top of page

পাপ পূন‍্য

  • সম্পাদনা দীপ
  • Nov 18, 2017
  • 5 min read

Updated: Feb 18, 2021


জোড় কবিতা প্রকল্প (সম্পাদনা দীপ)

মুখবন্ধ - দীপ

ছোটবেলা থেকে জুজুকে ভয় পেতে পেতে বেশ বড় হচ্ছিলাম, হঠাতই সে জুজুকে সরিয়ে তার জায়গা দখল করে নিলেন ঠাকুর। এই ভয় পাওয়া ছাড়া জুজু আর ভগবানের আরেক’টা বড় মিল হল উভয়েই নিরাকার। তবে আরেক’টু বড় হতে হতে বোধ হয় বয়স তখন বছর পাঁচ কিংবা ছয় হবে বুঝলাম এই ঠাকুর ভদ্রলোককে ডিল করাটা অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে। মানে এই টি ভি তে জয় হনুমান, শ্রী কৃষ্ঞ, মহাভারত ইত্যাদিতে দেখেছি তাদের বেশ মানুষ মানুষ দেখতে। আর তখন এখনকার মত এত ছয় প্যাকের ব্যাপার না থাকায় তেনাদের দেখতে মোটামোটি খেলা ধূলো করা বাবা কাকা মামাদের মতই ছিল। সাথে শিখলাম বেশী দুষ্টুমি করলে তিনি মাঝে মাঝেই রেগে যান এবং বেশী রেগে গেলে পাপ দেন। সে তো জুজুর কামড়ের মত হলো। কিন্তু ভালো ব্যাপারটা হলো আমি ভালো হয়ে থাকলে ঠাকুর বাবু খুশি হন; আমার পূণ্য হয়। কিন্তু সে পূণ্য কি ব্যপার আবার চুলের মত বড় হয় না যে তা কাটা নিয়ে একটা লন্ড ভন্ড করলে বাবা চকলেট কিনে দেবে বা মা লুচি ভেজে দেবে।

বাঙালির আবার পূণ্যের সাথে লুচির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। মা যে দিন যে দিন না খেয়ে গোটা দিন পূণ্য অর্জন করত সে দিনগুলো ডিনারে আমার লুচি পাকা।ছোটবেলায় মা এর উপোষ করাটা সবার কাছে এত স্বাভাবিক ছিল তা নিয়ে আলাদা করে ভাবার কোনো কারণ থাকতে পারে মনে হয় নি।আর একটু বড় হলাম দেখলাম বাবা দিদি কেউই মা এর এই উপোষ করাটা ভালোভাবে নিচ্ছে না,আসলে মা এর শরীর খারাপ হত আর কি! আমারও না ঐ উপোশী লুচির ওপর থেকে লোভটা কেমন হালকা হয়ে গেল। মা কে জিগ্যেস করলাম একদিন এত পূণ্য কার জন্য – মা বললো আমার জন্য, দিদির জন্য, বাবার জন্য; যা তে আমরা ভালো থাকি খুব বড় হই। তখন থেকে ব্যপারটা একটু খচখচ করত – কি মুশকিল আমাদের ভালোর জন্য মা এর এই কষ্ট কিন্তু মা কষ্ট পেলে আমাদের কেমন করে ভালো হবে!

