাই? হোক না হোক, জিনিয়া আর প্রমিতার কোনো যোগসূত্র আছেই। "সমীর সেনের সাথে বৌদি কি করছে? ঘরে এই অবস্থা আর বৌদি বাইরে ঘুরছে অন্য কারোর সাথে?", সহেলী বলে চলল। আমি ফোন করে রাকাকে বাড়িত আসতে বললাম আর সহেলী কেও নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।


সহেলী আর আমি যখন পৌছলাম বাড়িতে , রাকা অলরেডি ওয়েট করছে আমাদের জন্য। আমি রাকা আর সহেলীকে পরিচয় করিয়ে বললাম "সহেলী, ইনি ইন্সপেক্টর অর্জুন সেন ওরফে রাকা। আমরা কলেজ থেকেই বন্ধু আর ইনি তোমার দাদার ল্যাবের কেসটা দেখছে।" দুজনে দুজনকে নমস্কার জানাল, রতনদা ৩টে কফি দিয়ে গেল ঘরে। জিনিয়াকে নিয়ে আমরা যা দেখেছি তা ওকে জানালাম, রাকা সব শুনে বলল "দেখ বিবেক, জিনিয়া আর প্রমিতাকে নিয়ে সময় নষ্ট আমি করতে চাইনা। আর এসবের সাথে কালকের ঘটনার কী যোগ? তুই ফালতু বকিস না।" আমি বললাম "এই সমীর সেন কিন্তু অমিতদার ল্যাবেই কাজ করে। কাল ল্যাবে চুরি হলো আর আজ ওদের একসাথে দেখতে পাওয়া কি খুব নর্মাল? আর যেরকম ভাবে ওদের হাত ধরা দেখলাম, আমার মনে হয়...."। সহেলী এবার চিৎকার করে উঠল "মানে? তুমি কি বলতে চাইছ জিনিয়া দাদাকে চিট করছে? আর প্রমিতাটা কে!" আমি কোনো জবাব না দিয়ে ইয়ারবুকটা খুলে সেই পাতাটা দেখালাম। সহেলী অবাক হয়ে বললো "এটা তো জিনিয়া!" রাকা বলল "না, এটা প্রমিতা। আমাদের কলেজের মেয়ে ছিল, ৭ বছর আগে মারা যায়!" আমি বললাম "না:, ও মারা যায়নি আমি সিওর। প্রমিতার আসল রূপ আমি সামনে আনব!" রাকা রেগে গিয়ে বলল "প্রমিতা তোকে ধোকা দিয়েছিল আমি মানছি, কিন্তু এই প্রতিশোধের মানসিকতা বন্ধ কর। হতে পারে জিনিয়া সমীর সেনের সাথে কিছু করছে, বাট আমাদের প্রায়োরিটি ব্রাউনকে খোজা। চলি!" বলে সে বেরিয়ে গেল। সহেলীও দেখি চোখে ঘৃণা নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি জানি জিনিয়াই প্রমিতা, সেটা প্রমাণ করার জন্য আমাকে পার্থর সাথে দেখা করতে হবে।


রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, ফোনটা এমন সময় বাজল। সহেলীর ফোন, ফোনটা ধরে হ্যালো বলার আগেই সহেলী কাদতে কাদতে বলল "দাদা মারা গেছে accident করে অফিস থেকে ফেরার সময়। তুই আসতে পারবি? রাকা এসেছে।" আমি ফোন রেখে রেডি হতে যাব, একটা এসএমএস এলো আর লেখাটা এরকম -


