top of page

অণুগল্প - দশমী

  • দেবী
  • Dec 2, 2018
  • 2 min read

Updated: Feb 20, 2021

আজ দশমী। মণ্ডপের এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শিউলি। সবার 'মা দুর্গা ' কে বরণ করা, সিঁদুর খেলা দেখছে দুচোখ ভরে। পাঁচ বছর আগেও সাদা - লাল গরদ পড়ে, রুপোর রেকাবে পান,সুপুরি, মিষ্টি, ধান, দূর্বা, সিঁদুর নিয়ে এদেরই ভিড়ে মিশে যেত সে, মা কে বরণ করে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠত।তারপর ঢাকের বোলে নাচ.....। আজ তার আর সে অধিকার নেই। সজল চোখে শুধু ' মা ' কে দূর থেকে দেখে সে। সিঁদুর মেখে সবার মুখগুলো যেন একই রকম অপূর্ব লাগে শিউলির। সবাই ব্যস্ত, কারুর এতটুকু সময় নেই তার দিকে তাকানোর। পুজোর বাকিসব দিনগুলো শিউলি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে, সবার হাতে হাত মিলিয়ে সব কাজ ভাগ করে নেয়, কিন্তু আজকের দিনটা যেন সে ব্রাত্য। কারণ তার সাদা - লাল গরদটা এখন শুধুই সাদা।চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নিজের অজান্তেই, আর দুফোঁটা নোনতা জল গাল বেয়ে চুঁইয়ে পরে। সমুদ্রে যেমন নোনা জলের অভাব নেই, শিউলির জীবনেও নেই। কিন্তু সে তার সমস্ত ভালোবাসা, আন্তরিকতা,উদারতা দিয়ে সেই নোনতা জলকে লুকিয়ে রাখে অতল গভীরে। শুধু দশমীর দিনেই নিজের অজান্তেই তারা গাল বেয়ে নেমে আসে।



হঠাৎ শান্তনুর ডাকে সম্বিত ফিরে আসে শিউলির। সে ফিরে আসে বর্তমানে। অতীতের সব কিছু স্পষ্ট ভেসে উঠছিল ওর চোখের সামনে। ওরা একই পাড়ার বাসিন্দা বহুবছর ধরে। শান্তনু বরাবরই সবার প্রতি খুব যত্নশীল, দায়িত্ববান। ছোটবেলায় খুব ডানপিটে আর একগুঁয়ে ছিল বলে সবার কাছে বকাও খেত খুব, কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি, সে একটুও বদলায় নি, একই রকম আছে। যখন শিউলি সদ্যফোটা শিউলি হয়েছে তখন থেকেই ওর মনকে ছুঁয়ে যেত শান্তনুর সব এলোমেলো কাজ, ওর নির্ভীকতা। কিন্তু কোনদিন সেটা বলার সাহস জুটিয়ে উঠতে পারেনি শিউলি। মনের কথা মনে রেখেই সে পাড়ি দিয়েছিল অম্লান এর জীবনে, সুখী করেছিল তাকে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস। শিউলি আবার ফিরে আসে তার পুরনো পাড়াতে।


হঠাৎ শান্তনু কে সামনে দেখে থতমত খেয়ে যায় ও। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে - ' ডাকছিস?' শান্তনু প্রশ্ন করে -- ' এত দূরে দাঁড়িয়ে কি করছিস একা একা? সবাই মা কে বরণ করছে, তুই কেন করছিস না?' খুব অভিমান হয় শিউলির। সবকিছু জানার পরেও শান্তনু সবার সামনে কেন তাকে এভাবে অপদস্থ করলো? কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে পাস কাটিয়ে পালিয়ে যেতে চায় সে। একটা বাঁধা অনুভব করে শিউলি।মনে হয় সে এগোতে পারছে না।পিছন ফিরে দেখে শান্তনু ওর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। আরও রাগ হয় শিউলির, একি অসভ্যতা। অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে শিউলি বলে - ' কি হচ্ছেটা কি? হাত ছাড়।' ততক্ষণে মণ্ডপের সবদৃষ্টি ওদের দিকে যা শিউলিকে আরও কুঁকড়ে দিচ্ছিল।কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ শান্তনু শিউলিকে টানতে টানতে দেবীর সামনে এনে দাঁড় করায়। শিউলির পা তখন ঠকঠক করে কাঁপছে, তার হৃৎস্পন্দন সে নিজে শুনতে পারছে। অবাক চোখে সে শান্তনুর দিকে তাকায়।কি চায় ও।কিন্তু চোখের পলক পড়ার আগেই শান্তনু একমুঠো সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেয় শিউলির সিঁথি। লজ্জায়, আনন্দে রাঙা হয়ে ওঠে শিউলির মুখ।সবাই চিৎকার করে ওঠে, " এ কি করলি শান্তনু?" মণ্ডপে সবচেয়ে প্রবীণা মিত্রা কাকিমা উচ্চস্বরে উলুধ্বনি দিয়ে ওঠেন। তাকে দেখে বাকিরাও শঙ্খ বাজাতে শুরু করে, উলুধ্বনি দেন। শান্তনু শিউলিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে - " তুই আমার, শুধুই আমার।"





Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page