যতদিন যাচ্ছে হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্টে গেছি দেখি পাপ পূণ্যের খেলাটা সাপ-লুডোর মত আগে মনে হলেও ঠিক তা নয় বরং অনেকটা টেস্ট ক্রিকেটের মত (পুরনো দিনের অবশ্যই)। রান করার চেয়ে উইকেট বাঁচানোটা বেশী দরকার মানে - পূণ্য অর্জনের চেষ্টা তো আছে কিন্তু সে জন্য যা করা হয় তার চেয়ে বেশী চেষ্টা চরিত্র যাতে পাপ না লাগে তার জন্য। এই চক্করে কত কিছু যে করা হয় নি জীবনে... যাই হোক এবার গুছিয়ে বখাটে আমি, পূণ্য বলতে বিজয়ার প্রণাম (ওটাই আজও করি কারণ –ঠাকুর বলতে মা – বাবা ব্যাশ)। আর মাঝেসাঝে বেশী পাপ হয়ে গেলে মন্দিরের প্রণামী বাক্সে পকেট মানির দু-এক টাকার কয়েন সেটা পাপের সাইজের ওপর। বখাটে ছেলের বন্ধুর অভাব নেই। আমার কাছে ভাষা বাসা জামা ঘামা কোনোটাই বন্ধু বাছার মাত্রা নয়। কিন্তু, বড়রা দেখলাম বন্ধু আর ইয়ার দোস্তের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন ফারাক করতে পারেন, আমি পারি না। এতে আমার পাপের মিটার ফুলদমে দৌড়চ্ছে তখন। আজহারের সাথে সিগারেট খাই কাউন্টারে, সুশান্ত বাগদীর সাথে এক বোতলে কোল্ড ড্রিংক্স (তখনো কোল্ড ড্রিংক্স ই ছিল), দেবু বামনের সাথে এক পাতে ঝালরুটি.. কোনটাই যে পাপ আর কোনটাই পূণ্য ধরতে পারছি না ওদিকে মিটার ছুটছে কলকাতার ট্যাক্সির মত। এ সময় আরেক মজার জিনিস দেখলাম সবার না পাপের কাঁটা আলাদা ঘরে আটকায় – মানে আমি যাতে পাপী তাতে অন্যরা পূণ্য কামাচ্ছে আবার ওরা যা পাপ বলে শিখেছে তাতে আমি পূণ্যের স্ট্রেট ব্যাটে ছক্কা হাঁকাই।

স্কুলের শেষ চার পাঁচ বছর ঐ অষ্টমী আর সরস্বতী পূজোর পুষ্পাঞ্জলি ছাড়া ঠাকুরের সাথে ডিল হয় পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। ডিল মোটেও ভালো জমতো না আমি সবসময় ৫০ উত্তর করে ৪৮ এ ডিল করতাম খাতায় আসতো ৩৬ কি ৪০। ঐ গন্ডি পেরিয়ে যেত আর কি। তবে মনে হয় তার কৃতিত্ব প্রধানত স্যারেদের; আসলে স্যারেরাও বিশেষ ভিড় বাড়াতে চাইতেন না মনে হয়। তবে এতদিনেও ঠাকুর আমার খুব রেগে টেগে যান নি - নির্বিঘ্নে স্কুল পেরিয়ে গেছি;কলেজে ভর্তি হয়েছি। মা অনেক কিছু মানা করেছে। এগুলো আলাদা করে না বললে দু-একটা মিস হয়ে যেত বোধহয়। মানা যখন করেছে তখন সব এক এক করে করে দেখতে হবে। অনেক কিছুই হচ্ছে এখন আর কাউকে ভয় টয় পাই না পাপ কে তো নয়ই। তখন একদল দাদা দিদি দেখি তাদের সাথে গিয়ে গল্প করে,তাদের পড়ায়, জামা কাপড় দেয়, একই থালায় মুড়ি খায় যাদের মত কারো সাথে একদিন আমার খেলা মানা ছিল। না ওদের দেখে মনে হল না বিশেষ পাপ করছে। আমিও করে ফেললাম –পাপ হল কি না জানি না তবে ওরা যখন জিগ্যেস করত দাদা আবার কবে আসবে চোখ হাল্কা ভিজে যেত। এসবের সাথে জুটে বসল প্রেম। কলেজের প্রেম আর ফেস্ট আর মানে আর কি বলি আরও এক-দু ধাপ পাপ আর কি.. তখনো;পাশ করে যাচ্ছি প্রেম ভাঙছে আবার নতুন করে জুড়ে যাচ্ছে আমি পেরিয়ে যাচ্ছি। মানে ঠাকুর তেমন রাগ করেন নি। অবশ্যি করলেও তখন আর কিছু যাই আসে না, কারণ আমি আর তাঁর অ্স্তিত্ব মানি না। বাবা মা বেশ কয়েক বার বলেছিলো ছোট বয়সে “ঠাকুর তোমার সঙ্গে আছে তুমি ঠিক পারবে”। কয়েকবার পেরেছি কয়েকবার পারি নি, সব মিলিয়ে ভয়টাই পেয়েছি বেশী সময় ধরে – কিন্তু, এখন আর পাই না।