"পরিবারটাকে বাঁচাতে পারবি নাকি মরতে দিবি? যেমন নিজের মাকে মরতে দিয়েছিলি! - জিনিয়া"। আমি হতবাক হয়ে বসে পড়লাম, মায়ের মৃত্যু কি অস্বাভাবিক ছিল! মা অসুস্থ ছিল, রিপোর্টে বলা ছিল অতিরিক্ত ওষুধের প্রয়োগে মা মারা যায়। তখন মাথায় আসেনি, তাহলে কি ঘরের কেউ মাকে মেরেছিল! আর কোনো সন্দেহ নেই যে জিনিয়া প্রমিতাই, মায়ের মৃত্যুর সময় জিনিয়া ছিলোনা আমার জীবনে...ছিল শুধু প্রমিতা। জিনিয়াই কি অমিতের মৃত্যুর পেছনে রয়েছে? প্রথমে সলিউশানটা চুরি যাওয়া-তারপরে জিনিয়া আর সমীর সেনকে সাথে দেখা-জিনিয়ার ‍আমার মায়ের মৃত্যু নিয়ে কথা বলা-অমিতদার হঠাৎ মৃত্যু , এইসব ঘটন‍া নিশ্চয় এক সূত্রে গাঁথা। এই মি: ব্রাউনটাই বা কে?



পর্ব ৫


অর্জুন নিজের ডেস্কে বসেছিল আর টিভি চালিয়ে মিডিয়ার মশলা মাখানো নিউজ দেখছিল। একটা ঘটনাকে কিভাবে অন্যরকম ভাবে বলা যায় তা এরা ভালোভাবেই জানে। ফরেনসিক থেকে একটা ফোন আসল ওর কাছে, কথা বলে ও সেদিকে রওনা দিল। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের হেড মৈনাক সাহা ওয়েট করছিলেন ওনার জন্য, অর্জুন কে দেখে তিনি নিজের কোটটা ঠিক করে নিলেন। তাকে দেখে হ্যান্ডশেক করে বললেন "দুর্ঘটনায় অমিত রায়ের মৃত্যু কিন্তু হয়নি।" অর্জুনের চোখেমুখে চিন্তা ফুটে উঠল। মৈনাক বলে চললেন "ওনাকে প্রথমে অন্য কোথাও মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে আর তারপরে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। " অর্জুন কি একটা ভাবতে ভাবতে বলল "খুনী তেমন পাকা বলে মনে হচ্ছেনা! কিছুটা হঠকারিতা করেই খুনটা হয়েছে।" মৈনাক সহমত পোষণ করলেন "একদম! আর আমার মতে ওনার মৃত্যু হয়েছে কারণ হয়তো উনি চুরিটা নিয়ে কিছু জেনে গেছিলেন।" অর্জুন ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে এল।

ফেরার পথে আবার তার ফোন বেজে উঠল, সে ফোনটা ধরে বলল "বল কি খবর আছে!" লোকটা অন্যদিক থেকে বলতে লাগল "আপনার কথামত সমীর সেনকে ফলো করেছি। ইনি গত ৫ দিনে নয় নয় করে ৮-৯ বার নিউটাউনের 'ওমেগা ফার্মাসিউটিক্যাল'-এ ভিসিট করেছেন। কেন সেটা জানিনা এখনো! " অর্জুন এবার একটু রেগে উঠল , বলল "ফার্মাসিউটিক্যাল কেন গেছিল সেটা না জেনে কি করতে কল করছিস! না জেনে আর ফোন করবিনা! রাখ ফোন।"


