নাটক - চক্রব্যূহ
- শুভাশিস ভট্টাচার্য
- Apr 4, 2017
- 34 min read
Updated: Feb 18, 2021
(অনুপ্রেরণা / ভাবানুবাদ : জঁ পল সার্ত্রের “Huis Clos”)
(বিধিসম্মত সতর্কীকরণ – চক্রব্যূহ নাটকটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের জন্য।)
চরিত্র
পরিচারক/যমদূত : হোটেল বা রেস্তোরাঁর পরিচারকের পোশাক পরা যমদূত
সমীর : মধ্য বয়স্ক [ সাজ পোশাক : আধুনিক শহুরে পোশাক। পোশাকের রঙ সাদা ]
সৃষ্টি : কিশোরী [ সাজ পোশাক : আধুনিক শহুরে পোশাক, একটা লেডিস পার্স। পোশাকের রঙ সাদা ]
রোশনি : হিন্দি ভাষী কিশোরী – বাংলা বুঝতে পারে এবং অল্প অল্প বলতে পারে [ সাজ পোশাক : দেহাতি। পোশাকের রঙ সাদা ]
[
মঞ্চ সজ্জা :
আলোর ব্যাবহার করে মঞ্চে দুটি জোন (পার্ট) তৈরি করা হবে –
জোন ১ - নরক – এটি প্রাইমারি জোন – এখানেই বেশির ভাগ ঘটনা ঘটবে। একটা বসবার ঘর | ঘরে প্রবেশ করার একটা দরজা | দরজা বন্ধ | ঘরে কোনো জানালা নেই | গৃহসজ্জা বর্জিত এই বসবার ঘরে তিনটে চেয়ার, একটা টি টেবিল - তার উপর একটা ফোন (অথবা কলিং বেল) | এ ছাড়া আর কোনও আসবাব নেই| টেবিল চেয়ার কালো রঙের কাপড়ে ঢাকা )
জোন ২ - পৃথিবী – এটি সেকেন্ডারি জোন – পৃথিবীতে হওয়া কিছু কিছু ঘটনা দেখানোর সময় ফোকাসে আসবে। পৃথিবীতে হওয়া ঘটনা মূলত আলো-ছায়ার (silhouette) ব্যাবহারে দেখানো হবে)
]
(মঞ্চ অন্ধকার। মঞ্চে কিছু লোক দল বেঁধে প্রবেশ করে। তারা কালো পোশাক পড়া, মুখে সাদা মুখোশ, হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি। তারা দল বেঁধে মঞ্চের মধ্যে ঘুরতে থাকে (যতক্ষণ গান চলছে))
দর্শকের মাঝখান থেকে সূত্রধর ( এক বা অধিক) গান ধরে:
প্রথম সূত্রধর:
শোনো শোনো শোনো সবে - শোনো দিয়া মন
তোমার আমার কথা - করিব বর্ণন –
সবাই কোরাস:
শোনো শোনো শোনো সবে - শোনো দিয়া মন
তোমার আমার কথা - করিব বর্ণন
দ্বিতীয় সূত্রধর: ( ভাষ্য, বাকি দুজন – “শোনো শোনো শোনো সবে”)
এ রোশনি, সমীর আর সৃষ্টির কথা
এ আলো, বাতাস আর বৃষ্টির কথা
তৃতীয় সূত্রধর:
এ কথা তোমার কথা - এ কথা আমার কথা
এ জীবন তোমার জীবন - এ জীবন আমার জীবন
সবাই কোরাস ঃ
শোনো শোনো শোনো সবে - শোনো দিয়া মন
আমাদের কথা আজ - শোন সর্বজন
দ্বিতীয় সূত্রধর: ( ভাষ্য, বাকি দুজন – “শোনো শোনো শোনো সবে”)
মনে কর তুমি সমীর -
তুমি মুক্ত হাওয়ার তীর
(মঞ্চে সমীর প্রবেশ করে – সমীরের উপর আলো)
অথবা হয়ত তুমি সৃষ্টি
পৃথিবীর বুকভরা বৃষ্টি
(মঞ্চে সৃষ্টি প্রবেশ করে - সৃষ্টির উপর আলো)
অথবা হয়ত তুমি রোশনি
এক মরমী আলোর কাহানী
(মঞ্চে রোশনি প্রবেশ করে - রোশনির উপর আলো)
সবাই কোরাস:
শোনো শোনো শোনো সবে - শোনো দিয়া মন
আমাদের কথা আজ - শোন সর্বজন
সবাই কোরাস:
আমরা চেয়েছি মুক্ত বাতাস
আমরা চেয়েছি মুক্ত আকাশ
আমরা চেয়েছি বুকভরা নিশ্বাস
আমরা চেয়েছি দুর্বার বিশ্বাস
দ্বিতীয় সূত্রধর: ( ভাষ্য, বাকি দুজন – “আমরা চেয়েছি আমরা চেয়েছি”)
এ রোশনি, সমীর আর সৃষ্টির কথা
এ আলো, বাতাস আর বৃষ্টির কথা
তার পর একদিন
নিভে গেলো আলো
মরে গেলো বাতাস
বন্ধ হল বৃষ্টি
(সমীর, রোশনি আর সৃষ্টির উপর আলো নিভে যায়। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়।)
তৃতীয় সূত্রধর:
এ কথা তোমার কথা - এ কথা আমার কথা
এ মরণ তোমার মরণ - এ মরণ আমার মরণ
সবাই কোরাস: (আস্তে)
শোনো শোনো শোনো সবে - শোনো দিয়া মন
এ মরণ তোমার মরণ - এ মরণ আমার মরণ
(কালো পোশাক পড়া লোকেরা আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায়)
(জোন ১ আলো হয় )
[জোন ১ – (দরজা খোলার আওয়াজ শোনা যায়) দরজা খুলে পরিচারক ঘরে প্রবেশ করে, পেছনে সমীর]
পরিচারক : সমীরবাবু, আসুন। এটাই আপনার ঘর।
সমীর [ পরিচারক/যমদূতের পেছন পেছন প্রবেশ করে এবং চারদিকে দেখে ] : আচ্ছা মশাই – এটা আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন ?
পরিচারক : এটা নরক। আপনি এখন এখানে থাকবেন।
সমীর : অ্যাঁ!! সত্যি বলছেন ! এটাই নরক ?
পরিচারক : হাঁ কেন ? আপনি কি অন্য কিছু আশা করেছিলেন ?
সমীর : আমি অন্য রকম ভেবেছিলাম, আপনি জানেন – পৃথিবীতে, সবাই কি বলে ?
পরিচারক : কিসের ব্যাপারে ?
সমীর : মানে [ চারদিকে তাকিয়ে ] ... এই নরকের ব্যাপারে আর কি…
পরিচারক : কারা বলে ?
সমীর : ওই সব সাধু-সন্ন্যাসী-পীর-পয়গম্বর, যাদের সাথে আপনাদের হট-লাইনে হরদম কথা হয় | [ পৃথিবীর/দর্শকের দিকে তাকিয়ে... এগিয়ে যায়...দর্শকের মধ্যে খুঁজে… খুঁজে ] ওই… ওই যে বিরিঞ্চি-বাবা... তার পর ওই যে দেখুন ..কামদেব-বাবা - তার পাশে মশারাম-বাবা.. তার পর এই যে ... এই দিকে দেখুন… মছলি-বাবা, রেডিও-বাবা… এরকম আরও কত বাবা…
পরিচারক : সত্যি ! যারা কখনো এখানে আসে নি - তারা বানিয়ে বানিয়ে যা খুশি বলে, আর আপনারা ওই সব আজগুবি গল্প বিশ্বাস করেন ?
সমীর : আচ্ছা! তাই বুঝি - [ সমীর চারদিকে তাকিয়ে ] কিন্ত আপনাদের এখানে অত্যাচারের সরঞ্জাম গুলো কই ?
পরিচারক : কিসের সরঞ্জাম ?
সমীর : অত্যাচারের সরঞ্জাম… ওই জ্বলন্ত উনুন, ফুটন্ত তেলের কড়াই ইত্যাদি ... ইত্যাদি আর কি ? [পৃথিবীর/দর্শকের দিকে তাকিয়ে, আঙ্গুল তুলে দেখায় - ] আপনি কি জানেন - পৃথিবীতে ওরা নরকের ব্যাপারে কি বলে –
পরিচারক : কি বলে ?
সমীর : ‘অন্ধকারে চৌরাশিটা নরকের কুণ্ড - তাহাতে ডুবায়ে ধরে পাতকীর মুণ্ড’
পরিচারক : আপনি নিশ্চয়ই রসিকতা করছেন ?
সমীর : রসিকতা? না, না, আমি রসিকতা করিনি | রসিকতা তো আপনি করছেন...
[একটু চুপ করে থেকে…তারপর - বৃত্তাকার ঘুরে ঘর টাকে দেখে - একটু রেগে গিয়ে] আচ্ছা মশাই!! এটা কি রকম ঘরে থাকতে দিয়েছেন, এখানে কোনো জানালা নেই-
পরিচারক : [একটু হেসে ] বুঝলাম, তা আপনার আর কি কি চাই ?
সমীর : Attached toilet with running hot and cold water আর আমার..আমার টুথব্রাশ
পরিচারক : এটা ভালো বলেছেন ! Attached toilet with running hot and cold water আসলে আপনি এখনো আপনার পুরনো অভ্যাসগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেননি |
সমীর : মানে ?
পরিচারক : [ একটু স্মিত হেসে ] কিছু মনে করবেন না, কিন্ত আমাদের সব অতিথির একই রকম প্রশ্ন – প্রথমে সবাই জিজ্ঞেস করে - অত্যাচারের সরঞ্জাম কোথায় ? তার পর যখন একটু ধাতস্থ হয় তখন - জিজ্ঞেস করে – বাথরুম-পায়খানার কথা ... Attached toilet with running hot and cold water.. তারপর টুথব্রাশ, টয়লেট পেপার ইত্যাদির কথা … আপনি একটু ভাবুন …ওই সব জিনিষ নিয়ে আপনি নরকে কি করবেন ?
সমীর : [ শান্তভাবে ] হ্যাঁ, আপনি ঠিক-ই বলেছেন .. [এদিক ওদিক দেখে] সত্যিই তো …এখানে আর ওসবের আর কি দরকার… [ঘরে পায়চারী করে] – আচ্ছা এখানে তো বিছানা-ও নেই । ... এখানে কেউ ঘুমোয় না?
পরিচারক : না - এখানে কেউ ঘুমোয় না |
সমীর : [একটু ভয় পায় ] মানে, এখানে সব সময় জেগে থাকতে হবে - যা ভয় করেছিলাম - এটা আপনাদের একটা চাল – এটা একটা বিরামহীন যন্ত্রণা যাপনের ব্যবস্থা …
পরিচারক : আপনি কি বলতে চাইছেন ?
সমীর : আমি কি বলছি ? [সন্দেহের চোখে পরিচারকের দিকে তাকিয়ে ] যা সন্দেহ করেছিলাম.. আপনার চোখের পাতা নেই... জানেন তো - পৃথিবীতে মানুষের চোখের পলক পড়ে ঘণ্টায় চার-হাজার-বার – ব্যাপারটা অনেকটা নাটকের পর্দা পড়ার মতন।
পরিচারক : আচ্ছা ! তাতে লাভ কি ?
