অণু গল্প
- অনন্যা ব্যানার্জি
- Nov 3, 2017
- 2 min read
Updated: Feb 18, 2021

টানা-পোড়েন
ছোট্ট সায়ন বাবা র গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো “family bonding” এর মানে। বাবা আংশুমানের চোখ ভরে আসে জলে। মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। আজ অফিস এ আমেরিকা গিয়ে ডবল বেতনে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে কোম্পানীর CTO হয়ে বসতি স্থাপন করার অফার টাকে না করে এসেছে সে। বাড়িতে অসুস্থ মা, প্যারালাইজড বাবা, স্ত্রীর চাকরি ...সব যেন মাথায় এক সঙ্গে এসে হাতুড়ি পিটছিল। সায়ন ও আবার সব এ বড় স্কুলে এডমিশন নিয়েছে। আর বোনেরও তো এ বছর এমএ র ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা। এত সব অবহেলা করে এক্ষুনি বিদেশ না গেলেই কি নয়?
সহজ সমাধান
সরস্বতী পূজার দিন সকালে নতুন হলুদ শাড়ী পড়েছে মীরা। সে আজ আনন্দে উৎফুল্ল। সকালে বাড়ির পূজায় আঞ্জলি দিয়ে তাকে আবার স্কুলে যেতে হবে। বিকেলে আছে বিল্ডিং এর সরস্বতী পুজার অনুষ্ঠান। ছোট্ট মীরা আজ মা সরস্বতীর সামনে তাঁর বন্দনা গাইবে। বাধ সাধল পুরনো হারমোনিয়াম টা । একটির বদলে তাতে কেন যে দুটো করে আওয়াজ আসছে? ছোট্ট মীরা দমে থাকার মেয়ে নয়। মাকে জিজ্ঞেস করে যদি সরস্বতী মা এর হাতের বীণা টা বাজিয়ে যদি মা এর আরাধনা করা যায় তা হলেই সকল অসুবিধের ইতি। মা নিশ্চয়ই এই প্রস্তাব হাসি মুখে মেনে নেবে......ভেবে আনন্দে নেচে উঠলো ছোট্ট মীরার মন।
আশ্রয়
ছেলের দেওয়া ফোনটা পাশে নিয়ে সারা রাত শুয়েছেন মালবিকা। আজ নিশ্চয় ই তার ফোন এ কল টা আসবে। অনেক বার সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল ফোনটা বাজছে কিনা, কোন missed কল নেই তো? ফোনটা ঠিক করে ধরতে পাড়বে কিনা সেটাও বড় চিন্তা । কিছু দিন ধরে সেটা ও দু তিন বার লজ্জার মাথা খেয়ে এখানের বন্ধুদের থেকে শিখে নিয়েছে। ফোন ধরতে না পারলে খুব রাগ করবে বাবাই। আজ তো ১৫ই জুলাই। তার জন্মদিন। সেই ছোটবেলা থেকে প্রতিবার রাত বারোটা বাজলেই ছেলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ইংরেজি কায়দায় মা কে সর্ব প্রথম উইশ করে। বাবা র সঙ্গেও কোন কোন বার কে আগে উইশ করেছে তাই নিয়ে ঝগড়া বেঁধে যেত। কিন্তু আজ দুপুর বারোটা হয়ে গেল তবু ফোন এল কই? তবে কি বাড়িতে কারোর শরীর খারাপ? বাজে চিন্তাগুলোই প্রথম মাথায় দানা বাধে আজকাল।
সেই ছোট বেলা থেকে বহু কষ্টের মধ্যে ছেলেকে বড় করেছেন মালবিকা। দূর্গা পূজাতে নতুন শাড়ী কিনতেন না, কখনো সিনেমা পর্যন্ত দেখতে যেতেন না এমনকি ছেলের পড়ার খরচ যাতে অসুবিধে না হয় কত রাত শুধু জল খেয়ে শুয়ে পরতেন। বুঝতে দেননি কাউকে। ফোন টা বালিশের তলায় পড়ে রইল। বৃদ্ধাশ্রমের বন্ধুরা চলে এসেছে মালবিকাকে ডাকতে । আজ প্রচুর আয়োজন এখানে। ঘটা করে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করবে এরা। মালবিকার মন না চাইলেও সে ভারাক্রান্ত মনে উঠে গেল তার বন্ধুদের সঙ্গ দিতে।।
Comments