সম্পাদকের কলমে
- রানু রায়
- Aug 31, 2016
- 2 min read
Updated: Feb 18, 2021

স্বাধীনতা শব্দটার মধ্যে রয়েছে অগাধ আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্যে নিমজ্জিত জনগণ কদাচিৎ উপলব্ধি করে এই অনুভূতি। বহু পরিচিত এবং অপরিচিত বিপ্লবীদের অবিরাম সংগ্রামের ফল এই স্বাধীনতা। কিন্তু সত্তর বছর পরে আজও মনে হয়- সেই ফলের সদব্যবহার করা হচ্ছে কি?
আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে ব্রিটিশ শাসনের থেকে মুক্তি দিবসকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে উদযাপন করি। কিন্তু ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীন হওয়াই কি যথার্থ স্বাধীন হওয়া?
আজও প্রভাবশালীদের প্রবল প্রতাপে কতো সংবাদ চাপা পড়ে যায়, কত দোষী নির্ভয়ে কুকর্ম করে বেড়ায়, বিচারের নামে প্রহসন দোষীদের নির্দোষ সাব্যস্ত করে। তথাকথিত স্বাধীন দেশের লেখকের লেখনী বন্ধ হয়ে যায় কতিপয় ক্ষমতাশীল লোকের প্রভাবে। শিল্পীর সৃষ্টিকে জনসমক্ষে প্রকাশিত হতে দেওয়া হয় না এই স্বাধীন দেশে। এই রকম নানা উদাহরণ ছড়িয়ে আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মাঝে। যে ছোটো ছেলেটা চা এর দোকানে বাসন মেজে দিনযাপন করে, তার কাছে স্বাধীনতা মানে হয়ত কোনও শীতের এক ভোরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা। যে সুশীলা গৃহবধূ শান্তভাবে প্রতিদিন সংসারের কাজে নিমজ্জিত থাকে, তার কাছে স্বাধীনতার মানে হয়তো একটিবার নিজের পছন্দমতন ঘরের পর্দার রঙ বাছাই করা। স্বাধীনতার সংজ্ঞা তাই ভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন। সেই সংজ্ঞার বিভিন্ন রূপকে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় আমাদের এই দ্বিতীয় সংখ্যার প্রকাশ।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা মানুষকে স্বাধীন জীবন যাপনের সুযোগ দেয় না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কবল থেকে মুক্তির পরেও লেখকের লেখনীকে জনগণের কাছে পৌঁছাতে দেওয়া হয় না নানান অছিলায়। শিল্পীর স্বাধীনতাকে টুঁটি চিপে দাবিয়ে রাখা হয় জনগণের ওপর কুপ্রভাবের আশঙ্কায়। প্রাপ্তমনস্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক দর্শক অথবা পাঠকের সুচেতনাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয় এই ধরনের সিদ্ধান্তে। বাংলা সাহিত্যের স্বাধীনতা প্রেমী দুই কালজয়ী সাহিত্যকার – মহাশ্বেতা দেবী এবং হাংরি আন্দোলনের অগ্রণী সমীর রায়চৌধুরীর স্মরণে উৎসর্গীকৃত আমাদের এই স্বাধীনতা সংখ্যা।
স্বাধীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা কখনই সমার্থক নয়। কিন্তু এদের মাঝের সীমারেখা খুবই সূক্ষ্ম।স্বাধীন মনস্ক মানুষেরা সেই গণ্ডীর বাইরে কদাচিৎ পদার্পণ করে। কিন্তু কিছু অবিমৃষ্যকারীরা সেই গণ্ডী বারংবার লঙ্ঘন করার ফলস্বরূপ সবার স্বাধীনতার বিঘ্ন ঘটে এবং বিধানকর্তারা সীমারেখা আরও সঙ্কুচিত করার আরো অজুহাত সংগ্রহ করেন। বিদেশী শাসনের শিকল ছিঁড়ে গেছে সত্তর বছর আগে- তবুও নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে আজও আমরা পরাধীনতার জালে আবদ্ধ। প্রত্যেক মানুষের কাছে তাই আমাদের আন্তরিক আবেদন- আমাদের সবার প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার আদর্শ রূপকে উন্মোচিত করে দিয়ে যাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের যোগ্য হেফাজতে।
Comments