সমীর : এক এক বার চোখের পলক পড়ে - যেন এক-একটা ছোট ছোট বিশ্রাম… মনে করুন ঘণ্টায় চার-হাজার-টা ছোট ছোট বিশ্রাম … আপনি ভাবতে পারবেন না সেটা কত আরামদায়ক …
পরিচারক : আচ্ছা ! তাই বুঝি।
সমীর : [ পৃথিবীর/দর্শকের দিকে তাকিয়ে ... স্মৃতিবেদনাতুর ..] আহা শুধু তাই নয় - পৃথিবীতে কি সুন্দর ঘুমোতাম… আর ঘুমের মধ্যে দেখতাম সুন্দর স্বপ্ন | আর এখানে… চোখের পলক পড়বে না – ঘুম হবে না – সব সময় জেগে থাকতে হবে – এখানে একটানা বিরামহীন যন্ত্রণা যাপন করতে হবে
পরিচারক: আচ্ছা ! আমি এখন আসি।
সমীর : [ পরিচারকের দিকে তাকিয়ে ] আচ্ছা- এখন কি দিন ?
পরিচারক: আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ? এখানে আলো জ্বলছে ..
সমীর: তাই তো – আচ্ছা - এই ঘরের আলো কখনো নেভে না ?
পরিচারক: না |
সমীর: তার মানে, এখানে সবসময় দিন – সবসময় কটকটে আলো...চোখের সামনে ...মাথার ভিতর... উফ..! [ দর্শকের দিকে এগিয়ে গিয়ে.. ] এখানে অনন্ত কাল ধরে বিরামহীন জেগে থাকতে হবে ! কিন্ত তাহলে আমি - নিজে নিজেকে কি ভাবে সহ্য করব - একটানা - অনন্ত কাল ধরে ? আমি পাগল হয়ে যাব –
পরিচারক : আপনার আর কোনও প্রয়োজন না থাকলে, আমি এখন আসি.. আমার অনেক কাজ পরে আছে |
সমীর : [ পরিচারকের দিকে ফিরে ] দাঁড়ান, দাঁড়ান, এই ঘরের বাইরে কি ?
পরিচারক : অজানা অন্ধকার -
সমীর : [ভয় পায়] কি!! অজানা অন্ধকার ? [ পরিচারক দরজার কাছে যায় ] দাঁড়ান ..দাঁড়ান..[ পরিচারক ঘুরে দাড়ায় ] এটা একটা ফোন তাই তো ?
পরিচারক : [মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়] হাঁ
সমীর : আমি যদি রুম সার্ভিস ফোন করি - তাহলে আপনি আসবেন ?
পরিচারক : সে রকম-ই কথা | কিন্ত এই ফোনটার কোনও ভরসা নেই .. এটা সবসময় কাজ করে না |
সমীর : [ ফোন টা ডায়াল করে … ফোনের আওয়াজ শোনা যায় ] .. এই তো দিব্বি বাজছে |
পরিচারক : তা বটে.. তাহলে ঠিক আছে …আমি এখন আসি |
সমীর : ঠিক আছে আপনি এখন আসতে পারেন |
[ পরিচারক বাইরে বেরিয়ে যায় | দরজা বন্ধ হয়ে যায় ]
সমীর : [ ঘরের মধ্যে পায়চারী করে .. একবার বসে .. একবার ওঠে … ফোন টা বাজায় ..ফোন বাজে না .. আবার চেষ্টা করে ফোন বাজে না ] উফ…! ফোন টা আবার কাজ করছে না.. [ দরজার দিকে তাকিয়ে ] মশাই ..ও মশাই .. শুনছেন …[ দরজার একটু কাছে যেয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে] মশাই ..ও মশাই.. শুনছেন .. দরজাটা একবার খুলুন…[ দরজা খোলার চেষ্টা করে .. দরজা খোলে না .. দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা মারতে থাকে ] মশাই ..ও মশাই.. শুনতে পাচ্ছেন ? দরজাটা খুলুন…[ হঠাৎ চুপ করে যায়.. হতাশ হয়ে .. চেয়ার-এ এসে বসে পরে .. হাতে মুখ ঢাকে.. গভীর চিন্তায় মগ্ন হয় ]
[দরজাটা হঠাৎ খোলে | পরিচারক প্রবেশ করে, সঙ্গে সৃষ্টি ]
পরিচারক : আপনি আমাকে ডাকছিলেন ?
সমীর : [ মুখ তুলে কিছু বলতে যায় ] হাঁ.. [ তার পর সৃষ্টি কে দেখে চুপ করে যায় ].. না…ঠিক আছে [ আবার মাথা নিচু করে ..হাতে মুখ ঢাকে… চিন্তায় মগ্ন হয়..]
[সৃষ্টি ঘর-টা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে ]
পরিচারক : [ সৃষ্টি কে ] সৃষ্টি ম্যাডাম, আসুন। এটা আপনার ঘর [ সৃষ্টি ঘর টা ঘুরে ঘুরে দেখে ] যদি আপনার কোনও কিছু জানতে ইচ্ছে হয় - যেমন এটাই নরক কিনা.. এখানে যন্ত্রণা দেবার সরঞ্জাম কোথায় ? বাথরুম, পায়খানা, আয়না, টুথব্রাশ, টয়লেট পেপার ইত্যাদি কোথায় ? সব ওই ভদ্রলোক কে জিজ্ঞেস করতে পারেন - ওনার সাথে এই ব্যাপারে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে |
[ পরিচারক চলে যায় দরজা বন্ধ হয়ে যায়]
[ সমীর মুখ তোলে | সৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। সৃষ্টি ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখে ]
সৃষ্টি : [সমীরের দিকে তাকিয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার ভঙ্গিতে ] আচ্ছা, মোহিনী কোথায় ? [সমীর উত্তর দেয় না, সৃষ্টি এগিয়ে যায় ..] এই যে শুনছেন, মোহিনী কোথায় ?
সমীর : [ বিরক্তির সাথে ] আরে!! মোহিনীর খবর আমি কি করে জানব ?
সৃষ্টি : ওহ, তাহলে, এই ব্যাপার..! বিরহ যন্ত্রণার ব্যবস্থা…! Torture by separation…! কিন্ত এতে আমার কিছু যায় আসে না… [দর্শকের দিকে] আমার বান্ধবী মোহিনী - ওকে আমি খুব ভালবাসতাম, কিন্ত এখন আর আমি ওর বিরহে তেমন কাতর নই |
সমীর : মাপ করবেন, আমাকে এসব বলছেন কেন? আপনি আমাকে কি মনে করেছেন ?
সৃষ্টি : আপনি নরকের যমদূত - আপনি এদের পোষা জল্লাদ - তাই নয় কি ?
সমীর : [ প্রথমে চমকে উঠে, তারপর হাসিতে ফেটে পরে ] এটা ভালো বলেছেন .. পোষা জল্লাদ..! আপনি আমাকে দেখে ভাবলেন, আমি এখানকার পোষা জল্লাদ..! অত্যাচারী জল্লাদ…! [ হাসতে থাকে - হাসি থামিয়ে ..সৃষ্টির দিকে এগিয়ে আসে.. হাত বাড়ায় ] – না ম্যাডাম, আমি এখানকার পোষা জল্লাদ নই। আমি সমীর … আমি সাংবাদিক ছিলাম। আপনি সত্যি মনে করেন আমায় জল্লাদের মতো দেখতে ? আচ্ছা একজন জল্লাদকে, শুধু তার মুখ দেখে আপনি চিনে ফেলবেন ? মনে হচ্ছে এব্যাপারে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা আছে |
সৃষ্টি : [সমীরের বাড়ানো হাত অগ্রাহ্য করে ] খুনি জল্লাদের চোখে মুখে ভয় জড়িয়ে থাকে |
সমীর : [ হেসে ] ভয় জল্লাদের চোখে ? সে কাকে ভয় পাবে ? তাদের শিকার কে ?
সৃষ্টি : হাসুন… হাসুন - আমি জানি আমি কি বলছি …আমি দেখেছি খুনি জল্লাদের চোখ..আর দেখেছি সেই চোখে ভয়ের ছায়া |
সমীর : [ ভয় পায় - চারদিকে চেয়ে ] আমার চোখে কি ভয়ের ছায়া আছে ? আয়নায় একবার দেখতে পারলে ভালো হত | [ চারদিকে চেয়ে আয়না খোঁজে ]..একটা আয়না… আয়না… এখানে একটাও আয়না নেই !
সৃষ্টি : [চারদিকে চেয়ে আয়না খোঁজে ] সত্যি তো – এখানে একটাও আয়না নেই!… আমার কাছে একটা আয়না ছিল - সেটাও এরা নিয়ে নিয়েছে -
সমীর : [ দর্শকের দিকে এগিয়ে গিয়ে ] আয়নায় যদি নিজেকে দেখতে না পাই তাহলে - জানব কি করে - আমি কেমন মানুষ ?
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে এগিয়ে গিয়ে ] এ একটা অস্তিত্বের সংকট… আয়নায় যদি নিজেকে দেখতে না পাই - তাহলে - জানব কি করে, যে আমি সত্যি আছি - না কি নেই ?
সমীর : [ সৃষ্টির দিকে সান্ত্বনা দেবার ভঙ্গিতে] যাই হোক … আপনি ভয় পাবেন না। আমি একটুও ভয় পাচ্ছি না…!
সৃষ্টি : না আমি ভয় পাচ্ছি না। আচ্ছা আপনি কি সব সময়.. আমার সাথে এই ঘরে থাকবেন ? আপনার সাথে এক ঘরে থাকতে আমার অসুবিধা হচ্ছে। আপনি একটু বাইরে যান না ?
সমীর : সেটা সম্ভব নয় – এই ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করা..ভেতর থেকে খোলা যাবে না | আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
সৃষ্টি : [দরজার কাছে যায় – দরজা খোলার চেষ্টা করে – দরজা খলে না - প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ] উফ – অসম্ভব.. আপনার সাথে এক ঘরে অনন্ত কাল কাটাতে হবে...আপনার চোখের সামনে |
সমীর : আমি বুঝতে পারছি, আমার সাথে থাকতে আপনার ভালো লাগছে না.. সত্যি বলতে কি আমিও একটু একা থাকতে চাইছি … আমার জীবনের কিছু হিসেব মেলানোর আছে |
[সমীর চেয়ারে বসে ..হাতে মুখ ঢাকে… গভীর চিন্তায় মগ্ন... ]
[সৃষ্টি পায়চারী করতে থাকে ]
সমীর : [ উঠে সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যায় ] আচ্ছা, আপনি কি ভয় পাচ্ছেন ?
সৃষ্টি : এখন আর ভয় পেয়ে কি হবে ? লোকে তখনি ভয় পাই.. যখন ভবিষ্যতে ভালো কিছু হওয়ার আশা থাকে -
সমীর : [ হতাশ হয়ে ] কোনো আশা নেই বুঝি ? [ দর্শকের দিকে ] - “ওরে আশা নাই, আশা শুধু মিছে ছলনা
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে ] “ওরে ভাষা নাই, নাই বৃথা বসে ক্রন্দন”
সমীর : [ দর্শকের দিকে ] “ওরে গৃহ নাই, নাই ফুলশেজরচনা”
সৃষ্টি : [সমীরের দিকে ]...কিন্ত... এখনো তো নরক যন্ত্রণা শুরু হয় নি....[ দর্শকের দিকে ] পৃথিবীতে যত যন্ত্রণা পেয়েছি, এখানে তার থেকে বেশি কিছু যন্ত্রণা পাচ্ছি না … [সমীরের দিকে দিকে ] আচ্ছা আপনি কি জানেন, এখানে আমাদের সাথে কি কি ঘটতে চলেছে ?