গত ৫ দিনে আমি ঠিকঠাক ঘুমোতে পারিনি মায়ের মৃত্যু রহস্যের চিন্তাতে। জিনিয়ার এসএমএসের কথা আমি রাকা বা সহেলীকেও জানাই নি। নিজেকে একরকম ঘরে বন্ধ করেই নিয়েছি, রতনদা এইসময় ঘরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকল। কাশতে কাশতে বলতে লাগল "দাদাবাবু, আমি মায়ের ঘরে অনেকদিন পরে ঝাড়তে গেছিলাম। এই দেখো কি একটা পেলাম!" বলে রতনদা একটা ডায়রি এগিয়ে দিল। আমি হাতে নিয়ে দেখলাম মায়ের নাম লেখা 'লতিকা শর্মা'। "মা ডায়রি লিখত জানতাম না তো!" নিজের মনেই প্রশ্ন করলাম। ডায়রি খুলে পড়তে থাকলাম, বাবার সাথে মায়ের কাটানো ভালো সব মূহুর্ত - আমার জন্ম - বড় হওয়া সবকিছু লেখা আছে। হঠাৎ দেখি বেশ কয়েকটা পাতা ছেড়া , বোঝা যাচ্ছে কেউ ছিড়ে নিয়েছে। কিন্তু মা খুব চেপে লিখত বলে লেখার ইমপ্রেসন উঠে গেছে পাতাগুলোতে। খুব জানার ইচ্ছে হলো কি লিখেছিল মা, ড্রয়ার থেকে পেনসিল বার করে আমি ঘষতে থাকলাম। লেখা গুলো ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে লাগল আর আমিও পড়তে থাকলাম।


কফিশপে বসে আছে সমীর সেন, সামনে জিনিয়া। জিনিয়া কফিতে চুমুক দিয়ে বলল "পার্থর শেষ দিন কবে হচ্ছে? আমি জানি বিবেক আমায় চিনে নিয়েছে কিন্তু প্রমাণ নেই ওর কাছে যে আমি প্রমিতা। কিন্তু ওই পার্থ যদি না মরে আর ও যদি পুলিশের কাছে পৌছে যায় 'ওমেগা ফার্মাসিউটিক্যাল'এর কথা নিয়ে তাহলে সব শেষ। " সে আরো বলে চলল "আমাদের পরিকল্পনা সফল হতে শেষ বাধা পার্থ। তাই ওকে মারা দরকার!" সমীর চিন্তিত হয়ে বলল "বাট ও ওখানের এমপ্লয়ী! ওকে মারা এত সোজা না।" জিনিয়া টেবিল চাপড়িয়ে বলল "আই ডোন্ট কেয়ার! পার্থ আর রাজ কলেজেও আমায় সন্দেহ করত, রাজকে মারতে পেরেছিলাম। পার্থ আমাকে যাতে ধরতে না পারে তাই নিজের মৃত্যুর মিথ্যা গল্প ফাদি ব্রাউনের সাথে মিলে। আজ যখন এত বড় পরিকল্পনা সফল হতে চলেছে তখন পার্থ পথের কাটা হয়ে যেন না দাড়ায়।"


অর্জুন নিজের কেবিনে এসে দেখে যে পার্থ বসে আছে। ওদেরই কলেজের ছেলে, অর্জুনকে দেখে উঠে দাড়াল আর বলল "আমি যা বলব তারপরে আমার মৃত্যু হতে পারে। তাই যা বলব ভালো ভাবে শুনবি!"