এরপর কি! স্টেবল প্রেম হলো চাকরি পেলাম। চাকরি করতে বেশীর ভাগের মত আমিও বাড়ি ছাড়া হলাম। প্রেমটা অনেকের মতই টিকলো না কিন্তু, ভালোবাসাটা রয়ে গেল। অনেক ঠিক ভুল কাজ কর্ম করলাম। কিছু কাজের জন্য খুব অপরাধবোধ হত (এখনও হয়),কখনও খেতে পারতাম না, কখনও ঘুমাতে.. এক দিওয়ালীর রাতে একা ঘরে বসে বুঝলাম মা এর সেদিনের কথা – আমাদের ভালোর জন্য মা এর উপোশ। ঠিক তো, নিজের মানুষের সাথেই তো স্বর্গ। ভালো কাজ ভালো মানুষের সঙ্গে মনে এক অদ্ভূত সন্তুচ্টি আসে, তাই তো পূণ্য। আর সে কথা শুনে মা যখন খুশি হয় বাবা যখন গর্ব করে তাই তো স্বর্গ লাভ, আপনজনের সঙ্গ লাভে। আস্তে আস্তে নিজের সাথে সময় কাটাতে বেশ লাগতে শুরু করলো – খুঁজতে বেরোলাম সেই তাদের আবার যাদের সাথে ছায়াঅঞ্চল ভাগ করলে পাপ হত। এখন ওদের হাসিতেই পাপের ক্ষয়। আসলে পাপ পূণ্য কোনোটাই ঠাকুর দেয় না সবটাই বোধ – যার বোধ নেই তার চাহিদা আছে মাত্র সন্তুষ্টি নেই তাই পূণ্য নেই; অপরাধ আছে অপরাধবোধ নেই তাই পাপও নেই। —দীপ

শূন্য বা পূর্ণ মাপা হয়

সরকারী হিসেব খাতায়

বিজয়ীর পূণ্যের মালা

পরাজিত পাপের পাতায়।

--শুভাশিস

পাপ কি বা পূন‍্য কি?

পূর্ণ কি আর শূন‍্য কি?

সব তো হেথা বোধের দায়,

সুখী সে যার হৃদয় নাই।

- দীপ

পুন্য ? সে তো কুমারী,

সেতো পাপের কারণ,

পুন্যের মাঝে পূর্ণ ,

সে তো দ্রৌপদী হরণ !!

- রূপম

পূণ‍্য কেমনে কুমারী হবে!

তবে মার আঁচলে পাপ?

তবে সে পাপের ভাগী ভালো আমি,

নেই কোন অনুতাপ।

- দীপ

পাপের আড়ালে থাকে পূণ্য,

পূণ্যের গভীরে পাপ,

সেই পূণ্যে কেউ হয় ধন্য,

পাপীর নেইকো মাপ।

- অনিন্দিতা

পরিবর্তনশীল দুনিয়ায়

বদলে যায় মানুষ 'জন্মের শোধ'