সমীর : না – আমি-ও জানি না.. অপেক্ষা করা ছাড়া, আমাদের আর কোনো উপায় নেই |
[ সৃষ্টি পায়চারী করতে থাকে ]
[ সমীর চেয়ারে বসে ..হাতে মুখ ঢাকে… গভীর চিন্তায় মগ্ন হয় ...]
[ দরজা খুলে যায়, পরিচারকের সাথে রোশনি ঘরে ঢোকে | রোশনি সমীরের দিকে তাকায় - সমীরের মুখ হাতে ঢাকা ]
পরিচারক : রোশনি জী – আইয়ে - ইয়ে হ্যায় আপকি রুম।
রোশনি : [ সমীরকে দেখে ভয় পেয়ে ]- নহি - নহি দেখনা মত – মুঝে মালুম হ্যায় উস হাথ কে নীচে তুমহারা কুচলা হুয়া মুখ হ্যায় -
[ সমীর মুখ থেকে হাত সরিয়ে তাকায় ]
রোশনি : [চমকে যায়] লেকিন আপ কোন হ্যায়? আপকো তো ম্যায় নহি পহচান্তী -
সমীর : [ওঠে – রোশনির দিকে যায় ] শোনো - তুমি কি বাংলা বোঝ ?
রোশনি : হাঁ - অউর – থোড়া থোড়া বলতেও পারি
সমীর : শোনো - আমাকে ভয় পেও না - আমি এখানকার পোষা জল্লাদ নই.. তোমার মতো আমিও পৃথিবী থেকে এখানে এসেছি কিছুদিন হল |
রোশনি : [ সমীরকে ] না না – আমি আপনাকে জল্লাদ ভাবি নি। আমি ভাবলাম কেউ আমার সাথে মজাক করছে। [পরিচারককে] আর কেউ আসছে ?
পরিচারক : না আর কেউ আসছে না |
রোশনি : তাহলে -আমরা তিন জন এই জাহান্নমে হামেসার জন্য কয়েদ- একটু জান-পহচান করে নেয়া ভালো.. [সমীরকে] নমস্তে - আমার নাম রোশনি ..
[সমীর নমস্কার করে এবং নিজের পরিচয় দিতে এগিয়ে আসে.. ]
সৃষ্টি : [ সৃষ্টি এগিয়ে সমীরের সামনে চলে আসে.. সমীর কথা বলার আগে ] - বা তোমার নামটা খুব সুন্দর.. রোশনি – তুমি এখানে একঝলক আলো নিয়ে এলে – [রোশনির হাত ধরে] আমি সৃষ্টি। তোমার সাথে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো ..
[রোশনি সৃষ্টির হাত ছাড়িয়ে সমীরের দিকে এগিয়ে যায়]
সমীর : নমস্কার.. আমি সমীর ..
রোশনি : নমস্তে..
পরিচারক : তাহলে আমি এখন আসি |
সৃষ্টি : হাঁ আপনি এখন আসতে পারেন.. দরকার হলে আপনাকে ডাকব |
[পরিচারক বেরিয়ে যায় | দরজা বন্ধ হয়ে যায় ]
সৃষ্টি : [রোশনির দিকে এগিয়ে এসে প্রেম নিবেদনের ভঙ্গীতে] রোশনি - তুমি খুব সুন্দরী ! এখানে ফুল থাকলে তোমাকে আমি ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা করতাম…
রোশনি : ফুল...... ফুল আমি খুব ভালবাসি ! - লেকিন এখানে কত গর্মি । এখানে ফুল টিকবে না। আপনারা কি বলেন? আপনারা তো এখানে বহুত দিন আছেন ?
সৃষ্টি : হাঁ.. তা কিছুদিন হল - এখানে সময়ের হিসেব থাকে না.. তবে পৃথিবীর হিসেবে অনেক দিন হল।
সমীর : আচ্ছা রোশনি, তুমি এখানে কি ভাবে এলে ? কি ভাবে মারা গেছিলে তুমি ?
রোশনি : আমি পানীতে ডুবে খুদকুশী করেছিলাম – [ দর্শকের দিকে এগিয়ে যায় ..যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] ওই দেখুন - নদীর কিনারে - আমার লাশ
[আবহ সঙ্গীত ]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
সমীর [দর্শকের দিকে এগিয়ে যায় ..যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায়] :
ঝরে পড়া
কুয়াশার রাতে
সৃষ্টি [দর্শকের দিকে এগিয়ে যায় ..যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] :
নিশ্চুপ শুয়ে আছে
মাছেদের সাথে
সমীর : জলে ডুবে মরে গেলো- দিনের শেষ আলো –
সৃষ্টি : তারপর শুধু অন্ধকার –
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
রোশনি : অউর অ্যায়সেই বুঝ-গয়ী রোশনি
সৃষ্টি : [রোশনি র কাছে এগিয়ে যায় – হাত ধরে – প্রেমিকার ভঙ্গীতে] আহা! – তুমি এত সুন্দর একটা ফুটফুটে মেয়ে, নিশ্চয়ই তোমার খুব কষ্ট হয়েছিল - তুমি আমার কাছে এসো – আমি তোমাকে আদর করে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবো !!
রোশনি : [সৃষ্টির থেকে দূরে সরে যায় - সমীরের দিকে এগিয়ে যায়] অউর সমীরজী – আপনার কিসসা কি ছিল ?
সমীর : আখলাকের বন্ধুরা আমাকে মেরেছিল
সৃষ্টি : আখলাক কে ?
সমীর : মহম্মদ আখলাক - ছিল আমার বন্ধু-
রোশনি : আপনাকে মারার বজাহ কি ছিল?
সমীর : আখলাককে আমি বাঁচাতে পারি নি। ওর বন্ধুরা আমাকে ভুল বুঝেছিল [ দর্শকের দিকে এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] – ওই দেখো – ওরা আমাকে মারছে গাছের ডালে ফাঁশিতে ঝুলিয়ে
[আবহ সঙ্গীত]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ]
গাছের ডালে - দড়ির ফাঁসে – ঝুলন্ত শরীর
রোশনি : [ দর্শকের দিকে এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] টুটি হুই গর্দন – বাহার নিকলি হুই আঁখে - থোড়েসে খুলে হুই হোঁঠ
সৃষ্টি: [ দর্শকের দিকে .. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] উঁকি মারছে ফুলে ওঠা জিভ - গড়িয়ে পড়া লালার দাগ
রোশনি : দড়ির ফাঁসে মরে গেলো মুক্ত বাতাস –
সৃষ্টি: এখন শুধু দমবন্ধ করা অন্ধকার
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
রোশনি : [সমীরের দিকে এগিয়ে যায় – হাত ধরে - প্রেমিকার ভঙ্গীতে] - আহা – আপনার বহুত দর্দ হয়েছিল – আপনি আমার কাছে আসুন –আমি আপনার সব দর্দ দূর করে দেবো!!
সমীর : [রোশনিকে] থাক সেসব কথা। [রোশনির থেকে দূরে সরে যায় - সৃষ্টির দিকে] সৃষ্টি, আপনার.. আপনার কি হয়েছিল ?
সৃষ্টি : আমার মৃত্যু হয় কিছু শুয়োরের হাতে [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] ওই দেখো পড়ে আছে আমার - লুণ্ঠিত, রক্তাক্ত দেহ –
[আবহ সঙ্গীত শুরু]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
সমীর [ দর্শকের দিকে এগিয়ে যায়..যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায়]:
কালিমালিপ্ত হয়ে
শুয়ে আছে বিছানায়
সৃষ্টি: [ দর্শকের দিকে এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায়]
জ্যোৎস্না গায়ে
ছিন্নভিন্ন আকাঙ্ক্ষায়
রোশনি [ দর্শকের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায়]: দেখো ক্যায়সে বিখরী হুই হ্যায় - সারি কায়নাত - আপকি প্যায়রো কে নীচে
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ২ – অন্ধকার হয়ে যায়। জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
সমীর [ দর্শকের দিকে]: জানেন পৃথিবীকে বলে সর্বংসহা – কারণ, এভাবে সৃষ্টির শুরুর থেকেই, মানুষের হাতে নির্যাতন সহ্য করছে পৃথিবী
সৃষ্টি: না , আমি সর্বংসহা নই। আমি মুখ বুজে সহ্য করি নি – আমি শেষ পর্যন্ত লড়েছি।
রোশনি : [ দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ] লেকিন, আমি ভাবছি, এরা আমাদের একসাথে কেন রেখেছে? আমাদের মধ্যে কি কোনও রিস্তা আছে ?
সৃষ্টি : [ একটু হেসে ] তোমার কি মনে হয় ?
রোশনি : আমি আপনাদের দেখছি আর ভাবছি - কিতনা আজীব হ্যায় আপনাদের সাথে আমার কোনো রিস্তা নেই – ফিরভি আপনাদের সাথে এখানে থাকতে হবে । আমি ভাবছি কোনো পুরানো দোস্তের সাথে মুলাকাত হবে -
সমীর : [ ব্যঙ্গ করে ] নিশ্চয়ই.. তোমার সেই সুন্দর রাজকুমার, যার মুখটা থেঁতলে গেছে ?
রোশনি : হাঁ ও হোতা তো আচ্ছা হোতা.. ও আমাকে কত পেয়ার করত। লেকিন, আমরা এখানে এক সাথ কেন ? এটার মতলব কি ?
সমীর : আমার মনে হয় এটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়..
সৃষ্টি : [ব্যঙ্গ করে হেসে ] তাই বুঝি ? কাকতালীয়…
সমীর : আপনি হাসছেন কেন ?
সৃষ্টি : কারণ আপনার ছেলেমানুষি আমাকে অবাক করছে…আপনার কি মনে হয় এখানে সব অকারণে হচ্ছে কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই ? এ সবই আগে থেকে ঠিক করা …এটা একটা ফাঁদ ...যন্ত্রণার ফাঁদ !
রোশনি : [ দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ] লেকিন আমরা জাহান্নমে কেন? মনে হচ্ছে কিছু গলতি হয়েছে
সৃষ্টি : [ একটু হেসে ] তোমার মনে হয় এদের হিসেবে গলতি হয় ?
রোশনি : শায়দ - এটা জহন্নম নয় ..
সৃষ্টি : মানে কি বলতে চাইছ ?
রোশনি : শায়দ – এখনও বিচার শুরু হয়নি
সমীর : মানে – তুমি বলছ - আমরা এখানে বিচারের অপেক্ষা করছি
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায় ]আপনারা জানেন - ভারতের কত লোগ বিচারের ইন্তেজারে জেল বন্দী আছে?
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায় ] ভারতবর্ষে প্রায় তিন লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার লোক পুলিশ হেফাজতে বন্দী... তার মধ্যে দুই লক্ষ তিরিশ হাজার লোক বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে এবং এখনো দোষী সাব্যস্ত হয় নি
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায় ] অর্থাৎ প্রতি তিন জন বিচারাধীন বন্দীর মধ্যে দুই জন সম্ভাব্য নির্দোষ লোক বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে..
