- নিবেদিতা মণ্ডল
শিশু পুজো
১৩ বছর হয়ে গেল আমার বিয়ে হয়েছে তবু আজও আমি নিঃসন্তান। কত ডাক্তার কত বদ্যি ! লাভ হয়নি কিছুই। প্রত্যকেই বলেছেন... ধৈর্য ধরুন আরও একটু ধৈর্য ধরুন। কিন্ত সেই ধৈর্যের বাঁধই ভেঙেছে শেষ অবধি । সেই ভাঙা বাঁধে বান আসেনি, আমার কোলে সন্তানও আসেনি। আমার স্বামী খুবই শান্ত প্রকৃতির মানুষ । সরল সাদামেটে লোকটাও যেন দিন দিন মুষড়ে পড়ছেন। বাবা হওয়ার সাধ বোধহয় তাঁর এজন্মে আর পূরণ হল না ! সেদিন ও বাড়ির ফুলপিসি আমাকে ডেকেছিলেন বললেন,' বউমা শোন এদিকে।' গেলাম গুটিসুটি পায়ে। মা না হওয়ার অক্ষমতা আমার আত্ম সম্মানকেও যেন দমিয়ে রেখেছে আজকাল। মুখ নিচু করে জানতে চাইলাম 'আজ্ঞে?' বলি অনেক তো ডাক্তার-বদ্যি করলে লাভের লাভ কি কিছু হল ! সেই তো বাঁজাই রয়ে গেছ ! বাঁজা ! এই একটা শব্দ তীরের মত এসে বেঁধে আমার গায়ে। কানের সমস্ত শিরাউপশিরা গুলো যেন একসাথে লজ্জায় অসাড় হতে চায়। বললাম না, লাভ হয়নি । শুনে উনি বললেন হুম আমার এক ভাই আছে ... মস্ত পণ্ডিত অনেক নাম। কত লোকের কত সমস্যা যে তুড়ি মেড়ে উড়িয়েছেন ! তোমাকে কি বলি বউমা তুমি আমার সাথে একবার চলো । আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম' কোথায় '? 'আ মরণ ! আরে ভাইয়ের কাছে দেখবে ও পুজো আর্চা করে সব ঠিক করে দেবে।' আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করতাম না চরম নাস্তিক। তাও আজ ফুলপিসির কথাগুলো যেন চুম্বকের মত এসে আটকাল এই অভাগীর মনে। পরদিন সকালেই রওনা দিলাম ফুলপিসির সাথে শনি মঙ্গলের পুজো দিতে। মন্দিরের ঢুকতে যাব হটাতই চমকে উঠলাম কান্নার আওয়াজে । একটা ছোট্ট শিশু কাঁদছে। সেটা শুনেই এই বাঁজা মায়ের মনটা বড় অস্থির হয়ে উঠল। ছুটলাম কান্নার উৎস সন্ধানে... পিছনে পুজোর ডালা হাতে ফুলপিসি। কিছুদূর যেতেই দেখি আবর্জনার মধ্যে একটা সদ্যজাত শিশু ! আহা রে ! বোধহয় খুব খিদে পেয়েছে ! তাই এত অসহায় ক্রন্দন। কিছু না ভেবেই কোলে তুলে নিলাম তাকে । উফ কি শান্তি ! যেন নিজের সন্তানকেই বুকে তুলে নিয়েছি। পুজোর দক্ষিণার জন্য ৫০ টাকা এনেছিলাম সঙ্গে করে। ছুটে গেলাম একটা মুদিখানার দোকানে দুধ কিনব বলে। ফুলপিসি আমার দিকে তাকালেন বললেন কি করছ বউমা ? এটা তো পুজোর দক্ষিণা ! পুজো দেবে না? পুজো? আমি হেসে বললাম... হুম দেবো তো তবে শনি পুজো নয় শিশু পুজো। বাচ্চাটিকে খাওয়ালাম যত্ন করে। মা না হতে পারার ক্ষতটা আজ যেন কোথায় মিলিয়ে গেল! আচ্ছা আমরা কি পারিনা এত পুজো এত মিথ্যে মানসিক না করে রাস্তা থেকে বা হোম থেকে ... একটা বাচ্চা এনে মানুষ করতে ! আমরা কি পারি না ওদের মুখে একটু হাসি দিতে ! মা না হতে পারার জ্বালা মেটাতে ! পারি না আমরা ! সত্যিই কি পারিনা!!