top of page

ইতিহাসের পাতা থেকে - শনিবারওয়ারা

  • দীপমালা চৌধুরী
  • Nov 3, 2016
  • 2 min read

Updated: Feb 18, 2021

২০০৫ সাল থেকে পুনেতে আছি, কিন্তু এখানকার অন্যতম দ্রস্টব্য স্থান ‘শনিবারওয়ারা’ কখনো যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এই এগারো বছর পর, সেদিন হঠাৎ করে একটা সুযোগ এসে গেল। ইতিহাসের পাতায় পড়েছি মহারাজা শিবাজির পরবর্তী বংশধর শাহুর সময় থেকে পেশোয়া বা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মারাঠা সাম্রাজ্যের উত্থানের কাহিনী। পেশোয়াদের প্রধান কর্মস্থল ছিল এই পুনে শহর। ‘শনিবারওয়ারা’ ছিল তাঁদের প্রধান বাসস্থান। প্রাচীন পুনে শহরের কেন্দ্র স্থলে অবস্থিত এই প্রাসাদ টির ১৭৩২ এর ২২ শে জানুয়ারি শনিবার উদ্বোধন হয়। মারাঠি অধিপতি দের কাছে শনিবার ছিল সবসময় শুভ দিন। তাঁদের সেই প্রথাকে বজায় রাখতে পেশোয়া এই প্রাসাদটির উদ্বোধন এক শনিবারে করেন। আর সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় ‘শনিবারওয়ারা’। ‘ওয়ারা’ আসলে মারাঠি শব্দ আর এর অর্থ হলো ‘বাসস্থান’।

১৮২৮ সালে কোন এক অজ্ঞাত কারনে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রাসাদটি খুব ক্ষতি গ্রস্ত হয়। পাথরে নির্মিত প্রাসাদটির প্রথম তলা এবং কিছু শক্তপোক্ত তোরণ অবশিষ্টাংশের মতো দাঁড়িয়ে আছে যা এখন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

কসবা পেঠে মুলা ও মুথা নদীর কাছে গড়ে ওঠা এই প্রাসাদটিতে সাতটি তলা ছিল তার মধ্যে সর্ব নিম্ন তলাটি ছিল পাথরের নির্মিত। সেই সময়ে প্রায় ষোল হাজার টাকা খরচা করে এই প্রাসাদ বানানো হয়। শোনা যায় শাহুর আপত্তিতে বাকি ছয় তলা ইট নির্মিত হয়। কারন প্রথা অনুযায়ী শিবাজীর বংশধর ছাড়া অন্য কেউ প্রাসাদ নির্মাণে পাথর ব্যবহার করতে পারবে না। প্রাসাদের সব চেয়ে উঁচু তলায় ছিল পেশোয়াদের বাসস্থান। সাত কিলোমিটার দুরের জ্ঞানেশ্বারী মন্দির নাকি আগে সেখান থেকে দেখা যেত। প্রাসাদের প্রধান পাচটি প্রবেশ পথ বা তোরণ ছিল। প্রথম দিল্লী দরওয়াজা – প্রাসাদের প্রধান তোরণ টি ছিল উত্তর মুখী অরথাত দিল্লী মুখী। এটি ছিল পেশোয়াদের যাতায়াতের পথ। দিল্লীর মসনদে থাকা মুঘল শাসকদের বিরুদ্ধে চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখানোর জন্য এই দরওয়াজা ছিল দিল্লী মুখী। দ্বিতীয় ছিল মস্তানী দরওয়াজা – পেশোয়া প্রধান বাজীরায়ের মুসলিম পত্নী মস্তানীর প্রাসাদের বাইরে যাওয়ার রাস্তা। তৃতীয় ছিল খিড়কী দরওয়াজা – পূর্বমুখী এই দরওয়াজাটিতে বহু ছোট ছোট খিড়কী ছিল যা দিয়ে প্রাসাদের প্রহরীরা প্রাসাদের বাইরে নজর রাখতেন। চতুর্থ গনেশ দরওয়াজা – দক্ষিণ পূর্ব মুখী এই তোরণ দিয়ে প্রাসাদের মহিলারা কসবা পেঠের গনেশ মন্দিরে যেতেন। পঞ্চম ও শেষ তোরণ ছিল দক্ষিণ মুখী নারায়ন দরওয়াজা। মৃত্যুর পর নারায়ন রাওয়ের মৃতদেহ এই তোরন দিয়ে বাইরে আনা হয়েছিল সেই থেকে নাম ‘নারায়ন দরওয়াজা’। ১৭৭৩ সালে পঞ্চম পেশোয়া নারায়ন রাও তাঁর খুল্লতাত রঘুনাথ রাও য়ের দ্বারা নিহত হন। এমন শোনা যায় তার পর থেকে প্রত্যেক পূর্ণিমার রাতে নারায়ন রাওয়ের অতৃপ্ত আত্মা সাহায্যের জন্য আসেন এবং ডাকাডাকি করেন।

১৮১৮ সালে দ্বিতীয় বাজীরাও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করে নেবার পর এই প্রাসাদ ধীরে ধীরে নির্বাসিত হতে থাকে। বর্তমানে প্রতি সন্ধ্যে ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে দুটি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের মাধ্যমে প্রাসাদের সম্পূর্ণ ইতিহাস বলা হয়। মারাঠা সাম্রাজ্যে পেশোয়াদের আমলের ইতিহাস সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ‘শনিবারওয়ারা’।

Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page