সমীর : [ দর্শকের দিকে ] আমরা বিচারের অপেক্ষায় বন্দী অনন্তকাল ধরে.. We are under-trial for eternity
সৃষ্টি : [ একটু হেসে দুজনের দিকে ] আপনারা ভুল করছেন- আমাদের বিচার শেষ হয়ে গেছে এবং আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি - তাই আমরা আজ নরকে..
রোশনি : লেকিন - কিছু গলতী হয়েছে .. আমি এই জহন্নমে কেন ? আমি তো কোনো গুনাহ করি নি -
সমীর : আমাদের জানতেই হবে আমরা নরকে কেন [একটু ভাবে]– কিন্ত কি ভাবে জানব ?
সৃষ্টি : আমরা যদি আমাদের সব গোপন পাপ স্বীকার করে নেই তবেই আমরা সেটা জানতে পারব !
সমীর : কি স্বীকার করব ?
সৃষ্টি : আমাদের সব গোপন পাপ
সমীর : রোশনি …
রোশনি : হাঁ
সৃষ্টি : তুমি কি পাপ করেছিলে ? তোমাকে কেন নরকে পাঠিয়েছে ?
রোশনি : সেটাই তো বুঝতে পারছি না... আমার মনে হচ্ছে এদের কিছু গলতি হয়েছে [ সৃষ্টিকে ] আপনি হাসছেন কেন ?
সৃষ্টি : রোশনি, তোমার কি আর কিছু বলার নেই ?
রোশনি : [ সমীরকে ] আপনি কিছু বলছেন না কেন ? যদি আমার ব্যাপারে এরা গলতি করতে পারে তাহলে হয়ত আপনার ব্যাপারেও এরা গলতি করেছে ! আমার মনে হয়, এরা গলতি করে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে ..
সমীর : এসব ব্যাপারে ভুল হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। ভারতবর্ষে কত নিরপরাধ লোক শুধু মাত্র বড় উকিল করার টাকা নাই বলে, ভুল তদন্তে, ভুল বিচারে, দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা কাটছে।
সৃষ্টি : রোশনি , ভয় পেয়ো না – বল তোমার কি হয়েছিল -
রোশনি : আর আমি কি বলব ? আমার কিছুই লুকানোর নেই । আমরা খুব গরিব ছিলাম - আমি যখন খুব ছোট, তখন আমার বাবা মা, ভুখ বরদাস্ত না করতে পেরে, আমার শাদী এক বুড়োর সাথে করিয়ে দেয়-[ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] ওই দেখুন আমার দাস্তান …
[আবহ সঙ্গীত শুরু]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
[জোন ২ – জ্যোৎস্নার আলো – একটি ছোট মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলা করছে। ]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
তখন ওর
পুতুলের অভিসার
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
হয়তো
জীয়ন কাঠির সন্ধানে
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
কোনও এক
কুঁচ-বরণ রাজকন্যে
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে... যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
জ্যাইসে কি
ঘোড়েপে সওয়ার
[জোন ২ – জ্যোৎস্নার আলো – একটি ছোট মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলা করছে। মেয়েটির বাবা এবং আরও কিছু লোক মেয়েটির বিয়ে দেয় একটি বুড়োর সাথে । মেয়েটির বুড়ো স্বামী মেয়েটির সাথে জোর করে দৈহিক মিলনের চেষ্টা করে। মেয়েটি কান্নাকাটি করে]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সৃষ্টি : ভারতীয় আইন অনুসারে বাল্যবিবাহ অপরাধ
সমীর : দূর - সেই আইনকে কলা দেখিয়ে – প্রচুর মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে -
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
তখন ওর
সাত-পাকের ঘূর্ণাবর্ত
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
কিছু
অর্থহীন রক্তপাত
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
কুছ
অন্তহীন বরসাত
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
কিছু
যুগল-শয্যার একাকীত্ব
সৃষ্টি : ভারতীয় আইন অনুসারে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়
সমীর : আর তাই বারে বারে ধর্ষিতা হয় সূর্যের প্রথম রোশনি –
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ২ – অন্ধকার হয়ে যায়। জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
রোশনি : [ দর্শকের দিকে ] এটাই আমার কাহানী! কোনও সন্দেহ নেই যে, আমার গলতি ছিল একজন বুড়ো আদমীর সাথে শাদি করা ... [ অরুণেশ্বর কে ] লেকিন আপনি কি এটাকে গুনাহ বলবেন ?
সমীর : নিশ্চয়ই না ! [ একটু থেমে ] এখন তুমি বল আদর্শের জন্য লড়াই করা কি পাপ ?
রোশনি : বিল্কুল নেহি ...
সমীর : আমি একটা যুক্তিবাদী পত্রিকা চালাতাম .. আমাদের আদর্শ ছিল মুক্ত মন, মুক্ত চিন্তা, মুক্ত বুদ্ধি, মুক্ত আকাশ, মুক্ত বাতাস, মুক্ত পৃথিবী
রোশনি : বহুত আচ্ছা -
সমীর : আমি তাতে অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখতাম... যে সব ভণ্ড সাধু-সন্ন্যাসীরা- সরল, সাধা-সিধে মানুষকে ঠকানোর ব্যবসা করত, তাঁদের মুখোশ খুলে ধরতাম .. সেটা কি পাপ ?
রোশনি : বিল্কুল নেহি -
সমীর : আমি পর্দার আড়াল থেকে বের করে নিয়ে আসতাম দুর্নীতির লুকিয়ে থাকা নোংরা মুখ – সেটা কি অন্যায় ?
রোশনি : বিল্কুল নেহি.. আপনি তো একজন হিরো ..
সৃষ্টি : [ ব্যঙ্গ করে ] আচ্ছা হিরো! .. তা হিরো বাবু আপনার আর কে কে ছিল ?
সমীর : আমি, আমার বউকে উদ্ধার করেছিলাম বেশ্যা-পল্লীর নরক থেকে
রোশনি : তাহলেই দেখুন আপনি কত ভালো ভালো কাজ করেছেন !! এরা নিশ্চয়ই আমাদের গলতি করে এখানে নিয়ে এসেছে
সৃষ্টি : [ ব্যঙ্গ করে ] আচ্ছা, তাই বুঝি ? [ একটু থেমে ] আচ্ছা, এই নাটকের কোনও মানে হয় ? আপনারা কাকে বোকা বানাচ্ছেন ? আমাদের পাপেই আমরা আজ নরকে এবং সেটা কোনও ভুল নয় !
রোশনি : [ রেগে গিয়ে ] আপনি চুপ করুন!
সৃষ্টি : [ রোশনি কে ] এই যে তুমি সুন্দরী অবলা কন্যা [ সমীরকে ] আর আপনি মহান সাংবাদিক .. আপনারা যতই লোকানোর চেষ্টা করুন.. আপনাদের পাপ তাতে কিছু কমবে না
সমীর : [ রেগে গিয়ে ..সৃষ্টির দিকে এগিয়ে এসে - যেন একটু হলেই মারে ] আপনি চুপ করবেন !
সৃষ্টি : [ নির্ভয়ে সমীরের মুখোমুখি এগিয়ে যায় তর্ক করতে] আপনি চুপ করুন -
সমীর : [একটু থমকে যায়] এক মিনিট - আমি এতক্ষণে বুঝতে পারছি এরা কেন আমাদের একসাথে রেখেছে !
সৃষ্টি : আমি আপনাকে সাবধান করছি .. আপনি কিছু বলার আগে দুবার ভেবে বলবেন
সমীর : এটা একটা ফাঁদ ...যন্ত্রণার ফাঁদ -
রোশনি : লেকিন জল্লাদ কহাঁ হ্যায় ? কে যন্ত্রণা দেবে আমাদের ?
সমীর : বুঝতে পারছো না ? আমরাই আমাদেরকে যন্ত্রণা দেব ! অনন্তকাল ধরে !
সৃষ্টি : [হেসে ওঠে] স্ব-পরিবেশিত যন্ত্রণার বুফে সার্ভিস !
[ সবাই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে .. একটু নীরবতা ]
রোশনি : [ দর্শকের দিকে ] হম আপনে আপকো কষ্ট পহুচায়েঙ্গে – হম এক দুসরেকো কষ্ট পহুচায়েঙ্গে !!
সৃষ্টি: [ দর্শকের দিকে ] We will serve our-self our portion of pain for eternity..!
রোশনি : নহী ! আমি আপনাদের কষ্ট দেব না !
সমীর: আমিও আপনাদের কোনও ক্ষতি চাই না ! আমাদের বাঁচার একটা উপায় আছে - আমরা সবাই চুপ করে নিজের নিজের জায়গায় বসি - কেউ কোনও কথা বলবে না | খুব একটা শক্ত কাজ নয়… আমাদের সামনে অনন্তকাল সময় আছে… আমরা চুপ করে নিজেদের জীবনের হিসেব মেলানোয় মন দেই…
রোশনি : আমাকেও চুপ করে থাকতে হবে?
সমীর: হ্যাঁ ! আমরা সবাই চুপ করে আমাদের মুক্তির কথা ভাবব… কেউ কোনও কথা বলব না…
সৃষ্টি : আমি রাজি…
রোশনি : ম্যায়… [ একটু ইতস্তত করে ] ঠিক হ্যায়…
সমীর : খুব ভালো | [ নিজের চেয়ার-এ বসে... গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে... ]
[ সৃষ্টি নিজের চেয়ার-এ বসে .. গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে.. ]
রোশনি : [অস্থির হয়ে, এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখে... খানিক চুপ থাকার চেষ্টা করে... তার পর একটা গান গাইতে থাকে… ]
”দিল হ্যায় ছোটা সা
ছোটিসী আশা”
রোশনি : [ গান গাইতে গাইতে হঠাৎ গান বন্ধ করে, সমীরের দিকে তাকায়.. হাত দিয়ে নিজেকে হাওয়া করার ভঙ্গিমা করতে করতে - আনমনে বলে ] এই গরমে আমার মেকআপ খারাপ হয়ে যাছে... আমার লিপস্টিক-টা কই ?
[ রোশনি পার্স থেকে লিপস্টিক বের করে.. লিপস্টিকের ঢাকনা খোলে ..বন্ধ করে... লিপস্টিক লাগানোর আগে আয়না খোঁজার চেষ্টা করে ]
রোশনি : [ সমীরের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে ] সমিরজী - আচ্ছা আপনার কাছে আয়না আছে ? [অরুণেশ্বর উত্তর দেয় না ] আপনাকে উত্তর দিতে হবে না ...শুধু একটা আয়না দিলে-ই চলবে [সমীর উত্তর দেয় না ] !
সৃষ্টি : [ রোশনি র কাছে এগিয়ে এসে ] না এখানে আয়না নেই। আমার কাছে একটা ছিল, কিন্ত সেটাও এরা নিয়ে নিয়েছে -
রোশনি : উফ !! কিতনি থকান হো রহি হ্যায়! [ চোখ বন্ধ করে ..হেলে পড়ে যেন অজ্ঞান হয়ে যাবে ]
সৃষ্টি : [ তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে রোশনি কে ধরে .. একটু আদর করে, জিজ্ঞেস করে ] রোশনি, তোমার কি হয়েছে ?
