top of page

অণু গল্প - যাত্রা

  • বর্ণালী মুখোপাধ্যায়
  • Apr 5, 2018
  • 2 min read

Updated: Feb 19, 2021

মুকুলের বড় হাসির রোগ। সমস্ত রাস্তা,সোনারপুর লোকালের ভিড়ে ঠেসে,শেয়ালদা স্টেশনে নেমে,সেখানে দু মিনিট জিরোতে জিরোতে,সে ভেবে নিয়েছিলো কেমন গম্ভীর থাকবে সে! দিদির শ্বশুরবাড়ি ঢোকার গলিপথটা যেখানে খুব সরু থেকে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে ঐ মস্ত লালবাড়িটাকে প্রকট করেছে,সেখানেও দ্বিধাগ্রস্ত পা দুটি তার থেমে গিয়েছে। সে দিদির শাশুড়ি মা কে যমের মতো ভয় পায়!


অথচ, এই এখন হাসি পাচ্ছে খুব। দিদির শাশুড়ি এসে বসলেন সামনে,বললেন -‘রামদিন পানি লাও। ’ এদিকে রামদিন বহুদিনের পুরোনো চাকর,- ‘এই যে মা, জল,’ বলে দিব্য বাংলা বলছে। এই ঘটনাটা হাসির আঁচড় কাটতে লাগলো মুকুলের পেটে,কেবল আড়চোখে দিদির নিঃশব্দ কাকুতিটা দেখতে পেয়েই সে গম্ভীর মুখে বসে রইলো।


তিনি বললেন-রাতে খাবে নাকি?

দিদি অমনি তাড়াতাড়ি বললো-না,না,মুকুল যাবে এখনই।

তিনি তখন হাত ঘুরিয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন-তা বললে হবে কেন! সে এয়েচে যখন,খেয়ে যাবে।

দিদি বেজায় করুণ গলায় বললো-রাত হলে শেষে পৌঁছাতে পারবে না। কাল আবার কলেজ আছে যে।

তিনি ভারী উচ্চাঙ্গের হাসি হাসলেন-দেরী হলে আজ রয়ে যাবে এখেনেই,আমার বাড়িতে যেন ঘরের অভাব!। তাছাড়া তেমন তাড়া পড়লে ড্রাইভার ছেড়ে দে আসবে খন। ।


এইখানে এসে গোটা পালাটা নির্ধারিত স্ক্রিপ্টের বাইরে বের হয়ে যায় দেখে দিদি হাল ধরলো চমৎকার -‘না,না, মুকু আজ রাতটুকু কোণার ঘরে শুয়ে পড়বে,এতো রাতে আবার গাড়ি বের করা। ’


তারপর খুব গভীর রাত হলো। সেই মস্ত প্রাসাদ সম লাল বাড়িতে সব ঘুমোলো। শাশুড়ির ঘরের লেস পর্দা ফুরফুরিয়ে উড়তে লাগলো,চাঁদ আলো গড়িয়ে গড়িয়ে পালঙ্কের খাঁজে খাঁজে ভানুমতীর খেল শুরু করতেই,ফোঁৎফোঁৎ , তার সুখী নাক ডাকতে লাগলো।


দিদি মুকুলকে ধাক্কা মেরে বললো-মুকু ওঠ।

মুকু বললো-ঘুমোতে দে না।

-চড় খাবি। ঘুমোতে এসেছিস। ওঠ। ছাতে যাবো। কি সুন্দর রাত।

ঘুম চোখে ভাই বললো-হিটলার?

দিদি চোখ বড় করে আর তারপরেই ফিক করে হেসে দেয়। বলে-ঘুমিয়েছে।


পুরোনো ছাতটা কতো বড়,ছড়ানো ,ঢেউ খেলে যায়। অনতি দূরে বাগবাজারের ঘাট,শিরশিরে নদীর হাওয়া।

ওরা মাঝখানটায় বসে। দিদি বলে-কতো রোগা হয়ে গেলি মুকু। পড়ার চাপ খুব না?

ভাই বলে-দিদি তোর রিসার্চের কদ্দুর?

দিদি ছাতের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে বলে- চলছে।

ভাই অমনি দিদির পাশে টানটান। ‘-তুই রিসার্চ শেষে অনীশ দার কাছে চলে যাবি?রিয়াদ?কি করবি ওখানে?’

দিদি বললো-‘পাগল হলি?ওকে এখানে নিয়ে আসবো টেনে। আমি চলে গেলে এ বাড়ির মা কতো একা হয়ে যাবেন। ’

মুকুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-‘তুই মাইরি পারিসও। লেডি সিংহবাহিনী যেন রাণী আর তুই যেন ঘুঁটে কুড়োনি,এমন ভাবটা দেখাস। ’

ভাইয়ের চুল গুলো নেড়ে দিয়ে দিদি বলে-‘ওরে, তুই বুঝবি না। মানুষটা খারাপ নন। একটু শাসন করতে ভালোবাসেন। আমি ছাড়া কে আছে বল!ছেলে তো খবর ও নেয় ঐ দায়সারা। ’

-হবে না?ঐরকম হিটলারি করলে ঐ হয়। আবার বলেন-পানি লাও। যেন যাত্রা পালার বেগম রাবেয়া। । পানি লাও!হিহি!


চাপা গলায় ভাই বোন খুব হাসে তখন।দুজন হাত ধরাধরি ছোটবেলার গলিগুলিতে ঘোরে ফেরে। ওদের মফস্বলে গোটা শীতকাল যাত্রা হয়। ভাই বোন এক আকাশ তারার মাঝে খুঁজে পায় সেই চন্দ্রাতপ,সেই নট-নটী বিনোদিনী,মায়া ত্যাগী সন্ন্যাস ।

আবছা ভোরে দুজনেই উঠে পড়ে। কোথায় যেন ভৈরবীর সুর জমে ওঠে। এখনও সূর্য ওঠে নি।

এখনও গোপন অন্ধকার!


দিদি আঁচলের ফাঁস খুলে কটা টাকা ভাইয়ের হাতে গুঁজে দেয় তখন। ভাইটি স্থবির হয় ।

দিদি অনুনয় করে বলে-রাগিস না ভাই। জানি এ টাকার দরকার নেই। জানি তোর ভাল্লাগে না আমার থেকে টাকা নিত। তবু আমারও তো মাকে কিছু একটা দিতে মন চায়। । বিশ্বাস কর, এটা আমার স্কলারশিপের জমা টাকা। ।

ভাইটির মুঠি অস্ফুটে কি যেন বলে। বলে-ভালো লাগে না,তবু নিতে হয়।

বলে-তুই জানিস কেন আসি আমি মাসের শেষে। কেন তুই ব্রাহ্ম মুহূর্তের আড়াল খুঁজিস! নিঃশব্দ অঞ্জলি তে থেকে যায় টাকা কটি।


মানুষ বড় অসহায় ।

না চাইতেও এক একটি যাত্রা পালায় নিখুঁত অভিনয় করতে হয় তাকে।


Comments

Couldn’t Load Comments
It looks like there was a technical problem. Try reconnecting or refreshing the page.
নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page