top of page

এক গুচ্ছ কবিতা

  • অভিষেক চৌধুরী
  • Aug 1, 2016
  • 2 min read

Updated: Feb 17, 2021


আফগানিস্তানের প্রাণ গদ্যকবিতা

ধুধু প্রান্তর। ওই দূরে নীল মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের মধুর ধ্বনি। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। রুক্ষ রাস্তাঘাট। গাছ নেই। মানুষ দরিদ্র।

য়াখনি পোলাও, গোস্ত-রুটি আর ফির্ণি-কুরূৎ বিক্রি হচ্ছে জনবিরল মহাসড়কের ধারে।

অপূর্ব সুন্দরীরা কালো বোরখা পরে স্কুল যাচ্ছে। ফেটে পরছে তাদের গায়ের রঙ। নির্বাক চাহনি, ম্লান কণ্ঠস্বর যেন কত স্বপ্ন আগলে রেখেছে।

দুর্গম বৃক্ষহীন পাহাড়ের ধুলো কলস্রোতা নদীর নীল জলে এসে মিশছে। হাওয়ার শিরশিরানিতে একটা বুকফাটা গোঙ্গানি, খসে-পড়া শুকনো ফুলে একটা বিষণ্ণতা।

কারাকুল ভেড়ারা কচিপাতার স্পর্শ পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠছে। সুউচ্চ পারিযাত্রপর্বতের খাঁজে-খাঁজে ক্রীতদাসদের কঙ্কাল বিক্ষিপ্ত ছিল, আজ সেখানে ক্যান্নাবিসের চাষ।

অজস্র ভগ্নপ্রায় বৌদ্ধস্তূপ। কোথাও তাদের গায়ের মূর্তি খণ্ডিত, কোথাও লুটেরা রা ম্যুসিয়াম থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন সম্পদ ও সহস্রাব্দের ঐতিহ্য। ধ্বংস-লুপ্ত হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি লুটোপুটি খাচ্ছে উটের আস্তাবলে, পাচারকারীর নির্মম দৃষ্টি এড়াবার চেষ্টায়। জানিনা কখন বোমা ফাটবে কোন অজানা পদক্ষেপে।

অথচ, ওই রুক্ষ পরিবেশেও মানুষের গলায় সুর। রবাব-ডোম্বুরা বাজিয়ে ধুলো-ভরা রাস্তার ধারে বসে উচ্চকণ্ঠে মাহসুদ-ওয়াজিরি লোকসঙ্গীত প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। অচেনা নীল-হলুদ পাখী হঠাৎ ডেকে উড়ে গেল।

ছন্নছাড়া বেদুইনের দল পাষ্টুন ভাষায় কাজু কিশমিশ আখরোট ডালিম বিক্রি করছে। অদ্ভুত তাদের দাড়ির রঙ। ঘোলাটে চোখ আর কপালের ভাঁজে কোন অভাবনীয় রহস্যের আঁকিবুঁকি। কোন রহস্য? দারিদ্র্যের প্রতি গোঁড়ামির কোনো অঙ্গীকার আছে কি না, সেই নিগূঢ় রহস্য ও সেটা উদ্‌ঘাটিত করবার উদ্বেগ?

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সভ্যতার সেতুবন্ধন-স্বরূপ যে সিল্ক রোডের আবির্ভাব, যার বুকের উপর দিয়ে আন্তর্মহাদেশীয় বাণিজ্যের সূত্রপাত, সেই পুরাকালীন পথের ধারে ধারে হিংস্র-ধনলোলুপ লুটেরাদের অপকীর্তির ধ্বংসাবশেষ। কোন এক কাদামাটির প্রাচীরঘেরা জনপদে আজও বিদ্যমান মহাপ্রতাপশালী মৌর্যসম্রাটের লিপিবহনকারী স্তম্ভ।

যা ছিল সেকালের হিন্দু-বৌদ্ধ-পারসিক সংস্কৃতির পীঠ, শকুনি-গান্ধারীর জন্মস্থান, সে আজ নিপীড়িতা – দশকের পর দশকের অনাবশ্যক যুদ্ধ, গোষ্ঠী-বিলোপসাধন, নিষ্করুণ মৌলবাদ, সমৃদ্ধ নগরীর নিদারুণ বিলয়ন হতে হতে যেখানে রক্তে ধুলোয় মিশে ধর্মান্ধতার আজন্মকালের কলঙ্ক মাখিয়ে রেখে গেছে।

অভিশপ্ত ১৬ই ডিসেম্বর

বর্বরতার কুশ্রী বীভৎস মুখ

মৃত্যুর লেলিহান অগ্নিময় রূপ

দেখালে আবার

অভিশপ্ত ১৬ই ডিসেম্বর...