রোশনি : [ চোখ খোলে ] ইয়ে বহুত আজীব হ্যায় ! আয়না নেই ! এখানে একটাও আয়না নেই ! আমি যখন নিজেকে আয়নায় দেখতে পাই না …তখন বুঝতে পারি না আমি সত্যি আছি কি না !
সৃষ্টি : এই তো তুমি – এসো আমার কাছে এসো -
রোশনি : [ দুরে দর্শকের/পৃথিবীর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায়..] ওই দেখুন আমার শোবার ঘরে চারোতরফ আইনা – আয়নাগুলোকে আমি দেখতে পাচ্ছি, কিন্ত আয়নাগুলো আমায় দেখতে পাছে না - উস দর্পণমে কেবল মেরে শুনে কমরেকি পরছাই ! উস পরছাই মে সব কুছ হ্যায় – ব্যস ম্যায় নেহি হু
সৃষ্টি : এই তো তুমি – এসো আমার কাছে এসো – আমি তোমার আয়না
রোশনি : [ সৃষ্টির দিকে ফেরে ] দেখুন আমার লিপস্টিক-টা কেমন গন্দা হয়ে গেছে ! আয়না ছাড়া আমি কি ভাবে এটাকে ঠিক করব ?
সৃষ্টি : [ রোশনি র হাত ধরে - একটু আদর করে - কাছে টানে ] এস আমার কাছে এস.. মনে কর আমি তোমার আয়না… আমার চোখে রাখো চোখ.. দেখো আমার চোখের আয়নায়…
রোশনি : [ সমীরকে দেখিয়ে ] লেকিন সমীরজী? উনি কি ভাববেন ? [সমীরের দিকে তাকায়- যেন সাহায্য চাইছে ] সমীরজী, আপনি নিশ্চয়ই খুব পরেশান হচ্ছেন ?
সৃষ্টি : [ আদর করে – প্রেম নিবেদনের ভঙ্গীতে ] ওনার কথা ছেড়ে দাও… মনে কর এখানে আমরা শুধু দুজন…মনে কর আমি তোমার আয়না … আমার প্রেমের আয়নায় উন্মুক্ত কর নিজেকে …প্রকাশ কর তোমার গোপন ইচ্ছা …
রোশনি : আমার লিপস্টিক টা ঠিক আছে ?
সৃষ্টি : [হতাশ হয়ে] আমি তোমাকে প্রেমের কথা বলছি – আর তুমি সামান্য লিপস্টিক নিয়ে ভাবছ –
রোশনি : বলিয়ে না - আমার লিপস্টিক টা ঠিক আছে ?
সৃষ্টি : না একটু ধেপ্সে গেছে -
রোশনি : মুঝে ইসি বাত কা ডর থা ! [সমীরের দিকে তাকায় ] তবু ভালো .. সমীরজী কিছু দেখেন নাই… আর একবার চেষ্টা করি …
সৃষ্টি : এস - আমি তোমাকে সাহায্য করছি [ হাত ধরে লিপস্টিক লাগাতে সাহায্য করে ] এবার ঠিক আছে…
রোশনি : এখন আমাকে ঠিক লাগছে ?
সৃষ্টি : তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে !
রোশনি : লেকিন আমি আপনার পছন্দের উপর কি ভাবে ভরসা করতে পারি ?
সৃষ্টি : আমার উপর ভরসা করা ছাড়া, তোমার আর কোনও উপায় নেই | তুমি কেমন – সেটা জানতে, তোমাকে আমার উপর-ই ভরসা করতে হবে |
রোশনি : পতা নেহি। আপনাকে আমার ভয় লাগছে.. আপনি আমার আয়নার মতো ভরোসেমন্দ নন – আমার আয়না আমার বড় বফাদার ছিল
সৃষ্টি : মনে কর আমি পাখি ধরার আয়না ...আর আমার প্রেমের আয়নায়, তুমি অনন্তকালের কয়েদি … পালানোর উপায় নেই তোমার …
রোশনি : [ সমীরের দিকে তাকায় ] কাশ সমীরজী একবার দেখতেন!
সৃষ্টি : [ হতাশ হয়ে ] আচ্ছা বুঝেছি! তোমার একজন পুরুষ দরকার..[ সমীরের দিকে তাকায় ] সমীর বাবু, আপনি জিতে গেছেন - এদিকে তাকান…আপনি কিছু না শোনার ভান করবেন না, আমি জানি আপনি সব শুনছেন -
সমীর : [বিরক্ত হয়ে] আমি কান চেপে বসে আছি ..কিন্ত কোনো শব্দ আটকাতে পারছি না .. মাথার ভিতর তীব্র কোলাহল দামামার মতো বেজে চলেছে... আপনাদের প্রতিটি কথা, এমনকি আপনাদের প্রতিটি চিন্তাও আমার মাথার ভিতরে চিৎকার করছে....আমাকে একটু শান্তি তে থাকতে দিন… আমার আর কিছু চাই না !
সৃষ্টি : সমীর বাবু, আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না ! আপনাকেও আমার পছন্দ নয় ! কিন্ত এই মেয়েটি ? একে তো আপনার বেশ পছন্দ - তাই না ? আপনি, আমার চোখকে লুকোতে পারবেন না !
সমীর : আমাকে দয়া করুন.. আমাকে একটু শান্তি দিন ! [ দর্শকের/পৃথিবীর দিকে এগিয়ে - তাকিয়ে ] ওই শুনুন - পৃথিবীতে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে ..আখলাকের বন্ধুরা বলছে - আমি কাপুরুষ, আমি বিশ্বাসঘাতক … কিন্ত বিশ্বাস করুন.. সেটা ঠিক নয়.. ওরা আমাকে ভুল বুঝছে..
রোশনি : [ সৃষ্টিকে দেখিয়ে ] এই মুসীবতের জন্য উনি দায়ী.. আমি ওনার কাছে কিছুই চাই নি.. উনিই আমাকে কাছে ডাকলেন..দিতে চাইলেন…ওনার চোখের আয়না
সৃষ্টি : সে তো তুমি বলবেই... আর তুমি যে তখন থেকে ওনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য না-না রকম কায়দা করে যাচ্ছ…
সমীর : আপনারা দুজনেই পাগল হয়ে গেছেন ! বুঝতে পারছেন না এই ঝগড়া আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? এটা একটা যন্ত্রণার ফাঁদ ! … দোহাই একটু চুপ করুন.. চুপ করে নিজের নিজের জায়গায় বসুন .. আর কেউ কোনও কথা বলবেন না, এমনকি কেউ কারুর দিকে তাকাবেন না.. ভুলে যান যে এখানে অন্য কেউ আছে…
[ সবাই নিজের নিজের চেয়ারে বসে… ..ভাবতে থাকে.. ]
সৃষ্টি : [দর্শকের দিকে এগিয়ে যায় ].. আপনাদের সবার উপস্থিতি ভুলে যাব ! ..কি অসম্ভব ব্যাপার..! আমি চোখ বন্ধ করেও আপনাদের উপস্থিতি অনুভব করছি আমার প্রতিটি রোমকূপে…
সমীর: [ ওঠে.. দর্শকের দিকে এগিয়ে যায় ].. আপনাদের নীরবতা আমার মাথার ভিতর সমুদ্রের গর্জনের মত প্রকট…
সৃষ্টি: [দর্শকের দিকে].. আমি কান বন্ধ করেও শুনতে পাচ্ছি..এখানকার প্রতিটি নীরব কোলাহল…
রোশনি : [দর্শকের দিকে].. আপনাদের মনের প্রতিটি কথা আমার মাথার ভেতরে আঘাত করছে সবসময়…
সমীর : [দর্শকের দিকে].. আপনরা কথা বলা বন্ধ রেখেছেন… কিন্ত আপনারা কি আপনাদের চিন্তা-ভাবনা গুলো বন্ধ রাখতে পারছেন ?
রোশনি : [দর্শকের দিকে] আপনি – হ্যাঁ হ্যাঁ - আপনি – আপনি- আপনারা ভাবছেন রোশনি কেমন ছিল? রোশনির গুনহা কি ছিল ?
সৃষ্টি: [দর্শকের দিকে] আপনারা মনে মনে আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে – আমার বিচার করে চলেছেন।
সমীর : [দর্শকের দিকে ]
আপনাদের মনের
ময়না টেবিলে
শানিত হচ্ছে
নখ-দাঁত-স্কাল্পেল্
সৃষ্টি: [দর্শকের দিকে ]
উল্লাসিত বিচার সভায়
আপনারা ঘোষণা করছেন
আমাদের অনন্ত নরক যন্ত্রণা
রোশনি : [দর্শকের দিকে ] আমি আর বরদস্ত করতে পারছি না – আমার শান্তি চাই – আপনারা চুপ করুন।
সৃষ্টি : আমাদের বাঁচার একটা উপায় আছে - আমাদের সত্যির মুখোমুখি দাড়াতে হবে - যদি আমরা কোনও কিছু না লুকিয়ে, আমাদের সব পাপ স্বীকার করে নেই, তবেই আমাদের মুক্তি …
[আবহ সঙ্গীত শুরু]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
[জোন ২ – সমীর এর দৈনন্দিন জীবন – সমীর রাত করে ঘরে ফিরছে। মদ্যপ। সাথে বান্ধবী। সমীর বান্ধবীর সাথে ফুর্তি করছে। বউ অবহেলিত হয়ে চুপ করে বসে থাকে।]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সমীর : আমি জানি আমি কেন নরকে এসেছি… আমি আমার স্ত্রীর উপর অত্যাচার করেছি - আমি দিনের পর দিন আমি আমার স্ত্রীকে অবহেলা করেছি.. রাতের পর রাত আমি মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছি... সে আমার জন্য রাত জেগে বসে থেকেছে…
রোশনি : লেকিন কিঁউ ?
সমীর : আমি আমার বৌকে বেশ্যা-পল্লীর নরক থেকে উদ্ধার করেছিলাম – কিন্ত সেটা শুধুই ছিল আমার মহান হবার সখ। সে ছিল আমার মহানুভবতার একটা ট্রফি।
সৃষ্টি : কেন আপনি তাকে ভালবাসতেন না ?
সমীর : জানি না, হয়ত বাসতাম অথবা হয়ত বাসতাম না – দয়া করতাম - সে আমায় শ্রদ্ধা করত - হয়ত ভালো-ও-বাসত - কিন্ত আমাদের মধ্যে কোনও শারীরিক সম্পর্ক ছিল না.. আমার এক বান্ধবী ছিল..
সৃষ্টি : আপনি একটা শুয়োর …!
সমীর : হাঁ শুয়োর - কিন্ত সবার অত্যন্ত প্রিয় শুয়োর.. এছাড়া আমার নরকে আসার আর কি কারণ থাকতে পারে ? হ্যাঁ, আরও একটা কারণ মনে পরেছে ...
রোশনি : অউর ভি কুছ হ্যায় ?