পর্ব ৬


সহেলীর জ্ঞান ফিরল, হাত-পা কিছুই নাড়াতে পারছেনা কারণ হাত পা সব বাধা। স্যাঁতসেঁতে একটা ঘর, ভ্যাপসা গরমে শরীর ঘামে ভিজে চপচপ করছে। চিৎকার করে উঠল সে "হেলপ! হেলপ!"। গলা দিয়ে আওয়াজটাও যেন পুরো বেরোলোনা। ছয় দিন আগে দাদার মৃত্যু হওয়ার পরে যখন সে বিবেক কে ফোন করল আর বিবেক এলোনা, রাগটা আরো বেড়ে গেছিল। তারপরদিন জিনিয়ার সাথে রাস্তায় বেরোলো সে আর কার সাথে যেন একটা দেখা করানোর কথা বলেছিল। তারপরে আর কিছু মনে নেই। বিবেক কে খুব মনে পড়ছে, চোখের কোণে জল তার। "পাঁচ দিন ধরে এখানে তুমি!" ভারী একটা গলা। সহেলী দেখল আলো বাতাস বিহীন ঘরটার মধ্যে তার সামনে একজন দাড়িয়ে আছে। লোকটার চুল গুলো পেকে গেলেও ঠিক বুড়ো বলা চলে না, শক্ত সমর্থ মানুষ। সহেলী বলল "কে আপনি!" লোকটা হেসে বলল "একটা গল্প বলি শোনো, মন দিয়ে শুনো কিন্তু!" পাশে রাখা জলের বোতল থেকে জল খেয়ে সে আবার বলতে শুরু করল "প্রমিতা নামে একটা মেয়ে ছিল, কলেজে অনেক ছেলের সাথে রিলেশন ছিল। সেরকম একজন ছিল রাজ, রাজের সাথে তার খুব মাখোমাখো ছিল। কিন্তু ওই যে বললাম পয়সা আর পুরুষদের নেশা ছিল তার। সেসময়ই ব্রাউন নামে একজনের সাথে তার আলাপ হয়, লোকটা একটা পাগল জিনিয়াস। পয়সার জন্য ড্রাগস বানাতো, কিন্তু বেচবে কাকে। সে তখন ইউজ করল প্রমিতাকে, প্রমিতার সাথে দিনরাত শরীরের খেলা খেলতে থাকল আর প্রমিতা ড্রাগস বিভিন্ন কলেজে বেচে টাকা কামাতে থাকল। কিন্তু রাজ আর ওর এক বন্ধু পার্থ ব্যাপারটা জেনে গেল। রাজের সাথে প্রমিতার ঝগড়া শুরু হলো, রাজ হুমকি দিল প্রমিতার আসল রূপ জানিয়ে দেওয়ার। প্রমিতা তারপরে ছল করে সব মেটানোর জন্য রাজকে বেরোলো লঙ ড্রাইভে যাওয়ার জন্য, কিন্তু রাজ জানতোনা ব্রাউন অলরেডি গাড়িতে ওয়েট করছিল, রাজকে গাড়ির মধ্যেই মেরে দুর্ঘটনার রূপ দেয় ওরা! " সহেলী জানতে চাইল "প্রমিতার নাম আমি বিবেকের কাছে শুনেছি! কিন্তু এসব বলার কি মানে! প্রমিতার সাথে আমাদের কি যোগ? দাদাকে কেন মারলেন?" লোকটা হেসে বলল "দাদা যে আমায় আর প্রমিতাকে একসাথে দেখে ফেলেছিল। তাই.." সহেলীর এবার চমকানোর পালা। লোকটা বলে চলল "যে তোমার বৌদি সেজে রয়েছে সে জিনিয়া না, আসলে প্রমিতা। ইউ সি, ড্রাগসের বিজনেস টা ট্যাংক করে যায় আমাদের। পুলিশ বাচিয়ে আমরা এখানে ওখানে নাম ভাড়িয়ে থাকতে শুরু করি, একদিন আলাপ হয় সমীর সেনের সাথে আর জানতে পারি অ্যান্টিডোটের কথা আর পরিকল্পনা করতে শুরু করি। তারপরে প্রমিতাকে জিনিয়া হিসেবে অমিতের জীবনে আনা সব আমি করি।" সহেলী ধাক্কা সামলে জিজ্ঞাসা করল "আপনি কে বলুন তো!" লোকটা হেসে বলল "মি: ব্রাউন! বিবেক কে ফোন করার সময় এসেছে এত বছর পরে। সময় খুব কম ওর কাছে, সমীর সেনের লোকেরা তোমায় প্রস্টিটিউশনে পাঠালো বলে!"