সেদিন ৩০লক্ষ নরনারীর রক্তধারা বয়ে

প্লাবিত করল মুক্ত বঙ্গের অক্ষয় অভ্যুদয়...

টানা ৯মাসের গণহত্যা গণধর্ষণ হলো সারা

অবশেষে ভারতবাহিনী সামলালেন সংগ্রাম দিশেহারা...

মৃত্যুতৃষ্ণা তবু হলোনা তৃপ্ত তোমার

অভিশপ্ত ১৬ই ডিসেম্বর...

আবার একদিন দিল্লীনগরীর রাজপথে

নিঃসহায় রক্তাক্ত মেয়েটির করুণ আর্তনাদ...

ব্যর্থ পরিহাস হলো যেন সব তীব্র প্রতিবাদ

ধ্বজা তুলল নির্মম অত্যাচার

অভিশপ্ত ১৬ই ডিসেম্বর...

আজ জমলো পসরা তোমার সেকালের পুষ্কলাবতীতে

কত শিশু বিদ্ধ হলো দস্যুদলের ক্রমাগত গুলিতে

অভিভাবকের হাহাকারে প্রচ্ছন্ন হলো বিকৃত প্রাণহীন দেহ...

আর কত হবে অনাচার

চূড়ান্ত তোমার হিংস্র ক্ষুধা হয়েছে দুর্নিবার

অভিশপ্ত ১৬ই ডিসেম্বর...

মেসোজোইকের আত্মকথা

(থিম: ক্রীটেশিয়াস প্যালেওজীন যুগান্তের বিলুপ্তি)

দীর্ঘ প্রতীক্ষা একদিন হবে শেষ

জাগবে নতুন দিনের সূর্য

সমস্ত সম্বল অজানা উদ্দেশ্যের অপেক্ষায়

সুর-ফুরানো গানে জাগাবে প্রাণ

শিশির-ঝরা কচি পাতায় চাঞ্চল্য আনবে

নতুন প্রজন্মের বেপরোয়া মৌএর দল

আমি সেদিন সুদূর অতীতের ছায়ায়

থাকব সবার অগোচরে

আপন শক্তিকে জেনেছি এতদিন অক্ষয় অবিনশ্বর

একে অপরের সন্তানদের গোগ্রাসে গিলতেও দ্বিধাবোধ করিনি

প্রকাণ্ড থাবার প্রবল পদধ্বনিতে সমগ্র মর্ত্যলোক কাঁপিয়ে

আপামর জীবজগৎ করেছি ভীতত্রস্ত

মোহিনী প্রকৃতির অপরূপ মায়াময় সম্পদ কে

তছনছ করেও ইচ্ছাপূরণ হয়নি

ভাবিনি এ অসম্ভব দাপট এক নিমেষে হয়ে যাবে চূর্ণ

পৃথিবীপ্রদক্ষিণ পথে যে সৃষ্টি করল চরম বিপর্যয়

সেই প্রস্তরখণ্ডকে নিশ্চিহ্ন করা আমার নাগালের বাইরে

দিগন্তবিস্তৃত দাবাগ্নি, চরম আগ্নেয়গিরি,

সমুদ্রে মহাপ্রলয়ের নিদারুণ তাণ্ডব

শুধু এক অজানা দুষ্টগ্রহের এক টুকরো পাথরের জন্য

অবলুপ্তির পথে আজ আমার অস্তিত্ব

এ চিরন্তন সত্য মেনে নিয়ে আমি মৃত্যুপথযাত্রী

এই দুর্যোগ মুহূর্তে হে বাঁধনহারা পক্ষীসকল

আমায় বিদায় জানিয়ে পাড়ি দাও সাগরপাড়ের অচেনা ঠিকানায়

খুঁজে নেও জীবনধারণের অনুকূল আবাস

লক্ষ-কোটি বছরের ওপারে যে সভ্যতা সৃষ্টি হবে

সেখানে আমার উত্তরাধিকার তোমরাই

পরিবর্তনের নিয়ম কে অগ্রাহ্য করার অভিশাপ বহন করে

আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে শুধু রয়ে যাই জীবাশ্মস্বরূপ

এ মৃত্যুলোকের স্তরে স্তরে স্তবকে স্তবকে

Comments


নীড়বাসনা  বৈশাখ ১৪২৯
bottom of page