[জোন ২ – সমীর এর জীবন – আখলাকের বাড়িতে ইদের তেওহার। সমীর এবং আখলাকের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেছে। এমন সময় – কিছু হিন্দুদের পোশাক পরা গুণ্ডা, গরুর মাংস খেয়েছে এই সন্দেহে আখলাককে আক্রমণ করে এবং মেরে ফেলে ]
সমীর : সেদিন আখলাকের বাড়িতে ইদের তেওহারে আমার নেমন্তন্ন ছিল। আমরা খুব আনন্দ করছিলাম। এমন সময় গরুর মাংস খাওয়া হচ্ছে- এই সন্দেহে- কিছু শুয়োর আমাদের আক্রমণ করে। এবং আখলাককে পিটিয়ে মেরে ফেলে
সৃষ্টি : তারপর ?
সমীর : আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম।
রোশনি : আপনি কি করেছিলেন ?
সমীর : আমি ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছিলাম এবং স্বেচ্ছায় গরুর মাংস খেয়েছিলাম
রোশনি : [অবাক হয়ে] - গরুর মাংস !!
সমীর : হ্যাঁ - গরুর মাংস ! আর গরুর মাংস খেলে যে নরক বাস হবে - সে তো ওরা [ দর্শকের দিকে দেখিয়ে ] আগেই বলেছিল…
রোশনি : মরে গেলো মুক্ত মন – মুক্ত বাতাস –
সৃষ্টি: বেঁচে থাকে শুধু - অনন্ত নরকবাস
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ২ – অন্ধকার হয়ে যায়। জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
রোশনি : [সমীরের কাছে যেয়ে] আহা- আপনার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আপনি আমার কাছে আসুন
সমীর : আমার কথা ছাড়ো- [ সৃষ্টি কে ] সৃষ্টি, এবার আপনার কথা বলুন -
সৃষ্টি : আমার কথা আর কি শুনবেন ..! আমি ছিলাম সেই রকম মেয়ে যাদের ওরা [ দর্শকের দিকে দেখিয়ে ] সবাই বলে নষ্ট মেয়ে ... ওদের বলে দেয়া - সতী সাবিত্রী আদর্শ নারীর পথে - আমি চলি নাই ...আমি সব বাধা নিষেধ না মেনে, নিজের শর্তে বাঁচতে চেয়েছিলাম …আমি যে আজ নরকে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই…[ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে.. আঙ্গুল তুলে দেখায় ] ওই দেখুন আমার গল্প…
[আবহ সঙ্গীত শুরু]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
[জোন ২ – সৃষ্টির দৈনন্দিন জীবন – পার্টি করছে। রাত করে ঘরে ফিরছে। মদ্যপ। সাথে বান্ধবী। ]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সমীর [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ] :
আকাশ বালিকার
উড়ান ছিল ওর
সৃষ্টি [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ] :
ছিল
পানপাত্রে টলোমলো
জীবনের আহুতি-
সমীর [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ] :
জেগেছিল অগোছালো
জ্যোৎস্না-গায়ে
রাত-ভোর
সৃষ্টি [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ] :
নীলাম্বরীতে নির্ভরতার
নাগরিক প্রতিশ্রতি
[জোন ২ – সৃষ্টির দৈনন্দিন জীবন – রুদ্রের বান্ধবী মোহিনীর সাথে প্রেম হয় সৃষ্টির। মোহিনী রুদ্র কে ছেড়ে চলে আসে সৃষ্টির সাথে। রুদ্র মারা যায় ]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সৃষ্টি : ওই দেখুন মোহিনীর সাথে আমার ভালোবাসার গল্প ..একটি পুরুষ এবং দুটি মেয়ের গল্প… কিছু মৃত মানুষের গল্প... আর কিছু শুয়োরের গল্প…
রোশনি : এক লড়কা অউর দো লেড়কী কী কাহানী ?
সৃষ্টি : হাঁ … রুদ্র, মোহিনী আর সৃষ্টি-র কাহানী ..
সমীর : রুদ্র আর মোহিনী ? … তাদের কি হয়েছিল?
সৃষ্টি : রুদ্র আর মোহিনী একে অন্যকে ভালোবাসতো– তারপর একদিন মোহিনীর জীবনে এলাম আমি ..আমি আর মোহিনী পরস্পরের প্রেমে পড়লাম
রোশনি : ফির ?
সৃষ্টি : মোহিনী রুদ্র কে ছেড়ে চলে এলো আমার সাথে… রুদ্র সেটা মেনে নিতে পারল না ..মানসিক ভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়ল.. তারপর একদিন, অন্যমনস্ক ভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে, একটা গাড়ির নিচে চাপা পড়ল...
সমীর : আর মোহিনী ?
সৃষ্টি : মোহিনীর সাথে আমার ভালোবাসা কিছু শুয়োরের ঠিক সহ্য হল না.. সেদিন রাতে আমি আর মোহিনী ঘরে ফিরছি এমন সময় কিছু শুয়োর আমাদের আক্রমণ করে … ওই দেখুন আমাদের ভালবাসার পরিণতি
[জোন ২ – মোহিনী আর সৃষ্টির ভালবাসার সংসার। এক রাতে কিছু লোক ওদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলে। ধর্ষকদের অত্যাচারের আওয়াজ, মেয়েদুটির চিৎকার। মেয়ে দুটির মৃত দেহ পড়ে থাকে ছিন্নভিন্ন হয়ে। ]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সমীর: [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
তার পরে
অন্ধকারে
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
ভিড় করতে হুয়ে
নাখুন অউর দাঁত
সৃষ্টি: [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
ঝরেছে লজ্জা-স্থানে
শানিত আঘাত
রোশনি: [ দর্শকের দিকে চেয়ে.... যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
বিখরে হুয়ে চাঁদ সিতারো
আসমানি তরানা
সমীর: [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
শোণিত দেহ-নদী
ইচ্ছের ডানা
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ] ওই দেখুন সৃষ্টি অউর মোহিনীর খুন সে লতপত শরীর
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.... যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
রিক্ত দেহ
রিক্ত মন
রক্তাক্ত রমণ
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
ছুঁয়েছে হিম হয়ে
উদাসী মরণ
রোশনি : [দর্শকের দিকে চেয়ে] ভারতীয় কানুন কী ধারা ৩৭৭ কে অনুসার -
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে ] সমকামিতা দণ্ডনীয় অপরাধ !
সৃষ্টি : [ শ্লেষের সাথে ] অবশ্য ওই শুয়োরগুলো আইন আর আদালত নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে, বিনা বিচারেই আমাদের শাস্তির ব্যবস্থা করল। কি বলেন – এতে আদালতের খানিক মূল্যবান সময় বেঁচে গেল…তাই না ?
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ২ – অন্ধকার হয়ে যায়। জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
সমীর : [সৃষ্টির কাছে যেয়ে] আপনার গল্পটা শুনে আমি খুব দুঃখিত । আমি কি আপনাকে কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারি ?
সৃষ্টি : না আপনার সাহায্যের কোন প্রয়োজন আমার নেই। [ রোশনি র দিকে ফিরে ] রোশনি এবার তোমার গল্প টা শুনি -
রোশনি : আমি তো আমার কাহানী বললাম! আমি তো বুঝতেই পারছি না আমি কেন নরকে এসেছি ?
সমীর : ঠিক আছে, আমি সাহায্য করছি.. সেই ছেলেটি কে?, যার মুখটা থেঁতলে গেছে সে কে ?
রোশনি : আপনি কি বলতে চান ?
সৃষ্টি : ঠিক-ই বুঝতে পেরেছ - সেই ছেলেটি, যার মুখ দেখতে তুমি ভয় পাচ্ছিলে ?
রোশনি : ও - ও লেড়কা – ও লেড়কা মেরা দোস্ত থা -
সমীর : তুমি তাকে ভয় পাচ্ছিলে কেন ?
রোশনি : ওটা আমার নিজি মামলা ।
সৃষ্টি : তুমি কি তাকে খুন করেছ ?
রোশনি : নেহি বিল্কুল নেহি – আপনি এমন আজীব বাত করছেন কেন ?
সমীর : তাহলে তাকে এমন ভয় পাচ্ছিলে কেন ?
সৃষ্টি : নিশ্চয়ই ওর মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী !
রোশনি : মুঝে একেলে রহেনে দিজিয়ে। আপনরা দুজন মিলে এত পুছতাছ করছেন কেন ? আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই [দৌড়ে দরজার কাছে যায় .. চিৎকার করে ] শুনিয়ে – জরা দরওয়াজা খোলিয়ে – ম্যায় ইহাঁ সে নিকালনা চাতি হু ।
সমীর : যেতে পারলে চলে যাও – দুর্ভাগ্যবশত আমরা সবাই এখানে বন্দী - আমাদের বেরোনোর উপায় নেই |
রোশনি : [ টেবিলের কাছে এসে ফোন-টা রিং করার চেষ্টা করে - ফোন বাজে না - দরজার কাছে যায় ] দরজাটা খুলুন - আমি এখান থেকে বেরোতে চাই - শুনিয়ে – জরা দরওয়াজা খোলিয়ে – ম্যায় ইহাঁ সে নিকালনা চাতি হু …[ দরজার আরও কাছে যেয়ে ..দরজা খোলার চেষ্টা করে .. দরজা খোলে না .. দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা মারতে থাকে ] শুনছেন …দরজাটা খুলুন - আমি এখান থেকে বেরোতে চাই [ সমীর ও সৃষ্টি হেসে ওঠে ] আপ দোনো বহুত বুরে ইনসান হো
সৃষ্টি : বাজে লোক-ই তো বটে ! এখন বলত তোমার গল্প টা কি ?
রোশনি : [ হাল ছেড়ে দেয়, দরজার কাছ থেকে ফিরে আসে - গোপন কথা স্বীকার করার ভঙ্গিতে ..] আমার বালীগ হওয়ার আগেই – আমার বুড়ো পতির মত হল – আর তারপর ওই লড়কার সাথে আমার পেয়ার হল – ওই দেখুন আমার পেয়ার কি দস্তান
[আবহ সঙ্গীত শুরু]
[জোন ১ – আলো কমে আসে।]
[জোন ২ – রোশনি এবং তার প্রেমিক প্রেম করছে
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সমীর : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
ওই যুবকের সাথে
ভেসেছে
অনন্ত জলে
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
ভেসেছে
সন্ধ্যাতারা-আকাশ
নাভিমূলে
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
চোখের মেঘে
বুঝি
সাহসী সময়
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
ভেসেছে
দুই কূলে
জন্ম পরিচয়
সমীর : [রোশনি কে] তারপর ?
রোশনি :[শ্লেষের সাথে]
ফির ম্যায়
দশ সাল কি বিধবা
উননিসভি সাল মে
গর্ভবতী হুই
[জোন ২ – রোশনি গর্ভবতী হয়। পাড়া, প্রতিবেশী সমাজ রোশনির উপর অত্যাচার শুরু করে]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সমীর : তারপর ?
[জোন ২ – পাড়া, প্রতিবেশী সমাজের অত্যাচারে রোশনি আত্মহত্যা করে জলে ডুবে। রোশনির প্রেমিকও আত্মহত্যা করে ছাত থেকে ঝাঁপিয়ে]
[একই সময়ে জোন ১ – কম আলোয়]
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
তারপর
সমাজের সম্মানের
মিথ্যা দ্বন্দ্বে
সমীর : [দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে - শ্লেষের সাথে ]
কিশোরী রক্ত ঝরে
অন্তরে অলিন্দে
সৃষ্টি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
সেদিন ছিল
এক ঝরে পড়া
কুয়াশার রাত
রোশনি : [ দর্শকের দিকে চেয়ে.. এগিয়ে যায়.. যেন দূরের কোনও ঘটনা দেখছে ]
শুন শান সি থি
ও কোহরে ভরী রাত
চুপকে সে শো গয়ী
মছলিও কি সাথ
[আবহ সঙ্গীত বন্ধ]
[জোন ২ – অন্ধকার হয়ে যায়। জোন ১ – আলোকিত হয়]
[জোন ১]
সৃষ্টি : [ রোশনি র হাত ধরে তাকে আদর করে] আহা... তুমি আমার কাছে এস..
