top of page

গল্প - মেঘে ঢাকা তারা

  • অমৃতা চক্রবর্তী
  • Jun 30, 2018
  • 2 min read

Updated: Feb 19, 2021

এবারের জার্নি টা ঐশী র একদম ভালো হলো না । পুনে থেকে কলকাতার রেলের টিকিট কাটা কবে থেকেই । কিন্ত হঠাৎ করে সন্দীপ জানালো ওর কাজের ভীষন চাপ তাই জার্নিটা দুদিন পিছোতে হবে । সন্দীপ ঐশীর হাজবেন্ড একটা প্রাইভেট ফার্ম এ চাকরী করে। আর ঠিক এই টাইমেই একটা নতুন প্রোজেক্ট কাজ শুরু করেছে । সন্দীপ দুদিন পিছিয়েএ সেই প্লেনের টিকিট কাটলো , পুনে থেকে কলকাতা ভায়া দিল্লি ।

দিল্লী পৌঁছতেই শরীর টা খারাপ লাগছিলো ঐশীর । প্লেনে উঠলে মাত্র দু ঘন্টা সময় লাগে । কিন্তু আজকাল যে কি হয়েছে ছাই; প্লেনে উঠলেই শরীর টা খারাপ লগে ঐশীর । তাও অন্যবার তো তোজো আর ঐশী থাকে এবার তাও সন্দীপ আছে সাথে । ওরা কলকাতায় নামতেই লগেজ নিএ বাইরে এসে দেখলো চারপাশটা বৃস্টি তে সাদা ।

প্রিপেইড গাড়ীর লাইন ভেঙে গেছে। সবাই ছুটোছুটি করছে । ভীড়ের মধ্যে কে ওটা? অরিন্দম না! অরিন্দম ও ঐশীকে দেখতে পেয়েছে । আজ কুড়ি বছর পর অরিন্দম কে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না ঐশীর । চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো জলে । অরিন্দম ও এক দৃষ্টিতে তে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে । এই সেই অরিন্দম যে ঐশীকে ভলোবাসি বলতে পাক্কা তিনবছর লাগিয়ে দেয়। ঐশী মনে মনে সবই বুঝত, কিন্ত সেও কখনো নিজে থেকে কিছু বলার সাহস পায় নি।

দুজনে কতদিন কলেজ কেটে কফি হাউজ, বইমেলা কতো ঘুরেছে ! কি স্বপ্নের মতো দিনগুলো ছিলো । প্রায় প্রতিদিনই অরিন্দম স্টেশনে ওয়েট করতো , আর ওরা দুজনে একসাথে কলেজে যেতো। একদিন তো ক্লাসে পেছন থেকে অরিন্দম এমন একটা জোকস বলেছিল যে অন্য বন্ধুদের সাথে ঐশী হাসি চাপতে পারেনি, আর টিচারের বকা খেতে হয়েছিল। আর অরিন্দম দারুন ফুটবল খেলতো, একবার কলেজ টিম কে জিতিয়েছিল।

সেবার অরিন্দম, ঐশী আর ওদের কিছু কমন ফ্রেন্ড রা মিলে ' নেতাজী ইনডোরে ' কলেজ সোশাল দেখতে গেছিলো, আর সবার নজর বাচিয়ে অরিন্দম ঐশীর পাশেই বসে । আর আদনান স্বামী যখন 'কভি তো নজর মিলাও ' শুরু করেন তখন যেভাবে অরিন্দম তাকিয়েছিলো ঐশী ওর চোখের ভাষায় অনেক কিছুই বুঝতে পারে। ঐশী জিন্স ই বেশি পরতো কিন্তু সেদিন অরিন্দমের মনের মতো করে শাড়ী পরে এসেছিল । অরিন্দম মুখে কিছু না বললেও বুঝিয়ে দেয় যে, ওকে কতটা অপরূপা সুন্দরী লাগছে ।

যেদিন অরিন্দম সব বললো তার এ সাতদিন আগে সন্দীপের সাথে ঐশীর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। শুধু বাবার মুখ চেয়ে মানা করে দেয় ঐশী । কারন বাবা আজও ব্রাহ্মণ ছেলে ছাড়া বিয়ের কথা ভাবতে পারে না । তারপর, অরিন্দম তখনও চাকরিও পায়নি । সুতরাং অসুস্থ বাবার কথা চিন্তা করে ঐশী সেদিন চোখের জলে সব মেনে নিয়েছিল ।

আজ এয়ারপোর্ট এ মনটা ঐশীর কুড়ি বছর পিছিয়ে গেলো । বড়ো কথা বলতে ইচ্ছা হয়েছিল । কিছুটা এগিযে়ও গেছিলো ঐশী ।

ঘোর কাটলো তোজোর ডাকে । ' মা বৃষ্টি থেমে গেছে ' । সন্দীপ ও গাড়ি খোজার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো । ঐশী আবার তার নিজের জগৎ এ ফেরত এলো ।

আজ একটা কথা খুব মনে হচ্ছিল ঐশীর ' রাতের তারারা দিনের বেলাও আকাশে থাকে ' ।

মেয়েরা কখনো তাদের প্রথম ভালোবাসা কে ভুলতে পারে না । ঐশী তার সংসারের দায়িত্বে কখনো কোথাও ত্রুটি রাখেনি, কিন্ত আজও অরিন্দম মনের এক কোনায় কোথাও রয়ে গেছে যা কোনদিনও ঐশী ভুলতে পারবে না।

コメント


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page