অন্য দিকে পার্থ জল খেয়ে একটু সেটল হোলো। অর্জুন তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে, পার্থ বলতে শুরু করল "আমি যেদিন জানলাম অমিত রায়ের ল্যাবে চুরির ব্যাপারটা সেদিনই আমি ওমেগা ফার্মাসিউটিক্যাল আর ব্রাউনের পরিকল্পনা বুঝতে পারি!" অর্জুন সামনের দিকে এগিয়ে বসল "কি পরিকল্পনা ওদের!" পার্থ হাঁফাতে হাঁফাতে বলল "আমি আর আরো কয়েকজন একটা সিক্রেট প্রজেক্টে কাজ করছিলাম। হাজারবার জানতে চেয়েও জানতে পারিনি আমরা আলটিমেটলি কি করছি। কিছুদিন আগে আমি ব্রাউন আর আমাদের বসের কথা ওভারহিয়ার করি, আমরা আমাদেরই অজান্তে জিকা ভাইরাস বানাচ্ছি যাতে ওটাকে আউটব্রেক করানো যায় আর একবার আউটব্রেক হলে ব্রাউন এই অ্যান্টিডোট চড়া দামে বেচবে আর টাকা কামাবে। সেখান থেকেও মুনাফা নেবে ওমেগা ফার্মাসিউটিক্যাল। শিয়ালদা ষ্টেশন ওদের প্রথম টার্গেট জিকা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য । ওরা জেনে গেছে যে আমি জানি আর কিছুলোক আমার পেছনে পড়েছে আমায় মারার জন্য, পালিয়ে বাচছি আমি" । অর্জুন এবার বলল "ব্রাউন লোকটা কে?" পার্থর চোখে একটা রাগ ফুটে উঠল "আমার কাছে একটা ভিডিও আছে যাতে ব্রাউনের সাথে এমন একজন আছে যাকে আমরা জানতাম মৃত। " অর্জুন বলল "জিনিয়া!" পার্থ বলল "একটা অডিও শোনো, যেদিন এই কথাবার্তা হচ্ছিল কফি শপে আমি ওদের পেছনেই বসে ছিলাম! প্রমিতাই জিনিয়া!" অর্জুন শুনল সেদিন জিনিয়া আর সমীরের কথাবার্তা। মাথা নীচু করে বলল "বিবেক ওয়াস রাইট!" এবার ভিডিও টা চালালো পার্থ, অর্জুন চমকে উঠল ! বলল "এতো ব্রাউন না, এতো.... আই নিড টু কল বিবেক! উই নিড টু ক্যাচ দিস ম্যান! এত বছরের মিথ্যা"।



শেষ পর্ব


অর্জুন বেরোনোর আগে তার টিমের কিছু লোকজনকে ডেকে পার্থকে সঙ্গে নিয়ে ওমেগা ফার্মাসিউটিক্যালে যেতে বলল আর জায়গাটা পুরো সিজ করার নির্দেশ দিল আর তার সাথে যে লোকটা সমীরকে ফলো করছিল তাকে নির্দেশ দিল সমীরকে ধরে অানতে। জলদির মধ্যে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বিবেক কে ফোন লাগাল।


আমার ফোন বেজে উঠল , ওদিকে জিনিয়ার গলা "হাই বিবেক!" আমি শুধু বললাম "তোর ছবি দেখেই বুঝেছিলাম তুই প্রমিতা, তোর ব্রাউন কে আমি জেনে গেছি। কোথায় তোরা বল আমি আসছি। কিছু পুরোনো হিসেব বাকি আছে!" প্রমিতা এবার হাসতে হাসতে বলল "সে তো এমনিতেই আসতে হবে! হবু বউয়ের ইজ্জত লুটতে বসল যে! ওমেগা ফার্মাসিউটিক্যালের নিচে একটা পুরোনো ঘর আছে, সোজা ওখানে আয়!" আমি চিৎকার করে বললাম "সহেলীকে যদি কিছু করেছিস, দিস টাইম আই উইল নট স্পেয়ার ইউ!" রাগে ফোনটা রেখে দিতে যাব, দেখি রাকার ফোন। ফোন ধরতেই রাকা বলতে লাগল "সরি ভাই, ইউ ওয়্যার রাইট। আমি তোর বাড়িতে আসছি!" অামি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে প্রমিতার সাথে ফোনটার কথা বললাম।