সমীর : আর ওই যুবক-টি ?
রোশনি : আমার আর আমার পেটের বাচ্চার মত হল। উস্কি গম মে ও কুদ গয়া উপর সে- – ওর মুখটা থেঁতলে গিয়েছিল [ ফোঁপাতে থাকে.. চোখে জল আসে না ]..
সমীর : বৃথা চেষ্টা কাঁদার..এখানে কাঁদা যায় না… এখানে চোখে জল আসে না…
রোশনি : আমি আপনাদের নফরত করি
সৃষ্টি : [ রোশনি র হাত ধরে তাকে সান্ত্বনা দেয় ] রোশনি, তুমি আমার কাছে এস...[ সমীর কে ] এই যে মশাই, শুনানি শেষ, আপনার এখানে বিচারক হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই..
সমীর : আমি আপনাদের বিচার করার কে ? বরং, নিজেকে একটা আয়নায় দেখতে পেলে, জানতে পারতাম আমি নিজে কেমন মানুষ
সৃষ্টি : রোশনি, আমার উপর রাগ কর না
রোশনি : আপনি খুব খারাপ [সৃষ্টির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চেয়ারে বসে – দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে]
সৃষ্টি : রাগ কর না রোশনি ! এখন আমাদের আর কিছু লুকানোর নেই আমাদের গোপন ঘা গুলো সব সামনে চলে এসেছে | ..এখন আমরা সবাই নগ্ন হয়ে গেছি ! সমীর-বাবু, আপনি কি আমাদের পরিস্থিতি আগের থেকে কিছু ভালো বুঝছেন ?
সমীর : মনে হয় একটু একটু বুঝছি .. আমরা যদি একে অপরকে সাহায্য করি -
সৃষ্টি : আমার আপনার সাহায্য চাই না
সমীর : সৃষ্টি, এরা খুব চালাকি করে ফাঁদ পেতেছে -আমরা এখানে সবাই ফেঁসে আছি - এই মাকড়সার জালের মধ্যে .... এখানে একজনের আচরণ অন্যজনকে প্রভাবিত করবে ... একে অপরকে সাহায্য করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই |
সৃষ্টি : আপনি আমাকে কি সাহায্য করবেন ?
সমীর : এদের শয়তানি ফাঁদ থেকে বাঁচতে -
সৃষ্টি : পরিবর্তে আপনি কি চান ?
সমীর : আপনার সাহায্য.. বেশি কিছু চাই না - একটু মানবিকতা, একটু সহানুভূতি, একটু বিশ্বাস …
সৃষ্টি : কোনও লাভ নেই … আমি আপনাকে কোনও সাহায্য করতে পারব না..আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না [ রোশনি কে ] রোশনি , তুমি আমার কাছে এস – তোমার সব দুঃখ আমি ভুলিয়ে দেবো – জান, তোমাকে দেখতে অনেকটা মোহিনীর মত..
সমীর : আপনি কি বুঝতে পারছেন, যে ওই মেয়েটি আপনার ফাঁদ ? ওই আপনাকে যন্ত্রণা দেবে !
সৃষ্টি : আমি জানি ! হয়ত আপনিও একটা ফাঁদ..! এখানে আমরা সবাই এক একটা ফাঁদ..! হয়ত আমি-ও একটা ফাঁদ ওই মেয়েটির জন্য …
সমীর : [ সৃষ্টি র দিকে এগিয়ে যায় - কাঁধে হাত রাখে ] আমার কিন্ত আপনার জন্য করুণা হচ্ছে- আমার দিকে দেখুন আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি -
সৃষ্টি : [রেগে ..কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে দেয় ] হাত সরান.. আমি হাত মারা পছন্দ করি না - আর আপনার করুণা আপনার কাছেই রাখুন | মনে রাখবেন এখানে আপনার ও ফাঁদ পাতা আছে | আপনি নিজেকে বাঁচাবার কথা ভাবুন | [ একটু থেমে ] তবে আপনি যদি আমাকে আর এই বাচ্চা মেয়েটিকে শান্তিতে থাকতে দেন তাহলে আমি কথা দিছি আমি আপনার কোনও ক্ষতি করব না |
সমীর : [হতাশ হয়ে একটু তাকায়, তার পর কাঁধ ঝাঁকিয়ে..] ..আচ্ছা…ঠিক আছে -[ সৃষ্টির ও রোশনি র কাছ থেকে দূরে চলে যেতে থাকে ]
রোশনি : [ মাথা তোলে .. সমীরের হাত ধরে মিনতি করে] সমিরজী আপনি যাবেন না
সমীর : আমার কাছে কি চাও ?
রোশনি : [ মিনতি করে ] আমাকে মদদ করুন – আমি আমার পেয়ারকে মেরে ফেলেছি.. আমি আমার বাচ্চা মেরে ফেলেছি.. একটু পেয়ার পেলে আমার মুক্তি হবে
সমীর : [রোশনি র হাত সরিয়ে দিয়ে ..সৃষ্টিকে দেখিয়ে বলে] তুমি ওনার কাছে সাহায্য চাও -
সৃষ্টি : [ সৃষ্টি এগিয়ে এসে রোশনি কে আদর করে ] তুমি আমার কাছে এস … আমি তোমায় ভালবাসায় ভরিয়ে দেব..
রোশনি : [ সৃষ্টির হাত সরিয়ে দিয়ে ] আপনার পেয়ার – কেয়া অজীব বাত হ্যায় – আপনার পেয়ার আমি চাই না
সৃষ্টি : [রেগে] সমীর বাবু, আপনাকে এর জন্য ভুগতে হবে !
সমীর : [ কাঁধ ঝাঁকিয়ে রোশনি র দিকে এগিয়ে আসে ] তাহলে তোমার একজন পুরুষের ভালোবাসা দরকার !
রোশনি : যে কোনো আদমি নয় – শুধু আপনি !
সমীর : বাজে কথা বল না - যে কোনও পুরুষ হলেই তোমার চলবে ! যেহেতু আমি এখানে আছি - তাই আমাকে চাইছ | আমি কিন্ত যুবক নই ..
রোশনি : আপনি যেমনি হন, আমি আপনাকে পেয়ার করব
সৃষ্টি : [ রোশনি কে ] ঢলানি মেয়ে .. একটা ছেলে না ধরতে পারলে কি তোমার চলছে না ? তাও যদি একটা ভালো দেখতে যুবক হত ! এই জঘন্য লোকটাকে নিয়ে পরেছ !
রোশনি : [ সমীরকে আদর করে ] আপনি ওর কথা শুনবেন না – আপনি আমার কাছে আসুন -
সমীর : [ রোশনি কে ] আমি তোমায় সাবধান করে দিচ্ছি, আমি কিন্ত লোক ভালো নই
রোশনি : আপনি আমাকে পসন্দ করেন না ? কেয়া আপ মুঝে নেহি চাহতে ?
সমীর : না সেরকম নয় – তোমাকে আমি পছন্দ করি, হয়ত তোমাকে চাই-ও। কিন্ত আমি তোমাকে ভালবাসি না -
রোশনি : আমার আপনার দিল চাই না, মুঝে বস আপকি চাহত কি জরুরত হ্যায়। আপনি আমাকে লাড়-পেয়ার করবেন - আমার দর্দ কম করে দেবেন ।
সমীর : সেক্ষেত্রে [ কাঁধ ঝাঁকিয়ে রোশনি র দিকে এগিয়ে আসে ..রোশনি কে আদর করে ]
সৃষ্টি : আপনারা কি পাগল হলেন - আমি এখানে রয়েছি - আমার সামনেই..[ সমীরের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ] ওকে ছেড়ে দিন.. আপনার ওই নোংরা হাতে ওকে ধরবেন না !
সমীর : [ সৃষ্টিকে দুরে সরিয়ে দেয় ] সাবধান ! আমি কিন্ত লোক ভালো নই..
সৃষ্টি : কিন্ত আপনি আমায় কথা দিয়েছিলেন সাহায্য করবেন.. আপনি আপনার কথার খেলাফ করতে পারেন না !
সমীর : যখন আপনি আপনার কথা রাখেন নাই - তখন আমার কিসের দায় ? [ রোশনি র দিকে এগিয়ে যায় ] এস রোশনি .. আমায় তোমার হাত দাও.. [হাত ধরে আদর করতে করতে হঠাৎ থামিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে ]
রোশনি : কেয়া হুয়া ? [ সৃষ্টিকে দেখিয়ে ] আপনি ওর কথা শুনবেন না – আপনি আমায় পেয়ার করুন -
সমীর : না না সেটা নয়… ওই শোন [ দর্শকের দিকে দেখিয়ে ] আখলাকের বন্ধুরা বলছে আমি কাপুরুষ, আমি বিশ্বাসঘাতক … কিন্ত বিশ্বাস কর ওটা ঠিক কথা নয়.. ওরা আমায় ভুল বুঝছে …[ রোশনি কে আদর করতে করতে ] রোশনি তুমি কি আমায় বিশ্বাস কর ?
রোশনি : ক্যাইসা অজীব সওয়াল হ্যায় ? আপনি এখানে হামেশা আমার আঁখো কি সামনে থাকবেন, আপনাকে বেবজাহ শক করব কেন?
সমীর : [ একটু থেমে, হাত সরিয়ে নিয়ে ] আমি অন্য রকম বিশ্বাস-এর কথা বলছিলাম.. তুমি কি আমায় সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস করতে পার ?
রোশনি : কেয়া অজীব বাত। এখানে আমি – আমার সবকিছু - মেরা পুরা শরীর আপকো দেনে কি লিয়ে তৈয়ার হু – আর আপনি খামোখা আমার বিশ্বাস নিয়ে ভাবছেন- আমি কি য়কীন করি না করি তাতে কি ফর্ক পড়বে ?
সমীর : তুমি কি জান আমায় ফাঁসি দিয়েছিল আখলাকের বন্ধুরা
রোশনি : মালুম হ্যায়
সমীর : বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে - আখলাকের বন্ধুরা আমাকে আমাকে ফাঁসি দিয়েছিল -গাছের ডালে - দড়ির ফাঁসে
রোশনি : লেকিন কিউঁ?
সমীর : আখলাককে যারা মেরেছিল তাদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষী দেই নি..
রোশনি : কিউঁ?
সমীর : যে শুয়োর গুলো আখলাককে মেরেছিল তারা আমার বৌকে আটকে রেখেছিল -[ একটু থেমে ] কিন্ত তুমি কিছু বলছ না কেন ?
রোশনি : আমি কি বলব ? আমি কি করে বুঝব আপনি কি জবাব চাইছেন?