রাজা বদলায়, রাজত্ব বদলায়

বদলে যায় পাপ পূণ্যের বোধ

--শুভাশিস

বোধের ঘরে রাংতা ভোর,

রোদের পরে শুকনো তাপ,

যার শিকড়ে পূণ‍্য বোঝায় -

তার ছায়াতে বাড়ছে পাপ।

- দীপ

পাপ-পূণ্য আজব শব্দ,

সঠিক কোন মানে নাই,

আফগানে যা পাপ গন্য,

আমার দেশে পূণ্য তাই।

- রূপম

কোনো ধ্রুব সত্য নেই মানুষ জন্মে

নেই কোনো ধ্রুব পরিকল্পনা

পাপ-পূণ্য-সত্য-মিথ্যা মিথ্যা স্বপ্নে

মত্ত জীবনে অলীক কল্পনা

--শুভাশিস

সত‍্য অসত‍্য সুখ অসুখ -

কেহ ধ্রুব নয়.. সদা তবু ভয়,

পাপ পুণ‍্যের বৃত্তাবৃত্তে সতত-

কোন আগামীর আকাঙ্খায় তবে ভীত!

- দীপ

মনের কুঠুরি খুলে ব্যবচ্ছেদ করে তাকে দেখি -কোথায় রয়েছে পুণ্য

কোথায়ই বা আছে সেই পাপ ?

অতল মনের খাঁজে,এক কোণে দেখি

জমে আছে ,কিছু ভয় ভীতি চাপ চাপ,

- মধুমিতা

অবাধ্যতার বেড়াজালে

পাপ-পুণ্য খেলা করে,

পাপের ভাঁড়ার পূর্ণ হলে

ছুটি মোরা পুণ্য তরে !

- রূপম

‪অতীতে যা করেছি পাপ

ধুয়েছি সময়ের দামে,

পূণ্য খুঁজছি আজ

পথে, ঘাটে, নিলামে !

- রূপম

কোথায় পুণ্য খুঁজিস রে ভাই !

পুণ্য তো ওই নাগরদোলায় দুলছে ,

এ পুণ্যতে আর যাই হোক মানুষ কিন্তু মানুষকে আজ ভুলছে,সেই দাপটে

মনের পাঁকে লুকানো পাপ ঢুলছে আর ঢুলছে,,,,

- মধুমিতা

অন্তরে অনুভব পাপ পুণ্যর।

পারি কি সন্তুষ্ট থাকতে তার নিরাকার অস্তিত্বে।

আমাদের চেতনার রঙে রূপ নেয় পুণ্য দেবতায়।

শয়তান পাপের সফল রূপ কল্পনা ।

- মণীষা

পাপ কাকে বলে ?

পূণ্য ?

সংজ্ঞা ....মাপকাঠি ????

শ্লীল অশ্লীল ...ঘেঁষাঘেঁষি ...

ফারাক ধূসর ....

জীবন হেসে বলে ...দারিদ্রের চেয়ে বড় অশ্লীলতা আর কোথাও নাই রে বন্ধু ...

পাপ পূণ্যের হিসেব ওলোট পালট করে দেয় ক্ষিদে .....

-সুস্মিতা

জীব ভ্রান্তি তে বদ্ধ ।

মনই করে পাপ।

আবার লিপ্ত হয় মনই পুণ্য ।

সেই মনই যখন উন্মনা (মুক্ত)

তখন আর থাকে না পাপ পুণ্য ।

তুমি ই কার্য তুমি ই কারণ

তোমার অন্তরের ভাবের হেতু

পাপ পুণ্যর বিশেষ বোধ।

- মণীষা

সেই চির মহামিলন পথে পথিক মাত্র,

ভুলেছিলাম মহামানব না আমি,

কেবল সে অলীক জনের ছাত্র,

বোধির সন্ধানে নির্বোধ পাপী ছুটে চলি অহরাত্র।

- দীপ

তোমার সুরে বাঁধব যে সুর

এমন বাঁশি তুমিই দিও

পাপ পূণ্য ছায়া রোশনাই

তোমার সুরে মিলিয়ে নিও।

--শুভাশিস

পাপ পূণ্য থাক, বয়ে যাক - নিজের মত,

এসো পায়ে পায়ে পিছু ফেলে বিধি নিষেধের ভিড়,

স্বর্গের পথ ভুলে হেঁটে চলি শুধু হেঁটে চলি,

হাতে হাতে গড়ে তুলি সে ভুবন .. উচ্চ যেথা শির।

- দীপ

Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page