রাকা আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম, যেতে যেতে রাকা আর পার্থর মধ্যে যা যা কথা হয়েছে সব শুনলাম। রাকা এবার একটু চিন্তিত হয়ে বলল "তুই ওনাকে কনফ্রনট করবি কিভাবে!" আমি কিছু বললাম না, আমি জানি আমি কি করব। রাকা এর মধ্যে ফোন করে পার্থর সাথে থাকা টিমটাকে জানিয়ে দিল যে কেউ যেন হঠাৎ করে অ্যাটাক না করে কারণ সহেলী ওখানে রয়েছে। ফোন রাখার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার একটা ফোন এল , রাকা ধরল ফোনটা "গ্রেট! ওর ঘাড় ধরে নিয়ে আয়" নিজের মনেই হেসে উঠল আর সে বলল "মি: ব্রাউন সাজা হচ্ছে, ভবলীলা সাঙ্গ হল বলে!" আমি বললাম "ঘরটায় আমি একাই ঢুকব, তোরা বাইরে ওয়েট করে অতর্কিতে হামলা করবি!"


ওমেগাতে পৌছে নীচের ঘর খুঁজতে খুঁজতে আমরা ঘরটার কাছে পৌছলাম। পেছনে পার্থ-অর্জুন-কিছু পুলিশ আর সমীর সেন হাত বাঁধা অবস্থায় অপেক্ষা করতে লাগল। আমি ঢুকলাম, সহেলী আমায় দেখে কেঁদে উঠল। আমি অবিচল থেকে প্রমিতার সামনে গেলাম , বললাম "আমায় সবার সামনে অপমান করে যখন ধোঁকা দিলি আমায় তখন বুঝিনি তুই এত নীচে নেমে যাবি যে আমার মাকে পর্যন্ত ছাড়লিনা। " এবার একটা ভারী গলা শুনলাম "এইসব না বকে সহেলীকে কিভাবে বাঁচাবি, সেটা ভাব!" আমি চোখ বন্ধ করলাম রাগে আর সর্ব শক্তি সঞ্চয় করে লোকটার মুখে মারলাম। লোকটা মুখ চেপে নীচে বসে পড়ল, কাঁপা গলায় আমি বললাম "আপনাকে কি নামে ডাকব? মি: ব্রাউন না রুদ্র শর্মা! যে বাবাকে আমি মৃত বলে জানতাম সে আমার মাকে মেরে একজন লোভী মানুষের সাথে মিলে মি: ব্রাউন পরিচয় নিয়ে এইকাজ করছিলেন? শুধু টাকা আর শরীরের লোভে! আপনি জানতেন না মা ডায়রি লিখত আর সেখানেই আপনার সব কিছু তিনি লিখে গেছিলেন। প্রমিতাই হয়তো পাতা গুলো ছিড়ে নিয়েছিল , কিন্তু মায়ের চেপে লেখার স্বভাব আপনার কাল হলো! আপনি হয়তো ভুলে গেছিলেন পরিচয় বদলে নিলেই মানু্ষের পাপ মুছে যায় না।" প্রমিতা এইসময় একটা বন্দুক তাক করল আমার দিকে, আমি হাসলাম আর বললাম "পেছনে দেখ"। অর্জুন প্রমিতার কানে বন্দুক ঠেকিয়ে দাড়িয়ে, সে বলল "কাকু আমি ভাবিনি আপনাকে এইভাবে দেখব! আপনার কুকুর সমীর সব বলে দিয়েছে। খেলা শেষ! অ্যান্টিডোট টাও পরিকল্পনায় হাতছাড়া! জেলে গিয়ে বাকি পরিকল্পনা করবেন!" বাবা একবার আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেল।


আমি গিয়ে সহেলীর হাত খুলে দিলাম, সহেলী আমায় জড়িয়ে ধরল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম "একজন ওয়ানটেড ক্রিমিনালের ছেলে কে বিয়ে করবে?" সহেলী কিছু না বলে আমার ঠোঁটে চুমু একে দিল।






Comentarios


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page