সৃষ্টি : তুমি বুঝতে পারছ না - কিন্ত আমি ঠিক-ই বুঝতে পারছি - উনি চান যে আমরা ওনাকে বলি উনি শুধু ওনার বৌকে বাঁচাতে ওই কাজ করেছিলেন.. উনি ভিতু বা বিশ্বাসঘাতক নন |
রোশনি : [ সমীরকে ] জরুর – আপনি আপনার জরুকে বাঁচাতে ওই কাজ করেছিলেন
সমীর : আচ্ছা রোশনি , আমি কি কাপুরুষ ? আমি কি বিশ্বাসঘাতক ?
রোশনি : আমি কি করে বলব ? আপনার নিজের ফয়েসলা, আপনাকে নিজেই করতে হবে |
সমীর : কিন্ত আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না !
রোশনি : আপনার কিছু ইয়াদ আছে - আপনি কি কারণে গবাহ দেন নাই ?
সমীর : মনে আছে -
রোশনি : ফির ?
সমীর : কিন্ত সেটাই কি আসল কারণ ?
রোশনি : আপনার দিমাগ খুব পেচিদা !
সমীর : আমি সব যুক্তি ঠিক ঠাক ভেবে রেখেছিলাম - কিন্ত এখন আমি নিশ্চিত হতে পারছি না - যেটা ভেবেছিলাম সেটাই আসল কারণ ছিল কিনা !
সৃষ্টি : ঠিক ! - এটাই আসল প্রশ্ন ! - বৌকে বাঁচানোই কি আপনার আসল উদ্দেশ্য ছিল ? কোনও সন্দেহ নেই যে আপনি আপনার যুক্তি গুলো ঠিক ঠাক সাজিয়ে ছিলেন - নিজেকে বুঝিয়েছিলেন - বাকি সবাইকেও বুঝিয়েছিলেন…! সমীর বাবু, এবার নিজের সাথে একটু সৎ হয়ে ভাবুন আসল কারণ কি ছিল ?
সমীর : আমি তো সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি - দিন রাত আমি সেই কথায় ভেবেছি - আমি আমার মনের ভিতর তন্ন তন্ন করে খুঁজছি - আসল কারণ কি ছিল ? কিন্ত আমি নিশ্চিত হতে পারছি না - আসল কারণ কি ছিল ? আমার অবচেতনে কি কারণ কাজ করছিল ?
রোশনি : এখন আর ওসব নিয়ে ভেবে কি লাভ ? আপনি বরং আমার কাছে আসুন –আমি আপনার সব গম ভুলিয়ে দেব
সৃষ্টি : রোশনি , তুমি কি একজন কাপুরুষকে ভালবাসবে ?
রোশনি : কায়র ইয়া বহাদুর, গদ্দার ইয়া বফাদার এতে আমার কিছু ফরক পড়বে না
সমীর : আচ্ছা রোশনি , আমি কি কাপুরুষ ? আমি কি বিশ্বাসঘাতক ?
রোশনি : [ সমীরের হাত ধরে ] আপনার কি মনে হয় আমি একজন কায়র, একজন গদ্দারকে পেয়ার করব ?
সমীর : তুমি সত্যি বলছ ? কিন্ত তুমি যে একটু আগে বললে..!
রোশনি : আমি মজা করছিলাম ..আপনাকে দেখে কায়র ইয়া গদ্দার মনে হয় না |
সমীর : রোশনি তুমি সত্যি বলছ..! তুমি আমায় বিশ্বাস কর..! তাহলে এস রোশনি - হাত ধর … আমরা স্বর্গে যাব ..!
সৃষ্টি : [ মৃদু হেসে ] সমীর বাবু, রোশনি যা বলছে - সেটা ওর মুখের কথা | ও আপনাকে বিশ্বাস করে না.. ওর শুধু একজন পুরুষ সঙ্গী চাই ..
রোশনি : সৃষ্টিজী আপনি চুপ করুন ! সমীরজী, আপনি ওর কথায় কান দেবেন না ..আপনি যদি আমার বিশ্বাস পেতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে আমায় ভরোসা করতে হবে –
সমীর : তুমি কি সত্যি আমায় বিশ্বাস কর না ?
রোশনি : আপনি আমাকে পাগল করে দিচ্ছেন..! কায়র ইয়া বহাদুর, গদ্দার ইয়া বফাদার তাতে কি যায় আসে ? আপনি যেমনি হন না কেন আমি আপনাকে পেয়ার করব সেটাই কি কাফি নয় ?
সমীর : উফ ..! তোমার উপর আমার বিতৃষ্ণা হচ্ছে [ দরজার দিকে যায় ]
রোশনি [সমীরের পিছনে পিছনে যায়] : আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
সমীর : না! এই মানসিক যন্ত্রণা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই । এর থেকে নরকের জ্বলন্ত উনুন ভালো।
রোশনি : আপনি কি করে যাবেন ? দরজা তো বন্ধ !
সমীর : আমি ওদের কে দরজা খুলে দিতে বলব…[ দরজার কাছে যেয়ে ] ..শুনছেন দরজাটা খুলুন …শুনছেন দরজাটা খুলুন… শুনছেন .. দরজাটা একবার খুলুন…[ দরজার আরও কাছে যেয়ে ..দরজা খোলার চেষ্টা করে .. দরজা খোলে না .. দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা মারতে থাকে ] শুনতে পাচ্ছেন ? দরজাটা খুলুন…
রোশনি [সমীরের কাছে যেয়ে - হাত ধরে মিনতি করে] - মুঝে ইহাঁ ছোড়কে মত যাইয়ে – আমি আর কিছু বলব না
সমীর [বিরক্ত হয়ে রোশনীর হাত ছাড়িয়ে নেয়] : না ! আমাকে বিরক্ত কোর না - আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছি না ! তোমার থেকে নরকের জল্লাদ ভালো।
রোশনি : আপনি সাচমে নীচ ! আপনি একজন কায়র! আপনি একজন গদ্দার!
সৃষ্টি : [ রোশনি র কাছে এগিয়ে যায় ] আহা আশ্রয় হারা ছোট্ট পাখি - এখন তুমি কি করবে ? আমার কাছে এস..
রোশনি : [ সৃষ্টির থেকে দুরে সরে যেয়ে ] নেহি – আপনি আমার থেকে দুরে থাকুন.. দরজা খুললে সমিরজীর সাথে আমিও চলে যাব
সমীর : [ দরজার কাছে ] শুনছেন দরজাটা খুলুন ... [ দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা মারতে থাকে ..দরজা ঝাঁকানোর শব্দ হতে থাকে ] শুনছেন দরজাটা খুলুন… আমি এখান থেকে বেরোতে চাই.. শুনছেন দরজাটা খুলুন..
[ হঠাৎ দরজা খুলে যায় - দরজা খোলার আওয়াজ হয় ]
সৃষ্টি : সমীর বাবু, ওই দেখুন দরজা খুলে গেছে - আপনি এবার যেতে পারেন !
সমীর : আমি ভাবছি দরজাটা খুলল কেন ?
সৃষ্টি : সমীর বাবু আপনি কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন ? তাড়াতাড়ি করুন.. যান !
সমীর : না ! আমি যাব না ! আমি বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি ! - আমি জানি না বাইরে অন্ধকারে কি আছে..
সৃষ্টি : [ সৃষ্টি হেসে ওঠে ] আমি ভাবছি - এখন দরজা খুলে গেছে - চাইলে আমরা এই নরক থেকে বেরিয়ে যেতে পারি.. কিন্ত আমাদের মধ্যে কে বেরোবে ? রোশনি - তুমি বেরোবে ?
রোশনি : না - আমার ডর লাগছে.! আমি জানি না বাইরে অন্ধকারে কি আছে !
সৃষ্টি : [ হাসতে থাকে ] রোশনি আমার কাছ থেকে তোমার মুক্তি নেই - আমরা এখানে একসাথে বাঁধা -
রোশনি : সমীরজী এদিকে আসুন, আমরা দুজনে মিলে সৃষ্টিকে এই ঘর থেকে বের করে দেই।
[রোশনি সৃষ্টিকে ধরে টানতে টানতে দরজার দিকে নিয়ে যায়]
সৃষ্টি : [রোশনির সাথে ধস্তাধস্তি করে, চিৎকার করে] রোশনি দয়া কর। আমাকে এখানে থাকতে দাও। – আমি ওই অন্ধকারে যাব না।
সমীর : রোশনি তুমি সৃষ্টিকে ছেড়ে দাও।
রোশনি : সমীরজী আপনি কি পাগল হলেন। উনি আপনাকে পছন্দ করেন না।
সমীর : জানি। কিন্ত ওনার জন্যই আমি এখানে আছি।
[রোশনি এবং সৃষ্টি দুজনেই অবাক হয়]
রোশনি : [হতাশ হয়ে] সৃষ্টির জন্য?
সমীর : হ্যাঁ। সৃষ্টি যদি বিশ্বাস করেন আমি কাপুরুষ বিশ্বাসঘাতক নই, তাহলে আমার মুক্তি
সৃষ্টি : [হাসতে থাকে] কিন্ত আমি আপনাকে কোনোদিনও বিশ্বাস করব না। আর আপনার মুক্তিও কখনো হবে না
সমীর : [হতাশ হয়ে] এটাই আমাদের নরক। এখানে জল্লাদের আর দরকার কি? এখানে আপনারা সবাই অত্যাচারী জল্লাদ।
রোশনি : [হতাশ হয়ে] হম সব ইহাঁ, আপনি আপনি নরকমে কয়েদ হ্যাঁয়।
সৃষ্টি : [হতাশ হয়ে - দর্শকের দিকে ] এ আমাদের ব্যক্তিগত নরক – আর এই নরকে আপনারা সবাই জল্লাদ।
সমীর: সত্যি ভাগ্যের কি পরিহাস..! চাইলে আমরা এই নরক থেকে বেরিয়ে যেতে পারি…! সেই উপায় এবং স্বাধীনতা আমাদের আছে….! কিন্ত সেই সাহস আমাদের নেই...! তাই চাইলেও আমরা এই নরক থেকে বেরোতে পারব না…!
রোশনি: সৃষ্টি: সমীর: [ তিনজন একসাথে, দর্শকের দিকে ] আমারা সবাই এখানে আমাদের নিজের নিজের নরকে বন্দী। আপনি – হ্যাঁ হ্যাঁ – আপনি – আপনি - আপনারা সবাই এই নরকে বন্দী আমাদের সাথে। এখানে আমরা একে অন্যকে যন্ত্রণা দেবো অনন্তকাল ধরে। এই নরক থেকে আমাদের মুক্তি নেই
[আলো কমে আসে - রোশনি, সৃষ্টি, সমীর ফ্রিজ হয়ে যায়। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়। মঞ্চে কিছু লোক দল বেঁধে প্রবেশ করে। তারা কালো পোশাক পড়া, মুখে সাদা মুখোশ, হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি। তারা দল বেঁধে মঞ্চের মধ্যে ঘুরতে থাকে (যতক্ষণ গান চলছে)]
[গান]
শোনো শোনো শোনো সবে - শোনো দিয়া মন
এ রোশনি, সমীর আর সৃষ্টির কথা
এ আলো, বাতাস আর বৃষ্টির কথা
এ কথা তোমার কথা - এ কথা আমার কথা
এ মরণ তোমার মরণ - এ মরণ আমার মরণ।
-সমাপ্ত-

Comments